গৌরবের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কাজী আব্দুল লতিফ স্যার তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তিনি প্রতিষ্ঠ করেন রসায়ন বিভাগ। ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে এই বিভাগ। তিনি কুমিল্লার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সেই পঞ্চাশের দশকে সুদূর রাজশাহীতে চলে আসা এখন স্বপ্নেও ভাবা যায় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার তীব্র প্রত্যয়ে তিনি এখানে ছুটে আসেন। এমন আরও বহু বিরল দেশপ্রেমিক শিক্ষকে ধন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের গৌরবের শেষ নেই। আমাদের জীবনকে আলোকিত করেছে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়। মতিহারের এই সবুজ চত্ত্বর। এখানেই আমরা সত্যব্রতী হয়েছি। সত্য আর মিথ্যার প্রভেদ শিখেছি।

বিদ্যালয়-কলেজ ও পরিবারে আমাদের মূল্যবোধের সূচনা হয়েছে; উচ্চশিক্ষার অভিপ্রায় তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের উচ্চশিক্ষায় সেই মূল্যবোধ প্রগাঢ় হয়েছে। আলোয় আলোয় দীপ্ত করেছে আমাদের জীবন।
আমাদের মধ্যে সেই আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দিয়েছে আমার স্যারেরা। দুই স্যারের নাম পরম শ্রদ্ধায় উচারণ করছি। কুমিল্লার নিমসার জুনাব আলী কলেজে অর্থনীতির বিভাগের খ্যাতিমান শিক্ষক মুহম্মদ রফিকুল আলম স্যার আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ড. এ বি এম হোসেন স্যার। ‘বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে থাকা নয়, জানবার জন্যেই জীবন’—এই দীক্ষাই স্যারেরা আমাদের দিয়েছেন।

এ বি এম হোসেন স্যার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ‘ইমেরিটাস প্রফেসর’। এখানে স্যারের শিক্ষকতা জীবন ষাট বছর। চল্লিশ বছর নিয়মিত শিক্ষক, কুড়ি বছর ইমেরিটাস প্রফেসর। স্যার আন্তর্জাতিক সমাজে বিভিন্ন বিরল সম্মান লাভ করেছেন। ১৯৭৭ সালে নরওয়ের জাতীয় সংসদ নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের জন্য গঠিত বের্ডে তিনি মনোনীত সদস্যমেনোনীত হন। এরপর, তিনি তুরস্কের আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত ওআইসি কনফারেন্স-এ মূল অধিবেশনে ‘Keynote speaker‘ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে অভিভাষণ রাখেন ইসলামি স্কলার হিসেবে। গতবছর স্যার চলে গেছেন চিরতরে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স এখন ৬৮। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘদিন-ধরে উত্তরবঙ্গের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। রাজশাহীর প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখ্শ এবং রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ ড. ইতরাত্ হুসেন জুবেরি যৌথ নেতৃত্বে চেষ্টায় অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই ড. ইতরাত্ হুসেন জুবেরিকে উপাচার্য নিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই ছয়টি বিভাগ খোলা হয় (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, আইন, দর্শন,অর্থনীতি) এবং শিক্ষার্থী ১৬১ জন।

সেই আটষট্টি বছর ধরে, বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জ্ঞান অন্বেষণে শিক্ষার্থীরা মতিহারে ছুটে এসেছেন। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জ্ঞান অন্বেষণ করে তাঁরা তাঁদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করেছেন। তাঁরা তাঁদের কর্মপ্রতিভা-প্রজ্ঞা দিয়ে সমাজ-সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন। সকল সেক্টরে দেশ-উন্নয়নে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ‘মতিহারের দূত’ হয়ে দ্যূতি ছড়াচ্ছেন বিশ্বময়।
স্বনামখ্যাত প্রথিতযশা বহু পণ্ডিত শিক্ষক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন, যাঁদের জ্ঞান-গরিমা পাণ্ডিত্যস্পর্শে সিক্ত হতো শিক্ষার্থীরা। এই গুণী-শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানের আধারে পরিণত করেছিলেন। বিশ্বপণ্ডিতসমাজে তাঁদের অনেকেরই পাণ্ডিত্যখ্যাতি রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, হাবিবুর রহমান শেলী (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান), ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ, মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম, ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ড. মোশাররফ হোসেন, ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, ড. এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহমদ, ড. বদরউদ্দিন উমর, ড. কাজী আবদুল মান্নান, ড. সফিউদ্দিন জোয়ার্দার, ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এ বি এম হোসেন, ড. আহমদ হোসেন, ড. আব্দুল লতিফ, ড. শাহানারা হোসেন, ড. মনোয়ার হোসেন, ড. গোলাম মুরশিদ, ড. এফ আর খান, ড. আলী আসগর খান, ড. কাজী আব্দুল লতিফ, ড. আহমদ হোসেন, ড. আলী আনোয়ার, সনৎকুমার সাহা, ড. সোমনাথ ভট্টাচার্য্য, ড. দিলীপকুমার নাথ, ড. মফিজউদ্দিন আহমেদ, ড. সদরউদ্দিন আহমদ, ড. গোলাম সাকলায়েন, ড. ফররুখ খলিল, ড. হাবিবুর রহমান, ড. এ কে আজহারুল ইসলাম, ড. বদর উদ্দিন, ড. সফর আলী আকন্দ, ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এ কে এম ইয়াকুব আলী, ড. আনিসুর রহমান, ড. রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, ড. প্রীতিকুমার মিশ্র, ড. আ ন ম সামসুল হক, ড. আবুল ফজল হক, ড. আবু তালিব, ড. এন্তাজুল এম হকের মতো বিশ্বমানের বহু পণ্ডিত। এই মহান শিক্ষকদের অনেকেই জীবিত নেই।
সেই ধারার শিক্ষক প্রফেসর ইমেরিটাস ড. অরুণকুমার বসাক। একজন খ্যাতিমান পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি আমৃত্যু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকবেন। এই আশি বছর বয়সেও স্যার সকাল নয়টায় ল্যাবে ঢুকেন। রাত ৮-৯টা পর্যন্ত ল্যাবে কাজ করেন। গভীর ধ্যানে তিনি গবেষণা করে চলেছেন।
সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবস্তম্ভ। তিনি এই বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক। তাঁর সাহিত্যপ্রতিভা উপমহাদেশখ্যাত। হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যসৃষ্টিতে বাঙালি জাতি ঋদ্ধ।
পঠন-পাঠন, গবেষণা এবং গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানসৃষ্টি ও বিতরণে এখনও অনেক শিক্ষক নিবেদিত আছেন; জাতির উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। জাতীয়ভাবে সমাদৃত দু’জন শিক্ষকের গৌরবময় অবদান উল্লেখ করছি। তাঁদের জ্ঞানের জগতের ঘরানা ভিন্ন, কিন্তু উভয়েই কীর্তিমান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের খ্যাতিমান শিক্ষক ড. এম. মনজুর হোসেন দেশের উদ্ভিদ প্রজনন ও জিন প্রকৌশলে একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী। তিনি বাংলাদেশে কৃষিউন্নয়নে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, স্ট্রবেরির জাত উদ্ভাবন, টিস্যু কালচারের বীজ আলু ও জাবেরা ফুলের চারা তৈরি এবং কৃষি গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখেন।
দেশ-বিদেশে খ্যাতিমান বিজ্ঞানী হিসেবে ড. এম. মনজুর হোসেনের নাম বেশ সমাদৃত। ২০০৭ সালে দেশে প্রথম টকটকে লাল রঙের লোভনীয় ফল স্ট্রবেরি চাষের উদ্ভাবন করে পরিচিত হন। সোমা ক্লোনাল ভেরিয়েশন প্রযুক্তির সাহায্যে বাংলাদেশে চাষ উপযোগী করে রাবি-১, রাবি-২, রাবি-৩ নামে স্ট্রবেরি তিনটি জাত উদ্ভাবন করেন এবং কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেন।

ড. এম. মনজুর হোসেন ১৯৯৬ সালে রেইনবো টিস্যু কালচার নামে ল্যাব স্থাপন করে দেশে প্রথম টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রোগমুক্ত আলুবীজ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেন। ২০১৫ সালে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহীতে ৩০০ টন ধারণ ক্ষমতার প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরি করেন যা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে, পক্ষান্তরে একই ধারণ ক্ষমতার প্রচলিত পদ্ধতিতে এ ধরনের একটি হিমাগার তৈরিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। গবেষণার কৃতিত্ব ও মেধার স্বীকৃতি হিসেবে এ যাবৎ তিনি হেলেন কেলার গোল্ড মেডেলসহ অর্ধ শতাধিক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান জার্নালে তাঁর দু’শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
১৭০ বছর পর আবার জেগে উঠেছে সোনালী ঐতিহ্য ঢাকাই মসলিন। এই গৌরব পুনরুদ্ধারেরও জনক হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতিমান শিক্ষক বিজ্ঞানী ড. মো. মনজুর হোসেন।
মোঘলসম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর স্ত্রী নূরজাহানকে মসলিন কাপড় দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, একথা অনেকেরই জানা। নেপোলিয়নের স্ত্রী জোসেফিন বোনাপার্তাস-সহ বৃটেন-ফ্রান্সের রানীগণের প্রিয় ছিল ঢাকাই মসলিন। ১৮৫৬ সালে ইংল্যান্ডে মসলিন প্রদর্শনীর পর বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয় ঐতিহ্যবাহী ও রাজসিক মসলিন শাড়ি। সেই মসলিন পুনরুদ্ধার হয় ২০১৮ সালের শেষদিকে। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে মসলিন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন বিজ্ঞানী ড. মো. মনজুর হোসেন। পরে গবেষণা কাজের স্বার্থে আরও সাত সদস্যকে এই কমিটিতে যুক্ত করা হয়। এই কমিটিতেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন খ্যাতিমান শিক্ষককে সদস্য করা হয়। তাঁরা হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম ফিরোজ আলম, কৃষি ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে।
মসলিন কাপড় বা তুলার বাংলাদেশে এখন বিরল। গঠিত কমিটির প্রথম কাজ ছিল যে তুলা থেকে সুতা কেটে মসলিন শাড়ি বোনা হতো, সেই তুলার গাছ খুঁজে বের করা। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক করা হয় বিজ্ঞানী ড. মো. মনজুর হোসেনকে।
মসলিন কাপড় বা তুলার বাংলাদেশে এখন বিরল। গঠিত কমিটির প্রথম কাজ ছিল যে তুলা থেকে সুতা কেটে মসলিন শাড়ি বোনা হতো, সেই তুলার গাছ খুঁজে বের করা। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক করা হয় বিজ্ঞানী ড. মো. মনজুর হোসেনকে। তাঁর গবেষক দল দেশে বিফল হয়ে মসলিনের নমুনা সংগ্রহের জন্য ভারতের ন্যাশনাল মিউজিয়ামেও যান। ভারতে গিয়ে বিফল হয়ে গবেষক দল হতাশ হয়ে পড়েন। অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, এই খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যেতে বলেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেখানে ঢাকাই মসলিন দেখে এসেছেন।
লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে প্রায় সাড়ে তিন শ ঢাকাই মসলিন শাড়ি সংরক্ষিত আছে। সেখানে রয়েছে ১৭১০ সালে বোনা ঢাকাই মসলিন শাড়িও। শেষ পর্যন্ত মসলিনের একটু নমুনার জন্য ২০১৭ সালের জুলাইয়ে কমিটির তিন সদস্যসহ চার সদস্যের একটি দল লন্ডনের ওই মিউজিয়ামে যান। সেখানে মসলিনের কাপড়ের নমুনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য–উপাত্ত তাঁরা পেয়ে যান। লন্ডন থেকে সংগৃহীত মসলিন কাপড়ের ডিএনএ সিকুয়েন্স বের করা হয়। গবেষকেরা এই মসলিনের ডিএনএর সঙ্গে আগে সংগৃহীত কাপাসিয়ার একটি জাতের ফুটি কার্পাস গাছের মিল পেলেন অবশেষে। তাঁরা নিশ্চিত হন, সেটিই তাঁদের কাঙ্ক্ষিত জাতের ‘ফুটি কার্পাস’। স্থানীয় আবদুল আজিজ নামের এক ব্যক্তি এই কার্পাসের সন্ধান দিয়েছিলেন।
ড. মো. মনজুর হোসেন নিবিড় গবেষণা-তত্ত্বাবধানে মসলিন কাপড়ের নমুনা সুতার ডিএনএ সিকুয়েন্স বের করে ফুটি কার্পাস গাছের ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি গবেষণা মাঠে ফুটি কার্পাস চাষ করে সফলভাবে তুলা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত এই তুলা দিয়েই সূচনা ঘটে সূতাকেটে শাড়ি বোনা এবং চাষেরও সম্প্রসারণ ঘটে। সুতরাং, এ কথা বলা যেতেই পারে যে, পুনরুজ্জীবিত বাংলার গৌরব মসলিনের অমরজনক বিজ্ঞানী ড. মো. মনজুর হোসেন।
মলয় ভৌমিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা একজন শিক্ষক হলেও তিনি একজন প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। নাট্যজন হিসাবেই দেশজুড়ে এবং ভারতের বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর নাম সমাদৃত। একজন নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক, বাংলাদেশে পথনাটক আন্দোলন, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে মুক্ত নাটক আন্দোলনে প্রতিষ্ঠায় তিনি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও শিল্প ও সংস্কৃতিতে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রদত্ত শিল্পকলা পদক (নাট্যকলায়) ভূষিত। তাছাড়া, ১৯৯২ সালে ঢাকার লোক নাট্যদল তাঁকে নাট্যকর্মী পদক, ২০০৮ সালে মুনির চৌধুরী সম্মাননা, ২০০৯ সালে আরণ্যক নাট্যদল কর্তৃক আরণ্যক দীপু স্মৃতি পদক ও অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় সম্মাননা ২০২১ সহ আরও সম্মাননা প্রাপ্ত হন।
মলয় ভৌমিকের নেতৃত্বে ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দীর্ঘ সময় জোটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে সাংস্কৃতিক কর্মের প্রসার ঘটান। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন নাট্যদলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মলয় ভৌমিক। তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় চল্লিশটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বেতারে নিয়মিত নাট্যশিল্পী ছিলেন। তিনি বিটিভি ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে নাট্যকার ও নাট্য শিল্পী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে। মলয় ভৌমিকের রচিত টিভি নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আট প্রহরের গল্প, ক্ষরণ, ফেরা ইত্যাদি। আট প্রহরের গল্প, ধারাবাহিক নাটক সুন্দরি, মামুনুর রশীদ-এর প্যাকেজ নাটক বিশ্বাস তাঁর অভিনীত টিভি নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাঁর রচিত মৌলিক নাটকের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ, নাট্যনির্দেশনা ৩৬টি।
মলয় ভৌমিক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে ৭নং সেক্টরের অধীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়াও ১৯৯০ ও ১৯৯৬-এর গণআন্দোলন-সহ সকল জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
মলয় ভৌমিকের দেশব্রতী ভূমিকার জন্য বিভিন্ন সময় স্বৈরাচার ও মৌলবাদী শক্তির দ্বারা জেল-জুলুম, হামলা ও নিপীড়নের শিকার হন। সরকারের মানবাধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ২৪ আগস্ট ২০০৭, সরকারের বিশেষ বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কয়েকজনের সাথে তাঁকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ ডিসেম্বর ২০০৭, তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ।
ভারতের বাঙালি সমাজে মলয় ভৌমিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর ‘উত্তরখনা’ নাটকটি ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের সিলেবাসভুক্ত পাঠ্য, এটা বাংলাদেশের জন্যও গৌরবের।
ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরী, ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ, ড. খান সরোয়ার মুরশিদ, ড. আলী আহসান, ড. খান সরওয়ার মুরশিদ, ড. শামস-উল-হক, ড. মযহারুল ইসলাম, ড. এম আর সরকার, ড. এম এ রকীব, ড. আবদুল খালেক, ড. সাইদুর রহমান খান-এর মতো বিখ্যাত পণ্ডিত শিক্ষাবিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তাঁদের নাম উচ্চারণ করলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের জন্মপ্রভায় জড়িত থেকে এক রক্তস্নাত ইতিহাস গড়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শহীদ শামসুজ্জোহা, যিনি রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাক-হানাদার বাহিনী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ড. জোহার রক্তদান বিদ্যুৎগতিতে সকল বাংলার প্রান্তে প্রান্তে রণাঙ্গনে পৌঁছে যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করে। তরান্বিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।
শহীদ শিক্ষক ড. হবিবুর রহমান, শহীদ শিক্ষক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, শহীদ শিক্ষক মীর আবদুল কাইয়ুমসহ বহু শিক্ষার্থী-কর্মচারীর রক্তে রক্তস্নাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। জোহা হলে পাকসেনারা অস্থায়ী সেনানিবাস হিসেবে ব্যবহার করে একাত্তরে। জুবেরী ভবনকেও একই কাজে ব্যবহার করে। সমগ্র উত্তরজনপদের মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে জোহা হল ও জুবেরী ভবনে বন্দি করে নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর হত্যা করে জোহা হলের পূর্বদিকে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে লাশ ফেলে দিতো। শতশত মা-বোন সম্ভ্রমহানি ঘটেছে জোহা হলে।
১৯৬২ সালের বিতর্কিত হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী-সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অবদান রয়েছে।
১৯৬২ সালের বিতর্কিত হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী-সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অবদান রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মিউজিয়ামও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’ নামের এই মিউজিয়াম যাত্র শুরু করে। যুদ্ধদিনের বহু নিদর্শন এখানে সংগ্রহ হয়েছে।
বাংলাদেশ বিষয়ক উচ্চ গবেষণার জন্য স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে দেশের প্রথম গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে, যার নাম- আইবিএস (ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ)। এখানে দেশি-বিদেশি ফেলোগণও গবেষণা করেন এবং গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে এমফিল ও পিএইচ-ডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। শুরুর দিকে বিদেশি পরিচালক ও শিক্ষক নিয়োজিত ছিলেন। আইবিএস-এর সুনাম বিশ্বজুড়ে।
বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য ও ক্রীড়াঙ্গনের বহু নায়ক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের। বরেণ্য শিল্পী এন্ড্রু কিশোর, রফিকুল আলম, ফরিদা পারভীন, কবি মহাদেব সাহা, ফাতেমাতুজ জোহরা, সাবিনা আক্তার রুনা, কবি মহাদেব সাহা, অভিনেত্রী লুৎফর নাহার লতা, সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, নাট্যজন মলয় ভৌমিক, নাট্যজন মাসুম রেজার নাম সকলেই জানে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েয় সাংস্কৃতিক অঙ্গন খুবই সমৃদ্ধ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য দৌড়বিদ সাইদুর রহমান ডন। তিনি বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়া প্রথম অলিম্পিয়ান; জাতীয় পতাকা তিনিই বহনকারি। ১৯৮৪ সালে আমেরিকার লসএঞ্জেলেস-এ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে তিনি অংশ নেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য দৌড়বিদ সাইদুর রহমান ডন। তিনি বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়া প্রথম অলিম্পিয়ান; জাতীয় পতাকা তিনিই বহনকারি। ১৯৮৪ সালে আমেরিকার লসএঞ্জেলেস-এ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে তিনি অংশ নেন। সাইদুর রহমান ডন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কোনো পুরস্কার অর্জন করতে না পারলেও তাঁর মাধ্যমে অলিম্পিকের মত একটি বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সূচনা ঘটে। সাইদুর রহমান-সহ আর বহু খেলোয়াড় বিভিন্ন সময় সাফগেমস, এশিয়ান গেমস, বিভিন্ন জাতীয় স্পোর্টসে কৃতিত্বের অধিকারী হন।
আশির দশকের শেষ দিকের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম ওয়াজেদ ভাইকে গভীর অনুরাগে স্মরণ করছি। তিনি তখন জাতীয় ফুটবল দলের নামী ফুটবলার। খেলতেন ট্রাইকিং পজিশনে। জাতীয় দলের হয়ে বহু গোল করেছেন। একবার তিনি আবাহনীর বিরুদ্ধে একাই দুই গোল করে ফাইনালে ঢাকা মোহামেডানকে লীগ চ্যাম্পিয়ন করান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু গৌরবদীপ্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনন্যসেরা ‘বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’। বাংলার ইতিহাসচর্চার প্রধান পাদপীঠ দেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এই মিউজিয়াম। পাঁচ হাজার বছর আগের সিন্ধুসভ্যতা-সহ প্রায় ১৭ হাজার প্রত্ননিদর্শন রয়েছে এখানে। এতো প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন বাংলাদেশের আর কোনো মিউজিয়ামে নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু গৌরবদীপ্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনন্যসেরা ‘বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’। বাংলার ইতিহাসচর্চার প্রধান পাদপীঠ দেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এই মিউজিয়াম। পাঁচ হাজার বছর আগের সিন্ধুসভ্যতা-সহ প্রায় ১৭ হাজার প্রত্ননিদর্শন রয়েছে এখানে। এতো প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন বাংলাদেশের আর কোনো মিউজিয়ামে নেই। ১৯১০ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অনানুষ্ঠানিকভাবে বরেন্দ্র-অনুসন্ধান সমিতি গঠিত হয়, আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা একই বছরের প্রতিষ্ঠা ২৭ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠাতা নাটোর দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের সন্তান দয়ারামপুরের রাজা কুমার শরৎকুমার রায়। বরেন্দ্র-অনুসন্ধান সমিতি পরে গড়ে তোলে বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম। ১৯৬৪ সালের ১০ই অক্টোবর থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে এই মিউজিয়াম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান।
বরেন্দ্র-অনুসন্ধান সমিতি ১৯১২ সালে ঐতিহাসিক রমাপ্রসাদ চন্দ প্রণীত ও ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় সম্পাদিত ‘গৌড়রাজমালা’। বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে লিখিত গৌড়রাজমালা ‘বাংলার প্রথম লিখিত ইতিহাস’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও আলোড়িত করে এই গ্রন্থ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই গৌরব এখন বিপন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাকি হাঁটলে মন অবনত হয়ে আসে; বিষাদে ভরে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ আর এখানকার ইট-কাঠ-কংক্রিট আর অনিন্দ্যসুন্দর প্যারিস রোডের গাছগুলোও যেন কেঁদে ওঠে আমাদের নেতিবাচক ক্রীড়া দেখে!
বিশেষ ঋণ
১. বিজ্ঞানী ড. মো. মনজুর হোসেন-এর মসলিনে অবদান সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এবং কয়েকটি লাইন হুবহু দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে প্রকাশিত, আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ কর্তৃক ‘ঢাকাই মসলিনের পুনর্জন্ম’, শিরোনামের বিশেষ রচনা থেকে এবং একই বিজ্ঞানীর স্ট্রবেরি ও অন্য কৃষি অবদান এবং নাট্যজন মলয় ভৌমিক সম্পর্কে তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
মো. সফিকুল ইসলাম : উপ-রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বন্ধু তোমাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটা তথ্যবহুল প্রবন্ধ লেখার জন্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।