না কিছু নেই

ছবি : সংগৃহীত
দৈনিক পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় শাহরুখ খানের জীবনী পড়ে অনুপ্রেরণা পায় নাফিক আহমেদ। শাহরুখ খান স্কুল জীবন থেকেই খেলাধুলা ও পড়াশোনায় ভালো। নাফিক পড়াশোনায় ভালো নয়। সে ভালো খেলাধুলাও করে না।
নাফিক তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে সব খেলায় শেষের দিক থেকে প্রথম হয়। ঘটকপুকুর হাই স্কুল ও গার্লস স্কুল পাশাপাশি হওয়ায় খেলার একটাই মাঠ। নাফিক দৌড়ে সবার পিছনে পড়ে যায়, এতে দর্শক সবাই হাসাহাসি করে। দৌড়ে সবার পিছনে পড়ে যাওয়ার জন্য সে লজ্জাও পেয়ে যায়।
বাড়ি ফিরে সে তার মাকে সব বলল। তার মায়ের পরামর্শ মত নিয়মিত সারা বছর সে দৌড় অনুশীলন করল। পরের বছর নাফিক দৌড়ে প্রথম হলো। বেশ কয়েকটি প্রাইজও পেল। মনে মনে ঠিক করে সে চেষ্টা করলে পড়াশোনাতেও ভালো করতে পারবে। মনে বেশ জেদ চেপে গেল। ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।
ক্লাস নাইনে ওঠে সে শপথ নেয় নিজের মনে, প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। তাদের স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়ে বোদরা হাইস্কুলে। সেবার তার দাদা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। নাফিক তা দেখতে একদিন বোদরা হাইস্কুলে উপস্থিত হয়।
সে যেন স্বপ্ন দেখছে…
তোমার বিনুনী করা চুলের প্রতিটি খাঁজে খাঁজে অফুরন্ত প্রেম যা ডাকে আমায়। আমার ভালবাসার মেঘ জমে ওঠে… খুঁজে ফিরি প্রতিনিয়ত তোমার মায়াবি চোখের ইশারা। তোমার শরীর ও মনের মধ্যে কত জমেছে শিশিরের টুপটাপ ফোঁটা। এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি কত বছর কত মাস কত দিন তা জানি না। জানি মুখোমুখি হতে পারলে এ জীবন ধন্য। তোমার হৃদয়ের আকাশ প্রেমিক হতে পারিনি আজও।
একটা ভাঙা-চোরা সাইকেল। গায়ে ঘটকপুকুর চৌমাথার ফুটপাত থেকে কেনা সবুজ রঙের গোলগলা গেঞ্জি। স্কুল যাওয়ার জন্য একটিমাত্র প্যান্ট। তাতে ধুলো লেগে। সেই প্যান্ট আর গেঞ্জি পরেই ছুটে এসেছে বোদরা হাইস্কুল।
বুনো হাওয়ায় মেতে ওঠে নাফিক আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখ। স্বপ্নের পরীর মতো অপূর্ব সুন্দরী রাজকন্যা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। গেটের মুখে দাঁড়িয়ে-থাকা নাফিক তা দেখে চমকে ওঠে। নাফিকের চোখ পড়ল যখন তার চোখে, তখন সে দেখল তার হাতে মোমবাতি পিজবোর্ড কলম রাখার জন্য পেন্সিল বাক্স। বাবরি কাট চুল আর ভুবন জয়ের হাসিতে সে যে কি জাদু, তা শুধু নাফিকই জানে।
এদিকে নাফিকের ভাঙা টালির ছাউনি দিয়ে বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর। ভিজে যায় বিছানার চাদর। মা-আব্বার আশা জাগায় নাফিক। সে নতুন আকাশ দেখার সাহস জোগায়।
অন্য দিকে ভালবাসার জন্য কিছু করে দেখানোর জেদ। বই কলম খাতা নিয়ে সেই পড়তে বসছে, আজও সে লিখছে, পড়ছে। প্রকৃত মানুষ হতে। বুনো হাওয়ায় প্রেম উড়ে যাচ্ছে সাদা মেঘের ভেলায়। ভাসামান জীবন। বাঁচার অন্বেষণ। পথ হাঁটতে সচেষ্ট।
একদিন নাফিক তার ভালবাসার সামনা–সামনি হয়ে সব মনের কথা খুলে বলবে।
ভালবাসার যোগ্য হতে সে স্কুল জীবনে দু’টো পরীক্ষাতেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে।
কলেজ জীবন শেষ করে ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সেক্রেটারি পদে কাজ জোগাড় করেছে। মানুষের মতো মানুষ হওয়ার দৌড়ে ছুটে চলেছে। শিক্ষামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে নাফিক রাত দিন সোসাইটির কাজে আত্মনিয়োগ করে। মাঝে মাঝেই ফোন করে কথা বলে বুনো হাওয়ায় খুঁজে পাওয়া প্রেমের সঙ্গে।
জীবনে চলার পথে জুটেছে কত তাচ্ছিল্যের শেল, কত যন্ত্রণা, তা কেউ বোঝে না। অবজ্ঞার পাহাড় মাথায় নিয়ে আজও পবিত্র ভালবাসার অপেক্ষায় প্রহর গুনে গুনে রাত কাটে নাফিকের।
ফিরে এসো প্রেসিডেন্সি। মনে পড়ে কলেজ জীবনের ফেলে আসা সেই সব দিন। আর যার অফুরন্ত দোয়ায় প্রথম চাকরি পাওয়া। তবুও তাকে না পাওয়ার সকাল আসে। সূর্য উঠে।
সে মনে মনে কত কথা বলে—এই নাও তোমার জন্য উদার বিস্তীর্ণ খোলা আকাশ। ভাবনার আসমান জুড়ে ভেসে ওঠে এ কার ছবি? এ কোন ছবি? বেলা অবেলায় এ কোন আত্মশুদ্ধি?
নাফিকের লেখা না পাঠানো খাম। কত সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ দেখি তোমার অণুপ্রেরণায়। মনে পড়ে ফেলে আসা সেই সব দিন। মুষ্টিবদ্ধ হাত জেগে ওঠার আহ্বান। ভালোবাসা বুনো হাওয়ায় সেই সব প্রেমের গান।
আইএসএসএন নম্বরের জন্য উৎসাহ দিলে, আবেদন মঞ্জুর ২৩২০-৩৪৯৮ পিয়ার রিভিউ রিসার্চ জার্নাল উদার আকাশ।
বসন্তপুরে চাকরি করতে করতে দূর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্য ও ইতিহাস বিভাগে এমএ পাশ করে নাফিক। নিষ্ঠার সঙ্গে বসন্তপুর এডুকেশন সোসাইটির সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার কাজে মন দেয়। নাফিকের উদ্যোগেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফুলে ফেঁপে উঠে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে মডেল স্কুল ও এডুকেশন কলেজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সে সব অতীত ইতিহাস মনে পড়ে আজও।
কচি কলাপাতার মত নরম হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে আবারও নাফিকের অগ্নিশপথ। নতুন করে বাঁচার লড়াই। এবার নাফিক শাহরুখ খানের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে ভর্তি হল স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভুলতে না পারা পাপ-কথন। আকাশ কাড়ার মিছিলে ওরা কারা? ওরা ছুটছে… ওদের বিরামহীন ছুটে-চলা। গর্জে ওঠে বিবেক। রুখে দেওয়ার মিছিলে পথ হাঁটে। বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে লিখে ফেলে মহান সহিষ্ণু উদার ভারতকথা।
খোলা জানালায় কত মুখ আর মুখের মিছিল।
মার্বেল শীতল টেবিল কমলায় কত কথা ভালোবাসা আর প্রকৃতির মধ্যে আজও খুঁজে ফিরছে আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই অপরূপা চোখের ইশারা। সে চোখে মুখে ভালোবাসা ও বাঁচার আকাশ দেখা শেষ হয় না নাফিকের। সে স্বপ্ন দেখে। ছবি আঁকে। হঠাৎ করে তার মনের ক্যানভাস জুড়ে ভেসে ওঠে এ কোনো ছবি? কার ছবি? বেলা অবেলায় এ কোনো আত্মশুদ্ধি? বুনো হাওয়ায় আম বাগানে প্রেম খুঁজে ফেরা।
শেষ চিঠি আজও পোস্ট করতে পারেনি নাফিক। হে আকাশ-চারিণী, মূল্যবান তারা জানো কি? তোমার জন্য এ বুকে আজও আকাশ রাখা। ভালোবাসা বেঁচে আছে অনন্ত প্রত্যাশায়।
বসন্তের বিকেল বেলায় ও ভোরের নিস্তব্ধতায়, পিউকাঁহা পাখির ডাকে আজও ঘুম ভাঙে।
দখিনা হাওয়ায় বিছানা ছেড়ে, শীতের চাদর জড়িয়ে এসেছিলে, লাল রঙের সোয়েটার আর কালো শালে শরীর মুড়ে।
পরীর মতো রাজকন্যা হয়ে। তখনও আধো ঘুমে, ভাঙা স্বপ্নে লীন হতে হতে হাতড়াতে থাকে মাটি।
লিচু ফুলে মৌমাছি তখনও খুঁজে ফিরছে মধু। অস্থির চোখ দেখি ঘড়ির চঞ্চল কাঁটা ঘুরে ঘুরে কখন হয়েছে সময়ের নদী। রাজকন্যা তুমি যেন নদীর গুঞ্জরণে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আপন মনে গাইছো প্রেমের গান, কল্যাণপুর ষ্টেশনে।
একবার একগুচ্ছ লাল গোলাপ ছাড়াই জানিয়ে ছিলাম ‘একুশের বাংলা ভাষায়’, ভালোবাসি তোমায়।
পরীর মত রাজকন্যা তখন তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে, নির্বাক! আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজছ শিমুল পলাশের মাঝে ভালোবাসার রঙ।
নতুন হাতে ড্রাইভিং, কাঁপা কাঁপা হাতে স্টিয়ারিং অপেক্ষায় থাকি।
নাফিক আবারও সে স্বপ্নের মধ্যে বিড়বিড় করে—তোমার জন্য বিস্তীর্ণ আকাশ। দিগন্তব্যাপী খোলা মাঠ। হাতে হাত রেখে প্রাণের বাংলা ভাষাতেই জানাই… ভালোবাসি তোমায়। বুনো হাওয়ায় অনুভব করি তোমাকে অফুরন্ত ওম।
প্রিয়া, মনে পড়ে এসপি, স্মৃতি চিহ্ন, কিংডম, তোমার জন্য, বাঁচার জন্য, এ বুকে আজও ভালবাসার আকাশে চাঁদ উঠেছে। ভালোবাসার জন্য বাঁচি, বাঁচার মত বাঁচি। অনন্ত ভালোবাসা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখের ইশারায় বইছে বুনো হাওয়ায় ভাসানো প্রেম। আমাদের ভালোবাসার একটা চুম্বন অপেক্ষায় অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে কখন অপেক্ষালয় হয়েছে জানা হয়নি। এই চোখের দিকে তাকাও। অফুরন্ত সৃষ্টি খেলা করে। মেরো না, ওকে বাঁচতে দাও। চেয়ে নাও… মিত্রতা-ভালোবাসা—
মনুষ্যত্ব-মানুষ। অবাঞ্ছিত ভেবে ঘৃণা কর না। জেনো অবাঞ্ছিত শুঁয়োপোকা আজও প্রজাপতি হয়।
মূল্যবান বুনো হাওয়ায় প্রেম খুঁজে ফেরার মধ্যে বেঁচে থাকা। বাতিঘরে আলো জ্বালিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। পাখি নেই। স্বপ্ন নেই। সব কিছু ধূসর বিষন্ন ভগ্নহৃদয়।
ফারুক আহমেদ: গল্পকার, সম্পাদক ও প্রকাশক উদার আকাশ, কল্যাণী, ভারত।