প্রচেষ্টা

নবাব বাড়ির বিশাল গম্বুজের ওপর ঝুলে থাকা সান্ধ্যকালীন সূর্যটা ততক্ষণে হারিয়ে গিয়েছে শূন্যে। সুউচ্চ চূড়ার ওপর লাল রক্তিম আভা টুকু বসে রয়েছে চুপচাপ। বুড়িগঙ্গার বুক থেকে এক রাশ বাতাস অতৃপ্ত আত্মাদের মত সপাটে আঁছড়ে পড়ছে তীরে। সেই শব্দ চারদিকের মৌনতার মাঝে জাগিয়ে তুলছে এক অজানা শিহরণ। নবাব বাড়ির অন্দরের এক সুসজ্জিত কামরার রক্ষিত টালি শোভিত মেঝের ওপর বিছিয়ে পড়ে থাকা দামি পার্সিয়ান কার্পেট তার নিজের শৈল্পিক আঁকিবুঁকি মেলে ধরেছে অকপটে। জানালার ভারি ভেলভেটের পর্দাগুলো ঝুলে রয়েছে স্থির হয়ে।
ওদের গাম্ভীর্যতা অদ্ভুত এক অস্বস্তির উদ্রেক করে তুলছে যেন। সিলিং এ সজ্জিত বহু ডালার ঝাড় বাতি থেকে বিচ্ছুরিত তীর্যক আলো ঠিকরে পড়ছে ঘরের সর্বত্র। তাতে চকচক করছে দামি বার্মাটিক কাঠের চকচকে আসবাব ও মূল্যবান সব গৃহ অলংকরণ সামগ্রী। বিরাটাকার মোমদানিতে সব ক্ষুদে বহ্নি শিখার দল ফাঁসির আসামীর মত ঘরের বদ্ধ অনীলের মাঝে মৃদু লয়ে নৃত্য করে বেড়াচ্ছে। আলোর অপূর্বচ্ছটা তার ঝলমলে বিচ্ছুরণ ঘটাতে ব্যাকুল। ঘরের কোণে রেখে দেওয়া অষ্টকোণ ইটালিয়ান টেবিলের ওপর সুসজ্জিত কারুকার্যগুলো মোহনীয় রূপে ফুটে উঠেছে। এক কোণে আজ্ঞাবহ প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে রয়েছে মেহগনি কাঠের একটি চারপায়া। তার ওপর রাখা বৃহদাকার একটি ধাতব গাছ পাত্র। তার গাত্র জুড়ে ছাঁচ রিলিফে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গাছ পালা, ফুল ফল পশু পাখি শিকার দৃশ্যের জমকালো অলংকরণ। সেই শিকার দৃশ্যের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন বাংলার নবাব সলিমুল্লাহ। তার স্থির চাহনির গভীরতা অতল। সেখান থেকে উঁকি দিচ্ছে একরাশ ক্ষোভ, হতাশা ও অপমানের যন্ত্রণা। বোবা চাহনির মাঝে অব্যক্ত হাহাকার শকুনের মত ডানা মেলেছে। এই অলংকৃত নকশা দেখে যেন মনে হচ্ছে এটা তারই জীবনের একাংশের চিত্রায়ন।
কোন এক অশুভ শক্তির তরবারির নিচে তিনি যেন সেই অসহায় শিকারের মতই মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন নবাব। তাঁর মানস পটে সেদিনটি ভেসে ওঠে যেদিন দূর দেশে বসে তাঁর পিতার মৃত্যু খবর পেয়েছিলেন। ক্ষণিকের মাঝেই ধমনীতে বয়ে চলা অশান্ত শোণিত ধারা কেমন আত্মসমর্পন করেছিল পিতৃ প্রেমের কাছে। মুহুর্তেই ভুলে গিয়েছিলেন নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বপক্ষে অবস্থানের কারণে পিতার সঙ্গে তার মত বিরোধের কথা। নবাব অস্থির বোধ করেন। ভাবেন, ভালোই তো ছিল সেই সাধারণ এক পেশে জীবন। তখন সবে ময়মনসিংহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদ ছেড়ে দিয়ে বেশ শুরু করেছিলেন ব্যবসা পাতি। জীবন যাত্রায় থিতু হন নি পুরোপুরি। যদিও মুশকিল ছিল বেশ তবুও বুঝি এখনকার মত এমন অসহায় মানসিকতায় উপনীত হতে হয় নি তখনও। পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের এ্যাজমালি সম্পত্তির মোতয়াল্লি নির্বাচিত হবার সঙ্গে সঙ্গে এই বিশাল বাংলার দায়িত্বের ভারও যে তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে।
এ যেন একই জীবনে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুটোকেই পরখে দেখা। দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যাচ্ছিলেনও বেশ। দূরদর্শিতার হেতু সহজেই অর্জন করেছেন সকলের আস্থা। তাইতো পঞ্চায়েত দরবারের চাইতে তাঁর দরবারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনেই জন সাধারণ তাদের সমস্যা নিরসনে ছুটে আসে। তাঁর প্রতি মানুষগুলোর বিশ্বাস ছলকে ওঠে তাদের দৃষ্টিতে, তাদের কন্ঠে। ভালোই যাচ্ছিল তবে একটু তাল কেটে গেল যেন বঙ্গ বিভাগ পরিকল্পনা জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলাতে। দাবার গুটির মত ছক আঁকা ঘর গুলোতে দান ফেলাটা যে বড্ড মুশকিল।
রাজনীতির খেল বড়ই জটিল। ভুলভুলাইয়ার কঠিন রহস্যও হার মানতে বাধ্য। গেল ফেব্রুয়ারিতে নবাব বাড়ি প্রাঙ্গনে সামিয়ানা টানিয়ে ভাইসরয় লর্ড কার্জনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বেশ করে। আজীবন ঐক্যকে সমৃদ্ধির মূল মন্ত্র বলে বিশ্বাস করে এসেছেন তিনি। সেই চেতনা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন সর্বক্ষেত্রে। চেয়েছিলেন ব্যবস্থাপক পরিষদসহ ঢাকাকে রাজধানী করে একটি বৃহত্তর প্রদেশ গঠণের জন্য বিকল্প একটি প্রস্তাব পাশ করাতে। বিধি বাম। তাতে মতানৈক্য এল না। ইংরেজ যে ঘৃণার নীল বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে, তা যে গোটা ভারত বর্ষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতি গত ঐক্য নয় বিভেদ ই যেন এখন সকলের মূল চালিকা শক্তি। দেহের ধমনীতে ছুটে চলা রক্ত প্রবাহের মাঝে ফের অস্থিরতা অনুভব করেন উনি। নবাব বাড়ির প্রাঙ্গনে আড়ম্বর ঘন মূহুর্তে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সাথে আলোচনায় পরিশেষে বঙ্গ বিভাগ পরিকল্পনার ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম তো হয়েছিলেন শতভাগ। ঢাকাকে নতুন প্রদেশের রাজধানীর মর্যাদায় উপনীত করে ব্যাপক পরিবর্তনও এনেছিলেন এই অতি অল্প সময়ের মাঝেও। তবে ঐ যে মতের অমিল। যা সুষ্ঠু অগ্রযাত্রার রাস্তায় যেন জল্লাদের খাপ খোলা তরবারির মত উন্মুক্ত হয়ে ছিল। “মর্লি মিন্টো” আইনের সংস্কার নীতি যেন এক বৃহৎ জাতির জয় ধ্বনিকে রুখে দেবার জন্যই তৈরি হলো।
আসলে কিসের সংস্কারের জন্য তৈরি হয়েছে এই নীতি? যে বঙ্গ বিভাগের জন্য এত কিছু তার স্থায়িত্ব যেন কোনো গুরুত্বই পেল না সিমলা ডেপুটেশনে। নিজের নয়ন যুগল ও যেন চাইছিল না কোনো সমাধানের রাস্তা নজরে আসুক। বৈঠকে পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধি সৈয়দ নওয়াব আলি চৌধুরীর মলিন বদনটা ভুস করে ভেসে ওঠে চোখের সম্মুখে। অস্থির নবাব ফের পায়চারী করেন। ওনার ললাটে দুশ্চিন্তার বলি রেখা সুস্পষ্ট। আচ্ছা কোথাও কি হিসেবে কোন ভুল ছিল? কি জানি? হলেও হতে পারে। সব সময় কি কোষাগারের প্রবৃদ্ধি একই হারে হয়? উঁচু নিচু হয়ে যাওয়াটা তো একেবারেই অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। নবাব ফের ভাবনার সমুদ্রে ডুব দেন। এবার প্রচেষ্টা চলল “মুসলিম অল ইন্ডিয়া কনফেডারসী” প্রতিষ্ঠা করবার। আলোচনার খসরা সব বর্ধিত করে সেই স্বপ্ন রেণু সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেবার জন্য কি নিরলস শ্রম দিয়েছে সবাই! বুদ্ধীদীপ্ত নেতা ফজলুল হক সাহেবের কপালেও জমে উঠেছিল চিন্তার ভ্রু কুটি। তবুও সান্ত্বনা, শেষ অবধি পদ্ম কুঁড়ির মত জন্ম নিল “অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ”। নবাবের চৌকষ মস্তিষ্কে চিন্তা মাকড়সা তার জাল বুনে চলেছে। একটা জাতির উন্নয়ণ ঘটে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। জাতি গত বিভেদ উন্নয়নের রাস্তায় ধ্বস নামাতে বাধ্য। নবাব চাইছেন জাতি বিভেদ ভুলে সবাই সমৃদ্ধির পথে হেঁটে যাক। কিন্তু তা কেন যেন সম্ভবপর হয়ে উঠছিল না কোন মতেই। কিন্তু, ঐ যে বিভেদের নীল বিষ! যা এক বিন্দুতে মিশতে দিচ্ছে না কাওকেই।
এই তো সেদিন কার্জন হলে ছোট লাট হেয়ারকে বিদায় দিয়ে মি: বেইলি কে স্বাগতম জানানোর অনুষ্ঠানে নবাব ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্ট স্থাপনার দাবি রাখেন। নবাবের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। রাজনীতির চালে তিনি অতটাও অপটু নন। “ইংরেজ ভারত ছাড়” আন্দোলন ক্রমশ জোড়াল হচ্ছে। দাবানল ছড়িয়ে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কংগ্রেস প্রভাবিত ভারতের জাতীয়তাবাদ রুখতেই যে ঔপনিবেশিক শক্তি তাঁকে সু কৌশলে ব্যবহার করছে তা নবাবের মস্তিষ্ক ধরে নিয়েছে সহজেই। কিন্তু ঢাকার উন্নয়ন সাধনের জন্য তিনি পরিকল্পনা নিচ্ছেন অতি সতর্ক ভাবে। বঙ্গ ভঙ্গ সমর্থন করবার বিচক্ষণতার কারণে তিনি ইংরেজদের কাছে ইতি মধ্যে বেশ আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকার বুকে গজিয়ে উঠছিল নব্য অফিস আদালত, ইট কংক্রিটের ভবানাদি। পরিবারের সুযোগ্য সদস্য ও ঢাকার মেয়র খাজা মোহাম্মদ ইউসুফ জান কতৃক ঢাকার পয়োপ্রনালী আধুনিকরণ হয়ে ঢাকা আধুনিক বিশ্বের মানচিত্রে নবীন শহর হিসেবে নিজেকে অংকুরিত করতে শুরু করেছিল। আবারও মুষড়ে পড়েন নবাব। স্বস্তি যে রইল না। বিষাক্ত দংশনের বিষ ছড়িয়ে পড়ল দ্রুতই। পঞ্চম জর্জ বঙ্গ ভঙ্গ রদের ঘোষণা দেবার পর নিজেকে চরম দুর্বল বলে মনে হতে শুরু করেছে। এমন কিছু একটা দিল্লীর দরবারে ঘটতে যাচ্ছে সেটা আঁচে এসেছিল। তাই অজুহাত দাঁড়া করিয়ে সুকৌশলে এড়াতে চেয়েছিলেন তিনি। বাঁধ সাধল সম্রাটের পক্ষে লর্ড হার্ডিন্জের দেওয়া পত্রটি।
কি হাস্যকর! অবুঝ শিশুকে বুঝ দেবার মত করে তাঁর গলাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো “গ্রান্ড কমান্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পারার” খেতাব। এ যেন শাঁখের করাত। অনুরোধে ঢেঁকি গিলে নেবার মত সেই ফাঁসির রজ্জু চুপ চাপ পড়ে নিলেন গলে। আনমনে টেবিলে রাখা সেই পদকের দিকে গম্ভীর দৃষ্টি ফেলেন নবাব। এই তিরতির আলোর মাঝে যেন ওটার অস্তিত্ব এক প্রহসনের হাসি হেসে ওঠে। ক্রুদ্ধ নবাব প্রবল আক্রোশে ওটাকে ছুঁড়ে মেরে ফেলে দিলে জৌলুস ভরা কক্ষের কোন তমসা কোণে হারিয়ে যায় ওটা।
নবাব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। ওনার আক্ষেপ পূর্ণ চিত্ত আজ বড্ড উত্তাল। নবাব ঠাহর করেন আর ভেবে যেতে থাকেন, আফসোস বৃহত্তর মুসলিম গোষ্ঠীর মাঝে রাজনৈতিক, আর্থিক ঐক্যতার দৈন্যতা প্রচুর। এই অর্ধ শিক্ষিত খোঁড়া গোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা খুব প্রয়োজন। নচেৎ ফলাফল যে শূন্যের কোঠাতে রয়ে যাবে। এত সবের পরেও দিল্লী দরবারে মুসলিম সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষণের দাবির মাঝে বড় লাটের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিটিও মুক্তো মালার মাঝের মুক্তো দানার মত পুড়ে দিয়েছেন।
সেই প্রচেষ্টা সফলও হয়েছে পরওয়ারদিগারের ইচ্ছাতে। তাই তো আজ ঘন আঁধারের মাঝেও ক্ষীণ আশার আলোর সলতে আচমকা জ্বলতে দেখা যায়। নবাবের আঁখি জোড়া চকচক করছে। আগামী ২৯ শে জানুয়ারি বড়লাট হার্ডিন্জ ঢাকায় এসে তিনদিন অবস্থান করবেন। ভাইসরয়ের সম্মানার্থে শাহবাগে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন নবাব। সেই সঙ্গে প্রচেষ্টা চালাবেন আরও একবার। পূর্ববঙ্গের এক টুকরো জমিনের ওপর তিনি প্রতিষ্ঠা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ব বঙ্গের অগ্রগতির চাকা সচল করতে হলে পশ্চাৎপদতা পরিহার করে আধুনিক শিক্ষার গতি ধারা তৈরী করতে হবে। পূর্ব পুরুষ নওয়াব আহসানউল্লাহ বিজলীর আলোর বন্যা নামিয়েছিলেন ঢাকার আঁচল জুড়ে। তার উপস্থিতি ছিল প্রত্যক্ষ। এবার প্রজ্জ্বলনের পরোক্ষ কাজটা তার করে নেবার পালা। শিক্ষার আলোকবর্তিকা যে করেই হোক জ্বালিয়ে তুলতে হবে এই বাংলার বুকে। তা না হলে অবনতি অনিবার্য।
হাতে যে অনেক কাজ বাকি পড়ে এখনও। সঠিক পরিণতি মিলবে তো সব মুছিবতের? টলে যাবে তো এই তিমির কালো নিশি? রাত্রি গভীর আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশই। বিরাট এই প্রাসাদের জাফরি কাঁটা অলিন্দে অলিন্দে সব জ্বলন্ত দীপ গুলো ও যেন ঝিমিয়ে পড়ছে। ক্লান্ত নবাব রৌপ্য অলংকৃত সুডৌল আসনে নিজেকে এলিয়ে দিয়ে চোখ মুদে নেন। এই কক্ষটি তাঁর অতি প্রিয়। নিজের সঙ্গে তর্ক যুদ্ধে লিপ্ত হতে হলে তিনি এখানেই ছুটে আসেন। মরহুম পিতা আহসানুল্লাহ তাঁর দিনলিপিতে এই কক্ষের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন বড় সুন্দর ভাবে। নানা রকম আনন্দ আয়োজনে এক টুকরো আনন্দ জলসা বসে এই কামরাতে। সুদূর ভারতের আনাচ কানাচ থেকে আগত গুণী সব উস্তাদ শিল্পী তাদের কন্ঠে ঝড় তুলে নেয় এই কক্ষে। সেই সাথে তাঁরা সকলে এক খণ্ড অবকাশ ও উপভোগ করে নেন খুব। আজ হঠাৎ যেন অদৃশ্য কোন উৎস থেকে সুরের মূর্চ্ছনা নবাবের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে। নবাব সচকিত হয়ে ওঠেন। উৎসুক নবাব কান পেতে নেন অধীর আগ্রহে। তাঁর সমস্ত আকর্ষণ ঐ অলৌকিক সুরের ঝর্ণাধারায় যেয়ে মিশে যেতে চাইছে। নবাব একনিষ্ঠ শ্রোতার মত সেই তাল শুনছেন। মন প্রাণ দিয়ে অনুভব করতে চাইছেন সেই সুর। যেন এই জাদুর ছন্দে লুকিয়ে রয়েছে কোন সে অমোঘ সংকেত। কারুকার্য শোভিত দেওয়ালে স্বীয় ছায়া মূর্তি নজরে আসে নবাবের। সেদিকে দেখে নিয়ে নিজেকেই যেন নিজে প্রশ্ন করেন দুর্গ প্রতিম বাংলার নবাব সলিমুল্লাহ। অবরুদ্ধ চিত্তে পাক খেতে থাকে একটা প্রশ্ন। কিসের সংকেত এটা? কোন সমাপ্তির না কি সেই অমূল্য প্রচেষ্টা? যার ওপর ভর করে গড়ে উঠবে কোন এক নব অধ্যায়ের সূচনা।
সোনিয়া তাসনিম খান : কবি ও লেখক