‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ এ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উৎসব ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন মাঝারি পর্যায়ের দু-একটি পুরস্কারের সান্নিধ্যে এলেও আসেনি কান উৎসবে প্রতিনিধিত্ব করার মত সুযোগ। এবারই ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ এ লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে ২০২১ সালের কান উৎসবের ৭৪ তম আসরের আনুষ্ঠানিক তালিকা ঘোষিত হয়। আনুষ্ঠানিক তালিকা ঘোষণা এবং হলে ‘Un Certain Regard’ বিভাগে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘Rehana Maryam Noor’ মনোনয়ন পায়। ২০০২ সালে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ কান উৎসবের মুক্ত পুরস্কার ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট বিভাগে ফিপরেস্কি পুরস্কার জিতে নিলেও কান উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ই প্রথম এ স্থান অর্জন করলো। ১৭ টি দেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে লড়বে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আগামী ৬ জুলাই কান উৎসবের পর্দা উঠবে।
২০১৬ সালে নির্মিত সাদের প্রথম চলচ্চিত্র ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ ২৭ তম সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালক হিসেবে ‘সিলভার স্কিন অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নেয়। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের- বাজেট হতাশা, কারিগরি অসহযোগিতা, প্লট বিনির্মাণে অপটুতা ইত্যাদি নানামুখী সংকটের বাইরে এসে তরুণ এ নির্মাতা তৈরি করে ফেললেন ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র পরে তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। নীরবে ঘটিয়ে ফেললেন যেনো চলচ্চিত্র বিপ্লব।
ছবিটির প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে নির্মাতা জানান, ‘প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূর কে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প তৈরি হয়েছে। যেখানে রেহানা একজন মা, একজন বোন, একজন মেয়ে ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করে।’
এই রেহানা চরিত্রে অভিনয় করেন আজমেরী হক বাঁধন।আরো অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন, সামি হাসান, সাবেরী আলম প্রমুখ। প্রোটোকল ও মেট্রো ভিডিও’র ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু, সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল।

দেশের নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা অভিনন্দিত করছেন এ চলচ্চিত্রের পুরো টিমকে। শঙখনাদ, বাঁশি, নিরন্তর ছনির পরিচালক আবু সায়ীদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কান, বার্লিন, ভেনিসে স্থান না হওয়ার যে দীর্ঘ বন্ধ্যাত্ব তা ভেঙে ফেললেন সাদ।’
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘সাদ আমাদের পরের প্রজন্মের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা যাকে আমার খুব ভালোবাসি।’
দেশের অন্যতম নির্মাতা অমিতাভ রেজার কথায়, ‘বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এর চেয়ে ভালো দিন আর কখনো আসেনি।’
১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা মেধাবী এই তরুণ চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা শুরু করেন।
জিতেছেন সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালক পুরস্কার, অভিনেতা মোস্তফা মনোয়ারের সেরা অভিনেতা পুরস্কার, বেস্ট এশিয়ান ফিচার ফিল্মের নমিনেশন। এছাড়াও প্রথম ছবিট রটারডাম, লোকার্নো, সিনেইউরোপসহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।