‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার

বৈচিত্র্যতায় পরম সত্যসুন্দর। বৈচিত্র্য আছে বলে পৃথিবীর রূপ বিশুদ্ধতম। অনুরূপভাবে বাংলাদেশেও আদিবাসী রয়েছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর। ঝিরি-ঝর্ণা থেকে বেয়ে আসা কলকল শব্দে এখানে ঘুম ভাঙে। সুবিশাল পবর্তের গাঁ ঘেষে সূর্য উঁকি দেয় প্রতিনিয়ত। ষড়ঋতু অনুযায়ী পাখিদের সুরেলা সুর, বিশাল সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ পানির জলরাশি এই সবকিছু মিলে আমাদের জীবন। এ যেনো স্বপ্নে পাওয়া স্বর্গতুল্য ধরা। আদিবাসীদের রয়েছে নিজস্ব বর্ণমালা এবং আলাদা ইতিহাস। যুগ-যুগান্তর ধরে চলে আসা প্রথাগত রীতিনীতি অনুযায়ী আদিবাসীরা জীবন পরিচালিত করছে। বলা বাহুল্য যে, উচ্চ শিক্ষা থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গণ,চারু-কারু শিল্প, সরকারের বিভিন্ন উচ্চতর দপ্তরে নিজেদের মেধা, সৃজনীশক্তি দিয়ে দাপটের সঙ্গে লড়ছে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখছে।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার, সংস্কৃতি, ভূমি-সমস্যার সমাধানসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতির মতো বিষয়সমূহের ওপর সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আলোকপাত করা হয়ে থাকে। নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় যুগে যুগে অনেকে প্রান্তিকায়িত, শোষিত, বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হয়েছে এবং যখন এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে তারা কথা বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা দমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের আলোচনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়েছে এবং ১৯৯৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষ’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক’ ঘোষণা করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এছাড়া ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্টকে ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়।এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবহেলিত, সুযোগবঞ্চিত আদিবাসী জাতিসমূহের সমস্যাগুলোর ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বর্তমানে পৃথিবীতে ৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় ৩৫ কোটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। গবেষণায় জানা যায়, এসব জাতিসমূহ বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি সাংস্কৃতিক এবং জীববৈচিত্র্য প্রতিপালন ও রক্ষা করছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকারের আহবান।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান (তিন পার্বত্য জেলা)চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া,বম, খুমী ও চাকগোষ্ঠী সহ ১১ টি আদিবাসী বসবাস করছে। তবে,বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলাগুলোতে সাঁওতাল, শিং, ওঁরাও, মুন্ডারি, বেদিয়া মাহাতো, রাজোয়ার, তেলী, তুরী, ভুইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করছে।
পাহাড়কে ঘিরে অনেক কবি, সাহিত্যিক,শিল্পীবৃন্দ তাঁদের মননে হাজার হাজার গান, কবিতা, ছড়া, উভোগীত(লোকগাথা) রচনা করেছেন, প্রকাশ করেছেন কলমীশক্তি দিয়ে। আজ আদিবাসী দিবসে তরুণ চাকমা’র রচনা এবং সুরে গান খুব মনে পড়ছে….
একি বৃন্তের ফুলের মতো
মোরা আছিই, মোরা থাকবো।
মোদের আশা, মোদের স্বপ্ন
একি ডালেতে মোরা ফুটাবো।
মোরা ফুটাবো – মোরা ফুটাবো এই প্রত্যাশী।।
পূর্ণা চাকমা, রাঙামাটি