একজন ‘সাদা আলোর মানুষের’ ভেতরেই লুকিয়ে আছে আরেকজন ‘সাদা মনের মানুষ’

বিজ্ঞান আর আবেগ কী একই পথে হাঁটে? চলুন একটু অন্যভাবে ভেবে দেখি। সৃষ্টির আদি থেকেই প্রাণীরা অনুভূতি প্রবণ। এই প্রবণতা নিয়ে মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি উন্মেষের প্রথম পর্যায় থেকেই ভাবতে শুরু করেছে আর এই ভাবনার সূত্র ধরেই সৃষ্টি হয়েছে সাহিত্য, দর্শন, সমাজজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, প্রযুক্তি এবং পরিশেষে বিজ্ঞান। এই অনুভূতির পরিপূরক প্রাণীর আরেকটি বৃত্তি হল আবেগ। আমরা হয়তবা লক্ষ্য করে থাকব, কোনো দৃশ্য, ঘটনা বা কোনো শ্রুত গল্প, প্রাণীর, বিশেষত: মানুষের মনে আবেগ সৃষ্টি করে এবং সেটা থেকে অনুভূতি জন্মায়। আবার কখনো সরাসরি অনুভূতির জন্ম নেয়। সেই আবেগ বা অনুভূতি প্রাণীকে ভাবিয়ে তোলে, কখনও কখনও তা থেকে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ।
ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এখানে যখনই কোনো সংগ্রাম হয়েছে সেগুলোর সূত্রপাত যেমন হয়েছে আবেগ দিয়ে, তেমনি শেষটাও। এমনকি আমাদের দেশের ক্রিকেটেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে পরতে পরতে আপনি খুঁজে পাবেন আবেগের ছোয়া। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলগুলো ক্রিকেটে যতটা সম্ভব বিজ্ঞানের ব্যবহার বাড়িয়ে চলেছে সেখানে আমরা এখনো উল্টো পথে হেঁটে চলেছি। কারণ জাতি হিসেবে আমরা খুবই আবেগপ্রবণ। তাই আমরা এখনও ‘সাদা আলোর মানুষের’ পরিবর্তে ‘সাদা মনের মানুষ’ খোঁজাকেই শ্রেয় মনে করি। কখনো কি ভেবেছি, একজন ‘সাদা আলোর মানুষের’ ভেতরেই লুকিয়ে আছে আরেকজন ‘সাদা মনের মানুষ’।
আমরা এখনও ‘সাদা আলোর মানুষের’ পরিবর্তে ‘সাদা মনের মানুষ’ খোঁজাকেই শ্রেয় মনে করি। কখনো কি ভেবেছি, একজন ‘সাদা আলোর মানুষের’ ভেতরেই লুকিয়ে আছে আরেকজন ‘সাদা মনের মানুষ’।
সাদা আলোর মানুষ বইটি যখন হাতে পেলাম তখন ভেবেছি ভিনগ্রহের কোনো এক মানুষের গল্প হয়ত পড়তে যাচ্ছি। কিন্তু বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে এই চিন্তাধারা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমাদের ব্যক্তি ও জাতিগত চিন্তাধারায় আসতে পারে এক ধনাত্মক পরিবর্তন। তবে এ দুটো বিষয়ের পার্থক্য জানতে হলে বইটি পড়ার বিকল্প হয়ত নেই। ইতিপূর্বে ‘সাদা আলোর মানুষ’ ধারণার অবতারণা কেউ করেছেন কি না সেটা অনুসন্ধানের বিষয়। তবে আমার কাছে ধারণাটি খুবই ইউনিক মনে হয়েছে।
একজন শিক্ষক যে প্রথমে একজন ছাত্র সেটা প্রায়শই শিক্ষকেরা ভুলে যান। আর তাই কলি ও ফুলির হারিকেন আর কুপির আলোর রং নিয়ে করা প্রশ্নে নিজের অপারগতা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞান শিক্ষক মার্কোনি স্যার। কার্ল মার্ক্সকে নিজের মধ্যে যারা আজও ধারণ করে রেখেছেন তারা জানেন জ্ঞানের সাগরে এখনও আমরা নুড়ি কুড়িয়ে চলেছি। এই বইয়ের পাঁচটি পর্বের মধ্যে রয়েছে ‘ডং ডং’, ‘ফক্কর’, ‘ভাঙা মিল’, ‘মাটির ঘর’ আর ‘সাদা আলোর মানুষ’। প্রত্যেকটি পর্বেই আমি খুঁজে পেয়েছি সমসাময়িক ও তৎকালীন রাজনীতি, পরিবেশ, সমাজ তথা বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবেশিক সামগ্রিক চিত্র। যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু ‘ডং ডং’ ও ‘ফক্কর’ পর্বে লেখক অত্যন্ত সাবলীল ও রসাত্মক ছলে দেখিয়েছেন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ। যেটা আমাদের সমাজের জন্য হতে পারে একটা স্বপ্নিল সমাধান কোনো এক ‘সাদা আলোর মানুষের’ হাত ধরে। হোক না সেই মানুষটি এলাকার সম্মানিত চেয়ারম্যান কিংবা কালেক্টর সাহেব।
প্রত্যেকটি পর্বেই আমি খুঁজে পেয়েছি সমসাময়িক ও তৎকালীন রাজনীতি, পরিবেশ, সমাজ তথা বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবেশিক সামগ্রিক চিত্র। যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু ‘ডং ডং’ ও ‘ফক্কর’ পর্বে লেখক অত্যন্ত সাবলীল ও রসাত্মক ছলে দেখিয়েছেন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ। যেটা আমাদের সমাজের জন্য হতে পারে একটা স্বপ্নিল সমাধান কোনো এক ‘সাদা আলোর মানুষের’ হাত ধরে। হোক না সেই মানুষটি এলাকার সম্মানিত চেয়ারম্যান কিংবা কালেক্টর সাহেব।
আমাদের মনে সদা জাগ্রত বিজ্ঞানের ছোট ছোট প্রশ্ন আর তার উত্তর মিলবে পুরো বই জুড়েই। তাই রসময় শিক্ষা, বিজ্ঞান আর সাদা আলোর জ্ঞানের পরিপূরক হতে পারে এই বইখানা। সবচেয়ে মজার এবং আশ্চর্যের বিষয় হল বইয়ের প্রতিটি পর্বেই আমি খুঁজে পেয়েছি একজন সাদা আলোর মানুষ। রিভিউয়ের শুরুতে যে প্রশ্নটা করেছিলাম, বিজ্ঞান ও আবেগ একই পথে হাঁটে কি না? উত্তরটা হল, হুম হাঁটে, একই পথে হাঁটে, তবে একসাথে নয়। আবেগের পথচলা যেখানে শেষ বিজ্ঞানের চলা সেখান থেকেই শুরু। কিন্তু কীভাবে?? ‘সাদা আলোর মানুষ’ বইটি পড়ুন। আশা করি উত্তরটি সেখানেই পাবেন।
জিয়াউল হক, গোল্ড কোস্ট, অস্ট্রেলিয়া।
বইয়ের নাম : সাদা আলোর মানুষ
ধরণ: ত্রিমাত্রিক ছোট গল্প (স্মৃতি, রম্য ও মনস্তত্ত্ব)
সিরিজ: ডোং ডোং
লেখক : ড. এম. আল-মামুন
প্রচ্ছদ :মোহাম্মদ হাবিব
পৃষ্ঠা :৯৬
প্রকাশনা :স্বপ্ন’ ৭১ প্রকাশন
মূল্য : ২৫০ টাকা মাত্র।