নেতাজী, নজরুল ও একটি আজাদ ভারতের স্বপ্ন

সোমঋতা মল্লিক Avatar

‘কারাগারে আমরা অনেকে যাই, কিন্তু সাহিত্যের মধ্যে সেই জেল-জীবনের প্রভাব কম দেখতে পাই। তার কারণ অনুভূতি কম। কিন্তু নজরুল যে জেলে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর লেখার মধ্যে অনেক স্থানে পাওয়া যায়। এতেও বুঝা যায় যে, তিনি একটি জ্যান্ত মানুষ। …নজরুলকে ‘বিদ্রোহী’ কবি বলা হয় এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্টই বুঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধে যাবো, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাবো, তখনও তাঁর গান গাইবো।’ —কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে এই কথা বলেছেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। নজরুলের দেশাত্মবোধক গান এবং কবিতা সুভাষচন্দ্রকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল সেই সম্পর্কে নেতাজীসহ বহু গুণীজন আলোকপাত করেছেন।

…নজরুলকে ‘বিদ্রোহী’ কবি বলা হয় এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্টই বুঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধে যাবো, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাবো, তখনও তাঁর গান গাইবো।’ —কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে এই কথা বলেছেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।

ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে আজ আরও একবার ইতিহাসের পাতা ওল্টানো— ফিরে দেখা নেতাজী ও নজরুলের পারস্পরিক সম্পর্ককে।

১. ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে দুপুর দুটোয় মহা সমারোহে নজরুলকে কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে জাতীয় সংবর্ধনা জানানো হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন ‘কল্লোল’ ও ‘সওগাত’-এর দুই সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ ও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। এঁরা দুজনে ছিলেন সংবর্ধনা-সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক। এছাড়া ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, হাবীবুল্লাহ বাহার প্রমুখ। অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতি ছিলেন এস ওয়াজেদ আলী। অনুষ্ঠানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সভাপতি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রধান অতিথি ছিলেন। দুপুর দুটোয় ফুল-শোভিত মোটর গাড়িতে করে কবিকে সভাস্থলে আনা হয়। কবি সভাকক্ষে প্রবেশ করলে সকলে জয়ধ্বনি দিয়ে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা ও সম্মান জ্ঞাপন করেন। শিল্পী উমাপদ ভট্টাচার্য ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে পরিবেশন করেন। নজরুল সংবর্ধনা-সমিতির সদস্যবৃন্দের পক্ষে প্রদত্ত অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন এস ওয়াজেদ আলী। পরে অভিনন্দনপত্রটি একটি রূপোর কাসকেটে ভরে সোনার দোয়াত ও কলমসহ কবির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সভায় অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা করেন রায়বাহাদুর জলধর সেন।

সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে নজরুলের গান গাওয়া হবে, কারাগারেও আমরা তাঁর গান গাইব।’

সংবর্ধনা সভায় নজরুল সকলের অনুরোধে টলমল টলমল পদভরে / বীরদল চলে সমরে’ এবং সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরোধে দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু  গান গেয়ে শোনান। নজরুলের অনন্য প্রতিভাষণ সকলকে মুগ্ধ করে। (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল তারিখ অভিধান’, মাহবুবুল হক)

২. স্বাধীন দেশে জীবনের সাথে সাহিত্যের স্পষ্ট সম্বন্ধ আছে। আমাদের দেশে তা নেই। নজরুলকে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। নজরুল জীবনের নানা দিক থেকে উপকরণ সংগ্রহ করেছেন, তার মধ্যে একটা আমি উল্লেখ করব। কবি নজরুল যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবি নিজে বন্দুক ঘাড়ে করে যুদ্ধ করেছিলেন, কাজেই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সব কথা লিখেছেন তিনি। আমাদের দেশে ঐরূপ ঘটনা খুব কম, অন্য স্বাধীন দেশে খুব বেশি। এতেই বুঝা যায় যে, নজরুল জীয়ন্ত মানুষ।

— নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল স্মৃতি’, বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত)

৩. নজরুল এসে তার একমাথা ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে কী চমৎকারই যে গাইত তার নানা প্রাণোদ্বেল গান! সুভাষ সবচেয়ে আকৃষ্ট হয়েছিল এমনি এক আসরে তার মুখে শুনে: ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে! / লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।’ আর একটি গান—এটিও শুনতে শুনতে সুভাষের গৌরানন রাঙা হয়ে উঠত ‘এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল। / এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।’

— দিলীপ কুমার রায় (তথ্যসূত্র: ‘শতকথায় নজরুল’, কল্যাণী কাজী সম্পাদিত)

নজরুল এসে তার একমাথা ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে কী চমৎকারই যে গাইত তার নানা প্রাণোদ্বেল গান! সুভাষ সবচেয়ে আকৃষ্ট হয়েছিল এমনি এক আসরে তার মুখে শুনে: ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে! / লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।’ আর একটি গান—এটিও শুনতে শুনতে সুভাষের গৌরানন রাঙা হয়ে উঠত ‘এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল। / এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।’

৪. আমরা আগামী সংগ্রামে কবি নজরুলের সঙ্গীত কণ্ঠে ধারণ করিয়া শ্রীমান সুভাষের মতো তরুণ নেতাদের অনুসরণ করিব। ফরাসী বিপ্লবের সময়কার কথা একখানি বইতে সেদিন পড়িতেছিলাম। তাহাতে লেখা দেখিলাম, সে সময় প্রত্যেক মানুষ অতি মানুষে পরিণত হইয়াছিল। আমার বিশ্বাস, নজরুল ইসলামের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধরেরা এক-একটি অতি-মানুষে পরিণত হইবে।

 — আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (তথ্যসূত্র: ‘সমকালে নজরুল ইসলাম’, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম)

৫. ১৯২৪ সালের মে মাসে নজরুল হুগলি থাকাকালে চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাষ বসু পরিচালিত তারকেশ্বরের দুর্নীতিবাজ অসচ্চরিত্র মোহান্ত বিতাড়নের আন্দোলনে যোগ দেন এবং ‘মোহান্তের-মোহ-অন্তের গান’ লিখে আন্দোলনের আবেগকে উস্কে দেন। তারকেশ্বরের মাঠে সত্যাগ্রহের প্রস্তুতি সভায় চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বসু প্রমুখের উপস্থিতিতে তিনি উদ্বোধনী গান হিসেবে ‘মোহান্তের-মোহ-অন্তের গান’ আরম্ভ করেন। মোহান্তের অনুগত নিষ্ঠুর লাঠিয়াল সর্দার সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহস্র লাঠিয়াল তখন আক্রমণের অপেক্ষায় সভা ঘিরে ছিল। নজরুলের গানের দুঃসাহসিক আবেদনে মোহান্তের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হলে লাঠিয়াল-সর্দার অভিভূত হয়ে মোহান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার শপথ নেয় এবং আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়।

(তথ্যসূত্র: ‘নজরুল তারিখ অভিধান’, মাহবুবুল হক)

৬. সেকালে বাংলার যৌবনের রূপ একটিমাত্র রূপ; সে রূপ বিদ্রোহী রূপ, বিপ্লবী রূপ, সেই ১৯২২ সাল, ২৩ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত, বাংলার এই যৌবন সম্পর্কে যখনই মনে মনে ধারণা করতে চেয়েছি – তখনই মনে পড়েছে একসঙ্গে দুটি নাম – প্রথম নাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর এবং তাঁর ছায়ার মতো দেখতে পেতাম আরও একজনকে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।

— তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (তথ্যসূত্র: ‘শতকথায় নজরুল’, কল্যাণী কাজী সম্পাদিত)

৭. সুভাষ একবার আমাকে বলেছিল, ভাই, জেলে যখন ওয়ার্ডারে লোহার দরজা বন্ধ করে, তখন মন কী যে আকুলি-বিকুলি করে, কী বলব! তখন বারবার মনে পড়ে কাজীর ঐ গান: ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট / ভেঙে ফেল্ কর্ রে লোপাট রক্ত-জমাট / শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী!’

— দিলীপ কুমার রায় (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল স্মৃতি’, বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত)

৮. আমি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সর্বদাই ঘুরে বেড়াই। বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার জাতীয় সঙ্গীত শুনবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু নজরুলের ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু’র মতো প্রাণমাতানো গান কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না। কবি নজরুল যে-স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা শুধু তাঁর নিজের স্বপ্ন নয় – সমগ্র বাঙালী জাতির স্বপ্ন।

— নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল স্মৃতি’, বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত)

৯. কাজীর মুখে বিদ্রোহী আবৃত্তি শুনেও সুভাষ মুগ্ধ হত বরাবরই, “বল বীর, বল উন্নত মম শির!” বিদ্রোহী হওয়া এ-সংসারে সহজ নয়। মানুষ পারতপক্ষে কাউকে বলতে চায় না যে, সে অন্যায় করেছে। …কিন্তু কাজী ছিল স্বভাব-বিদ্রোহী: মেলামেশায় দহরম-মহরমে তার জুড়ি ছিল না বটে কিন্তু ঐ সঙ্গে অসামাজিক কথা বলতেও তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারত না কেউ, এক মহানুভব দ্বিজেন্দ্রলাল ছাড়া। অত্যাচার, কপটতা, ভণ্ডামি, ন্যাকামি, গোঁড়ামি এ সবের প্রতি এঁরা দুজনেই ছিলেন খড়্গহস্ত।

— দিলীপ কুমার রায় (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল স্মৃতি’, বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত)

১০. ১৯৩১ সাল। চট্টগ্রাম নিখিল বঙ্গ ছাত্র ও যুব সম্মেলন হবে। সভাপতিত্ব করবেন দেশগৌরব সুভাষ বসু, আর তার উদ্বোধন করবেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম। সম্মেলন উদ্বোধনের পর তিনি উদাত্ত কণ্ঠে যে সংগীত পরিবেশন করলেন, তা ‘ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল।’ – সংগীতের সুর-ঝংকারে সকলেই যেন নূতন প্রাণের, নূতন যৌবনের আহ্বান পেলো।

(তথ্যসূত্র: ‘ছেলেদের নজরুল’)

১১. কাজী নজরুলের গান শুনি প্রথম শ্রদ্ধানন্দ পার্কে – নেতাজী সুভাষচন্দ্রের এক বক্তৃতা সভায়। তখন মাইক্রোফোনের আমদানি ঘটেনি – কিন্তু দু-মিনিটের গান গেয়ে তিনি এক বিরাট জনসভাকে শান্ত করে দিয়েছিলেন। তখন সকলের মুখে কাজী নজরুলের নাম ছড়িয়ে পড়ল।

— বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (তথ্যসূত্র: ‘শতকথায় নজরুল’, কল্যাণী কাজী সম্পাদিত)

১২. বিপ্লবী অমলেন্দু দাশগুপ্ত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলেছেন, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে যখন সুভাষচন্দ্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, সে সময়ে ১২ই এবং ১৩ই জুন পরপর দুদিন যোগী বরদাচরণের কাছে গিয়েছিলেন (লক্ষণীয় এঁর কাছে কবি নজরুল ইসলামও গিয়েছিলেন)। বরদাচরণ এ বিষয়ে লিখেছেন, “আজ তাঁকে (সুভাষচন্দ্র) যোগের বিশেষ প্রক্রিয়া (ক্রিয়াযোগ) বলে দিলাম, ধ্যানে বসিয়ে ছিলাম, অনেকক্ষণ ধ্যানস্থ ছিলেন।”

(তথ্যসূত্র: ‘সুভাষচন্দ্রের দৃষ্টিতে ধর্ম’, শ্যামাপ্রসাদ বসু)

১৩. দেখতে দেখতে কারামুক্তির দিন এসে গেল। সুভাষচন্দ্র ছাড়া পেলেন ৯ আগস্ট,১৯২২। দেশবন্ধু মুক্তি পেলেন ১০ আগস্ট। সুভাষের জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে দেখলেন সমর্থকদের যেন ঢল নেমেছে। বীরের সংবর্ধনায় ভাসতে ভাসতে তিনি বাড়ি ফিরে এলেন। ক’দিন যেতে না যেতেই তাঁকে সংবর্ধনা জানালেন ওয়েলিংটনের জাতীয় বিদ্যাপীঠের ছাত্র ও অধ্যাপকরা। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র প্রিয় সুভাষের নামে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। কবি সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় আবৃত্তি করলেন ‘রাজবন্দী’ কবিতা আর কিরণশঙ্কর পাঠ করলেন মানপত্র। সভায় স্বরচিত গান গাইলেন এক তরুণ যুবক। হাবিলদার কবি নজরুল ইসলাম। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। তিনি গাইলেন ভাঙার গান-কারার ঐ লৌহ কপাট। দেশবন্ধুর কারাবাস উপলক্ষ্যে লেখা এই গানটি বাসন্তী দেবী ‘বাংলার কথা’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। গান শুনে চমকে উঠলেন সুভাষ। গানের বাণী শুনে তিনি উদ্দীপ্ত। আর এক নতুন বন্ধুকে পেয়ে গেলেন। রাজনৈতিক জীবনে প্রথম সংবর্ধনা পেয়ে অভিভূত সুভাষচন্দ্র।

(তথ্যসূত্র: ‘ব্রিটিশ কারাগারে সুভাষচন্দ্র’, প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়)

১৪. ১৯২৫ সালের ২রা মে মান্দালয় জেল থেকে নেতাজী দিলীপ কুমার রায় কে পত্র লেখেন। এই পত্রে নজরুলের প্রসঙ্গে তিনি লেখেন-“…আমার মনে হয় না, আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম। এবং এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ যে আমাদের দেশের আর্টিস্ট বা সাহিত্যিকগণের যদি কিছু কিছু কারাজীবনের অভিজ্ঞতা থাকত তাহলে আমাদের শিল্প এবং সাহিত্য অনেকাংশে সমৃদ্ধ হতো। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা যে তার জেলের অভিজ্ঞতার নিকট কতখানি ঋণী সে কথা বোধ হয় ভেবে দেখা হয় না।”

(তথ্যসূত্র: ‘সুভাষচন্দ্র’, হেমন্তকুমার সরকার)

১৫. কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করলেন দেশবন্ধু। আর কলকাতায় ফিরে ১ জানুয়ারি ১৯২৩-এ গঠন করলেন নতুন দল—স্বরাজ্য পার্টি-যা কংগ্রেসের একটি শাখা সংগঠন। স্বরাজয় দলের সভাপতি দেশবন্ধু – সহ-সভাপতি মতিলাল নেহরু – সাধারণ সম্পাদক সত্যেন্দ্রচন্দ্র মিত্র। অন্যান্য সদ্যদের মধ্যে সুভাষ ছাড়া ছিলেন কিরণশঙ্কর রায়, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, হেমন্ত সরকার ও আরও অনেকে। পরে অনেকে যোগ দেন যাদের মধ্যে ছিলেন শরৎচন্দ্র, নজরুল ইসলাম।

কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করলেন দেশবন্ধু। আর কলকাতায় ফিরে ১ জানুয়ারি ১৯২৩-এ গঠন করলেন নতুন দল—স্বরাজ্য পার্টি-যা কংগ্রেসের একটি শাখা সংগঠন। স্বরাজয় দলের সভাপতি দেশবন্ধু – সহ-সভাপতি মতিলাল নেহরু – সাধারণ সম্পাদক সত্যেন্দ্রচন্দ্র মিত্র। অন্যান্য সদ্যদের মধ্যে সুভাষ ছাড়া ছিলেন কিরণশঙ্কর রায়, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, হেমন্ত সরকার ও আরও অনেকে। পরে অনেকে যোগ দেন যাদের মধ্যে ছিলেন শরৎচন্দ্র, নজরুল ইসলাম।

(তথ্যসূত্র: ‘ব্রিটিশ কারাগারে সুভাষচন্দ্র’, প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়)

১৬. ১৯২৭ সালের ১২ জুন সুভাষচন্দ্র শিলং পৌঁছলেন।…সুভাষ শুধু বাড়ির ছেলেমেয়েদের শরীরস্বাস্থ্য সম্পর্কেই চিন্তিত নন, তিনি অবসর সময় কাটান তাদের সঙ্গে গল্প-গুজব করে, কখনও বা গল্প বলেন আবার কখনও বা গানের আসর বসান। স্তোত্র পাঠ করাও শেখাতেন তিনি-কখনও রবীন্দ্রসংগীত যেমন ‘আমি প্রণমি তোমারে নাথ চলিব সংসার কাজে’ আবার কখনও বা নজরুগীতি – ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল’ ইত্যাদি।

(তথ্যসূত্র: ‘ব্রিটিশ কারাগারে সুভাষচন্দ্র’, প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়)

তথ্য সংগ্রহ: সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী এবং সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)

One response to “নেতাজী, নজরুল ও একটি আজাদ ভারতের স্বপ্ন”

  1. Md.+Muhaimin+Arif Avatar
    Md.+Muhaimin+Arif

    সমৃদ্ধ রচনা। লেখককে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মতামত