ধানমন্ডি আড্ডা ও দুটি কথা

যখন চারদিকে পোড়া ফুলের গন্ধ, জীবনের গানে নেই সুর-লয়-ছন্দ, নেই নব উদ্দীপনা প্রাণে ফেরার, তবু দুর্ঘটনার ৭ দিন পর আড্ডার আয়োজন। জীবন তো প্রবাহমান। তারই ধারাবাহিকতায় গেল ২৮ জুলাই, ২০২৫ ধানমন্ডিতে অনুষ্ঠিত হলো সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ক নিয়মিত মাসিক আসর, ধানমন্ডি-আড্ডার সপ্তম পর্ব। ধানমন্ডি আড্ডার সভাপতি বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক কবি ও কথাসাহিত্যিক নূর কামরুন নাহার।

এবারের আড্ডার বিষয় ছিলো ‘অনুবাদ সাহিত্যে আমাদের অবস্থান: সংকট ও সম্ভাবনা।’ এবারের আড্ডায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৭০টি বইয়ের বাংলায় অনুবাদক আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া। আলোচনায় আরও ছিলেন মোজাফফর হোসেন, এলহাম হোসেন ও বিপাশা মন্ডল এবং উপস্থিত স্বনামধন্য লেখক, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য অনুরাগী সুধীজনেরা।

নির্ধারিত সময় থেকে খানিক বিলম্ব হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে নূরের আলো ছড়িয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন কবি নূর কামরুন নাহার ঠিক, সন্ধ্যা সাতটায়। ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হলো যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে নিহতদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে। তারপর অনুষ্ঠান শুরুও হলো ট্রাজেডির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ‘দাও ধৈর্য দাও/হে উদারনাথ’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

বেশ ভারি আলোচনা শুরুর আগে এবং মাঝে বিরতি দিয়ে শিল্পী শরণ বড়ুয়ার সুরের মূর্ছনায় আরো একটি গান শুনলাম আমরা। উপস্থিত দর্শক বেশ ফুরফুরা মন নিয়ে আলোচনা শুনবার জন্য কঠিন আলোচনায় মনোযোগ দিতে পারলেন।

শুরু হলো এলহাম হোসেনের বক্তব্যর মধ্য দিয়ে। অনুবাদের ইতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পর তিনি বর্তমান সময়ে ফিরে এলেন। কিছুটা একাডেমিক, কিছুটা বাস্তব পরিস্থিতি, সংকট ও সমস্যার কথা বলে, সমস্যার দিক নির্দেশনা দিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করলেন।

মোজাফফর হোসেন অত্যন্ত তথ্যবহুল আলোচনায় বললেন, অনুবাদ সাহিত্যে কেন আমাদের শক্ত অবস্থান নেই, কেন বিশ্ববাজারে এখনও আমাদের অনুবাদ সেভাবে প্রবেশ করতে পারেনি, তার বাস্তবতাও তুলে ধরলেন।

বিপাশ মণ্ডল বলেন, সরকারের পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন, এছাড়াও এ বিষয়ে প্রয়োজন একেবারেই নিজস্ব উদ্যোগে প্রথমে শুরু করা, যেমন ধানমন্ডি আড্ডা থেকেই বছরে অন্তত একটা অনুবাদ সাহিত্য বের হোক ।

তারপর দর্শক-সারি থেকে কথা বললেন কথাসাহিত্যিক ফরিদুর রহমান। তিনি বললেন, আমাজনের বই বাংলাদেশ থেকে না পাওয়ার বাস্তবতার কথা। সালমা আবদুল্লাহ বললেন আইডেনটিটি ক্রাইসিস এর কথা। সরকার আবদুল মান্নান বললেল আমাদের বতমান সময়ে সংস্কৃতির পরিবর্তন ও অনুবাদের কথা।

দন্ত্যস রওশন বলেন নিজেদের উদোগের কথা। এতসব ভারি ভারি আলোচনায় মাথার জ্যাম কাটাতে আবার গানের সুরে আর সান্ধ্য নাশতায় ফিরে যাওয়া।

আলোচনা করলেন ধানমন্ডি আড্ডার সভাপতি মোহিত কামাল। সবশেষে আলোচনা করলেন এ আড্ডার সভাপ্রধান আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া। খুব রসাত্মক ভূমিকায় তিনি আলোকপাত করলেন সামগ্রিক পরিস্থিতি। তারপর তুলে ধরলেন সমাধানের নানা বিষয়।

তোলা হলো হলো গ্রুপ ছবি। নূর কামরুন নাহার অনুষ্ঠানের ইতি ঘোষণা করলেন সুরের মাধ্যমে , ‘ ও চাঁদ সামলে রাখো জোছনাকে.. স্মরণ বড়ুয়ার গান এবং শিল্পী অশ্রু বড়ুয়ার ‘ ললিতা.. ওকে আজ চলে যেতে বল না..’ এ গানের সুর নিয়ে সবাই প্রস্তুত হলো ফিরে যাওয়ার জন্য। তবু আরও কিছুক্ষণ গল্প। ছবি যেন স্মৃতি, বেশ কিছু স্থীরচিত্র বন্দি হলো সবার ক্যামেরায় এ আড্ডার স্মৃতির কোলাজে।

পরিশেষে বলতে চাই, যখন চারদিকে আততায়ীর হলাহল, দুঃখশোকে বাতাস ভারি হয়ে আছে মাইলস্টোন শিশুদের দগ্ধ আর্তনাদে, তবু জীবনকে ফিরিয়ে নিতে হবে সঠিক সুরে। এমন সাহিত্য আড্ডাগুলো চলুক মহল্লা মহল্লায় যেন আমাদের মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদের মধ্যে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির আলোকিত সুবাস পৌঁছে দিতে পারি। প্রাণ থাকুক, আনন্দ থাকুক, থাকুক স্বস্তি প্রতিটি প্রাণের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে।

অগ্রযাত্রা বজায় থাকুক ধানমন্ডি-আড্ডার !

আরও পড়ুন