হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রা

ক্লিওপেট্রা এই নামটা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি সুন্দরের উপমা হিসেবে। সম্প্রতি ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে একটা ডকুমেন্ট দেখে তার প্রতি জানার আগ্রহ তীব্র হলো।সংগ্রহ করলাম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রা। পড়া শুরু করার পরে ক্লিওপেট্রা সম্পর্কে ধারণা বদলে যেতে লাগল। যদিও এখানেও ক্লিওপেট্রাকে নেগেটিভ চরিত্র হিসেবেই দাঁড় করিয়েছেন লেখক। ক্লিওপেট্রাকে জেনেছি অ্যান্টানি বা জুলিয়াস সিজারের প্রেমিকা রূপে। আর এই বইয়ের নায়ক হারমাচিস। হারমাচিস এর মমি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এই বইয়ের সম্পূর্ণ কাহিনী। হারমাচিস এবং ক্লিওপেট্রার জন্ম একই দিনে।
হারমাচিসের জীবনের লক্ষই ছিল ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করা। সেই উদ্দেশ্যে নিজেকে তৈরি করেন হারমাচিস। তিনি ছিলেন আদিবাসী বিদ্রোহী অনুমিত মিশরের ভবিষ্যৎ ফারাও। হারমাচিস তার মামা ও চাচাতো বোনের সহযোগিতায় ক্লিওপেট্রার প্রাসাদে প্রবেশ করেন জাদুকর এবং জ্যোতিষী হিসেবে। নিজের জাদু,রূপ গুণের জোরেই মোহিত করে ক্লিওপেট্রাকে।
ক্লিওপেট্রা ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সৌন্দর্যের রাণী। নিজেকে তিনি গ্রীক দেবী ভেনাসের পুনর্নজন্ম হিসেবে মনে করতেন। পুরোহিত হলেও হারমাচিস ছিলেন রক্ত, মাংসে গড়া একজন মানুষ। এ জন্যই ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করতে পারেনি তিনি। ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করার সকল আয়োজন সম্পূর্ণ হলেও কার্যকর হলো না প্রেম, মোহ আর প্রতিহিংসার কারণে।
ক্লিওপেট্রা ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সৌন্দর্যের রাণী। নিজেকে তিনি গ্রীক দেবী ভেনাসের পুনর্নজন্ম হিসেবে মনে করতেন। পুরোহিত হলেও হারমাচিস ছিলেন রক্ত, মাংসে গড়া একজন মানুষ। এ জন্যই ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করতে পারেনি তিনি। ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করার সকল আয়োজন সম্পূর্ণ হলেও কার্যকর হলো না প্রেম, মোহ আর প্রতিহিংসার কারণে। হারমাচিস কে ভালোবেসে ফেলেছিলেন তার চাচাতো বোন চারমিওন।
ক্লিওপেট্রার প্রতি হারমাচিসের দুর্বলতা সহ্য করতে পারেনি চারমিওন। তাই ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করার যে আয়োজন নিজে করেও তা প্রকাশ করে দেন তিনি। হারমাচিস ক্লিওপেট্রার প্রতি সম্মোহিত হয়ে পড়ায় তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। বন্দি হয় হারমাচিস। হেরে যায় ক্লিওপেট্রার ধুরন্ধরতার কাছে।
ক্লিওপেট্রা দ্বিতীয়বার ভালোবাসার জালে ফেলেই হারমাচিসকে দিয়ে তার স্বার্থ উদ্ধার করেন। পিরামিড থেকে সংগ্রহ করিয়ে নেন বিপুল গুপ্তধন। এরপর হারমাচিস কে হত্যার নির্দেশ দেন ক্লিওপেট্রা। চারমিওনির সাহায্যে পালিয়ে যান হারমাচিস। ক্লিওপেট্রা অ্যান্টনির প্রেমে পড়ে এবং তার সঙ্গে জীবনযাপন শুরু করেন। হারমাচিস মিশর এবং তার বাবার কাছে অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত হন। প্রায় আট বছর পিরামিডের এক গুহায় তিনি ধ্যানমগ্ন থাকেন,অভিশাপ মুক্তির প্রার্থনা আর জ্ঞান চর্চায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে পারদর্শী হন তিনি। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তার সুনাম। তবে তার মধ্যে থেকে যায় ক্লিওপেট্রাকে হত্যার তাড়না। চারমিওনের সাথে যোগাযোগ করে তিনি আবার প্রাসাদে প্রবেশ করেন চিকিৎসক হিসেবে। তিনি সুকৌশলে ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনিকে পরাজিত করায় যুদ্ধে এবং তার তৈরি বিষ পান করেই মৃত্যু হয় ক্লিওপেট্রার।
হারমাচিসের হাতেই এক হিসেবে মৃত্যু হয় ক্লিওপেট্রার তবে এই মৃত্যুতে মিশরের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।মিশর রোমান সম্রাটের অধিন হয়ে যায়। হারমাচিস যখন তার নিজ শহরে ফিরে আসেন, মন্দিরের পুরোহিতরা তাকে চিনতে পারেন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আর কারাগারে বসেই হারমাচিস লেখেন তার আত্মজীবনী। খুব অযত্ন আর অসম্মানিত ভাবে সমাধিত করা হয় হারমাচিসের দেহ।
সবকিছু ছাড়িয়ে এই গল্পে বলা যায় মিশরীয় ইতিহাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক প্রেম,বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভালোবাসার গল্প।
ক্লিওপেট্রা পড়ে আমার মোটেও তাকে নেগেটিভ চরিত্রের অধিকারী মনে হয়নি।আমার কাছে তার নেগেটিভ প্রতিচ্ছবি নির্মল ভাবে ধরা দিয়েছে।আমার মনে হয়েছে ক্লিওপেট্রা একজন দেশপ্রেমী রাণী এবং সরল প্রেমিকা । হ্যাঁ, ইতিহাস বলে তিনি তার সৌন্দর্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। তার কার্যই ছিল যখন দেশ শাসন সেখানে এককভাবে তাকে স্বার্থপর কি করে বলি। হারমাচিস কে তিনি ভালোবেসে ছিল সরল ভাবেই। আর যখন জানতে পারলো হারমাচিস তাকে হত্যার জন্যই তার সহচার্যে এসেছে। আর এর পরে তার যে প্রতিক্রিয়া বা কার্যক্রম সে একদম স্বাভাবিক। অ্যান্টনিকে তিনি ভালোবেসে ছিলেন গভীর ভাবে যার কারণে সে অক্টেভিয়াসের কাছে নত স্বীকার করেনি। অ্যান্টনি তাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ক্লিওপেট্রাকে অবিশ্বাস করে তিনি আত্মহত্যা করেন। আর এই সংবাদ শুনে ক্লিওপেট্রাও হারমাচিসের তৈরি বিষ পান করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। আমি তাকে দেখেছি সম্মোহনীকারি নয় স্রেফ মায়াময় প্রেমি হিসেবে।
মানুষের আবেগ যে তাকে তার সারাজীবনের কঠিন সাধনা থেকে ছিটকে ফেলতে পারে। ভেঙে ফেলতে পারে অদম্য লক্ষ্য হারমাচিস তার উপযুক্ত উদাহরণ।
সবকিছু ছাড়িয়ে এই গল্পে বলা যায় মিশরীয় ইতিহাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক প্রেম,বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভালোবাসার গল্প।
তানিয়া হাসান, ঢাকা, বাংলাদেশ