আমার শিক্ষক জীবনের শিক্ষাগুরু ভাষাসংগ্রামী প্রতিভা মুৎসুদ্দি

প্রায় ছেলেবেলা থেকে সেই রবীন্দ্রনাথের মাস্টার বাবু কবিতাটি
‘আমি আজ কানাই মাস্টার পড় মোর বিড়াল ছানাটি।’

খেলার ছলে মনের ভেতরে বসেছিল কানাই মাস্টর। আর সঙ্গে তো ছিল-ই সাদা আর বিস্কুট রঙের ছোপ দেয়া আমার দুষ্ট মিষ্টি একটা বিড়াল ছানা। আমি যে তার মাস্টার এটা সে কখনো ভুলতে দিত না। ছাত্র হিসেবে সে একেবারেই ফাঁকিবাজ ছিল না। প্রতি সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে আমার সঙ্গে এসে বসা চাই। আমিও মিছিমিছি বসি নিয়ে লাঠি। কতবার যে শুনিয়েছি চ ছ জ ঝ ঞ ও কেবল বলে মিয়োঁ মিয়োঁ। আর বিরাট বিরাট হাই তুলে এক‘পা দু‘পা এগিয়ে এসে কোলের ভেতর গোল হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়া। না জানি সারা দিন কত পরিশ্রম হয়েছে তার। সে ছিল বড় আদুরে। সারা দিনে দুই একটা ইঁদুরের পেছনে খবরদারি করে কিনা সন্দেহ। উঠোনে রোদে শুকোতে দেওয়া মরিচের ডালায় চড়াই পাখিদের ভিড় হলে তাড়ানোর কথা ভুলে গিয়ে তাদের খেলা দেখায় মশগুল তাকে দেখে কানাই মাস্টারের চোখে জল চলে আসত খুশিতে। ওদিকে পড়া ফাঁকি দেওয়া আমাকেও চোখে চোখে রাখে মা।

সেই আমাকে বেশ কয়েকবার স্কুল বদল করতে হয়েছে সরকারি চাকরিজীবী বাবার সুবাদে। পড়ায় মন বসাতে কষ্ট হয়। শিক্ষকদের আদরে-শাসনে-বারণে তবু কখনো নড়চড় হয় না আমার শিক্ষক হবার ইচ্ছেটা ‘এইম ইন লাইফ’ এর লাইট থেকে।

আমি বরাবরই সিলেবাসের বাইরের একজন। বোধোদয় থেকেই শরীর ও মনে যখন অনির্বচনীয় ভাঙ্গচুর, নানা গড়ন-পিটন, চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে নতুন কোনো স্বর্গ। রাজনৈতিক চেতনা এসে কড়া নেড়ে যাচ্ছে অনবরত, অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মন, হাতিয়ার হয় রঙ-তুলি, কবিতা, অভিনয়, ডিবেটের মঞ্চ। সব মিলিয়ে নিজের সঙ্গেও চলছে যুদ্ধ। রুখে দাঁড়াই বাল্যবিবাহ, অশিক্ষা-কুশিক্ষার বিরুদ্ধে। পেছন ফিরে দেখি যারা সাথি ছিল কোন মন্ত্রবলে উল্টোপথে, ক্রমশ একা হয়ে পড়ি। সেই সঙ্গে পেছন থেকে টেনে ধরা সৈনিকের সংখ্য বেড়ে যাচ্ছে। সেখান থেকেই ভেবে নিয়েছি এভাবে হয় না। তবে কী ভাবে হয়? সন্ধান করতে থাকি সেই পথ।

ইতিমধ্যে টির্চাস ট্রেনিং কলেজ থেকেও পাস করে বেরিয়ে আসি শিক্ষক হবার ব্রত নিয়ে। কিন্তু এই মানসিকতার শিক্ষাকর্মী যে কোথাও টিকতে পারবে না সে আমার ততদিনে জানা হয়ে গেছে। আবার পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে দুরে কোথাও কাজ করা ছিল আমার জন্য খুব কঠিন ব্যাপার।
তখনো রেজাল্ট বের হয়নি এমন সময় ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক নিয়েগের একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল। প্রতিষ্ঠানটি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায়। দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম আবাসিক বালিকা বিদ্যালয় ঐতিহ্যবাহী ভারতেশ্বরী হোমসের কথা জানা ছিল আগেই। স্টেডিয়ামে টেলিভিশনে প্রতি বছর বিজয় দিবসে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ড্রিল গোটা দেশের দর্শক মুগ্ধ হয়।

আবেদন করবার আগে বাড়িতে জানালাম। খুলনা থেকে টাঙ্গাইল? এক কথায় নাকচ হয়ে গেল। বললাম ভারতেশ্বরী হোমস বাংলাদেশের একটি বিরল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা দেখবার অদম্য কৌতুহল আমার। ইন্টারভিউ দেওয়ার সুবাদে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি দেখবার সুযোগ তো দাও। চাকরি হবে এমন নিশ্চয়তা কেউ তো দেয়নি।

নির্দিষ্ট দিনে স্কুল ক্যাম্পাসে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। এরপর প্রায় শ’দেড়েক প্রার্থীকে চা-নাস্তা করিয়েছিলেন ভারতেশ্বরী হোমস কতৃপক্ষ। সবাই ধন্য ধন্য করেছিল সেই আপ্যায়নে। প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখার সুযোগও করে দিয়ে ছিলেন তারা। শিক্ষার পরিবেশ, চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সবুজে ঘেরা চারদিক সব কিছু মিলিয়ে যেন এক শান্তিনিকেতন। দেখে মনে প্রশান্তি আসে। মন ভালো হেয়ে যায়। এমনটি বাংলাদেশে আর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই।

বাছাই করা প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হল লাঞ্চের পরে। টেবিলের ওপাশে বসে আছেন ৮ থেকে ১০ জন। তাদের ভেতরে অন্যতম কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়া পতি, কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিষ্ণুপদ পতি, ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ প্রতিভা মুৎসুদ্দি, শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল হামিদা আলী, করটিয়া সা‘দত কলেজের প্রিন্সিপাল। মৌখিক পরীক্ষা তো শেষ হলো। মোটামুটি ভালোই হয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম চাকরি হবে না। কারণ সব জায়গায় অভিজ্ঞতার ঝুলি দেখতে চায়। একে অনভিজ্ঞ, শিক্ষানবিশি গন্ধ তখনো গায়ে লেগে আছে। সে না হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটা তো দেখার সুযোগ হল। এতেই আমি খুশি। বাড়িতে এসে সে গল্পই করেছি সবার সঙ্গে। সবাই আশ্চর্য হয়েছে।

প্রথম দেখাতেই ভারতেশ্বরী হোমস আমকে যেমন করে বিস্মিত করে ছিল এর নিয়ম-শৃঙ্খলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষার পরিবেশএক কথায় আশ্চর্য এক জগৎ, তেমনি আমাকে চমকে দিয়ে একদিন আমাদের খুলনার বাড়িতে নিয়োগপত্র পৌঁছাল ১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি। হোস্টেলে থাকা বাধ্যতামূলক। আবারও সেই নাকচ নটিশ। বাড়ির অনূড়া মেয়ে, সে কিনা অন্য জেলায় গিয়ে চাকরি করবে? এটা নাকি পরিবারের জন্য খুব অসম্মানজনক। সে সময়ে এ রকম মানসিকতা পোষণ করা খুব একটা অস্বাভাবিক ছিল না।

বাড়িতে একরকম বিপ্লব ঘোষণা করেই চলে এলাম ভারতেশ্বরী হোমসে। এখানে প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ পুরোপুরি সাজানো একটি রুম এবং টিচার্স ডাইনিং হলের টেবিলে বসলেই খাবার পরিবেশন হবে। অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে প্রত্যেক শিক্ষক, শিক্ষকর্মীর জন্য এই ব্যবস্থা কিন্তু তা সময় মেনেই করতে হবে। এ সময় মেপে চলা এক রাজ্য। খাবার দাবারে আমি মহা খঁতখুঁতে হলের খাবার যে সব সময় মনপছন্দ হবে এমন নয় তবু আমার মতো হেঁসেল বিমুখ মানুষের জন্য এ ব্যবস্থা মহা আনন্দের। শুরু হলো আমার নতুন হোস্টেল জীবন। নতুন চাকরি জীবন।

নিজের একটি কামরা যেখানে কাজের পর দিন শেষে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায় একান্তভাবে। যেন দেখতে পাই নিজের ভেতরের পাতালছায়াটিকেও। তখন এই বাস্তবতা পৃথিবীতে প্রকৃত বেঁচে থাকার ভেতর থেকে নিজের সম্পূর্ণ অগচরে জেগে ওঠতে থাকে দ্বীপের মতো ভিন্ন এক জগৎ। ছাত্রীদের পড়াশুনা, নানা কর্মকাণ্ডে সঙ্গে বহুজনের মাঝে থেকেও একলা জীবন খুঁজে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিত পেয়েছি আমি এই জীবন থেকেই। এবং এই প্রেক্ষিতটি এক রকম নয়, বহুমাত্রিক। আবার এই বহু মাত্রিকতাকে এক বিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছেন যিনি তিনি প্রতিভা মুৎসুদ্দি। তিনি ভারতেশ্বরী হোমসের প্রিন্সিপাল। শুরু থেকেই কাছে টেনে নিয়েছিলেন। একদিন কথা প্রসঙ্গে জানিয়ে ছিলেন আমাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনি বিশেষভাবে পছন্দ করেছিলেন আমার আবৃত্তি শুনে। শিক্ষা এবং শিক্ষকতাকে কী ভাবে আনন্দদায়ক করা যায় তা তাঁর কাছ থেকেই উপলব্ধি করা। শিক্ষার চাইতেও শিক্ষার্থীর মনের কাছে পৌঁছানো যে কতটা জরুরি সে তাঁর কাছ থেকেই শেখা।

ধিরে ধিরে জেনেছি ভাষাসংগ্রামী প্রতিভা মুৎসুদ্দিকে। চিনেছি শিক্ষাপ্রসারের ব্রতে নিবেদিত প্রতিরোধ-চেতনায় উদ্দীপ্ত এক সৈনিককে। কৈশোরে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে তিনি গ্রহণ করেন জীবনের দীক্ষা। প্রতিভা মুৎসুদ্দি ধাপে ধাপে নানা বাধা উজিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে নারী শিক্ষা প্রসারে নিজেকে নিবেদন করেছেন পরিপূর্ণভাবে।

যুগে যুগে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বিপ্লবী শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এই প্রাণকেন্দ্রেই লালিত হয়েছেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। সে সময়ে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যগত কারণে বাংলা ভাষাভাষী সব ধর্মাবলম্বীর সমন্বয়ে যে অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক বাতাবরণটি তৈরি হয়েছিল, তাতে সে সময়ে যুবসমাজ সমাজ বদলের অঙ্গীকার পুষ্ট হয়ে ওঠে। সেই সময় থেকেই প্রতিভা মুৎসুদ্দি রাজনীতি আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে বৃহত্তর জীবন সাধনার দ্বারা আপ্লুত হয়েছিলেন। তখন থেকেই কেবল নিজ সমাজ ও দেশ নয়, বিশ্বের যেখানেই অন্যায়-অত্যাচার চলেছে, তার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ ও লেখনী ছলসে ওঠেই ছিল দস্তুর। সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, অশ্বিনী চৌধুরী, নেলী সেনগুপ্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী এঁরা ছিলেন তাঁর কাছে রূপকথার বিজয়ী রাজপুত্র। আর বিপ্লবী সে দলের আরেক বীর সৈনিক বিনোদ বিহারীকে তো কাছ থেকেই পেয়েছেন তিনি। যাঁরা জালালাবাদ পাহাড় জয় করেছিলেন, ইংরেজদের অস্ত্রাগার লুট করে প্রমাণ করে দিয়ে ছিলেন বহুদিন ধরে প্রবল প্রতাপে অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকার অজেয় নয়। তাদেরকেও হারানো যায়। সূর্য সেন শিখিয়ে ছিলেন মৃত্যুভয় ভুলে কিভাবে অস্ত্র হাতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়। বিপ্লব যুগের প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা। তিনিই পথ দেখিয়ে ছিলেন ‘আঁধার পথে দিলাম পাড়ি মরণ স্বপন দেখে।’

অর্থনীতির শিক্ষক কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের নিরন্তর এ ইতিহাস জানাতেন প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলবার জন্য। সেই সঙ্গে যুক্ত হতো ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বলতেন তোমরাই পারবে এই দেশকে সোনার দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।

১৯৬৩ সালে ভারতেশ্বরী হোমসে যোগ দিয়ে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার স্নেহ ও সহচর্য প্রতিভা মুৎসুদ্দির কাজে নিরন্তর প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে ছিল। ব্যক্তিজীবনে তার রাজনৈতিক আদর্শ সম্যবাদ। সেই সাম্যবাদ আদর্শের এক অনন্য উদাহরণ দেখে ছিলেন দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে।

শিক্ষা-সংস্কৃতি-মানব কল্যাণের চেতনাস্নাত পূর্ণমানব গড়বার সাধনায় নিভৃতচারী প্রতিভা মুৎসুদ্দি প্রতিনিয়তই আমাকে উৎসাহিত করেছেন নতুন কিছু করবার জন্য। বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেও দায়িত্ব দিয়েছেন ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক বিভাগের। এ প্রতিষ্ঠনে প্রতিটি জাতীয় দিবস পালন করা হয় যথাযথ মর্যদায়। এছাড়াও আছে নানা অনুষ্ঠান যাতে ছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সুস্থ-আনন্দ বিনোদনের সুযোগ থাকে। প্রতি বছর খেলাধুলা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এসব তো আছেই। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা। মাঠে ছাত্রীদের শরীরচর্চা দেখতে যেতেন, প্রতি অনুষ্ঠানের রির্হাসেল দেখতে আসতেন নিয়ম করে। ভুলত্রুটি ধরিয়ে পরামর্শ দিতেন আনুষ্ঠানগুলো আরও কীভাবে ভালো করা যায়। নৃত্য-সঙ্গীতেও তাঁর ভালো ধারণা।

তাঁর সহচর্যে, পরামর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের শিক্ষক জীবন যা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চাইতেও বহুগুণে উপকৃত হয়েছি। তাঁর উৎসাহে ছাত্রী, সহকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি অনুষ্ঠান হয়ে ওঠত সার্থক। তিনি একাধারে ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সকলেরই শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে আমার পথ চলা দীর্ঘ চল্লিশ বছরের। সুখে-দুখে সব সময়ই কাছে পেয়েছি। পেয়েছি সহমর্মীতা। এ যে কেবল আমার জন্য অলাদা কিছু তা নয়, সকলের জন্যেই তাঁর এই মানবিকতা কাজ করে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার জীবন কথা লিখতে উৎসাহিত হই।

বাংলাদেশে যে কয়েকজন মহীয়সী নারী শিক্ষা বিস্তারে দ্যূতি ছড়িয়েছেন আজীবন শিক্ষাব্রতী প্রতিভা মুৎসুদ্দি তাঁদেরই একজন। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মহামুনি পাহাড়তলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের তুখড় ছাত্রনেতা (ছাত্র ইউনিয়ন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন্স হলের (বর্তমান রোকেয়া হল) প্রথম ভিপি এবং ডাকসুর প্রথম ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদিকা এ সব পরিচয় ছাপিয়ে ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ প্রতিভা মুৎসুদ্দি নামটিকে আড়াল করে বাঙালি জাতির জীবনে বাংলা ভাষা নিয়ে সঞ্চারিত নবচেতনার উন্মেষ ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি। ২০০২ সালে শিক্ষাবিদ হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন একুশে পদকে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও মানব-কল্যাণমূলক কাজের সামাজিক পটভূমি সর্বপরি শিক্ষা বিস্তারে তাঁর আত্মনিবেদন যে কাউকে অনুপ্রাণিত করে।

এখনো তাঁর স্মৃতির জগত সুস্থ রয়েছে। তিনি নিয়মিত যুক্ত থাকেন ইন্টারনেটে। প্রকাশ করেন তাঁর চিন্তা চেতনা। তিনি অত্যন্ত আশাবাদী একজন মানুষ। নিজের ঐতিহ্য বজিয়ে রেখে কিভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় সে শিক্ষা তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া যায়। এখনো তিনি কাজ করে যাচ্ছেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অন্যতম পরিচালক হিসেবে। প্রতিদিন দেখা যায় তাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহামতি বুদ্ধের অহিংস বাণী প্রচারে। প্রতিভা মুৎসুদ্দি সকলের কাছে পরিচিত ‘মিস মুৎসুদ্দি’ নামে। তিনি বিশ্বাস করেন একদিন পৃথিবী হয়ে উঠবে ‘এক জাতি এক বিশ্ব।’
সেই বিশ্বাসের আলো হাতে চলেছেন আঁধার জয়ের প্রত্যয় নিয়ে।

একান্ত প্রত্যাশা আমার শিক্ষক জীবনের শিক্ষাগুরু প্রতিভা মুৎসুদ্দি সুস্থতায় শতায়ু জয় করুন।

হেনা সুলতানা শিক্ষক ও লেখক

আরও পড়ুন