ইতু’র অনু স্যার

চিন্ময় বিশ্বাস Avatar

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, ইতুর বড্ড ইচ্ছে করছে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশে মেঘের খেলা আর বৃষ্টি দেখতে। কিন্তু, সেটা সম্ভব না। একটু পরে মা তাড়া দেবেন স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে। ইতুর স্কুলে যেতে ভালো লাগে,কিন্তু ক্লাস করতে একদম ভালো লাগে না। ক্লাসে স্যারেরা একটু ও মজা করে পড়ায় না,খালি গাদা গাদা বাড়ির কাজ দেয়। সেটা করে আনতে না পারলে বকুনি খেতে হয়। এসব একদম পছন্দ নয় ইতুর। কিন্তু, সে কথা কে বাবা মা’কে বোঝাবে! তাই ভালো না লাগলে ও ইতুর স্কুলে যেতে হয়। গাদা গাদা বাড়ির কাজ করতে হয়,ফলে সে তার প্রিয় বইগুলো পড়তে পারে না। কতদিন হলো বাবা নতুন কমিকস,ঠাকুমা’র ঝুলি,পাগলা দাশু আর ছবি আঁকার জন্য বিশাল একটা খাতা কিনে দিয়েছে। সেসব কিছুই ইতু ছুঁয়ে দেখতে পারছে না। কারণ, স্কুলের পড়া, বাসার পড়া তৈরি করতে করতে, সময় চলে যায়। এ নিয়ে বড় কষ্ট ইতুর মনে,কিন্তু কাউকে বলে না সে। শুধু তার ছোট্ট বন্ধু গুড্ডুকে বলে,কিন্তু সে বেচারা কিছু করতে পারে না। ইতু’র কথা শুনে আর ম্যাও ম্যাও করে জবাব দেয়।

ছোট্ট বন্ধু গড্ডুকে ছেড়ে স্কুলে যেতে ইতুর খুব খারাপ লাগে। মা’কে অনেক বার বলেছে গড্ডুকে তার সঙ্গে স্কুলে যেতে দেয়ার জন্য কিন্তু মা রাজি হয় না। অগত্যা, একাই যেতে হয় ইতুকে।

আজকে এত বৃষ্টির মধ্যে ও মা তাকে স্কুলে পৌঁছে দিল। ক্লাস প্রায় ফাঁকা,ইতুসহ পনেরো জন এসেছে মাত্র। তার চাইতে ও খারাপ কথা হলো,আজকে ইতুর বন্ধু নিলীমা আসেনি। তাই  সে একদম একা। দিনের শুরুতেই ঈশিতা ম্যামের ক্লাস একদম ভালো লাগে না ইতুর। মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে,সব সময় কেমন একটা কঠিন ভাব লেগে থাকে ম্যামের চেহারায়। ইতু প্রচণ্ড ভয় পায় ম্যামকে,কিন্তু আজকে দেখা গেল সেই ভয়ংকর দর্শন ম্যামটি এলো না। তার পরিবর্তে এসেছে একটা স্যার। ক্লাসে প্রবেশ করা মাত্র তিনি নিজের নামটা বড় করে বোর্ডে লিখে দিলেন ‘অ-নু-প-ম’ এবং বললেন তাকে অনু স্যার ডাকতে। তারপর সবার রোল কল করলেন। রোল কল করার পর ম্যামের মতো তিনি পড়া জিজ্ঞেস করতে শুরু করেননি। চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে তিনি বাচ্চাদের বললেন,তোমরা বর্ষা নিয়ে কে কি জান দেখি বলো। সবার প্রথমে দাড়ালো ইতু,দাড়িয়ে সুকুমার রায়ের শ্রাবণে কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনাল। কবিতা শুনে স্যার ইতুর বেশ প্রশংসা করল। এরপর একে একে সবাই বর্ষা নিয়ে নিজেদের প্রিয় গান,ছড়া,কবিতা স্যারকে শোনাল। তারপর স্যার সবাইকে বই থেকে আজকের পড়াটা পড়াটা পড়িয়ে দিলেন। তার পড়ানোটা এত ভালো লাগলো যে ইতুর ঐ পড়াটা ক্লাসেই মুখস্থ হয়ে গেল। ক্লাস থেকে  যাওয়ার আগে স্যার সবচেয়ে মজার ঘোষণাটি দিলেন যে,আজ থেকে তিনিই ইতুদের ক্লাস টিচার। তারপর বললেন,কাল ক্লাসে আসার সময় সবাই যেন নিজেদের প্রিয় একটা গল্পের বই নিয়ে আসে।

এরপরের দিন মা বলার আগেই ইতু তৈরি হয়ে গেল স্কুলে যাওয়ার  জন্য আর মনে করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল তার প্রিয় বই নীল হাতি। যথারীতি স্যার ক্লাসে আসলেন,প্রতিদিনের কাজ রোল কল করাটা ও সেরে নিলেন। তারপর বললেন এবার দেখি সবাই নিজেদের প্রিয় বইটি বের করে সামনে রাখ। স্যার সবার বেঞ্চে গিয়ে বইগুলো দেখল এবং একজন একজন করে সবাইকে নিজের বই সম্পর্কে একটু একটু বলতে  বলল। সবার মতো নিজের বইটা নিয়ে বলল ইতুও। তারপর স্যার ঘোষণা দিলেন আজকে আমাদের বই দিবস। অর্থ্যাৎ, প্রত্যক সপ্তাহে আজকের দিনে আমরা প্রত্যকে একজন আরেক জনকে নিজের পড়া বইটি দিব এবং আমার না পড়া বইটি তার কাছ থেকে নিব। এই বই বিনিময় করতে গিয়ে ইতুর মন একেবারে খুশিতে বাক-বাকুম, ফলে সে তার ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করে ফেলল।

এভাবে স্যার আরেকদিন ঘোষণা দিল যে আজকে আমাদের ফুল দিবস। স্যার স্কুলের বাগানে নিয়ে গিয়ে নতুন ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ইতুদের। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ইতু এবং তার সহপাঠীরা নতুন ফুল চিনতে শুরু করেছে। অনুপম স্যার ইতুর দিন দিন প্রিয় হয়ে উঠছে। স্যার বেশি বাড়ির কাজ দেয় না,যা বাড়ির কাজ দেয় সেটুকু ক্লাসে ই পড়িয়ে দেন। ফলে ইতু বাসায় অনেক সময় পাই,ঐ সময়ে সে তার গল্পের বইগুলো পড়তে পারে,বাবার কিনে দেয়া খাতায় সে ছবি আঁকে। এখন ইতু খুব সুন্দর করে সূর্য, নদী,গাছ এসব আঁকতে পারে। একদিন ক্লাসে স্যারকে ও দেখালো স্যার খুব প্রশংসা করেছে ইতুর এবং সবাইকে ছবি আঁকার চেষ্টা করতে বলছেন।

এখন আর ইতুর ক্লাসে বিরক্ত লাগে না। বই বিনিময় করতে গিয়ে এখন তার অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। ফলে একটা বন্ধু না আসলে আরেকজন বন্ধু’র সঙ্গে সে খেলতে পারে। অনেক ফুল, মাছ,পাখি’র নাম ইতু জানে। কেউ জিজ্ঞেস করলে গড়গড় করে সব বলে দেয়। অনু স্যারও ইতুর অনেক প্রশংসা করে কারণ সে এখন  সব পড়া নিয়মিত দিতে পারে। বাসার স্যার ও ইতুকে আর বকুনি দেয় না বরং আদর করে।

ছোট্ট ইতু’র এখন গড্ডু ছাড়াও অনেক বন্ধু, তাও,ইতু’র গড্ডুকে একা রেখে যেতে ইচ্ছে করে না! কিন্তু স্কুলে যেতে হবে না হলে যে অনু স্যারের ক্লাস মিস হয়ে যাবে।

One response to “ইতু’র অনু স্যার”

  1. Sagar Avatar
    Sagar

    লেখার সাথে সাথে কবিকে তার মন মানসিকতা পরিবর্তন করে সুন্দর করা প্রয়োজন ।

মতামত