চাই মুক্ত বায়ু, চাই শুদ্ধ জল, চাই নির্মল ভূমি

World Nature Conservation Day অর্থাৎ প্রকৃতি রক্ষা দিবস। বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় ২৮ জুলাই। দিনটি পালনের শুরু কবে, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না কিন্তু দিনটির তাৎপর্য এবং প্রাসঙ্গিকতা, বিশেষত: বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অনস্বীকার্য। আমাদের উপলব্ধিতে প্রকৃতি এক বর্ণময় নিসর্গজগৎ। বৈজ্ঞানিক বর্ণনায় প্রকৃতি স্থল(মাটি), জল, অন্তরীক্ষ(বায়ু) এর সমন্বয়। ব্যাপক অর্থে বৃক্ষ, লতা, গুল্ম, উপগুল্ম, হ্রদ, পুষ্পাদি, চন্দ্র, সূর্য, সমুদ্র, নক্ষত্র এবং মানব প্রাণীজগত নিয়ে অখন্ড বিশ্বপ্রকৃতির পরিবার। বিশ্ব সম্পদ প্রদায়িনী প্রকৃতি আমাদের উৎস। প্রাচীন ঋষিগণের অনুভবে ‘মাতাভূমি: পুত্রোহং পৃথিব্যাঃ’। ‘ধরিত্রীর সন্তান আমরা, মাটি আমার মা’। ভারতীয় দর্শনে প্রকৃতি বিশ্বপ্রসাবিতা, বিশ্বজননী।
পরিতাপের বিষয়, মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও দুর্নিবার আকাঙ্খা আজ গ্রাস করছে প্রকৃতিকে। নির্বিচারে প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে মানুষের অদম্য লোভ। আমরা পাহাড় ভেঙে তৈরি করে চলেছি কংক্রিটের রাস্তা, নদীর গতিপথ বিঘ্নিত করে তৈরি করছি বাঁধ, বনজঙ্গল ধ্বংস করে তৈরি করছি অট্টালিকা। নগর স্থাপনেই আমরা অধিকতর আগ্রহী। প্রকৃতিকে অতিক্রম করে কৃত্রিমতা স্থাপনের এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বিঘ্নিত করে তুলছে প্রকৃতির ভারসাম্য। বহু প্রজাতির বৃক্ষ ও জীব আজ অবলুপ্ত বা অবলুপ্তির পথে। মানবজাতির অবিবেচনার ফসলস্বরূপ আজ ঘটছে উষ্ণায়ন, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প। আবির্ভাব ঘটছে অজানা অপ্রতিরোধ্য জীবাণুর। মানুষ আজ তাই ব্যাধিগ্রস্থ শরীরে এবং মনে। আজ জল, বাতাস, স্থল মনুষ্যকৃত ভারে জর্জরিত, বিষাক্ত। তথাকথিত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি ধ্বংসের হাতিয়ার। তাই চারদিকে ক্রন্দনরোল।
নিছক দিনপালন নয়, হোক আত্মসমীক্ষা। কেবল নিয়ম, আইন, বিধিনিষেধ প্রণয়ন নয়,
আসুক অনুভব, সচেতনতা
চাই অঙ্গীকার, দৃঢ়তা।
চাই বৃক্ষ রোপন, চাই দূষণ বর্জন, চাই প্লাস্টিক ব্যবহার রোধ, চাই জল সংরক্ষণ, জলের অপচয়রোধ।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠুক, আমরা অনুসরণ করি reduce, recycle এবং reuse পরিকল্পনা। অর্থাৎ, আমরা লাগাম টানি আমাদের চাহিদার।
দালাই লামার বিবৃতি উদ্ধৃত করি, ‘Conservation is not merely a question of mortality but a question of our own survival. ‘
আমাদের ফিরতে হবে সবুজ, সমৃদ্ধি ও নির্মল পৃথিবীতে। প্রকৃতি তার সম্পদ উন্মুক্ত করেছে আমাদের জীবন রক্ষার জন্য। গান্ধীজীর কথা, ‘Earth provides enough to satisfy every man’s need but not every man’s greed.’
আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, চাই সচেতনতা, চাই অনুভব। প্রকৃতি ভারমুক্ত হোক, নির্মল হোক। আসুন আমাদের পথ পাল্টাই, সমবেয় ধ্বনি হোক-
‘ফিরে চল মাটির টানে’
পৃথিবী ধরা দিক তার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে।
আজ চাই মুক্ত বায়ু, চাই শুদ্ধ জল, চাই নির্মল ভূমি, সবুজ বনানী। তাই প্রয়োজন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার, প্রয়োজন লোভের সংবরণ। প্রকৃতির সহাবস্থানের শিক্ষা আমাদের আয়ত্ত করতে হবে। রক্ষা করতে হবে অরণ্য, নদী, প্রাণীকুল। আমাদের অঙ্গীকার হোক প্রাণপণে এ পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল।
মিতালী সরকার, অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত