দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘নারাচ’ পড়বে বিশ্বপাঠক

ভারতের তরুণ কথাসাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায়। বয়স মাত্র ৩১। ১০ অক্টোবর, ১৯৯০ সালে জন্ম। এর মধ্যে সাহিত্য অঙ্গনে তুমুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে পত্রভারতীয় থেকে প্রকাশিক হয় তাঁর উপন্যাস ‘নারাচ’। প্রকাশের পর পরেই দেদার বিক্রয়। মাত্র আট মাসে শেষ হয়ে যায় উপন্যাসটি দশম মুদ্রণ। বহুলপ্রশংসিত হয় পাঠকমহলে। আলোচনা–সমালোচক ও বাণিজ্যিকভাবেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
উনবিংশ শতকের প্রেক্ষাপট নিয়ে নারাচ উপন্যাসটি। উপন্যাসটি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই উপন্যাসে কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে বেদ, বেদোত্তর স্মার্ত সাহিত্য ও উনবিংশ শতকের প্রান্তিক এবং বিস্মৃত মানুষ ও মেয়েদের প্রকৃত অবস্থা অন্বেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নবজাগরণ, সমাজ সংস্কার এইসব বহু-আলোচিত দিক ছাড়াও উনিশ শতকে অবধারিত ভাবেই ছিল কিছু প্রান্তিক মানুষ, যাদের কথা ইতিহাস ভুলে গিয়েছে। সেই প্রান্তজনদের অব্যক্ত সংগ্রাম বিস্তৃত পরিসরে তুলে ধরা হয়েছে। গোটা বিশ্বজুড়ে দাস ব্যবস্থা নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও শ্রমিক যোগান দেওয়ার তাগিদে সেইসময়ে হাজার হাজার মানুষকে চালান করা হয় ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে, আখচাষের মজুর হিসাবে। পাঁচবছরের ইন্ডেঞ্চারের চুক্তি থাকলেও সেই পাঁচবছর তাঁদের পরাধীন করে রাখে আমৃত্যু। নারাচ এ তুলে ধরা হয়েছে তাঁদের অমানুষিক জীবন আলেখ্য। অন্যদিকে লখনউয়ে নির্বাসিত নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ কলকাতায় এসে মেটিয়াবুরুজে গড়ে তুলেছেন একটুকরো লক্ষনউ। কিন্তু তাঁর সেই আনন্দনগরী যেন কলকাতা শহরে বড় ব্রাত্য। সমান্তরালে রমরমিয়ে চলছে অষ্টমবর্ষে গৌরীদানের সেই নিয়ম। হিন্দু ধর্ম হাঁসফাঁস করছে কুসংস্কার ও জরাজীর্ণ অপভ্রংশজাত শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। মেয়েরা অসম্ভব বঞ্চিত, ব্রাত্য, অবহেলিত। প্রতিবছর নীরবে অকালকুসুমের মত ঝরে যাচ্ছে অপরিণত নাবালিকারা, স্বামীর ধর্ষণে। রক্ষণশীল সমাজ তা নিয়ে নিরুত্তর। পরকালের দোহাই দেখিয়ে সহবাস সম্মতি আইন তাঁরা কিছুতেই পাশ হতে দেবেন না। হিন্দু শাস্ত্রে বিবাহ বা সহবাসে মেয়েদের কোন সম্মতির অধিকারই নাকি নেই।কিন্তু প্রকৃত শাস্ত্র কী? চতুর্বেদ নাকি বেদোত্তর যুগের সংহিতাগুলি? প্রাচীন বৈদিক যুগে নারীর যে সহজাত অধিকার ছিল, তা পরবর্তীকালে খর্ব হল কেন? এই কাহিনীর মাধ্যমে আমি সেই উত্তর অন্বেষণের চেষ্টা করেছি। এতে রয়েছে ১৮৮৭ সালের সেন্ট লরেন্স জাহাজডুবিও, যাতে মারা যান আটশোরও বেশি ভারতীয়, বিশ্বখ্যাত টাইটানিক জাহাজের ভরাডুবির প্রায় পঁচিশবছর আগে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক জাহাজডুবিকে কীভাবে চাপা দিয়েছিল ব্রিটিশরা, নেটিভদের তুচ্ছ প্রাণ হারিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের গর্ভে, রয়েছে তারই বিষাদ আখ্যান। রয়েছেন প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক ডঃ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ও।’
নিশ্চয়ই উপন্যাসের কাহিনীটা জেনে আপনারও পড়া ইচ্ছে জাগবে। বইটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুবাদক অরুণাভ সিনহা অনুবাদ করছেন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা হারপার কলিন্স পক্ষে। বইটি আগামী বছর হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হবে। যা সমগ্র বিশ্বের কাছে পৌঁছবে। হারপার কলিন্সের জানানো হয়েছে, গত দুই দশকে এত বিপুল অঙ্কের বাণিজ্যিক চুক্তিও বাংলা সাহিত্য জগতে হয়নি।
নারাচ উপন্যাস ছাড়াও দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য বই নরক সংকেত , দিওতিমা, নির্বাচিত ৪২, দাশগুপ্ত ট্রাভেলস, ১০ দিনে ইন্ডিয়ান পলিটি, হারিয়ে যাওয়া খুনিরা, অঘোরে ঘুমিয়ে শিব , ১৫ ফোঁটা বৃষ্টিতে, থ্রি : এ কালেকশন অব থ্রিলার স্টোরিস।
নতুন লেখক-লেখিকা তথা আপামর বাঙালীর কাছে দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের এই সাফল্য আনন্দ ও গর্বের ব্যাপার।।