অযত্নে–অবহেলায়, আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে আছে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের নামে নির্মিত পাঠাগার

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ইলা মিত্র স্মৃতি পাঠাগার। ছবি: সংগৃহীত
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র। আজ তাঁর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে স্মরণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর রেলস্টেশনের পেছনে তাঁর নামে নির্মিত হয় পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের।
এই পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। গল্প-উপন্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের বই পড়ুয়া বাঙালি হিন্দু, মুসলিম ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পাঠকেরাও ছিল এই পাঠাগারের পাঠক। আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে আছে।
এই পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। গল্প-উপন্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের বই পড়ুয়া বাঙালি হিন্দু, মুসলিম ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পাঠকেরাও ছিল এই পাঠাগারের পাঠক। আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে আছে।
জানান যায়, আট মাসের বেশি সময় ধরে পাঠাগারটি বন্ধ। নাচোলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বেশির ভাগ লোকজনই গরিব। অভাব–অনটনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ থেকে ঝরে পড়ে। যাদের আগ্রহ ও মনের জোর বেশি, তারাই কেবল টিকে থাকে। এসব শিক্ষার্থীকে সহায়তার জন্য পাঠাগারে পাঠ্যবইও রাখা আছে। বই নিয়ে পড়ে পরীক্ষা শেষে ফেরত দিয়ে যেত তারা। পাঠাগার বন্ধ থাকায় সে সুযোগ মিলছে না।

ইলা মিত্র পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্রটি ২০১৮ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হত। সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত মার্চ মাস থেকে পাঠাগারের কার্যক্রম বন্ধ।এর আগেও দুইবার তহবিল বন্ধের কারণে পাঠাগারের কার্যক্রম থেমে যায়।
উল্লেখ্য, উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, কিংবদন্তি ইলা মিত্র ১৯২৫ সালে ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে ইলা মিত্র বিয়ে করেন প্রখ্যাত রাজনীতিক, মানবতাবাদী কমরেড রমেন্দ্রনাথ মিত্র ওরফে রমেন মিত্র (হাবু বাবু) কে। ইলামিত্রের শ্বশুরবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাটে। ইলা মিত্রের শ্বশুর-মহেন্দ্রনাথ মিত্র (দেওয়ান) ছিলেন তৎকালীন সময়ের স্বনামধন্য জোতদার। রাজনৈতিকভাবে রমেন মিত্র ও ইলা মিত্র দু’জনেই ছিলেন তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য, অন্যতম কমরেড। ঐতিহাসিক তেভাগা-কৃষক আন্দোলনে ইলা মিত্রের পরামর্শক এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন তাঁর স্বামী, সহযোদ্ধা রমেন্দ্রনাথ মিত্র। ইলা মিত্র অত্যন্ত উদ্যোমী ও পরিশ্রমী একজন নারী ছিলেন। তিনি বসে থাকতে পারতেন না, তাই বিয়ের পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘কৃষ্ণগোবিন্দপুর স্কুলে’ বিনা সম্মানীতে শিক্ষকতার কাজ নিয়েছিলেন।
রাজনৈতিকভাবে রমেন মিত্র ও ইলা মিত্র দু’জনেই ছিলেন তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য, অন্যতম কমরেড। ঐতিহাসিক তেভাগা-কৃষক আন্দোলনে ইলা মিত্রের পরামর্শক এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন তাঁর স্বামী, সহযোদ্ধা রমেন্দ্রনাথ মিত্র। ইলা মিত্র অত্যন্ত উদ্যোমী ও পরিশ্রমী একজন নারী ছিলেন। তিনি বসে থাকতে পারতেন না, তাই বিয়ের পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘কৃষ্ণগোবিন্দপুর স্কুলে’ বিনা সম্মানীতে শিক্ষকতার কাজ নিয়েছিলেন।

নাচোলের দরিদ্র কৃষক ও সাঁওতালদেও কাছে তিনি ছিলেন ‘রাণী মা’। সাঁওতাল বিদ্রোহের শেষের দিকে ইলা মিত্র সাঁওতাল যুবতীর ছদ্মবেশে পালিয়ে যাবার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে রমেন মিত্ররা আত্মগোপনে চলে যান। সেই সময় তাঁদের পার্টিও নিষিদ্ধ হয়েছিল। ১৯৫০ সালের শেষ দিক হতে ১৯৫১ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত বিচারকার্য পরিচালিত হয়েছিল। বিচারে ইলা মিত্র এবং তাঁর সহকর্মী আজহার হোসেন, অনিমেষ লাহিড়ী ও মাতলা মাঝির ২০ বছর করে জেল হয়েছিল।
নাচোলের দরিদ্র কৃষক ও সাঁওতালদেও কাছে তিনি ছিলেন ‘রাণী মা’। সাঁওতাল বিদ্রোহের শেষের দিকে ইলা মিত্র সাঁওতাল যুবতীর ছদ্মবেশে পালিয়ে যাবার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে রমেন মিত্ররা আত্মগোপনে চলে যান। সেই সময় তাঁদের পার্টিও নিষিদ্ধ হয়েছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়ে যাবার প্রায় ৪২ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে এসেছিলেন ইলা মিত্র। তে-ভাগা আন্দোলনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইলা মিত্রকে ১৯৯৬ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রাণঢালা সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। নির্যাতিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রখ্যাত সংগ্রামী নেত্রী, কিংবদন্তি কমরেড ইলা মিত্র ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।