ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার উদ্যম..

সময়টা ২০১৭ সাল। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় আসি। জীবনে প্রথমবারের মত ঢাকায় আসা আমার।ঢাকায় এসে উপলব্ধি করলাম মানুষের জীবন কত ব্যস্ত হতে পারে। সবার গন্তব্যস্থল ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য একটাই। অর্থ উপার্জন করা যেন পরিববারকে নিয়ে একটু ভালো থাকা যায়।
ঢাকায় আসার প্রথম একমাস তেমন পড়াশুনা করতে পারি নি। নতুন পরিবেশ বলে কথা। হয়ত ঐ এক মাস সময় ঈশ্বর আমাকে দিয়েছিল যেন আমি আমার লক্ষ্য নির্বাচন করেতে পারি। সেসময় প্রায়শই ঢাবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসতাম। লালবাসে ওঠা শিক্ষার্থীদের দেখতাম। আর ভাবতাম, ইশ আমি যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতাম। একথা ভাবলেই তখন মনের ভেতর থেকে একটা ভালো লাগার অনুভূতি আসত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটা তখন আমার কাছে স্বপ্নের মতই ছিল। আমি আমার লক্ষ্য নির্বাচন করলাম।
ভর্তি কোচিং এ ঢাবির ভাইয়ারাই ক্লাস নিত। বলে রাখা ভালে আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “ঘ” ইউনিট এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ক্লাসের শুরুতে এবং শেষে ভাইয়ারা তাদের জীবনের গল্পগুলো শুনাত। ঢাবিতে ভর্তির আগের জীবন আর এখনকার জীবন। আমাদের অনেকভাবেই মোটিভেট করত। ক্লাসে অনেক হাসি ঠাট্টাও হত। তখন আরেকটা বিষয় উপলব্ধি করলাম এই যে ভালো কোনো ভার্সিটিতে চান্স পেলে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব।
লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে পড়াশুনা শুরু করলাম। আমার রাতেই পড়াশুনা করতে ভালো লাগে। তাই রাত জেগেই পড়াশুনা করতাম। পড়তে পড়তে যখন মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, তখন টিএসসির কোলাহল চোখের সামনে ভাসত। জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখতাম পিঠে ছোট্টো একটা ব্যাগ নিয়ে লালবাসে করে ক্লাস করতে যাচ্ছি আমি।
লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে পড়াশুনা শুরু করলাম। আমার রাতেই পড়াশুনা করতে ভালো লাগে। তাই রাত জেগেই পড়াশুনা করতাম। পড়তে পড়তে যখন মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, তখন টিএসসির কোলাহল চোখের সামনে ভাসত। জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখতাম পিঠে ছোট্টো একটা ব্যাগ নিয়ে লালবাসে করে ক্লাস করতে যাচ্ছি আমি। অনেক ভালো লাগা কাজ করত। দেশসেরা বিদ্যাপিঠে পড়ার স্বপ্ন কোন শিক্ষার্থীই বা দেখে না বলুন।
মাঝে মাঝেই উৎকট সব স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যেত আমার। যেমন আমার পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি এগুতে পারছি না, পরীক্ষা হল এর দিকে বা আমি জ্যামে আটকা পড়ছি পরীক্ষার সময় এই জাতীয় আর কি। হয়ত আমার সাব-কনশাস মাইন্ড আমাকে এলার্ট করেই যাচ্ছিল সারাক্ষণ আমার লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে।
৬ মাস পরের কথা। অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরনের দিনটা চলে এল। পরীক্ষার আগের রাতে ঘুমোতে পারি নি ঠিকমত। হয়ত অতিরিক্ত উত্তেজনার বশেই। সকালে মা ফোন দিয়ে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এক্সাম দিতে যেতে বলল। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের কথা। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। আমার পরীক্ষা ছিল কার্জন হলে বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এ। কার্জন হলে ঢুকেই দেখলাম আমার মত সহস্র শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন পূরনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে। পরীক্ষা হলে ঢুকেই ঈশ্বরকে স্মরণ করলাম। আমার পিছনে বসে থাকা একটি মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল,”তুমি কি শুধু ঘ ইউনিট এর জন্যই প্রিপারেশন নিছলা?”

আমি তেমন কিছু বলিনি শুধু বলেছিলাম,”প্রিপারেশন নিয়েছি মোটামুটি,দেখি প্রশ্ন কেমন হয়।”
মেয়েটি আমার কথায় কতটুকু ভরসা পেয়েছিল জানি না।
তবে পরীক্ষার চলাকালীন আমার কাছে ৪-৫ টা প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিল। আমি খুব সম্ভবত ৪ টা সঠিক উত্তর বলে দিছি। একটা উত্তর ইচ্ছে করেই হোক আর হিংসের বসেই হোক ভুল বলে দিসিলাম। এরপর এক স্যার এসে মেয়েটিকে এলার্ট করে। কিন্তু আমি নিজের মত পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।
পরীক্ষার ঘণ্টা বাজল। আর মাত্র পনের মিনিট বাকি। কিন্তু আমি ইংরেজি কম্প্রিহেনশনে হাত ই দেইনি এখন পর্যন্ত। কেমন জানি অস্থিরতা কাজ করছিল আমার মধ্যে। এর মাঝেই বেশ কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর ভুল করে ফেলি আমি। কনফিডেন্স পাচ্ছিলাম না উত্তরগুলোতে। তাই বলে কি হাল ছেড়ে দিব? এমসিকিউ.প্রায় অনেকগুলো হাওয়ায় ঢিল ছুড়ছি। যেটা পরে কাল হয়ে দাঁড়ায় আমার জন্য। কারণ প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৩০ করে নম্বর কেটেছিল।
পরীক্ষা শেষ। শুরুর দিকে পরীক্ষা ভালো দিলাম কিন্তু শেষটা ভালো করতে পারলাম না। চোখে মুখে অন্ধকারের আবরণ জড়িয়ে কার্জন হলের বাইরে আসলাম। আমার সমবয়সী এক ভাতিজা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। ওকে দেখেই বোধহয় আমার চোখের কোণে জল বেধে গেল । এগিয়ে আসতেই বলল,” কেমন দিলি পরীক্ষা?”
মনটা খুব খারাপ লাগছিল বলে বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। ওকে শুধু বললাম,”আমার স্বপ্নগুলো বোধয় স্বপ্নই থেকে গেল রে”

ও আমাকে বলেছিল,”আরে এখনও অনেক ভার্সিটিতে পরীক্ষা আছে”। সেদিন বুঝেছিলাম চোখের সামনে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাটা কত কঠিন। শেষবারের মত কার্জন হলের দিকে চেয়েছিলাম আর মনে মনে কাঁদছিলাম।
দুদিন পরের কথা। রাবির ই ইউনিট এর পরীক্ষা শেষ করে মাদারবক্স হল এর গেইট এ ঢুকব এমন সময় আমার ভাতিজা চিল্লায়ে এসে আমারে উপরে উঠাইল। এত খুশি কেন ও। আমি ভেবেছিলাম ওর নিশ্চয়ই কোনো ভার্সিটিতে চান্স হইছে। হাসিমুখে বললাম, “নামা আমারে আর ঘটনা বল।” বলল,”তোর চান্স হইছে ঢাবিতে”
আমার তখনকার অনুভূতিগুলো লিখে ব্যক্ত করতে পারব না হয়ত। অসাধারণ একটা অনুভূতি। আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে সকল স্বজনদের ফোন দিয়ে এই খুশির খবরটা জানাচ্ছিলাম। সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল। আমার নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছিল সেসময়। এই আত্মতৃপ্তির অনুভূতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী জানে। তখন আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছে আমি কোনো সুপারস্টারের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলাম না। সবার আলোচনার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিলাম আমি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হল আমার। হলে উঠলাম। অনেক বন্ধুবান্ধব পেলাম,স্নেহময় সিনিয়র পেলাম, বন্ধুসুলভ শিক্ষক পেলাম, সর্বোপরি একটি নতুন পরিবার পেয়েছিলাম সেদিন যারা আমার বিপদে পাশে দাঁড়াবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়। দিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে এঁকেছি সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন এক গল্প। আমার জীবনবৃক্ষের খুটিরূপ হয়ে থাকবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয়।
উৎসব রায়, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উদ্দেশ্য সঠিক ছিলো বলেই আজ তুমি সফল শুভ কামনা রইলো তোমার জন্য মামা । আজ আমরাও গর্ব করে বলতে পারি যে ভাগ্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ।
সাফল্যের দিকে একধাপ এগিয়েছি হয়ত মামা।
কিন্তু এখনো যেতে হবে বহুদূর,, অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থাকবেন সব সময়