‘নোটুর একটি রাইফেল’ একটি সেরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস

প্রথম যখন ফেসবুকে কিশোর উপন্যাস ‘নোটুর একটি রাইফেল’-এর প্রচ্ছদ দেখি তখনই বুঝেছিলাম, দারুণ একটি বই পাঠককে উপহার দিতে যাচ্ছেন প্রিয় লেখক দন্ত্যস রওশন। প্রচ্ছদশিল্পী নিয়াজ চৌধুরীকে বলেছিলাম, ‘সেরা প্রচ্ছদ করেছেন!’ আমার দুটি ধারণাই এখন সত্যি হয়েছে!
দন্ত্যস রওশন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য একটি চমৎকার উপন্যাস লিখেছেন।আমার ধারণা বইটি বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী আসন করে নেবে। তেমনি পাঠক মনেও। আমি মনে মনে অস্থির হয়েছিলাম কখন বইটি প্রকাশ হবে! তবে আমার অপেক্ষা দীর্ঘ হয়নি, বইটি আমি ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি। আর পড়া শেষে বইটি নিয়ে আমার পাঠানুভূতি লেখার জন্যও তর সইলো না, লিখতে বসে গেলাম।
দন্ত্যস রওশন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য একটি চমৎকার উপন্যাস লিখেছেন।আমার ধারণা বইটি বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী আসন করে নেবে। তেমনি পাঠক মনেও। আমি মনে মনে অস্থির হয়েছিলাম কখন বইটি প্রকাশ হবে! তবে আমার অপেক্ষা দীর্ঘ হয়নি, বইটি আমি ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি। আর পড়া শেষে বইটি নিয়ে আমার পাঠানুভূতি লেখার জন্যও তর সইলো না, লিখতে বসে গেলাম।
পৃথিবীতে অনেক সুন্দর দৃশ্য আছে, তার মধ্যে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বই পড়ছে সে দৃশ্যটাই অন্যতম সুন্দর দৃশ্য; বিশেষ করে বাংলাদেশের বেলায় তো এ দৃশ্যের কোনো তুলনাই হয় না, এই দৃশ্য আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়; কিন্তু চারপাশের পরিবেশ আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে, বই ছেড়ে আমাদের সন্তান মোবাইল নিয়ে সারা দিন মেতে আছে, আর আমরাও নির্বিকার, কেউ কিছু বলছি না, আমাদের একটাই চিন্তা সন্তানকে টাকার কামানোর মেশিন বানানো!
এইসব বিরুদ্ধ বাতাসের মধ্য বসবাস করেও একজন লেখক স্বপ্ন দেখতে ভুলে যান না, তার কলম অবিরাম লিখে চলে, তিনি লিখেন স্বপ্নের কথা, আগামীর রঙিন এক পৃথিবীর মানচিত্র আঁকেন তার বিশুদ্ধ কলমের কালিতে।
তেমনি আমাদের শিশু-কিশোরদের ভূবনকে রাঙানোর অন্যতম কারিগর লেখক দন্ত্যস রওশন। কেবল শিশু-কিশোর-ই না তার লেখার জাদুতে আটকা পড়ে বড়রাও, এই যেমন আমিও লেখক দন্ত্যস রওশন ভাইয়ের ‘ক্যাম্পাসের কবি’, ‘যারা ভালোবেসেছিল’, ‘ওল্ড হোম ও টুসির প্রেম’, ‘নোটুর সেভেনটি ওয়ান’, ‘পরিদের নাচের টিচার’, ‘ফোনটা ভিনগ্রহে চলে যায়’, ‘আমরা তো ডানপিটে’, ‘একটি এলিয়েন পরিবার’, ‘নোটুরা চারজন’, ‘আমার বন্ধুর বোন’, ‘আমাদের অদ্ভুত বাসা’, ‘দিতান ও পল্টু’, ‘তৌরিন এখন কংফু শেখে’সহ প্রায় সবগুলো বই আমি পড়েছি, পড়েছি পাঠকের পিপাসা থেকে, লেখক তার লিখনির জাদুতে আমাকে বশ করে ফেলেছেন।
লেখকের লেখা সম্পর্কে আমাকে একবাক্যে বলতে বলা হলে আমি বলব–রওশন ভাইয়ের লেখা হচ্ছে চলন্ত একটা রেলগাড়ি। ছুটে চলা রেলগাড়িতে চলে জানালা দিয়ে আকাশ, পাখি, ফসলের মাঠ, সবুজ গাছপালা, মানুষ দেখতে দেখতে কখন যেন নির্দিষ্ট ষ্টেশনে এসে পৌছে গেছি, টেরই পাইনি।
আবারও লেখক দন্ত্যস রওশন ভাইয়ের নতুন আরেকটি বই হাতে চলে এসেছে ‘নোটুর একটি রাইফেল’! পরিপূর্ণ একটি কিশোর উপন্যাস। তাও আবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।
আবারও লেখক দন্ত্যস রওশন ভাইয়ের নতুন আরেকটি বই হাতে চলে এসেছে ‘নোটুর একটি রাইফেল’! পরিপূর্ণ একটি কিশোর উপন্যাস। তাও আবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।
এক বসায় বইটি পড়া শেষ করে আমিও ভাবতে বসে গেছি নোটুমুদ্দির মতো আমিও কি মুক্তিযুদ্ধে যেতাম? আমারও কি সে সাহস হতো? নোটুর বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর! ভাবা যায়?
হুম, যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেবল বড়রাই করেনি, এ দেশের অল্পকিছু মানুষ বাদে বাকি সবাই দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আর করেছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন। মুক্ত দেশের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।
নাম না-জানা কতশত কিশোর নোটুমুদ্দি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার ইতিহাস হয়ত আমাদের ঠিকঠাক জানা নেই, কিন্তু আমাদের জন্য লেখক দন্ত্যস রওশন কিশোরদের জন্য নোটুমুদ্দির মুক্তিযুদ্ধ গাঁথা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ‘নোটুর একটি রাইফেল’ উপন্যাসে।
বইটির উৎসর্গ পাতার তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না, পড়ুন, পড়ে দেখুন, আমার মতো পাঠকও মুগ্ধ হবেন।
‘তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। তাঁর বাসায় বিভিন্ন বিষয়ের বারোশ বই। এই শিক্ষক নিয়মিত বই পড়েন। একদিন ভাবলেন, না। ঠিক হচ্ছে না। আমার ঘরে এত বই অথচ অনেকের একটিও বই নেই। রাজশাহী শহর থেকে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি গিয়ে একটি পাঠাগার তৈরি করলেন। তারপর বাসার সমস্ত বই দিয়ে দিলেন সেই পাঠাগারে। এখন গ্রামের মানুষ, আশপাশের গ্রামের মানুষও তাঁর গড়া পাঠাগারে বই পড়তে আসেন। আমাদের এই শিক্ষকের নাম—ফারুক হোসেন।’
আসুন নোটুমুদ্দির লড়াইয়ের দিনগুলোতে একটু উঁকি দিই–
১৯৭১ সাল। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। নোটুমুদ্দি। তার ডাকনাম নোটু। নোটু নামেই গ্রামে পরিচিত। বিভিন্ন জায়গা থেকে যুদ্ধের খবর আসছে। গ্রামের বড় ভাইয়েরা মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছেন। নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের লঞ্চ। আকাশে বোমারু বিমান। পাকিস্তানিরা গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে। গ্রাম ছেড়ে মানুষ পালাচ্ছে। পাকিস্তানিদের হাত থেকে যেন বাঁচার উপায় নাই।
১৯৭১ সাল। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। নোটুমুদ্দি। তার ডাকনাম নোটু। নোটু নামেই গ্রামে পরিচিত। বিভিন্ন জায়গা থেকে যুদ্ধের খবর আসছে। গ্রামের বড় ভাইয়েরা মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছেন। নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের লঞ্চ। আকাশে বোমারু বিমান। পাকিস্তানিরা গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে। গ্রাম ছেড়ে মানুষ পালাচ্ছে। পাকিস্তানিদের হাত থেকে যেন বাঁচার উপায় নাই।
নোটুর বয়স চৌদ্দ। সে কী করবে? দেশ স্বাধীন করতে সেও কি যুদ্ধে যাবে?
হ্যাঁ, আমাদের ছোট্ট নোটু যুদ্ধে গিয়েছিল, ট্রেনিং নিয়ে ফিরেও এসেছিল, তারপর একে একে অনেকগুলো লড়াইয়ে সে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। তার বুদ্ধি ও কৌশলে পাকিস্তানি সেনারা কুপোকাত হয়েছিল। সেসব লড়াইয়ের অংশ হতে পাঠকবন্ধুদেরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি–আসুন, নোটুর সঙ্গে ১৯৭১ সালে ফিরে যাই, বুক চিতিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করি।
আমরা যেমন প্রতিনিয়ত ভালো ভালো খাবারের খোঁজ করি, কেবল ভালো ও সুস্বাদু খাবারই খেতে চাই, তেমনি আমাদের ভালো ভালো বইয়ের খোঁজে নামতে হবে, ভালো বইগুলো পড়তে হবে–তাহলে শরীরের সঙ্গে আমাদের আত্মাও ভালো থাকবে।
কেননা, একটা ভালো বই এক টুকরো আলোর মতো, সে আলোর সন্ধান কেবলমাত্র একজন ভালো পাঠক-ই পেয়ে থাকে; তারপর সে আলো একজন থেকে আরেকজনের কাছে পৌঁছাতে থাকে।
তেমনিও আমিও আজ আপনাদের জন্য ভালো একটি বইয়ের খোঁজ দিলাম। কারণ, ভালো বইয়ের আলো আমার ভেতর-বাহির অবশ্যই আলোকিত করবে।
পাশাপাশি, এই বইটি ছোট-বড় সব পাঠককে মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিনগুলোর ছবি মানসপটে ভেসে উঠবে, পাঠকও অজান্তে ৭১ সালের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
সবশেষে প্রিয় বাবা-মায়ের প্রতি আমার আহবান–আপনার শিশু সন্তানের হাতে খেলনা পিস্তল না দিয়ে বই তুলে দিন। বড় হয়ে যাতে আপনার সন্তান পিস্তলবাজ, জংলী না হয়, এই চেষ্টা আপনি করেছিলেন–সে সান্ত্বনাটুকু অন্তত পাবেন।
‘নোটুর একটি রাইফেল’ অনলাইন বুকশপ প্রথমা, রকমারি.কম থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।
বই: নোটুর একটি রাইফেল
লেখক: দন্ত্যস রওশন
ধরন: কিশোর উপন্যাস
প্রকাশন: স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন
প্রচ্ছদ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২২
মূল্য: ২০০ টাকা