লর্ড মেঘনাদ দেশাইয়ের ‘নেহরুজ হিরো দিলীপ কুমার, ইন দ্য লাইফ অব ইন্ডিয়া’

চলচ্চিত্রভুবনের কিংবদন্তি দিলীপ কুমার। তাঁকে নিয়ে অনেকেই বই লিখেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ‘নেহরুজ হিরো দিলীপ কুমার, ইন দ্য লাইফ অব ইন্ডিয়া’ বইটি। বইটির লেখক লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ লর্ড মেঘনাদ জগদীশচন্দ্র দেশাই।
বইটিতে লেখক দিলীপ কুমারের ২০ বছরের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করেছেন। তুলে ধরেছেন রাজনীতির সঙ্গে সিনেমার এক সংমিশ্রণ, কীভাবে শাসনের সঙ্গে অসম্পৃক্ত, অ-একাডেমিক একটি বিষয় রাজনীতির পথে প্রভাব ফেলে। অর্থনীতিবিদ লর্ড মেঘনাদ জগদীশচন্দ্র দেশাইর ছোটবেলা থেকে ছিল বড় রকমের ভক্ত। এমনি তিনি নিজেও দিলীপ কুমার হওয়ার স্বপ্ন বুনতেন। তাই দিলীপ কুমারকে যেভাবে তিনি ফুটে তুলেছে অন্য কারও পক্ষে সম্ভব না। তিনি দেখিয়েছেন, তাঁর সিনেমার প্রভাব সমাজে কতটুকু বিস্তার করে।
তিনি একবার লিখেছেন, ‘আমরা তাঁর চুলের স্টাইল, পোশাক, সংলাপ ও আচরণ সবকিছু অনুকরণ করতাম। পর্দায় তাঁর চরিত্রটা আমরা আত্মস্থ করার চেষ্টা করতাম।’

মেঘনাদ দেশাই তাঁর বইতে লেখেন, দিলীপ কুমারকে ঘিরে ভারত বদলে যাচ্ছিল। যে ভারত ছিল জওহরলাল নেহরুর ভারত। দিলীপ কুমার ছিলেন নেহরুভিয়ান মানুষের সংবেদনশীল, শক্তিশালী, আবেগপ্রবণ অথচ মননশীল, একজন রোল মডেল, আইকন এবং সর্বদা অনুকরণীয় চরিত্র। মূলত ১৯৪৪ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত দিলীপ কুমারের সিনেমাগুলো নিয়ে বইটি লেখা হয়। এ সময়ে ৫৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন দিলীপ কুমার। বলে রাখা প্রয়োজন, দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অর্থাৎ, এই বিশ বছরেই ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সিনেমায় অভিনয় করেন দিলীপ কুমার। আসলে বোম্বের শেরিফ, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদাসাহেব ফালকেসহ অগণিত পুরস্কার পাওয়া, বিতর্কিতভাবে রাজ্যসভার সদস্যপদ লাভ করা, পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে নিশান-ই-ইমতিয়াজ দিলীপ কুমার ছিলেন প্রকৃতপক্ষে নেহরুর নায়ক।

দিলীপ কুমারের অভিনীত চরিত্র দিয়ে এই রূপান্তরগুলোই পাঠককে বুঝিয়েছেন লর্ড মেঘনাথ দেশাই। এই সময়ে দিলীপ কুমারের চারটি চলচ্চিত্র, ‘ফুটপাত’, ‘নয়া দৌড়’, ‘গঙ্গা যমুনা’ ও ‘লিডার’ যেন ভারতের চলমান অবস্থারই চিত্র ছিল। এর মধ্যে বি আর চোপড়ার ‘নয়া দৌড়’ (১৯৫৭) পুরোপুরিই নেহরুভিয়ান চলচ্চিত্র। ২০ বছরের এই সময়ে দিলীপ কুমারের এটি সবচেয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমসাময়িক চলচ্চিত্র। এই ছবিতে টাঙ্গাওয়ালা শংকরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার।

সিনেমাটি সে সময়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য নেওয়া নতুন উদ্যোগের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্মতা প্রকাশ করে। ‘গঙ্গা যমুনা’ (১৯৬১)। এটা ছিল নীতিন বোসের ছবি। সামন্ততান্ত্রিক গ্রামীণ সমাজের অত্যাচারে ছবির নায়ক ডাকাত বনে যাচ্ছে। প্রতিটি ছবিরই তীব্র প্রভাব ছিল সমাজে।