সুকুমার সেনের `বটতলার ছাপা ও ছবি ‘

আমরা কি মনে রেখেছি? আমাদের বাংলা ভাষায় প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন কে? হয়তো অনেকই জানি হ্যালহেড সাহেবের কথা। কিন্তু ছাপাখানায় যে মুদ্রিত হরফে তৈরির মানুষটির নাম আমরা কজনেই বা জানি। তিনি হলে পঞ্চানন কর্মকার। অনেকের মতে, কলকাতা থেকে প্রথম বাংলা বই ছাপা হয় ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল। বইটি ছাপা হয় ১৮১৬ সালে সচিত্রে। প্রকাশক হিসেবে ছিলেন কাটোয়ার সন্নিকটে বহেড়া গ্রামের গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। এই গঙ্গাকিশোরই কিন্তু বাংলার প্রথম সাময়িকপত্র ” বাঙাল গেজেটি” র প্রকাশক।
সুকুমার সেন ১৯৪৭ সালে বটতলার বইয়ের সম্পর্কে তিনি প্রথম বিশ্বভারতীয় পত্রিকায় লিখেছিলেন। তারপর থেকে বটতলার বইয়ের ছবিগুলো লেখকের মনে টানতে থাকে। সেই টানার প্রবল হয়ে ওঠে ১৯৮২–১৯৮৩ সালে। লিখে ফেলেন ‘বটতলার ছাপা ও ছবি’। এই বই তিনি বটতলার চিত্রশোভিত আনুপূর্ব ইতিহাস যেভাবে শুনিয়েছেন। সে সঙ্গে বাংলা সচিত্র গ্রন্থের সূত্রপাতের ইতিহাস এবং মুদ্রণযন্ত্রের আদি ইতিহাসও খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।
সুকুমার সেন বটতলার ভৌগোলিক অবস্থান সেভাবে বটতলার ছাপা ও ছবি বইয়ে বর্ণনা করেছেন—
”সেকালে অর্থাত্ আজ থেকে দেড়শ বছরেরও বেশি কাল আগে শোভাবাজার কালাখানা অঞ্চলে একটা বড় বনস্পতি ছিল। সেই বটগাছের শানবাঁধানো তলায় তখনকার পুরবাসীদের অনেক কাজ চলত। বসে বিশ্রাম নেওয়া হত। আড্ডা দেওয়া হত। গানবাজনা হত। বইয়ের পসরাও বসত। অনুমান হয় এই বই ছিল বিশ্বনাথ দেবের ছাপা, ইনিই বটতলা অঞ্চলে এবং সেকালের উত্তর কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা খুলেছিলেন, বহুকাল পর্যন্ত এই ‘বান্ধা বটতলা’ উত্তর কলকাতায় পুস্তক প্রকাশকদের ঠিকানা চালু ছিল .. ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য ছোট সস্তার প্রেস গড়ে ওঠে। এগুলির চৌহদ্দি ছিল দক্ষিণে বিডন স্ট্রিট ও নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, পশ্চিমে স্ট্র্যান্ড রোড, উত্তরে শ্যামবাজার স্ট্রিট এবং পূর্বে কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট”।
বইটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন। বটতলা এক সময়ে শিক্ষাভিমানী কাছে অশ্রদ্ধার ভাব জেগেছিল। সুকুমার সেনের এই বই পড়লে তা ভুল ভেঙে যাবে। বরং মনে হবে বটতলার মুদ্রণযন্ত্রের কল্যাণে আমাদের সাহিত্য–সংস্কৃতির পূর্ণজাগরণ ঘটেছে। কালীঘাটের পট চালু হওয়ার পর থেকে বটতলা বইয়ের ছবি আঁকা শুরু হয়েছিল।
বটতলার ছাপা ও ছবি
লেখক : সুকুমার সেন
সংযোগন ও সম্পাদনা: সুভদ্রকুমার সেন
প্রকাশ : আনন্দ পাবলিশার্স (১৯৮৪), কলকাতা, ভারত।
মূল্য : ৭২০ টাকা.