ডং ডং

শৈশবে কেউ ‘রিং চিপস’খায়নি অথবা খাওয়ার জন্য বায়না ধরেনি, বর্তমানকালে এমন মধ্যবয়স্ক মানুষ খুঁজে পাওয়া হতে পারে দুষ্কর। হয়তবা অনেকেই ‘রিং চিপস’খায়নি, কিন্তু অন্য কোম্পানির তৈরি করা চিপসের মতো কিছু একটা তো অবশ্যই খাওয়া হয়েছে। ধরে নেয়া যাক, আমাদের মধ্যে বড় একটা অংশ সেই বিখ্যাত ‘রিং চিপস’খেয়েছে। অনেকেই আবার সেই চিপস কে ‘আঙ্গুলি’বলে ডাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কারণ সেই চিপসের সিলিন্ড্রিকাল ছিদ্রে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খাওয়ার সুব্যবস্থা ছিল। ধরুন, একজন দুই হাতের দশ আঙ্গুলে দশটি রিং চিপস ঢুকিয়ে সেটাকে আংটি মনে করে সারাদিন সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন, দিন শেষে সেটা হয়ে যেতে পারে চুপসে যাওয়া ঘোড়ার আন্ডার চিপস।
উপমহাদেশে থালার মতো শুকনো আলুর টুকরাকে গরম তেলে ভেঁজে, বিট লবণ সহকারে বিক্রির প্রচলন বেশ পুরনো। বাজারে অনেক রকমের বাণিজ্যিক চিপস পাওয়া গেলেও, সেই থালার মতো আলুর চিপস খাওয়ার মজা অদ্বিতীয়, এ ব্যাপারে অনেকেই একমত। মজা না পাওয়ার হেতু খুঁজে পাওয়া গেল না, সেটা তো আসলেই ‘মাজাহি মাজা’। গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আধাসিদ্ধ আলুর চিকন ফালিকে রোদে শুকিয়ে গরম তেলে ভেঁজে, মজা করে রাতের খাবারের সাথে খাওয়ায় অভ্যস্ত। তাহলে তো বলাই যেতে পারে, আলুর চিপসের সঙ্গে আমাদের মজাদার খাদ্যাভ্যাসের যোগাযোগ বেশ ঘনিষ্ঠ।
ইতিমধ্যে, একুশে বই মেলায় ছাপানো ‘ডং ডং ১’অনেকের কানে বাজিয়ে তুলতে শুরু করল এক ভালোবাসার ঐক্যতান এবং অনেকেই খুঁজে পেতে লাগলেন তাদের শৈশবের মায়াভরা স্মৃতি। ভালোবাসার ঠিক উল্টো সুরও বাজতে লাগল অনেকের মনের গহীনে এবং সেই সূরের মূর্ছনায় জেগে উঠতে লাগল ক্রোধ ও শঠতার সংমিশ্রণে তৈরি হরেক রকম শব্দের বিন্যাস ও সমাবেশ। হাকাউের তৈরি করা ‘চক্করে’ [ডং ডং ১.৯] ধ্বনিত হতে লাগল নানান কিসিমের শব্দ এবং সেইসব শব্দের জোয়ারে ভেসে গেল পেলুদার তৈরি ক্রোধের স্টিমার। পেলুদা অনেক চেষ্টা করেও পেলেন না, তার নিজ হাতে তৈরি রসুনের খোয়ার মতো হালকা কাগজের স্টিমার।
হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা সেই হালকা কাগজের স্টিমার। পেলুদার মন আজ বেজায় রকমের খারাপ, উনি ভাবছেন, এইসব ছাগল মার্কা চক্রীয় সদস্য দ্বারা চক্করের যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব নয়। কথাবার্তায় সকলেই আন্তরিক কিন্তু কাজের বেলায় ফুটুস। চাটু থেকে শুরু করে হামলা পর্যন্ত সবাই অকাজের লোক, এরা শুধু মুখেই পক পক করে, কাজে নয়। আর তর্করত্ন তো এক ধাপ এগিয়ে, উনি নাকি এখন এলাকার আবর্জনা পরিস্কারে মনোনিবেশ করার ব্যাপারে ভাবছেন। এ ব্যাপারে পেলুদার ভাবনার ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক নয়, উনি খুঁজে পেলেন না এই আবর্জনা পরিস্কারে তার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ। চেরু-পেরু থেকে শুরু করে কেউই, ‘এন্টিডোট প্রয়োগ কেন্দ্রের’ উল্টো কিছু তৈরি করতে পারল না, মাঝখানে দুটো আষাঢ় মাস চলে গেল [ফার্মিয়ন ১.৬]। চেরু-পেরু সর্বদা নিজেদের অনেক জ্ঞানী মনে করেন, আসলে ওরা কচুর মুখী, দেখতে অনেকটা টক্করে জন্ম নেয়া আগাছারুপী কচু গাছের মতো। পা থাকে হলুদিয়া তরলে আর নাকসহ মাথা দোলে গন্ধকিয় বাতাসে। অনেক কিছুই পেলুদার হৃদয়ে হানা দিচ্ছে, কিন্তু উনি আরাম পাচ্ছেন না। আরাম তো পাওয়ার কথা নয়, উনি তো আজ কাগজের স্টিমার হারানোর শোকে মুহ্যমান। কোথায় সেই ক্রোধের সমারোহে তৈরি কাগজের স্টিমার?
গামলা সাহেব ইদানিং আর চক্করে মজা পাচ্ছেন না। উনি ভাবছেন, সল্প লোকের কলেবরে চক্কর ছিলো অনেক প্রাণবন্ত। এখন প্রতিদিন নতুন নতুন চক্রীয় সদস্য যোগদান করছেন, কোন রকম বাছ বিচার ছাড়াই। পেলুদার ইচ্ছায় সদস্যপদ লাভে কোনো শর্ত দেয়া হয়নি, তাই সদস্য সংখ্যায় হ্রাস টেনে দেয়ার কোনো লক্ষণ কিংবা উপায় অদূর ভবিষ্যতে দৃশ্যমান নয়। তর্করত্নের প্ররোচনায়, হাকাউ ভ্যান চালানো বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু ফোনে কথা বলে সাম্ভব্য ‘চক্করীয়’সদস্যগণের সাথে। তালতলি বাজারের হরিপদ পর্যন্ত বাদ গেলনা হাকাউয়ের নিষ্ঠুর ডায়াল লিস্ট থেকে। সবাইকে গণহারে চক্করে অবস্থান দিয়ে, চক্করের আভিজাত্যকে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এটার সঙ্গে টক্করের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না [ডং ডং ১.৬]। ‘টক্কর’ ছিল বাস্তব আর ‘চক্কর’ভার্চুয়াল, পার্থক্য এতটুকুই। প্রতিবাদ করার কোন রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গামলা সাহেব খুবই সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করছেন, ইদানিং অনেকেই তাকে গোনায় ধরছে না। উনি হারিয়ে ফেলতে বসেছেন তার এক গামলা নিষ্ঠাগুণ।
গামলার পিছু নিয়ে হামলা এখন বেশ বিপদে। হামলা সাহেব অনুভব করলেন তার অনবদ্য উপস্থিতি সুদূর ‘ডং ডং ১’ থেকে ‘ফার্মিয়ন ১’ পর্যন্ত। তার মনে হতে লাগল এই বেদনাদায়ক ভ্রমণকে এক অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃস্বপ্নে ভরা পদব্রজের সমাহার। উনি খুঁজে পেলেন গামলার পদচিহ্নে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়া ক্ষত বিক্ষত ভাবনার সমষ্টি। কোনো ভাবনাতেই আরাম পাচ্ছেন না হামলা সাহেব এবং উনি ভাবছেন, তর্করত্নের কথায় উৎসাহিত হয়ে হামলে না পড়াই হতো বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। এখন ‘ডং ডং ১’ টু ‘ফার্মিয়ন ১’ টু ‘ডং ডং ২’ ভ্রমণ হতে পারে এক পীড়াদায়ক ক্লান্তির সংমিশ্রণ। এদিকে অনেক বেশি অন্যমনস্ক মনে হচ্ছে পেলুদাকে, চক্করে তার মন নেই, উনি ইদানিং অর্থকরী রাস্তার খোঁজে বিভোর।
চাটু ভাবছেন, ঈশ! উনি যদি ফটোশপে বইয়ের প্রচ্ছদ বানাতে পারতেন, তাহলে ‘ডং ডং ১’ এর প্রচ্ছদে ঢুকিয়ে দিতেন সেই ত্রিশ ইঞ্চি দেয়ালে ঘেরা বিখ্যাত ‘টক্কর’। চক্করের অনেকেই আবিষ্কার করে ফেললেন, টক্করের সঙ্গে চাটুর এক অলিখিত ও অদৃশ্য মায়ার বেড়াজাল। একটি স্বপ্ন দেখে চাটুর ঘুম ভেঙে গেল এবং স্বপ্নটি ছিল বড়ই চমকপ্রদ। চাটু ভাবছেন, উনি কেন এরকম স্বপ্নকে ঘুমের মাঝে আলিঙ্গন করলেন? স্বপ্নের মাঝে কিছুক্ষণের জন্য উনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন কয়েক লক্ষ মাগুর মাছের মধ্যখানে এবং পরক্ষণেই নিজের দেহটাকে আবিষ্কার করলেন টক্করের হলুদিয়া তরলে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায়। চারদিকে অনেক মাগুর মাছ, এত মাছ উনি কীভাবে বাড়ি নিয়ে যাবেন! তাছাড়া এতগুলো মাছ কিভাবে কুটা হবে, সেটাও হয়ে উঠল এক ভীষণ রকমের চিন্তার খেলাঘর। একদিকে মাগুর মাছ খাওয়ার লোভ, অপরদিকে মাগুর মাছ জবাই করার লোকের অভাব। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভীষণ রকমের দুর্গন্ধ ভেসে এলো তার নাক বরাবর এবং ভেঙ্গে গেল চাটুর ছোট্ট স্বপ্নের তন্দ্রা।
ফেস্কুয়া সাহেব, চক্কর-ফক্কর কোনো কিছুতেই নেই এবং উনি হয়ে গেলেন অনেকটা দাড় কাকের মতো। দূর থেকে খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন নিজ ডেরায় এবং চোখ বন্ধ করে গোগ্রাসে গিলে ফেলেন সব খাবার। চোখ বন্ধ করলে সব অন্ধকার হয়ে যায়, তাই কেউ তার সেই খাবারে নজর দিতে পারেন না। এটা ভেবেই ফেস্কুয়ার অনেক ভালো লাগছে। ইদানিং উনার মনের ভেতরে এক নতুন কামনার সঞ্চার হয়েছে, উনি হতে চান ঈগল পাখি। কারণ ঈগল পাখিরা অনেক উপর দিয়ে কম অক্সিজেনে শ্বাস প্রশ্বাসের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে এবং এত উচ্চতায় কারও পৌঁছানোর সক্ষমতা নেই। তাই উনি ঈগল পাখি হয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকার ইচ্ছায় নিমজ্জিত এবং অন্যমনস্কতা নিয়েই পাতিত করছেন তার বর্তমান জীবন।
ইতিমধ্যে ভ্যান চালানো বাদ দিয়েছেন, হাকাউ। আটোয়ারী পশু হাসপাতালের দিকে কেউ আর যায় না, তাই জ্যামিতিক হারে কমে গেল উনার যাত্রী সংখ্যা। মাঝে মাঝে সারাদিনে একজন যাত্রীও পান না। উনার ভ্যানের গলায় লোহার শিকল পরিয়ে সেটিকে বেঁধে রাখা হলো চৌরাস্তায় অবস্থিত বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে। বিকাল বেলা এলাকার ছেলেপেলেরা ওখানে বসে থাকে এবং পা দুলিয়ে দুলিয়ে চিতুয়া পিঠা খায় অনেক ঝাল শুঁটকির ভর্তা দিয়ে। উনার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা আসামিসম ভ্যান পরোক্ষভাবে সমাজসেবায় ব্যস্ত, হাকাউ এটা ভেবেই অনেক খুশি। সবাইকে ফোনের বৃত্তে ধরে রাখার কারণে, মাসিক মোবাইল বিল বেড়ে গেল এবং কেউ দু টাকা দিয়ে সাহায্য করছে না। হাকাউের উপার্জন নেই, কিন্তু মোবাইল বিল অনেক। হাকাউ ভাবছেন, কোনোমতে একটা নতুন ও বড় কাজ পেয়ে গেলে সব সমস্যা এক্কেবারে সমাধান। নতুন কাজ পেতে আর বেশী দেরি নেই, তর্করত্ন আছে না?
বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন, তর্করত্ন। ফুরসৎ হয়না নতুন কিছু ভাবার এবং উনি অনুধাবন করতে শুরু করলেন তার ক্ষয়িঞ্চু তর্কের ভাজ সম্পর্কে। ‘এন্টিডোট প্রয়োগ কেন্দ্র’ না থাকার দরুণ [ডং ডং ১.৪], ইদানিং তর্কের সুযোগ অনেক কম এবং মানুষ তার তর্কসমষ্টিকে বলছেন ‘পাগলের প্রলাপ’। তাই উনি মরণাস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন তার অতি আদরে লালনকৃত বেগুণাবলি ‘শঠতা’। কিন্তু ব্যাবহারের উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত মনে হল, চক্করই তার শেষ ভরসাস্থল। তর্করত্ন অনেক চেষ্টা করেও নতুন কিছু পাচ্ছেন না চক্করের জন্য, কিন্তু তাকে তো কিছু না কিছু বের করতেই হবে, উপায় তো নেই! উনি ভাবছেন, নানান কারণে এবছর আর বৃক্ষরোপণ হলোনা, তাই ছেলে পেলেদের অন্য কিছু ধরিয়ে দিতে হবে। হুট করে মাথায় এলো ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা’অভিযানের কথা এবং এটা সকলেই খুব ভালোভাবে গ্রহণ করবে। কিন্তু উনি ভয় পাচ্ছেন তার এই নতুন অভিযানের ব্যাপারটি চক্করের সকলকে অবহিত করতে। কারণ তার অনেক অসার পরিকল্পনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার সতেজ প্রমাণ বিদ্যমান এবং এই ব্যাপারে চক্করের সকল সন্মানিত সদস্যগণ বিরক্তি সমেত ওয়াকিবহাল। এর চেয়ে বরং অপেক্ষাই হতে পারে সর্বাপেক্ষা উত্তম। ঝোপ বুঝে কোপ মারতে হবে এবং সেই কাঙ্ক্ষিত ঝোপ হয়ত অতি সন্নিকটে।
ঢাকা প্রবাসী জনৈক মেহমানের প্রস্তাবিত মামলা করার প্রয়াসে জমেছে ধুলাবালির স্তূপ এবং হাড়িয়ে গেল সেই তড়িৎ চুম্বকিয় মামলার বিষয়বস্তু। চক্করে প্রতিনিয়ত চলছে ন্যানো সেকেন্ড স্থায়িত্বের আলোচনার বিষয়বস্তু, চাইলেও ধরা যাবে না সেই ক্ষণস্থায়ী আলাপনির হারিয়ে যাওয়া বিষয়কূল। ইদানিং নতুন সদস্যরাই আলোচনায় মশগুল এবং পুরনোরা কেবল মাঝে মাঝে ঢু মারে কয়েক মাইক্রো সেকেন্ডের জন্য। আজ গ্রুপে একটি নতুন পোস্ট হয়েছে এবং গল্পের স্বার্থে একটি নতুন চরিত্রের অবতারণা জরুরি হয়ে পড়েছে।