একজন সফল মহিষ পালকের সঙ্গে কিছুক্ষণ…

হাড় জিরজিরে সেই মহিষের দিন শেষ। দীর্ঘ মেয়াদী সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নে গবাদি পশুদের মধ্যে মহিষের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়েছে। কদাকার সেই মহিষের স্থান দখল করে নিয়েছে আদুরে আদুরে সব মহিষ। জাত উন্নয়নের মাধ্যমে আগের তুলনায় বেড়েছে দুধের উৎপাদন। ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক ব্যবহারে কমেছে মৃত্যুহার। ভোক্তার চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, শুধু মহিষের জন্যই জেলা পর্যায়ে পৃথক ঔষধালয় গড়ে উঠেছে। পারিবারিক পর্যায়ে ছাড়াও আমাদের চরগুলোতে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাপক পরিমাণে মহিষ পালন করা হচ্ছে। এগুলোকে বলা হয় মহিষের বাথান। আর যুগ যুগ ধরে সেই দায়িত্ব পালন করে আসছে আমাদের রাখাল ভাইরা। স্থানীয় ভাষায় যাদেরকে বলা হয় বাথাইন্যা।
জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, খড়া, বন্যাসহ সকল প্রতিকূল পরিবেশকে মেনে নিয়েই এই রাখালদের জীবন। মহিষ বা চরের মালিকানা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই রাখালের নয়। সে বেতনভুক কর্মচারি মাত্র। তবে কিছু ক্ষেত্রে লাভের আধা-আধি হিস্যায় মহিষ শাবকের মালিকানা বাড়তে বাড়তে রাখালরা খামারি হয়ে ওঠার দুর্লভ সুযোগ পান।

কথা হচ্ছিল যে মানুষটির সঙ্গে, তাঁর নাম ‘শনি’। রাখাল থেকে ধীরে ধীরে খামারি হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৯ সালেও যাঁকে ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা ঋণ দিতে বেসরকারি ঋণ সংস্থার ১০ বার ভাবতে হয়েছে, সেই রাখালই যখন খামারি হয়ে উঠে, তখন তিনি ১০ লাখ টাকা ঋণ পেতেও বেগ পেতে হয়নি। বর্তমানে তিনি তাঁর খামারে নির্দিষ্ট বেতনে সাতজন রাখাল কাজের জন্য রেখেছেন। ৩০০টি মহিষের মধ্যে নিজে ১০০টি মহিষ। বাকি ২০০ টি মহিষ শহরে অবস্থান করা বিভিন্ন মালিকের। সেই মহিষগুলো লালন-পালনের জন্য পান বিশেষ আয়ের সুযোগ। বেসরকারি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় রাখালদের থাকার ব্যবস্থাতেও এসেছে গুণগত পরিবর্তন। পরীক্ষামূলকভাবে রাখালদের থাকার জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে।
২০০৯ সালেও যাঁকে ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা ঋণ দিতে বেসরকারি ঋণ সংস্থার ১০ বার ভাবতে হয়েছে, সেই রাখালই যখন খামারি হয়ে উঠে, তখন তিনি ১০ লাখ টাকা ঋণ পেতেও বেগ পেতে হয়নি। বর্তমানে তিনি তাঁর খামারে নির্দিষ্ট বেতনে সাতজন রাখাল কাজের জন্য রেখেছেন।

স্থানীয় ভাষায়, যা ‘কিল্লা’ নামে পরিচিত। সেটার আকার-আয়তন যথেষ্ট সুপরিসর না হলেও তা যথেষ্ট মজবুত। ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া অতিথির আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়েছিল এই ‘শনি’র কিল্লায়। শুরুতেই এক গিরা গোবরের মাঝে হেঁটে হেঁটে মহিষের সঙ্গে পরিচয় পর্ব। অতঃপর রাখালদের দুগ্ধ দোহন পর্ব পর্যবেক্ষণ। অবশেষে বিশেষ কায়দায় কেল্লায় আরোহন। এই পর্বে চলে কেল্লার রান্না-বান্না পরিদর্শন। কেল্লায় কর্মরত রাখালদের জীবনমান বোঝার চেষ্টা। সবশেষে পেট চুক্তি মহিষের দুধ পান। কবিগুরুর সেই ‘বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে’কবিতাটি এখানে এসে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিল। কবিতাটি হলো—
‘বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।’ (স্ফুলিঙ্গ)
আপনি আপনার আশপাশের মানুষের গল্পগুলো আমাদের কাছে লিখে পাঠান। সঙ্গে একাধিক ছবি। ইমেইল করুন : boicharita@gmail.com