ভাবনাপঞ্জি, কিস্তি—২

১১ সেপ্টেম্বর
‘শেয়াল নাচে তাইরে না
আজ সে যাবে বাইরে—না…’
লুৎফর রহমান সাহেবের ছড়া। আজ একটু বেরবো। বাগানবিলাসের খোঁজে। লেখালেখির জন্য আয়োজন করে আজকাল বের হচ্ছি—ভাবতেই কেঁপে উঠি শিহরণে।
ঢাকায় ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে যখন থাকতাম, লেখালেখির ওপর অনেকদিক থেকে একসাথে চাপ আসে—ছেড়ে দাও, বাদ দাও…। তিতিবিরক্ত হয়ে বাদই দিয়ে দিলাম। কদিন পরে দেখি ছন্নছাড়া ভাব এতটাই বেড়ে গেছে, দমবন্ধ লাগতে শুরু করেছে তখন। আমি লেখা বাদ দিয়েছি কেন—এই মর্মে নতুন একটা লেখা দাঁড় করিয়ে ফেললাম।
সেই দিনগুলোর রক্তের উত্তাপ এখন আর নেই। কিন্তু মগজকে চাপে রাখার ব্যামো আমার বুঝি সারল না।
লেখা এখন আর জোর করে আনি না, সত্যি। তবু চারপাশের আশ্চর্য স্থবিরতা আমার স্থিরতার রাশ টেনে ধরে বলে—কী রে?! কেমন আছিস?!
আমি সন্তোষজনক কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।
১২ সেপ্টেম্বর
(বয়সে বড়ো বা সমবয়সী, তুলনামূলক বেশি জ্ঞানী) মানুষ অপর একজন মানুষকে (বয়সে ছোটো বা সমবয়সী, তুলনামূলক কম জ্ঞানী) বিনা হিসাব, বিচার এবং বিবেচনায় কখনো সখনো কেন ‘গোরু’ বলে, তা হয়তো প্রচলিত ধারা আমাদেরকে বলতে পারবে। এই ‘গোরু’ ডাকের পেছনের কারণ বোধকরি দ্বিতীয় মানুষটির বিচার বিবেচনায় ছোটোখাটো খামতি।
আসলে গোরুর মধ্যে যথেষ্ট বিচার-বিবেচনার বোধ রয়েছে বলে প্রথম কাল নিজের চোখে দেখলাম।
লাউকাঠি খেয়াঘাটের ইজারার ছাউনির দুটো অংশ। একদিক থেকে যেতে আসতে উদ্যত কেবল মানুষ ভাড়া দিয়ে যায় আসে। অন্যদিক দিয়ে যায় আসে মালপত্র এবং মোটরযুক্ত বা মোটর বিযুক্ত সাইকেল। এই অংশটির দু’পাশে ঝুলন্ত দুই দড়ির ফাঁস বরাবর ঢুকিয়ে দেওয়া বাঁশ বা কাঠের আগল।
সেই আগলের নিচ দিয়ে নুয়ে বৌ-ঝিরা সকাল-বিকেল দুবেলা ঘাটে গিয়ে কলসের তলা এবং ভেতর ধুয়ে তাতে করে জল ভরে নিয়ে আসে।
নুয়ে যায় পানব্যাবসায়ী—মাথায় পানবোঝাই সাজি কলাপাতায় ঢেকে দেওয়া। ঘরামি—দুহাতে টিন পেচিয়ে গুনায় বাঁধা, অথবা সদ্য কাটা কাঠ। হাঁস-মুরগি বিক্রেতা—মাথার সাজিতে বাহ্য এবং খুদ-কুরার সুগন্ধে(!) মুখর করে চলা গৃহপালিত পাখপাখালির দল আর প্যাকপ্যাক, কক্ক কক্ক, বেসুরো বেরসিক আওয়াজ।
সুযোগ পেলে এক হাতে আগলের ফাঁস ছাড়িয়ে পিঠ সোজা করেই হেঁটে যায়—খুব কমই।
গোরুর ত আর হাত নেই, চারপায়ে হেলেদুলে হেঁটে এসে সন্তর্পণেই আগলপথ এড়িয়ে পাশের লেন চেঞ্জার দিয়ে ডানে সরে বেরিয়ে যায় নদীর দিকে। গোরুর পয়সা দেবার ক্ষমতা নেই। আছে দুধ-মাংস-চামড়া-শিং-বাহ্য। ইজারাদার হয়তো অমনই কোনো গোরুর মাংসে ভাত খেয়ে, গোরুর দুধ খেয়ে, চামড়া বেচার পয়সা গুনে বুকপকেটে ঢুকিয়ে বাড়ি ফিরে গোবর দিয়ে ঘৈডা বানিয়ে শুকোতে দিয়ে এই খেয়াঘাটে বসেই মাথায় চিরুনি করে আর সহকারিকে বকে—এ গোরুডা! যোগ-বিয়োগও হিক্কা আও নাই, বইছো কেরায়া ইসাব করতে?! দে এম্মে দে!
সহকারির মুখ কালো হয়ে যায়। চিক্কণ কালো দুধেল গাইটি তখন লেজ নাড়াতে নাড়াতে নদীর ধারের ঘাসে মুখ বোলাতে ব্যস্ত।
১৩ সেপ্টেম্বর
আজ শবনমস্রষ্টার জন্মদিন। যখন ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে থাকতাম, আমাদের সিনিয়র রুমমেট আজম ভাইয়ের টেবিলে দুটো বই দেখেছিলাম—‘দিঘীর জলে কার ছায়া গো?’ আর ‘শবনম’। ২০১৩ বা ২০১৪ সাল বোধহয় তখন। আমি প্রথমটা পড়ি। দ্বিতীয়টা সযতনে এড়িয়ে যাই। সেই শবনম আজও আমার পড়া হয়ে ওঠেনি। প্রাথমিক ভাবনা—ঢাকায় গিয়ে সবার আগে ‘শবনম’ কিনব, তারপর নতুন জীবন শুরু করব।
পড়াশোনায় আমার গুটিকয় কুসংস্কার আছে। তার মধ্যে জরুরি একটা কুসংস্কার হচ্ছে—কোনো বই পড়া শুরুর আগেই একটা পূর্বধারণা করা। বিশেষ করে আদর্শ হিন্দু হোটেল পড়তে নিয়ে এ ব্যাপারটায় বেশ ভুগেছি। এটা বোধহয় এখন লেখায়ও আসতে চলেছে। শুরুতে যে চরিত্রের নামই ছিল না, তাই নিয়ে এখন বিস্তৃতি বহুদূর আমার। চরিত্রের ওঠানামা সম্পর্কে শুরুতে যা ভেবেছি, সময়ের সাথে সে ভাবনায় খুচরো কিছু পরিবর্তন আসছে—এটা যদি স্বাভাবিক হয়, তবে অস্বাভাবিকভাবে চাচ্ছি আমি, আমার প্রাথমিক ভাবনায় আবার ফিরে যেতে। যেটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে। বেশ। ভোগাচ্ছেও। সম্ভবত আমি প্রাথমিক ভাবনায় স্থির থাকার দিকেই এগোচ্ছি। এতে অদ্ভুত যে দোটানাটা আমাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করছে, তার থেকে মুক্তি কোথায়?
১৪ সেপ্টেম্বর
আমি ঢাকায় পৌঁছে গেছি। আমার প্রথম গন্তব্য প্রথমা প্রকাশনীর শাহবাগ শাখায়। দু’শোর ওপর টাকা আটকে আছে। ঐ টাকায় আরো বই পাব। আমাকে নীলক্ষেতে নিয়ে এসেছে মোটরওয়ালা। ভালোবেসেই কিছু বললাম না। লাকি স্ট্রাইক ধরিয়ে বইয়ের মার্কেটে ঢুকতে আমার বন্ধুর সাথে দেখা।
কফিশপ না, ভার্সিটি ক্যাফেটেরিয়ায় যেয়ে কথা বলব। গেটের ভেতর ডান পা রাখতেই মাস্কপরা এক পরিচিতমুখ একটা কী যন্ত্র কাপালে ঠেকিয়ে ট্রিগার না টিপতেই বিপ শব্দে সবুজ বাতি জানান দিল—জ্বর নেই।
আমরা বোধহয় একটু আগেই ঢুকে গেছি। কিছুই প্রায় খোলেনি। মাথাটা ভারি ভারি লাগছে। একটা দরজায় টোকা দিতে বুঝলাম আমরা ভেতর থেকে আলগা। রিয়াদের মাথায় যে ক্যাপটা দেখছিলাম এতক্ষণ, সেটা নেই। কী করেছে ও-ই জানে!
দুই পাল্লার দরজা আমাদের ধাক্কায় ভেতরের দিকে সরতে সরতে এক ধরণের ক্যাচ-ক্যাচ অনুকারে ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করে ফেলে। ভেতরে চোখ পড়তে আঁৎকে উঠি আমরা—মাকড়সা তার জাল বিস্তার করে পুরো ক্লাসরুম ছেয়ে ফেলেছে। জালের স্তরে স্তর পড়ে আরো পুরু হয়েছে। পুরুত্ব এত বেশি যা শীতের সকালের কুয়াশার ঘনত্বের সাথে তুলনীয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে সব জালস্তর কেটে গিয়ে দেখি আমাদের চেনাজানা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা প্রাণপণে সরিয়েছেন করোনাজঞ্জাল। মাকড়সার জাল আমাদের মনের ভেতরকার হতাশার প্রতিচিহ্ন।
ঘোর কাটতে কিছুটা সময় লাগল। আমাকে ডিন স্যার একবার ক্লাসে বকেছিলেন—সেই থেকে ক্লাসে ঢুকবার আগে আমি মাথার ক্যাপ খুলে ঢুকি। স্বভাবতই মাথায় হাত চলে গেলে দেখি তিনটা ক্যাপ আমার মাথায়।
এতক্ষণ তাহলে আমি ক্যাপ্টেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে গেছি! দুই-তিনটা ক্যাপ মাথায় চড়িয়ে কেমন করে ঠাণ্ডা মাথায় দুটো কঠিন সিরিজ জিতে বিশ্বকাপে নিয়ে যাচ্ছে দলকে, এটা আমার কাছে রহস্য।
ওঁ তো সেলিব্রিটি। কিন্তু যখন ব্যক্তিজীবনে আয়নার সামনে দাঁড়ায়, ওঁর ভেতরের রিয়াদ কি ওরকমই খ্যাপাটে? ওঁর মধ্যেও কি কখনো বাচ্চামি ভর করে?
এরকম কয়েকটা প্রশ্ন গুছিয়ে ওঁর কাঁধে হাত দিতে যাব, তখনই দেখি শরীরটা অসম্ভব রকম দুর্বলতায় অসাড়।
আরেকটু দীর্ঘ যদি হতো ভাতঘুমগুলো, আমাদের দিবাস্বপ্নগুলো বাস্তব হতো! হয় না, শুধু ক্লান্তিই বাড়ে।
১৫ সেপ্টেম্বর
শুরুতে ঢাকায় উঠে থেকেছি বহুদিন কামরাঙ্গীরচরে। তারপর মূল ঢাকার বহু ঘাটের জল খেয়ে গোছ গাড়লাম কেরানীগঞ্জ। মিরপুরের আগে আমার বসত ছিল ওখানেই কিছুদিন।
এতদিন বেশ করে ভাবতাম জীবনেতিহাসের ওই অংশটা আমি ভুলে যেতে চাইব যেকোনো মূল্যে। মানুষ ভাবে এক, হয় আর। আমি মোমিন মিয়াকে কেরাণীগঞ্জেই সেটেল করেছি। আমার লেখা বরিশালের ডাক্তার কেরানীগঞ্জে ধুলো খেয়েই ফার্মেসি চালায়। রাফসান হাবিব মিয়ার নৌকা থেকে কেরানীগঞ্জেই নামে।
এতদিন বেশ করে ভাবতাম জীবনেতিহাসের ওই অংশটা আমি ভুলে যেতে চাইব যেকোনো মূল্যে। মানুষ ভাবে এক, হয় আর। আমি মোমিন মিয়াকে কেরাণীগঞ্জেই সেটেল করেছি। আমার লেখা বরিশালের ডাক্তার কেরানীগঞ্জে ধুলো খেয়েই ফার্মেসি চালায়। রাফসান হাবিব মিয়ার নৌকা থেকে কেরানীগঞ্জেই নামে।
তখন যে বাসার তিনতলায় থাকতাম, সেটার মালিকের ছেলে মারা গেছে বহুবছর। সেই ছেলেকে তারা স্মরণ করে লোক খাইয়ে। খাবারের আয়োজনে এলাহি কারবার!
একটা বিয়ে খেয়েছিলাম স্থানীয় একটা কমিউনিটি সেন্টারে, একটা বুড়িগঙ্গার পাড়েই শামিয়ানার নিচে পাতা চেয়ারটেবিলে বসে। খেয়েছিলাম মিলাদের খাবার। বরিশালের ডাক্তার চরিত্রটা ঘটনাক্রমে আমার বাবার দিকের আত্মীয়দের একজন। তার সুবাদে ঐদিককার লোকেদের খাদ্যাভ্যাস, সামাজিকতা, চিন্তাভাবনার টুকিটাকি যা জেনেছি, তার একটা প্রতিফলন আসতে চলেছে অল্প করে, আমার বৌদ্ধিক সন্তান প্রস্তাবিত উপন্যাস ‘অভিসার’-এ।
সময়ের সাথে মানুষের ভাবনাচিন্তায় কত কত রঙের প্রলেপ যে পড়ে, টের পেয়ে চলছি।
১৬ সেপ্টেম্বর
অণুগল্প হোক বা গল্প, বড় কিংবা ছোট, অথবা উপন্যাস—কথাসাহিত্য লিখতে গেলে দেখতে হবেই। দেখতে হবে জীবন। আর ভাবতে হবে—এখনই দেখা ব্যক্তি অথবা ঘটনাটির ব্যাপ্তি কতদূর যেতে পারে। আপনি যত কল্পনাবিলাসী হবেন, তত ক্ষতি এক্ষেত্রে। বাস্তবমুখী হতে হবে অন্তত এই ভাবনায়।
ধরেন, আপনি যদি একটা সেলুনে চুল কাটাকুটির গল্প লিখতে চান, আপনার জানতে হবে ঐ ঘরটাতে কী কী জিনিস থাকে। ঐ ঘরের দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোর মধ্যে স্টাইল এবং ধর্মের পাশাপাশি অবস্থানের জায়গাটা আপনাকে ডিটেইলে ভাবতে হবে। দেয়ালের একটু নিচে সাঁটানো বিশাল আয়না, তাতে দেখতে পাবেন অসীমতক আয়না, আয়না এবং আয়না। মাথায় রাখতে হবে। মাথায় রাখবেন বেসিনে একটা মাথা ঠেলে ঢুকিয়ে ধুয়েমুছে মাথা আর মুখ সাফ করলে কতখানি বা কতটুকু ময়লা ওই স্যানিটারি প্রোডাক্টটার গায়ে জমা হয় এবং তা কীভাবে পরিস্কার করে নাপিত।
নাপিত আপনার চুলদাড়ি এক লেভেলে চাছতে চাছতে তার চাপার লেভেলও ঠিক রাখছে। হিল্লি-দিল্লি ঘুরে আসছে আপনার গালে ক্ষুর চালাতে চালাতে। শেষকালে আপনার গালে টিস্যু না বুলিয়ে পুরোনো, নোংরা ধোয়া-আধোয়া কোন্ ধরণের কাপড় বোলাতে চেয়ে আপনার মেজাজের কত ডিগ্রি উত্থান দেখছে নিজের চোখে, আপনার লেখকের চোখ সেদিকেও রাখতে হবে। রাখতে হবে অপেক্ষমাণ জনসমষ্টির রোষের ওপর চোখ। কে বিরক্ত হয়ে কী গালি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ক্ষৌরকর্ম না সেরেই, তা যেমন দেখবেন, দেখবেন কে কোনো ছুতোয় অবৈধভাবে সিরিয়াল ভেঙে বসায় কার কার বিষদৃষ্টির আগুনে কতটুকু জ্বলল বা জ্বলল না।
আপনাকে নাপিতের পরিবারের ব্যাপারেও আন্দাজে হলেও জানতে-বুঝতে হবে। তার ছেলে বা মেয়ে টাকা নিতে বা খাবার দিতে অথবা অন্য কোনো কাজে এলে কান খাড়া রাখা লেখক হিসেবে আপনার পবিত্র দায়িত্ব।
আপনাকে নাপিতের পরিবারের ব্যাপারেও আন্দাজে হলেও জানতে-বুঝতে হবে। তার ছেলে বা মেয়ে টাকা নিতে বা খাবার দিতে অথবা অন্য কোনো কাজে এলে কান খাড়া রাখা লেখক হিসেবে আপনার পবিত্র দায়িত্ব।
অন্যান্য কাস্টোমারের পরিবারের গল্পের আশায় থাকলে আপনাকে ভালো শ্রোতা হতে হবে।
সেলুনের গেইটে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি কান খোলা রাখবেন নাপিতের ফোনালাপে। তার কাছে কল আসে। কল এলে আপনার ক্ষৌরকর্ম সেরে সে বাসায় গিয়ে কাস্টোমার অ্যাটেন্ড করবে।
খেয়াল করবেন টেলিভিশনের কোনো খবরে তার কেমন প্রতিক্রিয়া। বিশেষত রাজনৈতিক খবরে তাকে কিছু বেশিই সরব পেতে পারেন।
একইভাবে রিক্সাচালকের গল্পের সন্ধানে আপনাকে বেশি সময় দিতে হবে বোধকরি রিক্সার গ্যারেজে। রিক্সায় প্রচুর ঘুরবেন। ভালো শ্রোতা হলে গল্প এমনিতেই আসবে।
১৭ সেপ্টেম্বর
প্রজেক্টের স্বাভাবিক নিয়মে পড়া চালু রাখলে আমি আজ পর্যন্ত ৫০০ পৃষ্ঠার মতো (কমবেশি) পড়ে ফেলতাম হয়তো। আমার কাছে একটা বাজে ছাপার তারাশঙ্কর সংগ্রহ আছে (শ্রেষ্ঠ উপন্যাস)। দীর্ঘদিনের পাঠক্লান্তির সাথে ছাপার নিম্নমান যোগ হয়ে আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে ছুটির সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করেছে।
আমার ছুটির সতেরতম দিন চলে গেল আজ। পাঠপঞ্জির পরিবর্তে ছুটির মধ্যে ভাবনাপঞ্জির এটা সতেরতম পোস্ট বোধহয়।
এ কদিনে আমি পড়েছি একটা উপন্যাস। মাত্রই শেষ হলো। বয়ন সমকালীন উপন্যাস বিবেচনায় অনেকটা শক্তিশালী ভাষাশৈলীর লেখা। প্রমোশন এসব উপন্যাসের হওয়া দরকার, হয় ‘জোছনার মাটি অমাবস্যা চেনো?’ অথবা ‘আপনি আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ’ ধরণের উপন্যাসের।
অসীম আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করে বিবমিষায় ভুগেছি বহু সমকালীন লেখা পড়ে। ভুলেও এসব লেখকের আর কোনো উপন্যাস কিনে বাজেটলস করতে চাইনি।
‘বয়ন’ নিয়ে কোনো প্রকার উচ্চাশা রাখিনি। পড়াশেষে ‘বয়ন’ আমাকে ভাবিয়েছে—শ্রেণিসংগ্রাম ছাড়াও এ জাতীয় উপন্যাস হয়? আমি মেনেছি, হয়।
সতের দিনে পড়েছি যেসব গল্প—
অগল্পের পরের গল্প—শাহাদুজ্জামান (ঢাকার পেশাজীবী চাবিওয়ালা)
একটি রিপোর্ট—শাহেদ আলী (জুটিহারা চড়ুইয়ের আবেগ)
দম্পতি—শাহেদ আলী (পরিবারকে আগলে রাখা)
আহ্বান—বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাৎসল্যরস)
মধুমতী—পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের প্রথম গল্প)
(প্রেম, বিধবা বিবাহ, ট্র্যাজেডি)
তারিণী মাঝি—তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (জীবনের তৃষ্ণা)
নিমগাছ—বনফুল (সমাজ ও পরিবারে নারী)
নিজের মৌলিক লেখায়ও কিছুটা অগ্রগতি করেছি।
ছুটি সেভাবে বর্ধিত হবে না আর। নিয়মিত পাঠপঞ্জি দ্রুতই ফিরছে। ভাবনাপঞ্জি অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে প্রয়োজনসাপেক্ষে। তবে একেবারে বন্ধ হচ্ছে না।