স্বপ্নের রোকেয়া হলে ছাত্রী হিসেবে গর্বিত

প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারাটা একটি বড় স্বপ্ন। আমি নিজেও শত বর্ষের সেরা এই বিদ্যা পীঠে পড়তে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। যখন একটু বড় হলাম,জানতে পারলাম,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকেই কোনো না কোনো হলের সঙ্গে (আবাসিক/অনাবাসিক) যুক্ত থাকতে হয়। এটা জানাতে পেরে উচ্ছ্বাসিত হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার এক খালামণি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর কাছে এই হলে সর্ম্পকে অনেক গল্প শুনেছি। জানতে পেরেছি, এটিই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম আবাসিক হল। তাছাড়া হলটিতে ঘুরে বেড়ানোর সৌভাগ্যও হয়েছিল অনেকবার। যতবার গিয়েছি, ততবারই তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েছি। তখন থেকেই ইচ্ছে করত রোকেয়া হলের ছাত্রী হবার। সৃষ্টিকর্তা আমার ইচ্ছাটি পূরণ করেছেন। যদিও করোনা মহামারীর জন্য প্রায় দু’বছর যাবত বাসায়ই থাকতে হচ্ছে, আশা করি খুব শিগগরিই হল খুলে যাবে,ফিরে যেতে পারব সেই প্রিয় জায়গায়।

রোকেয়া হলের শুরুর কথা :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ববৃহৎ ছাত্রী হল হিসেবে রোকেয়া হলের আসন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। ১৯৩৮ সালে ১০-১২ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। তখন ‘শামসুল হুদা হাউস’ বা ‘চামেলি হাউজ’ নামে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৫৬ সালে ‘উইমেন্স হাউজ’ নামে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে এই উপমহাদেশের নারী জাগরণ ও নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে নামকরণ করা হয় ‘রোকেয়া হল’। এই হলের প্রথম প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আখতার ইমাম। ১৯৬৪ সালে রোকেয়া হলের পাঁচতলা ভবনটি আমেরিকান সরকারের অনুদানে নির্মিত হয়। এ হলের চামেলি ভবনে প্রাধ্যক্ষের অফিস ও আবাসিক শিক্ষকদের অফিস স্থাপিত হয়।

৭ মার্চ ভবন
২০১৬ সালের ৭ মার্চ ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের স্মরণে নির্মিত ১০০৮ আসন বিশিষ্ট। এ আধুনিক ভবনটির উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।
হলের বর্তমান ভবন সংখ্যা:
বর্তমানে রোকেয়া হলে চারটি ভবন রয়েছে। সেগুলো হলো-শাপলা ভবন, চামেলি ভবন, অপরাজিতা ভবন ও ৭ই মার্চ ভবন। রোকেয়া হলের এই চারটি ভবনে কক্ষ সংখ্যা মোট ৫২০টি এবং আবাসিক ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২,৭০০। রোকেয়া হলের সঙ্গে সংযুক্ত ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৭০০০। স্নাতকোত্তর এবংএম ফিল শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ভবন-ফয়জুন্নেসা ভবন।

মুক্তিযুদ্ধে রোকেয়া হল :
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা ও দালালদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তৎকালীন আবাসিক ছাত্রীরা। এছাড়াও বাংলাদেশের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রান্তি লগ্নে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও পুরস্কার
রোকেয়া হলে সারা বছরই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করা হয়, যা মেয়েদের পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব্যগথন, দক্ষতা অর্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজে লাগে। প্রতিবছর মেধাবী শিক্ষার্থীদের রোকেয়া হল কর্তৃপক্ষ ‘রোকেয়া স্বর্ণপদক’প্রদান করেন।
শত বর্ষের ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হল ও যুগ যুগ ধরেটিকে থাকুক-এই আমাদের প্রত্যাশা। বৈশ্বিক মহামারী থেকে মুক্তি পেয়ে একদিন আবার আমরা সবাই আমাদের প্রাণের জায়গায় এক সঙ্গে গাইব, উদযাপন করব বিজয়। ততদিন ভালো থাকি আমরা, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বপ্নের রোকেয়া হল।
লামিয়া আফরোজ রিহা, শিক্ষার্থী, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়