গারট্রুড স্টেইনের ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অফ এলিস বি টোকলাস’

গারট্রুড স্টেইনের ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অফ এলিস বি টোকলাস’ বইটার সাতটা অধ্যায় রয়েছে। লেখা হয়েছিল ১৯৩২ সালে। প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ এ। এখানে গারট্রুড স্টেইন (Gertrude Stein) টোকলাস-এর (Toklas) চোখ দিয়ে দেখেছেন যা টোকলার সংবেদনশীলতা, পর্যবেক্ষণ এবং পদ্ধতিগুলি দিয়ে পূর্ণ করা হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল বইয়ের টাইটেলে যে অটোবায়োগ্রাফি কথাটা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা আসলে কোনোই অটোবায়োগ্রাফি নয় মানে আত্মজীবনী এবং গোটা বইটার মূল বিষয় হল ‘কলা’। এছাড়াও অনেক ফারাসি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন রাস্তার নাম হুই দে ফ্লেহুশ (rue de Fleurus), Monsieur বলা হচ্ছে ভোলার্ডকে (Vollard) যার অর্থ হল স্যার কিংবা মিস্টার, চতুর্থ অধ্যায় habitués কথাটা প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে, যার অর্থ হল ‘নিয়মিত।’
আমি এই বইটার রিভিউ লিখতে গিয়ে যেটা মনে করছি সেটা হল বইয়ের যেহুতু সাতটা অধ্যায় এবং খুবই বড় তাই খুব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করছি, সবটা বলা সম্ভব নয়।
প্রথম অধ্যায়
বিফোর আই কেম টু প্যারিস (Before I came to Paris)
বর্ণনাকারী, এলিস বি টোকলাসকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে (California, San Francisco) একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদু (মায়ের বাবা) প্রথম ক্যালিফোর্নিয়াতে পা রাখেন ১৮৪৯ সালে। তাঁর বাবার পরিবারের দিক থেকে জানা যায় তাঁদের পরিবারের নাকি নেপোলিয়ন-এর (Napoleon) হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন… এছাড়াও এলিসের গুনের সমন্ধে বলা হয়েছে যেমন তাঁর সেলাই, অঙ্কন আরও অনেক কিছু। যখন সে ১৯ বছরে পা দেন তখন তিনি হেনরি জেমস-এর (Henry James) বড় প্রশংসক হয়ে ওঠেন এবং হেনরি জেমসের একটি বিখ্যাত উপন্যাস লেখার বিষয়ে মতামত দেন তিনি দ্য অকওয়ার্ড এজ (The Awkward Age)। ২০ বছর বয়েস থেকে তাঁর সঙ্গীত এবং অন্যান্য বিষয় ইচ্ছে প্রকাশ করেন, এছাড়াও ১৯০৬ এর ভূমিকম্পর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা সানফ্রান্সিসকোতে ঘটেছিল।
দ্বিতীয় অধ্যায়
মাই এরাইভেল ইন প্যারিস (My arrival in Paris)
শুরুতেই ১৯০৭ সালের কথা বলা হয়েছে। গারট্রুড স্টেইন তাঁর লেখা বই থ্রী লাইভস-এর (Three Lives) কথা বলা হয় এবং তিনি কতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেটাকে প্রকাশিত করার জন্য, পরে এটা প্রাইভেটলি প্রকাশিত করেন। এছাড়াও এনার আরো একটা লেখা বই দ্য মেকিং অফ আমেরিকান্স (The Making of Americans) যা হাজার পাতা হয়, সেটা নিয়েও প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই বছরেই পাবলো পিকাসো স্টেইনের প্রতিকৃতি সম্পূর্ণ করেন এবং হেনরি মাতিস শেষ করেন তাঁর আঁকা ছবি Bonheur de Vivre এবং এই ছবিটাকেই মনে করা হয় কিউবিজম-এর শুরু। এরপর এলিস ব্যাখ্যা করছেন একটা বাড়ির সমন্ধে যেটা অবস্থিত ২৭ হুই দে ফ্লেহুশ-এ (rue de Fleurus)। দোতলা বিল্ডিং, চারটে ছোট ছোট ঘর এবং একটি রান্নাঘর । এই বাড়িতে শনিবারে আসার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন এবং স্টেইনের কাজের লোক হেলেন সবকিছু একাই রান্না করেন। হেলেনকে পেয়ে স্টেইন খুব খুশি ছিলেন। তাঁর কাজে মুগ্ধ তিনি। সারাদিন কাজ করে সে ৮ ফোঁ নিতেন।
তৃতীয় অধ্যায়
গারট্রুড স্টেইন ইন প্যারিস (Gertrude Stein in Paris)
এই অধ্যায়ের শুরুতেই ১৯০৩ থেকে ১৯০৭-এর সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। এলিস প্যারিসে আসার আগে। তিনি উল্লেখ করেন দু বছর ধরে যখন গারট্রুড স্টেইন মেডিকেল স্কুল, জনস হোপকিনস-এ (Johns Hopkins, Baltimore) পড়াশোনা করছিলেন তখন তাঁর ভাই সেই সময় থাকতেন ফ্লোরেন্স-এ (Florence)। তিনি অনুসরণ করতেন ফ্রান্সের পল সেজানকে (Paul Cézanne)
ফ্রান্সের অন্যতম বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। পরবর্তী সময় সে ও তাঁর ভাই দুজন মিলে একটি আর্ট ডিলারের(ভোলার্ড, Vollard) কাছে যায়, পল সেজান-এর করা চিত্র সংগ্রহ করার জন্য। সেই ডিলারের পার্সোনাল কালেকশনে প্রচুর ছবি একটার ঘারে আরেকটা চাপানো। সেখান থেকে ওনারা একটা ছোট্ট ল্যাণ্ডস্কেপ কেনেন এবং বিক্রেতা ভোলার্ড-এর মনে হতে লাগলো এনাদের রকম-সকম দেখে যে এনারা উন্মাদ তাই দেখে ভোলার্ড অট্টহাসি হাসেন। তারপর থেকে স্টেইন এবং তাঁর ভাই প্রায় যেতে থাকে এই আর্ট ডিলারের কাছে এবং বহু পেইন্টিংস সংগ্রহ করেন যেমন পল সেজান (Paul Cézanne), গুগেও (Gauguin) এছাড়াও অনেকে…

চতুর্থ অধ্যায়
গারট্রুড স্টেইন বিফোর শি কেম টু প্যারিস (Gertrude Stein before she came to Paris)
আবার আমি ফিরে এসেছি প্যারিসে এবং এখন আমি নিয়মিত আসি হুই দে ফ্লেহুশে (rue de Fleurus)। The Making of Americans তখনও নিয়ে ব্যস্ত এবং সবে তিনি শুরু করেছেন প্রুফ রিডিং করা Three Lives এর। এলিস— ‘আমি ক্যালিফোর্নিয়ার ভক্ত’ এবং আমি আজকাল বলি গারট্রুডকে কেন তুমি ক্যালিফোর্নিয়াতে জন্মালে না, কিন্তু গারট্রুডের বক্তব্য আমি আলঘেনিতে
(Allegheny,Pennsylvania) জন্মেছি ওখানেই আমি ঠিক আছি। সে তাঁর ৬ মাস বয়সে আলঘেনি ছেড়ে দেন। বর্তমানে সেই জায়গাটা এখন পিট্সবার্গ (Pittsburgh) নামে পরিচিত।
গারট্রুড স্টেইনের সাথে প্যারিসে গোড়ার দিকে আলাপ হবার পর একটু অবাক হয়েছিলাম কারণ টেবিলের ওপরে কোনোদিনও একটাও ফরাসি বই ছিল না এবং দেখিনি, যা ছিল সবই ইংরাজি বই এমনকি ফরাসি পত্রিকাও নয়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম “তুমি কি কোনোদিনই ফরাসি পড়ো না? এবং এই প্রশ্নটা অনেকেরই ছিল। উনি উত্তরে বলেছেন “আমি আমার দুচোখ দিয়ে অনুভব করি এবং সেটা আলাদা ভাবে কিছু মনে হয়না আমি কোন ভাষা শুনছি, আমি শুনি কণ্ঠস্বর এবং ছন্দ।”
পঞ্চম অধ্যায়
১৯০৭-১৯১৪
যখন আমি প্রথম প্যারিসে আসি, আমি এবং একটা বন্ধু। আমরা দুজনে একটা ছোট্ট হোটেলে থাকি, যা অবস্থিত সাঁ মিশেল-এ। তারপর আমরা একটা ছোট্ট এপার্টমেন্ট নিয়েছিলাম হুই ন-থু দাম দে সং (rue Notre-Dame-des-Champs)… পরবর্তীকালে সেই বন্ধু ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে যায় তারপরেই আমি যোগ দ্য গারট্রুড সঙ্গে হুই দে ফ্লেহুশে। আমি প্রত্যেক শনিবারের সন্ধ্যায় থাকতাম হুই দে ফ্লেহুশে এবং আমার ওপর দারুন কাজের দায়িত্ব থাকতো। গারট্রুডকে প্রুফ রিডিং করতে সাহায্য করতাম প্রথমে Three Lives তারপরে আমি টাইপ রাইটিং করি The Making of Americans… ফ্রেঞ্চ পোর্টালটা বাজে ছিল, বড় বই টাইপ করার ক্ষেত্রে একদমই উপযুক্ত নয়। তারপর আমরা ইনস্টল করলাম বেশ বড় এবং দেখতেও ভালো Smith Premier… সেই সময় ওয়ার্কশপের ক্ষেত্রেও দেখা যেত না।
ষষ্ঠ অধ্যায়
দ্য ওয়ার (The War)
মার্কিনরা যুদ্ধের আগে ইউরোপে থাকত। তারা কখনো বিশ্বাস করেনি যে যুদ্ধ হতে চলেছে। গারট্রুড স্টেইন ১৯১৩ থেকে ১৯১৪ অবধি প্রচণ্ড সময় ব্যয় করতেন খবরের কাগজ পড়ার জন্য। সবসময় তিনি পড়তেন হেরাল্ড… সে পড়তে ভালোবাসতেন মহিলাদের ভোটাধিকার সমন্ধে এবং লর্ড রবার্ট-এর সমন্ধে। ওনাকে নিজের পছন্ধের নায়ক মনে করতেন তাঁর যৌবন কালে।
সপ্তম অধ্যায়
আফটার দ্য ওয়ার ১৯১৯ – ১৯৩২ (After the War 1919 – 1932)
শুরুতেই সব গুলিয়ে যাচ্ছিল। সবকিছু মনে করাটা ক্রমশঃ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল বিশেষত যুদ্ধের আগের কথা ভাবতে। পাবলো পিকাসো একবার বলেছিলেন যখন গারট্রুড স্টেইন আর সে আলোচনা করছিলেন যা আমি (এলিস) একবার বলেছি আগে। তুমি কি ভুলে গেছো যখন আমরা ছোট্ট ছিলাম তখন একবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো। পুনরায় সব কিছু মনে পড়ে গেল আমার। একটা পত্রিকার সমন্ধে বলা হয়েছে দ্য আটলান্টিক মান্থলি (The Atlantic Monthly) নামে…গারট্রুড স্টেইন তাঁর কিছু পাণ্ডুলিপি পাঠায় এবং সে মোটেও আশাবাদী ছিলেন না যে এডিটরিয়াল অফিস থেকে গ্রহণ করবে বলে। বহু প্রশ্ন মনের মধ্যে ছিল যদি কিছু অবিশ্বাস ঘটে, যদি তারা ছাপায়…তাহলে তিনি আনন্দিত হবেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে উত্তর আসে তবে সেটা বেশ বড় এবং বিতর্কমূলক। গারট্রুড স্টেইন ভাবতে লাগলেন এটা কোনো বস্টন মহিলার লেখা…
তথ্যসূত্র ও সহায়ক উৎস
- “The Autobiography Of Alice B. Toklas.” Bookrags, 2021, http://www.bookrags.com/studyguide-alicetoklas/#gsc.tab=0
- Stein, Gertrude,”The Autobiography Of Alice B. Toklas.” A Project Gutenberg of Australia eBook, June, 2015, http://gutenberg.net.au/ebooks06/0608711h.html
শুভজিৎ রায় : অনুবাদক, কলকাতা, ভারত