বাংলার ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান

১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন ‘পূর্ব বাংলা’ ও ‘আসাম’ প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে যে শিক্ষার জোয়ার উঠেছিল সে সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়। ১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন। ১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫টি সাবকমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রূপরেখা স্থির করে। ভারত সচিব সে সময় নাথান কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন দেন। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিশনের উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু, ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহঅধ্যক্ষ ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ন স্বাধীনতা দাবি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা শহরের কলেজগুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট রূপে গণ্য করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অওতাভুক্ত এলাকায় গন্য করার কথাও বলা হয়। সৃষ্টির শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। এ ছাড়া ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ১৩টি সুপারিশ করেছিল এবং কিছু রদবদলসহ তা ১৯২০ সালের ভারতীয় আইন সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি জে হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।

এবার আসা যাক বাংলার ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান:
বাংলার ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অন সিকারজ। যা আজকের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পিছনে অবদান রেখেছে। শুরু করা যাক, দেশ বিভাজনের এর মধে দিয়ে।১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুইটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।এরপর থেকে পাকিস্তান অংশে নানা রকম বিরোধিতা দেখা দেয়।পাকিস্তান পূব৴ ও পশ্চিম দুই অংশে বিভক্ত ছিল।সেই পূর্ব পাকিস্তান হল আজকের বাংলাদেশ। তবে এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ।ভাষা আন্দোলনের রাজপথে কম–বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।তাদের রক্তঝরা প্রাণের বিনিময়ে আমরা অর্জন করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।এছাড়া ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬২ ও ১৯৬৪ এর শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ধারি আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ , গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাই বাংলার ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অতুলনীয়।
১৯২১-২০২১ সুদীর্ঘ ১০০ বছর পথচলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি কম নয়।দীর্ঘ এই পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তাই অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ যুগ ধরে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
প্রতীক বড়ুয়া, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট বিভাগ
হৃদ্য হলাম