কোপা আমেরিকা স্বপ্নের ফাইনালে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা

কোপা আমেরিকায় স্বপ্নের ফাইনাল। আর কয়েক ঘণ্টা পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের সব থেকে হাইভোল্টেজ ম্যাচ ব্রাজিলের বৃহত্তম স্টেডিয়াম রিউ দি জানেইরুর মারাকানা স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। মারকানায় মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। পেরুকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে নেইমারের ব্রাজিল। অন্যদিকে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে মেসির আর্জেন্টিনা। এই নিয়ে কোপার ফাইনালে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি দুই দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বৈরথে বল পায়ে মাঠ মাতিয়েছেন গারিঞ্চা, পেলে, মারাদোনা, বাতিস্তুতাদের মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা। যাঁদের নান্দনিক ফুটবল কেড়ে নিয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের মন। সেই ধারাবাহিকতায় মেসি-নেইমারদের নিয়েও উত্তেজনা তুঙ্গে। আরও একটি সুপার ক্লাসিকোর মঞ্চ তৈরি।
মুখোমুখি বর্তমান ফুটবলের দুই সুপারস্টার মেসি ও নেইমার। এই একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে গোটা ফুটবল বিশ্ব। মেসি-নেইমার দ্বৈরথ ঘিরে চড়ছে পারদ। ফুটবলের চিরন্তন লড়াইয়ে কে এগিয়ে দাঁড়িপাল্লায় মেপে নিচ্ছে ফুটবলমত্ত দুই বাংলার বাঙালিরা। ইতিমধ্যেই এই ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা চরমে। সোশ্যাল মিডিয়াতে উপচে পড়েছে একাধিক পোস্ট। পৃথিবীর এই কঠিন দুঃসময়ে সব কিছু ভুলে দুই বাংলার ফুটবলপ্রেমী মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত – ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে এক ঝলক টাটকা বাতাস। সেই বিশুদ্ধ নির্মল আনন্দ লাভের অপেক্ষায় আপামর বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীর সঙ্গে গলা ফাটাতে প্রস্তুত ফুটবল পাগল বাঙালি।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ মানেই বাঙালির হৃদয়ের ম্যাচ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ, দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার ম্যাচ। লাতিন আমেরিকার ফুটবল জাদুর ঝলকানিতে চায়ের দোকান থেকে ড্রয়িং রুম, জমজমাট তর্কবিতর্ক। কোভিডের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পাড়ায়-পাড়ায় নীল-সাদা বা হলুদ-সবুজ পতাকায় মুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ মানেই বাঙালির হৃদয়ের ম্যাচ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ, দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার ম্যাচ। লাতিন আমেরিকার ফুটবল জাদুর ঝলকানিতে চায়ের দোকান থেকে ড্রয়িং রুম, জমজমাট তর্কবিতর্ক। কোভিডের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পাড়ায়-পাড়ায় নীল-সাদা বা হলুদ-সবুজ পতাকায় মুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাঙালির কাছে এই ম্যাচের তাৎপর্য কোথায়? সুদূর লাতিন আমেরিকার দুটি দেশ কী করে হয়ে উঠল বাঙালির এত কাছের!

বাঙালির আবেগের খেলা, প্রাণের খেলা ফুটবল। জীবনের দুঃখ-কষ্ট- যন্ত্রণা-বেদনা-হতাশা এক নিমেষে মুছে যায় সবুজ গালিচায় ফুটবল জাদুকরদের পায়ের শৈল্পিক কারুকাজে। লাতিন আমেরিকার সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরের তটে। ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপে পেলের জাদু দেখে বাঙালি প্রথম আপন করে নেয় ব্রাজিলকে। পেলে-গ্যারিঞ্চাদের মধ্যেই বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা খুঁজে নেন বেঁচে থাকার আনন্দ। সেই পেলে ১৯৭৭ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর কলকাতায় কসমসের হয়ে খেলতে আসেন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। ইডেনের দর্শকাসন উপচে পড়েছিল ফুটবল সম্রাটকে একবার দেখার জন্য। ফুটবল পাগল বাঙালির জীবনে ব্রাজিলের সবুজ- হলুদের সাম্বা নাচ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে। আর সাম্বার তালে তালে বাঙালির হৃদয়-মনও নেচে উঠে।
অপরদিকে, ১৯৮৬ তে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন এক অদ্বিতীয় প্রতিভা, নাম দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। তিনি যেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। বাঁ পায়ের জাদুতে মোহচ্ছন্ন করে ফেলেছিলেন আপামোর বিশ্বকে। একার হাতেই দেশকে করেছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। বাঙালি খুঁজে পেল তাঁর নতুন আইকনকে। ভাগ হয়ে গেল ভালোবাসা, আবেগ। আজন্ম আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে গেলেন বহু বাঙালি। ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনাও এসেছিলেন কলকাতায়, একবার নয় দু’বার। তবে খেলা ছাড়ার অনেক পরে। একবার ২০০৮ সালে ও পরেরবার ২০১৭ সালে। তিনি চাক্ষুস করে গিয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে কলকাতার মানুষের উন্মাদনা, পাগলামি।
বর্তমান ফুটবলের দুই সুপারস্টার মেসি ও নেইমার। মাঠের বাইরে অভিন্ন হৃদয় বন্ধু হলেও মাঠে – বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী। তবে আর্জেন্টিনার হয়ে এখনো বড় কোনো ট্রফি জিততে পারেননি মেসি। তাঁর হাতে ট্রফি দেখতে চান বহু ফুটবল সমর্থকই। এটাই হয়ত দেশের হয়ে কোপা কাপ জেতার শেষ সুযোগ মেসির সামনে। এখনো পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় নেইমারের থেকে বেশি ছন্দে রয়েছেন মেসি। গোল করছেন ও করিয়েছেন। ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতায় একাধিক রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন লিও। ফাইনালে রয়েছে একাধিক রেকর্ড গড়ার সুযোগ।
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এই দুইটি দলের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অনেক সময় “দক্ষিণ আমেরিকানদের যুদ্ধ” বলা হয়। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মধ্যে ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়, উভয় দেশে খেলাটি জনপ্রিয় হওয়ার আগেই। অতীতে যুদ্ধ ও ঝামেলা এইসব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই লড়াই হতো।
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এই দুইটি দলের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অনেক সময় “দক্ষিণ আমেরিকানদের যুদ্ধ” বলা হয়। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মধ্যে ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়, উভয় দেশে খেলাটি জনপ্রিয় হওয়ার আগেই। অতীতে যুদ্ধ ও ঝামেলা এইসব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই লড়াই হতো। তবে এই দ্বন্দ্ব পরিণত হয় ফুটবল ম্যাচে। তারপর থেকে ফুটবলের মাঠের লড়াই মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। খেলায় কোন দলই পরাজয় বরণ করতে চায়না। বর্তমান সময়ে খুব কম মানুষই দেশ দু’টির মধ্যকার অতীত যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার কথা স্মরণ করে।

ফুটবল ময়দানে এই লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালে ২০ সেপ্টেম্বর। সেখান থেকে ফুটবলের এই জনপ্রিয় দ্বৈরথ এখনো পর্যন্ত চলে আসছে বিশ্ব দরবারে। ফিফার হিসেব অনুযায়ী এরপর থেকে ১০৭ বছরের ঐতিহাসিক দ্বৈরথে এখনো পর্যন্ত দল দুটি ১০৭ টি খেলায় অংশগ্রহণ করেছে (যুব দলের খেলা ছাড়া)। এই ১০৭টি খেলার মধ্যে ৩৪ টিতে জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা, ৪৮টিতে জয় পেয়েছে ব্রাজিল। মোট গোলের ১৬১টি করেছে আর্জেন্টিনা এবং ১৬৬টি করেছে ব্রাজিল। শুধুমাত্র বিশ্বকাপের খেলা হিসাব করলে তাতে ব্রাজিল ২টি জয় নিয়ে এগিয়ে আছে, একটি খেলা হয়েছে ড্র এবং অন্যটি জিতেছে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, কোপা আমেরিকায় বেশি জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তারা জিতেছে ১৫টি খেলায়, ৮টি খেলা ড্র হয়েছে এবং ৯টি জিতেছে ব্রাজিল। দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা, তারা ৬-১ গোলের ব্যবধানে ব্রাজিলকে পরাজিত করে (বুয়েনোস আইরেস, ১৯৪০)। এছাড়া, তারা ১-৫ গোলের ব্যবধানেও জয় পেয়েছে (রিউ দি জানেইরু, ১৯৩৯)। ব্রাজিলের বড় জয়গুলো হল ৬-২ গোলের ব্যবধানে (রিউ দি জানেইরু, ১৯৪৫ ও ১৯৬০) এবং ১-৪ গোলের ব্যবধানে (বুয়েনোস আইরেস, ১৯৬০)।
১৪ বছর পর বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ২৮ বছর ধরে কোনো শিরোপা জেতা হয়নি আর্জেন্টিনার। সেই ১৯৯৩ সালের পর আর কোনো শিরোপা জেতা হয়নি আর্জেন্টিনার। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। দু’বারই সেলেসাওদের কাছে হেরে শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। ১৪ বছর আগে শেষবার কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির সঙ্গে হেরে আরো একবার স্বপ্নভঙ্গ হয় লিওনেল মেসিদের। পরের বছর চিলির মাটিতে কোপার আসরে টাইব্রেকারে হেরে শিরোপার খুব কাছ থেকে ফিরতে হয় মেসিদের। কোপায় সবশেষ তিন দশকে চমকপ্রদভাবে শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। ১৯৯৭ ও ৯৯ সালে পরপর দু’বার কোপার শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিল। এরপর ২০০৪ ও ০৭ সালে আবারও টানা দু’বার শিরোপা জেতে সেলেসাওরা। ব্রাজিলের চোখে এবার তৃতীয়বারের মতো পরপর শিরোপা ঘরে তোলার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে।
নেইমার দেশের জার্সি গায়ে টানা দ্বিতীয়বার কোপার খেতাব এনে দিতে পারবেন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে, না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের ঘরের মাঠেই পরাজিত করে মেসিরা কাপ নিজেদের ঘরে তুলে নিতে পারবে সেটাই দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমিরা অধীর আগ্রহ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রহর গুনছে। আমি সাম্বা ঝড় দেখার অপেক্ষায়, আপনি?
তথ্যসূত্র- আন্তর্জাল ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা
দীপক সাহা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
বইচারিতায় আরও পড়ুন :
ক্যামেরার কারণে আমার কাজের মান ভালো হয়ে গেল : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-১
সেই ছোট-খাটো মানুষটি
কম বয়সে উপন্যাস লিখে গিনেস বুকে নাম লিখালেন সৌদি বালিকা রিতাজ আলহাজমি
কারিনার নতুন বই ‘কারিনা কাপুর খান’স প্রেগন্যান্সি বাইবেল’
আর্জেন্টিনা, ভালোবাসার নীল সাদা নাম
ভালোবাসা ও মায়ার রোকেয়া হল
শুধু মেসির জন্য..
1 thought on “কোপা আমেরিকা স্বপ্নের ফাইনালে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা”