কথাসাহিত্যিক, কবি, চিন্তাবিদ ও গণবুদ্ধিজীবী আহমদ ছফার আলোচিত ৫০টি উক্তি

আজ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক, কবি, চিন্তাবিদ ও গণবুদ্ধিজীবী আহমদ ছফার ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হেদায়েত আলী ও মা আসিয়া খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। প্রতিষ্ঠানবিরোধী আহমদ ছফা ১৯৭৫ সালে লেখক শিবির পুরস্কার ও ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমির সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সাহিত্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন। ২০০১ সালে আজকের দিন অর্থ্যাৎ ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প ও কবিতা। অনুবাদ সাহিত্যেও ছিল বিশেষ অবদান। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে হলো- প্রবন্ধ : জাগ্রত বাংলাদেশ (১৯৭১), বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৭২), বাংলা ভাষা: রাজনীতির আলোকে (১৯৭৫), বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা (১৯৭৭), বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৮১), শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৯), রাজনীতির লেখা (১৯৯৩), আনুপূর্বিক তসলিমা ও অন্যান্য স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ (১৯৯৪),নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ (১৯৯৫),সঙ্কটের নানা চেহারা (১৯৯৬), সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৯৭), শতবর্ষের ফেরারী: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৯৭), শান্তিচুক্তি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ (১৯৯৮),বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র (২০০১), উপলক্ষের লেখা (২০০১), আমার কথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০২), সেইসব লেখা (২০০৮), সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস (১৯৭৯)। উপন্যাস : সূর্য তুমি সাথী (১৯৬৭), ওঙ্কার (১৯৭৫), একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন (১৯৮৮), মরণবিলাস (১৯৮৯) অলাতচক্র (১৯৯৩), গাভী বিত্তান্ত (১৯৯৫), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (আত্মজৈবনিক প্রেমের উপন্যাস,১৯৯৬), পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ (১৯৯৬)। সৃজনশীল জীবনী: যদ্যপি আমার গুরু (১৯৯৮); অনুবাদ : তানিয়া (মূল: পি. লিডভ) (১৯৬৭), সংশয়ী রচনা: বার্টাণ্ড রাসেল (১৯৮২),ফাউস্ট (মূল: ইয়োহান ভোলফ্ গাঙ ফন গ্যোতে) (১৯৮৬); কবিতা: জল্লাদ সময় (১৯৭৫), দুঃখের দিনের দোহা (১৯৭৫), একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা (১৯৭৭), লেনিন ঘুমোবে এবার (১৯৯৯), আহিতাগ্নি(২০০১); গল্পসংগ্রহ : নিহত নক্ষত্র (১৯৬৯)। কিশোর গল্প : দোলো আমার কনকচাঁপা (১৯৬৮); শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ : গো-হাকিম (১৯৭৭)।
বাঙালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক আহমদ ছফা। যাঁর চিন্তা ও স্বপ্ন তরুণসমাজকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। তিনি যেমন নিজে স্বপ্ন দেখতেন, সেই স্বপ্নের বীজ বুনতেন অন্যদের মাঝে। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার মধ্যে আগুন ছিল, বিরোধ ছিল, আর ছিল দেশ ও জনগোষ্ঠীর জন্য সদা জাগ্রত কল্যাণের বোধ। তাঁর উক্তিগুলো মানুষকে ভাবতে শিখায়, স্বপ্ন দেখাতে সহায়তা করে। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে বইচারিতায় উল্লেখযোগ্য ৫০টি উক্তি নিবেদন করা হলো-
১.
কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরনের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরনের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট।
২.
বড় বড় নামকরা স্কুলে বাচ্চারা বিদ্যার চাইতে অহংকারটা বেশি শিক্ষা করে।

৩.
জীবন সম্ভবত এ রকমই! আঘাত যত মারাত্মক হোক, দুঃখ যত মর্মান্তিক হোক,একসময় জীবন সবকিছু মেনে নেয়। দুনিয়াতে সবচাইতে আশ্চর্য মানুষের জীবন।-অলাতচক্র (পৃ:৭০)
৪.
সমস্ত সাফল্য এবং প্রতিষ্ঠার পেছনে সব সময় এক ধরনের নিষ্ঠুরতা আত্মগোপন করে থাকে!-মরণবিলাস (পৃষ্ঠা ৪৮)
৫.
আমার নিজের কাজের মূল্য আছে, তার স্বীকৃতি অন্যেরা দিতে কুণ্ঠিত হয়,আমি বসে থাকব কেনো? কেউ না দেখুক, আমি তো নিজে আমাকে দেখছি!-অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী (পৃষ্ঠা ১১৯)
৬.
পৃথিবী থেকে সাপ এবং শকুনের বিশেষ প্রজাতি বিলুপ্ত হলে কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না, একেক টাইপের মানুষের মধ্যে এই সাপ-শকুনেরা নতুন জীবনলাভ করে বেঁচে থাকবে!-অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী(পৃষ্ঠা ৮৯)
৭.
আমার সম্বন্ধে সবচাইতে ট্রাজেডি হলো, আমি নিজের মধ্যে ডুবতে পারিনি।
৮.
মাজারে মানুষ আসবেই। মানুষ আসবে কারণ সে দুর্বল, অসহায় এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
৯.
লোকেও যাই বলুক, যাই অনুভব করুক, নিজের কাছে আমি অনন্য।
১০.
আপাতদৃষ্টিতে পাগলেরাই অনেক বেশি তীক্ষ্ণদৃষ্টির অধিকারী।

১১.
আমার কাছে ঈশ্বর-চিন্তা আর মানুষের অমরতার চিন্তা সমার্থক। কেউ যদি আমাকে আস্তিক বলেন বিনা বাক্যে মেনে নেব। আমি আস্তিক। যদি কেউ বলেন নাস্তিক আপত্তি করব না। আস্তিক হোন, নাস্তিক হোন, ধর্মে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমি কোন বিবাদের হেতু দেখতে পাইনে। আমার অভীষ্ট বিষয় মানুষ, শুধু মানুষ। মানুষই সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত মূল্যচিন্তা, সমস্ত বিজ্ঞানবুদ্ধির উৎস।
১২.
মানুষ তো নিজের অজান্তে ও অনেক জঘন্য অপরাধ করে বসে। সমস্ত ধর্মতো পাপ বোধের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। যেহেতু মানুষ হিসাবে তোমাকে জন্ম নিতে হয়েছে তাই, তুমি পাপী !-অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী (পৃ: ৪০)
১৩.
আমাদের জাতীয় মূলধন হতাশা!-সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৯২)
১৪.
বেশি খাওয়া এবং একেবারে না খাওয়ার হতাশায় পীড়নে আমাদের সমাজ উত্থান শক্তিহীন।-সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৯২)
১৫.
আমাদের সমাজে অফুরন্ত শক্তি এবং অনন্ত সম্বাবনার আধারে অমৃতের পুত্র,অমৃতের সহোদর মানুষের জীবনই সবচাইতে ঘৃণিত, অবহেলিত এবং অনিশ্চিত। সর্বক্ষেত্রে মানুষ লাঞ্চিত, অপমানিত,এবং নিগৃহীত হচ্ছে। -সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৯২)
১৬.
একটি কাক আরেকটি কাকের মুখের খাবার কেড়ে নেয়ার জন্য যতরকম ধূর্ততার আশ্রয় নিয়ে থাকে, একজন কবি আরেকজন কবির প্রাপ্য সম্মানটুকু কেড়ে নেয়ার জন্য তার চাইতে কিছু কম করে না।
১৭.
এক ধর্ম, এক সম্প্রদায়ের অনাচারের বিরুদ্ধে অন্য সমাজের মানুষের কিছু না বলাও আরেক ধরনের
সাম্প্রদায়িকতা। -সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৮৪)
১৮.
নিজের জ্ঞান থাকলে সে জ্ঞানের অংশভাগী না করাও মানুষের প্রতি আরেক ধরণের কপটতা।-সাম্প্রতিক বিবেচনা :বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৮৪)
১৯.
আমি আর আপনি করলে যা অপকর্ম হয়,মহাপুরুষেরা করলেই সেসব লীলা হয়ে দাঁড়ায়!-অলাতচক্র(পৃষ্ঠা ২১)
২০.
কবি,সাহিত্যিক, লেখকেরা গর্ভিণী নারীর মত। তারা জাতি গড়ে ওঠার, বেড়ে ওঠার, বেঁচে থাকার ভ্রণকণা অন্তর্লোকে ধারণ করে থাকেন। জাতীয় জীবনে যা ঘটে গেছে অতীতে, তারা ভাবের আবেশে সামনের দিকে অঙুলি নির্দেশ করে বলে ফেলেন -এই -ই হতে যাচ্ছে এবং এই-ই হবে।-সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৬২)
২১.
বস্তুত: বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়,বলাকা নয়,সোনারতরী নয়, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’। সহস্রাধিক বছরের পরাধীন জীবনের অস্তিত্বের প্রতি সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়ে এই উচ্চারণের মাধ্যমে গোটা জাতির চিত্তলোকে তিনি এমন একটা অনমনীয় আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করেছিলেন যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরাট এক প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। এই গৌরব শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্যই দিতে হবে।-শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রবন্ধ ( পৃষ্ঠা ২১)
২২.
কি পরিমাণ লুণ্ঠণের সুযোগ পেলে মাত্র বিশ হাজার টাকার পরিমাণ সম্পদের মালিক একশ কোটি টাকার মালিক হতে পারে, বাংলাদেশ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।-সাম্প্রতিক বিবেচনা: বৃদ্ধিবৃতির নতুন বিন্যাস (প্রকাশ, ১৯৭২ সাল ;পৃষ্ঠা ৩১)
২৩.
মানুষ যখন নিজের উপর সুবিচার করতে পারে না, তখন এটা ওটা করে মানসিক ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করে।-আহমদ ছফা
২৪.
যে যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়।-আহমদ ছফা

২৫.
কম্যুনিজম মানুষকে নতুনভাবে দাসত্ব করতে শেখায়। কিন্তু তারপরও মার্কস পৃথিবীতে একজন মহান ব্যক্তি হিসেবে থেকে যাবেন।
২৬.
মানুষ খুব অসহায়। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেও কি হবে, মানুষ খুব মূল্যহীন। এগুলো নিয়ে খুব আস্ফালন করার কিচ্ছু নেই।মানুষ পৃথিবী থেকে অনেক কিছু শিখে। কিন্তু মানুষ আরেকটা জিনিস শিখে না, বিনীত হওয়া শিখে না।
২৭.
শিল্প-সাহিত্যে কেউ বাইরে থেকে ঘরে ফেরার সাধনা করে, কেউ ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার, যার যতদূর যাত্রা হয়, ততদূর সফলতা।
২৮.
যাদের ভয়ংকর প্রগতিশীল মনে করে সভা করে গলায় মালা দুলিয়ে দিই,তারাও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ভালো করে টিপে দেখুন, দেখবেন, মানুষ -পঁচা গন্ধ বেরোয়। ভেতরে নোংরা, ওপরের চটকদার চেহারাটুকুই চোখে পড়ছে। রাজনীতিবিদেরা যুবকদের সমাজ পরিবর্তনের কাজে না লাগিয়ে , তোষামোদের কাজে লাগিয়েছে। তাতে করে যুবশক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থেকে বাঁচতে হলে একেকজন যুবককে একেকটি পারমানবিক বোমার মতো বিস্ফোরণক্ষম হতে হবে।-নিহত নক্ষত্র (পৃষ্ঠা২৭).
২৯.
নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন যদি না আনতে পারি, অন্য সবাইকে পরিবর্তিত হতে বলার কোনো অর্থই থাকে না।
৩০.
জীবনের কাছে আমার প্রার্থনা, হে জীবন, তুমি যদি দ্রুত পাখি ঈগলের মতো অভীষ্ট অভিমুখে বাতাসে ভর না করে ছুটতে না পারো, সেইখানেই থেমে যেয়ো। কর্মহীন, গর্বহীন আমাকে কেউ যেনো জীবিত দেখতে না পায়।
৩১.
আমাদের দেশের পূর্বসুরী বলতে যাদের বোঝায়, তাদের মধ্যে জ্ঞানে, গুণে – কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, বিজ্ঞাণীদের মধ্যে এমন কোন বড় বিশ্বমাপের লোক নেই যাদের চিন্তাধারা অনুসরণ করে বেশীদূর এগিয়ে যাওয়া যাবে। সুতরাং “নেই” এটা মেনে নিয়ে কাজ করলে সুফল পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কুয়াসার চাইতে অন্ধকার ভালো।
৩২.
পৃথিবীর যাবতীয় জিনিসের বদল হয় প্রাকৃতিক নিয়মে আর আমাদের দেশের পণ্ডিতদের প্রভূ বদল হয় ক্ষমতার নিয়মে!-সাম্প্রতিক বিবেচনা:বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৭৯)
৩৩.
প্রতিভাহীন ব্যক্তির ক্ষতি করার ক্ষমতা অল্প। প্রতিভাবান ব্যক্তি বুদ্ধি খাটিয়ে ইচ্ছে করলে খৈ খাওয়ার জন্য ধানের গোলায় আগুন লাগাতে পারে!-সাম্প্রতিক বিবেচনা:বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (৬১ পৃষ্ঠা)
৩৪.
যে কোনো দেশের বুদ্ধিজীবীরা যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের অনাচার -অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অসন্মত হন সেই দেশটির দুর্দশার অন্ত থাকে না। বাংলাদেশ সেইরকম একটা দেশ। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উদ্যোগ, প্রয়াস কোথাও পরিদৃশ্যমান নয়।-সাম্প্রতিক বিবেচনায়:বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ৯)
৩৫.
বোকা লোকেরা বোকামীতে ভয়ানক চালাক। তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বোকামীতে টিকিয়ে রাখতে চায়।
৩৬.
যারা মৌলবাদী তারা শতকরা একশ ভাগ মৌলবাদী। কিন্তু যারা প্রগতিশীল বলে দাবি করে থাকেন তাদের কেউ কেউ দশ ভাগ প্রগতিশীল, পঞ্চাশ ভাগ সুবিধাবাদী, পনের ভাগ কাপুরুষ, পাঁচ ভাগ একেবারে জড়বুদ্ধি সম্পন্ন।-সাম্প্রতিক বিবেচনা :বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (পৃষ্ঠা ১০)

৩৭.
জীবনে আমরা যাদের সবচাইতে ভালবাসি, যারা আমাদের চলার পথ সুগম করে দেয়, সুদিনে আমরা তাদেরকেই ভুলে থাকি।- মরণ বিলাস
৩৮.
আমাদের শ্রদ্ধাভাজন বয়ােজ্যেষ্ঠরা যেভাবে আমাদের উপকার করতে চান আমরা পরবর্তী প্রজন্মের তরুণরা যেভাবে উপকৃত হতে চাই, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক, সেদিন খুব ভালােভাবে বুঝতে পেরেছিলাম।― যদ্যপি আমার গুরু
৩৯.
শিশুদের অনেকে আসমান কা টুকরা, জমিন কা ফুল, স্বর্গের দেবদূত কতকিছু বলে থাকেন। কিন্তু তারা যে কী পরিমাণ নিষ্ঠুর হতে পারে যার অভিজ্ঞতা হয়নি বুঝবে কেমন করে।― পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ
৪০.
প্রেম আবার কী? প্রেম কাকে বলে? মেনী বেড়ালের সঙ্গীনি খোঁজার চিৎকার যাকে ভদ্র ভাষার প্রেম বলা হয়।― গাভী বিত্তান্ত
৪১.
বইয়ের দোকান পরখ করলেই বেবাক সমাজটা কোনদিকে যাইতাছে, হেইডা টের পাওন যায়।―যদ্যপি আমার গুরু
৪২.

আমাদের দেশের সবচাইতে প্রাচীন এবং সবচাইতে সম্ভ্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি হাল আমলে এমন এক রণচন্ডী চেহারা নিয়েছে। এখানে ধনপ্রান নিয়ে বেঁচে থাকা মোটেই নিরাপদ নয়। এখানে যখন তখন মিছিলের গর্জন কানে ঝিম ধরিয়ে দেয়। দুই দলের বন্দুকযুদ্ধে যদি পুলিশ এসে পড়ে সেটা তখন তিন দলের বন্দুক যুদ্ধে পরিণত হয়। কোমলমতি বালকেরা যেভাবে চীনা কুড়াল দিয়ে অবলীলায় তাদের বন্ধুদের শরীর থেকে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে, সেই দক্ষতা ঠাঁটারি বাজারের পেশাদার কসাইদেরও আয়ত্ত করতে অনেক সময় লাগবে।― গাভী বিত্তান্ত
৪৩.
সকলের দৃষ্টির অজান্তে এখানে একের অধিক হনন কারখানা বসেছে, কারা এন্তেজাম করে বসিয়েছেন সকলে বিশদ জানে। কিন্তু কেউ প্রকাশ করে না। ফুটন্ত গোলাপের মতো তাজা টগবগে তরুণেরা শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর হনন কারখানার ধারেকাছে বাস করতে করতে নিজেরাই বুঝতে পারেন না কখন যে তাঁরা হনন কারখানার কারিগরদের ইয়ার দোস্তে পরিণত হয়েছেন। তাই জাতির বিবেক বলে কথিত মহান শিক্ষকদের কারো কারো মুখমন্ডলের জলছবিতে খুনি খুনি ভাবটা যদি জেগে থাকে তাতে আঁতকে উঠার কোন কারণ নেই। এটা পরিবেশের প্রভাব। তুখোড় শীতের সময় সুঠাম শরীরের অধিকারী মানুষের হাত-পা গুলোও তো ফেটে যায়।― গাভী বিত্তান্ত
৪৪.
যদ্যপি আমার গুরু শুড়িবাড়ি যায়, তদ্যপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।― যদ্যপি আমার গুরু

৪৫.
সৃষ্টিশীল মানুষেরা সাধারণত বিপজ্জনক ধরনের হয়ে থাকেন। বাইরে তারা যতোই নিরীহ এবং অপরের প্রতি মনোযোগী হয়ে থাকুন না কেনো ভেতরে তাদের স্বেচ্ছাচারী হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যেখানে আত্মপ্রকাশের বিষয়টি অপর সকল কিছুকে ছাপিয়ে ওঠে, সেখানে ব্যক্তিকে অনিবাৰ্যভাবে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে হয়। সৃষ্টিধর্মের নিয়ম ছাড়া বাইরের কোনো নিয়ম সেখানে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে না।― যদ্যপি আমার গুরু
৪৬.
“…তারপর আমি ইংরেজি বিভাগের ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হােসেন সম্পর্কে জানতে চেয়ে বললাম, স্যার, একটা সময়ে তাে সৈয়দ সাজ্জাদ হােসেন আপনার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সাজ্জাদ সাহেব সম্পর্কে আপনি কী চিন্তা করেন?
স্যার বললেন, সাজ্জাদরে আমি খুব পছন্দ করতাম। একবার য়ুনিভার্সিটিতে একটা প্রােভাইস চ্যান্সেলর অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিবার কথা অইল। ভাইস চ্যান্সেলর মাহমুদ হাসেন আমারে কইলেন, আপনে তিনটা নাম ঠিক করেন, আমি তিনটা নাম ঠিক করি। আমি যে লিষ্ট করছিলাম, তাতে সাজ্জাদের নাম আছিল দুই নম্বরে। পরে মাহমুদ হােসেনের লিস্টের সঙ্গে মিলাইয়া দেখলাম, তিনিও সাজ্জাদরে দুই নম্বরে রাখছেন। মাহমুদ হােসেন সাহেব আমারে জিগাইলেন, সাজ্জাদের ব্যাপারে আমার লগে আপনের মতামত মিইল্যা গেল। আপনে কী কারণে সাজ্জাদরে দুই নম্বরে রাখছেন? আমি কইলাম, পয়লা আপনের মতটা শুনি, তারপরে আমারটা কমু। মাহমুদ সাহেব কইলেন, সাজ্জাদ’স আদার কোয়ালিফিকেশনস আর অলরাইট। বাট হি ল্যাকস চ্যারিটি। যার মনে দয়া নাই তারে উপরে আনা ঠিক নয়। আমি কইলাম, আমিও সাজ্জাদের ব্যাপারে এটজ্যাকলি একই কথা চিন্তা করছিলাম। তারপর থেইক্যা সাজ্জাদের লগে আমার রিলেশন খারাপ অইয়া গেল। এখানে উল্লেখ করা বাধ করি অপ্রাসঙ্গিক হবে না, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন সাহেব ইংরেজিতে যে আত্মজীবনী লিখেছেন, তাতে রাজ্জাক সাহেবের নামে অনেক নালিশ করেছেন।”―যদ্যপি আমার গুরু

৪৭.
পড়ার কাজটি অইল অন্যরকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোনো বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লিখতে পারবেন কিনা। আপনের ভাষার জোর লেখকের মতো শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনের শব্দভান্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইর্যা নিবেন , আপনের পড়া অয় নাই।-প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক”― যদ্যপি আমার গুরু
৪৮.
যে ধরনের কাজে অমানুষিক মানসিক শ্রমের প্রয়ােজন হয়, সে ধরনের কাজ করার প্রেরণা আমাদের সমাজ থেকে সংগ্রহ করা একরকম অসম্ভব। এখানে একজন বড় কাজ করলে উৎসাহ দেয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।― যদ্যপি আমার গুরু
৪৯.
আমাদের শ্রদ্ধাভাজন বয়ােজ্যেষ্ঠরা যেভাবে আমাদের উপকার করতে চান আমরা পরবর্তী প্রজন্মের তরুণরা যেভাবে উপকৃত হতে চাই, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক, সেদিন খুব ভালােভাবে বুঝতে পেরেছিলাম।―যদ্যপি আমার গুরু
৫০.
মন্ত্রী বাঁচলে নিজের ক্ষমতায় বাঁচবেন, মারা গেলে আয়ু শেষ হয়েছে বলে মারা যাবেন।― মরণ বিলাস
গ্রন্থনা : আবু সাঈদ
চমৎকার। এই উপস্থাপনার কারণে অনেক পাঠক পড়তে আগ্রহী হবেন। জনাব আবু সাঈদকে ধন্যবাদ।