ফিরোজা ইয়াসমিন নীলার ‘নিমোর ভিনাস ভ্রমণ’

লেখিকা ফিরোজা ইয়াসমিন নীলার কাছে বইটি পাওয়ার পর কালক্ষেপণ না করে, পুরোটাই শেষ করলাম এক নিঃশ্বাসে। এই মধ্য বয়সে কিশোর মনে উদিত হয়ে বইটি উপভোগ করার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। বিজ্ঞানের আতিথিয়তায় সভ্যতার এই দুর্মম অভিযাত্রা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটা বলা নেয়াহেত অসম্ভব। কিন্তু কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে তো বাঁধা নেই, আর ঠিক এই কঠিন কাজটিই করেছেন লেখিকা ফিরোজা ইয়াসমিন নীলা। যিনি টাইম মেশিনে চড়ে এক হাজার (২০৩১) বছর পর, ভিনাস গ্রহ পর্যন্ত মানুষের ভ্রমণকে কলমের আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলেছেন। বইটির আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, রঙিন ছবিগুলো, যেগুলোর সঙ্গে গল্পের ঘটনা প্রবাহের রয়েছে এক নিগুঢ় যোগসূত্র।
বন্ধু ‘সানির’ আমন্ত্রণ পেয়ে, যাত্রা পূর্ববর্তী নিয়মকানুন সঠিকভাবে পালন করে, ‘ইন্টার প্লানেট ভিসা’ নিয়ে স্পেস শিপে চড়ে ভিনাস অভিমুখী নিমোর বিখ্যাত যাত্রা পুরোটাই উত্তেজনায় ভরপুর। ভিনাসের তাপমাত্রা পৃথিবীর চেয়ে অনেক অনেক বেশি, চারদিকে আগ্নেয়গিরি আর উত্তপ্ত লাভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, নেই কোনো সবুজ! কিভাবে বেঁচে থাকে সেখানকার প্রাণীকুল? সেখানে সবাই কি খেয়ে বেঁচে থাকে? কিভাবে চলাফেরা করে? কি সেই বিখ্যাত পোশাক? কিভাবে সেখানে বংশবৃদ্ধি হয়? সেখাকে কি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শাসক রয়েছে? ভিনাসের সময় ব্যাপ্তি আর পৃথিবীর সময়ের ব্যাপ্তিকাল কি ভিন্ন? কত প্রশ্নই তো মনের ভেতর ঘোরপাক খায়, উত্তরগুলোও অস্পষ্ট। এই বইয়ে এরকম অনেক প্রশ্নের কাল্পনিক উত্তর রয়েছে খুবই সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায়। কিশোর/কিশোরীদের বুঝতে এতটুকু বেগ পেতে হবে না, তবে খুলে যাবে কল্পনা শক্তির সিংহদ্বার।
বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে গিয়ে ঘর বাঁধে, বাঁধে অনেক স্বপ্নের বেড়াজাল। কিন্তু নিয়মের বেড়াজাল যেন কাউকে ছাড়ে না, একই আকাশের নিচে থেকেও আমরা কতই না আলাদা, বয়ে বেড়াতে হয় হাজারও কষ্ট মাখা সুখ। কিন্তু তাও আমরা ছুটেই চলেছি, দেশ থেকে দেশান্তর, গ্রহ থেকে গ্রহান্তর! ‘ইন্টার প্লানেট রকেট স্টেশনে’ কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়ে ভিনাসে বসবাস করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন সানির বাবা মা এবং সানি বেড়ে উঠেছে ভিনাসের তকবকে গরম আবহাওয়ায়। পৃথিবীর বন্ধু নিমোকে ভিনাস ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে সানির যেন বিড়ম্বনার শেষ নেই। ‘কৃত্রিম মাতৃগর্ভ’ নিয়ে গবেষণা করার গবেষণাগারে নিমোকে নিয়ে কি বিপদেই না পড়লেন, দুই বন্ধু। শেষ মেষ ‘প্রিন্সেস আলিনা’ নিমোকে ‘ইন্টারপ্লানেট নেট ফ্রেন্ড’ পরিচয় না দিলে, ‘কিং জং’ এর দেয়া মৃত্যুদণ্ড নিমোর কপালে ছিলো অবধারিত। নিমো ভাবছে, ভিনাসে মৃত্যু হলে মৃতদেহকে কিভাবে সৎকার করা হয়?
গল্পের শেষটুকু বেশ মজার। নিমোর ভিনাস ভ্রমণ কাহিনী শোনার জন্য পৃথিবীর মানুষের যেন আর তার সইছে না, সবাই উদগ্রীব। এত বিশাল ভ্রমণ ক্লান্তির পর ঘুমানোর সময়টুকু পর্যন্ত পাচ্ছেন না মিস্টার নিমো। সে কি পৃথিবীর সবাইকে সঠিক কথাটুকু বলবে, নাকি বাড়িয়ে/কমিয়ে/রাঙ্গিয়ে বলবে? এত সব প্রশ্নের উত্তর জানতে সংগ্রহ করতে পারেন নিমোর ভিনাস ভ্রমণ বইখানি।
বইয়ের নাম: নিমোর ভিনাস ভ্রমণ
ধরণ: কল্পকাহিনী
লেখক: ফিরোজা ইয়াসমিন নীলা
প্রচ্ছদ: মোহাম্মদ হাবিব
পৃষ্ঠা: ৪০
প্রকাশনা: প্রীতম প্রকাশ
মূল্য: ২০০ টাকা মাত্র
ড. এম. আল-মামুন, গোল্ড কোস্ট, অস্ট্রেলিয়া।