শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তিন বোন স্মরণে প্রদর্শনী ও জনস্বাস্থ্য মেলা

মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মর্টার শেলের হামলায় শহীদ হন আসমা, নাজমা ও ফাতেমা। এই তিন বোনকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় তিনদিন ব্যাপী ‘ত্রিবেণী’ চিত্র প্রদর্শনী ও জনস্বাস্থ্য মেলা আজ মঙ্গলবার শেষ হলো।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে নৈর্ঝত স্টুডিওর আয়োজনে এবং মুক্ত আসর ও স্বপ্ন ৭১ প্রকাশনার সহযোগিতায় এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ, যাঁরা যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়েছিলেন তাঁদের প্রতীক হিসেবে আসমা, নাজমা ও ফাতেমা নামের তিন বোনের একসঙ্গে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাবিস্মৃত গল্প এ প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে।

ত্রিবেণী চিত্র প্রদর্শনী ও জনস্বাস্থ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ত্রিবেণী চিত্র প্রদর্শনী ও জনস্বাস্থ্য মেলার সদস্যসচিব আবদুল লতিফ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাসির উদ্দীন, শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জসিমউদ্দীন, মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ, লেখক আশফাকুজ্জামান, নৈর্ঝত স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা আয়শা জাহান, সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদের ছোট ভাই আবদুর রহমান (বাবলু)সহ প্রমুখ।

মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, এই প্রদর্শনী মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্যাগ স্বীকার করা মানুষের অজানা গল্পের প্রতিফলন। এটি শুধু শিল্পের জন্য নয়, বরং বিস্মৃত স্বপ্ন, সাহস ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অনন্য প্রয়াস।
নৈর্ঝত স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা আয়শা জাহান বলেন, চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মর্টার শেলের হামলায় যে তিন বোনসহ ১৬ জন শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের স্মরণ করতেই এই ত্রিবেণী চিত্র প্রদর্শনী ও জনস্বাস্থ্য মেলার আয়োজন। ইতিহাসের এই করুণ অধ্যায় নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই এই আয়োজনের লক্ষ্য। প্রদর্শনীতে শহীদদের ছবির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা ঘটনার চিত্র, তথ্যচিত্র ও সচেতনতামূলক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকরণ প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ওই তিন বোনের ব্যবহৃত পোশাকও।

শহীদ হওয়া তিন বোনের স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে চিত্রকলা, ইনস্টলেশন, ভিজ্যুয়াল মাধ্যম এবং তাঁদের ব্যবহৃত পোশাকের প্রদর্শনীর মাধ্যমে। স্থান পেয়েছে মোট ২৫টি শিল্পকর্ম। তিন বোনের সাদাকালো একটিমাত্র ছবি সম্বল করে তাঁদের বিভিন্ন ধরনের ছবি এঁকেছেন শিল্পীরা। জলরং, তেলরং ও দৃশ্যমাধ্যমে তাঁরা ফুটিয়ে তুলেছেন শহীদ আসমা, নাজমা ও ফাতেমার শৈশব থেকে শহীদ হওয়ার দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা।

প্রদশর্নীতে স্থান পেয়েছে তরুণ শিল্পী প্রশুন হালদার, মৃৎমন্দির গুঞ্জন কুমার রায়, জয়তী বিশ্বাস, সারাহ জাবীনের মতো কয়েকজন শিল্পীর কাজ।
ঐহিত্য শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় দেশের গান, নাচ ও আবৃত্তি মাধ্যমে এই প্রদর্শনী ও স্বাস্থ্যমেলা শেষ হয়েছে।
