যেভাবে বইয়ের যত্ন নিবেন

‘বই হল বিশ্বাসযোগ্য আয়নার মত যাতে আমাদের মনের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে’–গিবনের এই উক্তিই বলে দেয় যে,বই আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে, প্রসারিত করে আমাদের দৃষ্টিকেও। তাই তো আমরা বই পড়তে ভালোবাসি। ঘরের এককোনায় সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসি আমাদের প্রিয় বইগুলোকে। অনেকেই হয়তো সবসময় বই পড়ার সময় করে উঠতে পারি না, কিন্তু সুযোগ পেলেই বই বের করে পড়তে বসলেই দেখা যায় যে, বইয়ের পাতা হলুদ হয়ে গিয়েছে, পোকায় খেয়ে নিয়েছে, বইয়ের পাতা কালো হয়ে গিয়েছে, অথবা মাঝে মাঝে বইয়ের পাতা ধরতে গেলে ছিঁড়েও যায়।এমনটা হয় সাধারণত বইয়ের যত্নের অভাবে।সব কিছুরই যেমন যত্নের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি বইয়েরও যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।
আপনার প্রিয় বইকে কিভাবে পোকা কাটা, ধুলো জমা, ছিঁড়ে বা বর্ষায় নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে কীভাবে রক্ষা করবেন ও যত্ন নিবেন জেনে নিন:
১.আপনার প্রিয় বইগুলোর যত্নে প্রথমেই বাছাই করতে পারেন একটি ভালো শেলফ বা বইয়ের তাক, যেটি খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। শেলফে যদি কাচের দরজা থাকে তা হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। শেলফে কাচের দরজা থাকলে ধুলোবালি কম পড়ে, আবার বইগুলো বাইরে থেকে দেখাও যায়।বই রাখার জন্য কাচের শেলফ না থাকলেও, বই কিন্তু কখনোই দরজা বা জানালার গা ঘেঁষে রাখবেন না। এতে করে রোদ বা বৃষ্টির ছাট এসে সহজে নষ্ট করে দিতে পারে আপনার সখের বইগুলিকে। শেলফটি যদি কাঠের হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কাঠ আগে থেকে সিজনিং করে নেবেন, এতে করে উই পোকার বাসা বাঁধা থেকে রক্ষা পেতে পারে আপনার প্রিয় বইগুলো।
২. অন্তত বছরে দুবার বইয়ের শেলফ পরিষ্কার করুন।

৩. বই পোকা কাটে, এতে ধুলো জমে, বই দুর্গন্ধ হয় কিংবা ছিঁড়ে যায়। ধীরে ধীরে কেনা প্রিয় বইয়ের এই অবস্থা যাতে না হয়, সে জন্য মাঝে মাঝে বইগুলোকে শেলফ থেকে নামিয়ে আস্তে আস্তে সেগুলো শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। তারপর কিছুক্ষণ বই গুলো রোদে শুকতে দিন এবং বইয়ের ভেতর একটি করে নিম পাতা রেখে আবার শেলফে সাজিয়ে রাখুন।
৪.বইয়ের যত্নে বইয়ের ভেতরে নিমপাতা এবং শেলফের প্রত্যেকটি তাকে একটি বা দুটি করে ন্যাপথলিন বল রেখে দিন। এ ছাড়া শুকনো ল্যাভেন্ডারের ফুল দিয়ে ছোট ছোট পুটলি বানিয়ে শেলফের কোণায় রাখতে পারেন। এটা আপনার বইকে পোকা কাটা থেকে দূরে রাখবে।
৫. বই গাদাগাদি করে না রেখে, বিষয় অনুযায়ী বইয়ে লেবেল লাগিয়ে গুছিয়ে রাখুন। এতে করে আপনার বই যত্নে থাকবে ও যে কোনো বই খুব সহজেই খুঁজে পাবেন। তা ছাড়া বইপ্রেমী বন্ধুদের উপহার খুঁজতেও গোছানো বুক শেলফ সাহায্য করবে আপনাকে।
৬.অনেকে বই যত্নে রাখতে বইয়ের ভেতর রাসায়নিক পাউডার ব্যবহার করে, এটি একেবারেই উচিত নয়। কারণ বইয়ে থাকা পাউডার থেকে বই পড়ার সময় শরীরের ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত বই ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করে রাখলে বইয়ের মধ্যে রাসায়নিক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয় না।
৭. বই যত্নে রাখতে পড়ার আগে বইয়ের মলাট লাগিয়ে নিলে বইয়ের ওপরটা অনেক দিন পর্যন্ত নতুন থাকে। আর যদি পড়ার সময় প্রিয় বইটির চেহারা দেখতে চান, তাহলে ট্রান্সপারেন্ট পেপারের মলাট লাগিয়ে নিন।
৮. বই পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই পরিষ্কার ও শুকনো হাত দিয়ে বই গুলো পরিষ্কার করুন।
৯.আর্দ্রতা থেকে সচেতন থাকুন। আর্দ্রতা আপনার বই এর কাগজকে ধীরে ধীরে নরম করে তুলবে। বই এক সময় নিজে থেকেই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বই শুকনো জায়গায় রাখুন,মাঝেমাঝে,সম্ভব হলে বছরে এক বা দুইবার বই বার করে সকালের রোদে এক দু ঘণ্টা রেখে দিন। এটা বইতে আর্দ্রতার পরিমান কমাবে,বই এর আয়ু বাড়াবে।
১০.অনেকে বই পড়তে পড়তে পাতা মুড়ে রাখেন আর তারপর ভুলেই যান। মাস খানেক পর সেই পাতা ধরলেই ছিঁড়ে যায়। আজকাল দোকানে বুকমার্ক পাওয়া যায়। বা বাড়িতেই বোর্ড দিয়ে বুকমার্ক বানানো যায়। তাই পাতা মুড়ে না রেখে বুকমার্ক ব্যবহার করুন।
“বই বিহীন কক্ষ আত্মাবিহীন দেহের সঙ্গে তুলনা করা চলে”।বই আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলে।বিশ্বের সব বই কিনে বইপ্রেমীদের মনের তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব নয় এরপরও অনেকে বই অযত্নে রাখেন। তাই বইয়ের যত্ন নিন, অন্যদের যত্ন নিতে উদ্বুদ্ধ করুন।
গ্রন্থনা : নুসরাত মিশু