জেনে নিই বইয়ের শহরগুলো

বইপ্রেমিদের জন্য সবচেয়ে ভাল লাগার নাম হচ্ছে বই। সেই বই পড়ার জন্য অনেক কঠিন রাস্তা পাড়ি দিতে পারেন তারা। শহরের নিরিবিলি কোন জায়গায় বসে যদি বই পড়া যায় তাহলে তাতে ভালো লাগা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বইপ্রেমি-ভ্রমণপ্রিয় পাঠকদের জন্য রইল কিছু বইয়ের শহর-এর তথ্য :
উইগটাউন, স্কটল্যান্ড’বইয়ের শহর’ হিসেবে পরিচিত স্কটল্যান্ডের উইগটাউন। বইপ্রেমিদের জন্য জায়গাটি একদম আদর্শ বলা যায়। ১৯৯৮ সালে বইয়ের শহর হিসেবে স্বীকৃতি পায় উইগটাউন। শহরে অধিবাসীর সংখ্যা মাত্র এক হাজার জন আর দোকান আছে ১০টি। মানুষের তুলনায় বইয়ের দোকানের সংখ্যাই বেশি। এই দশটি দোকানে এক হাজার অধিবাসীর জন্য পড়ার বই আছে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি।এখন বইয়ের শহর বলে পরিচিত যে জায়গা সেখানে বই উৎসব হবে না তাই কি হয়? প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে এখানে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বইপ্রেমি পাঠকদের মধ্যে শিশু-কিশোর, বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। সাহিত্য উৎসব ছাড়াও এখানে নানা ধরনের মিউজিক, থিয়েটার আর শিল্পকলার প্রদর্শনও হয়ে থাকে। শহরতটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে ‘দ্য ওপেন বুক’ নামে একটি অ্যাপার্ট্মেন্ট যেখানে চাইলে যে কেউ কয়েকদিন থাকতেও পারবেন। এর অবস্থান গ্লাসগো থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে।

ওবিডোস, পর্তুগালপর্তুগালের ওবিডোস শহর বইয়ের নগরী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ২০১৩ সালে। এই শহরটি শুরু হয়েছিল প্রাচীন রোমান সময়ে। বইয়ের শহর হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান এই শহরের সিটি হল ও লার ডেভাগার। পর্তুগালের সবচেয়ে বড় সাহিত্য উৎসব ‘ফোলিও আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছরের অক্টোবরে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বইপ্রেমিরা এখানে আসেন উৎসবে যোগ দিতে। পুরনো এই শহরে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের বই।
রেডু, বেলজিয়ামবেলজিয়ামের ছোট্ট শহর আর্ডেনাসের রেডু। শহরটিতে মাত্র ৪০০ অধিবাসীর বাস। ব্রাসেলস থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিতার দক্ষিণ পশ্চিমেই এই শহরের অবস্থান। ইউরোপের প্রথম এই বইয়ের শহরটি স্থাপিত হয় ১৯৮৪ সালে। রেডুতে বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে ২৪টি। পুরন অনেক বই আর কমিকের সংগ্রহ আছে এখানে। আছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে আর বেশ কিছু ক্রাফটের দোকান। এ বইয়ের শহরে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখেরও বেশি দর্শক সমাগম ঘটে। ইস্টারের স্ময় ‘ফেত ডিউ লিভর’ নামে বার্ষিক বইয়ের উৎসবে পনেরো হাজারের মত দর্শক আসে।

মান্ডাল, নরওয়ে১৯৯৫ সালে বইয়ের শহর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া নরওয়ের জস্টেডালসব্রিন হিমবাহের কাছে মধ্য ফিয়ারল্যান্ডে অবস্থিত ছোট্ট শহর মান্ডাল। বার্জেন থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এর অবস্থান। মাত্র ৩০০ জন অধিবাসীর এ শহরে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর কিছু বইয়ের দোকান। মজার বিষয় হচ্ছে এ শহরের বইয়ের দোকানগুল কোনো সুন্দর সাজসজ্জাওয়ালা ভবনে নয়।সবগুলো দোকানই পরিত্যক্ত ভবনে অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে পোস্ট অফিস, ওয়েটিং রুম, ব্যাংক আর মুদির দোকান। কথায় বলে, যদি মান্ডালের সমস্ত বইয়ের তাককে একসাথে করা হয় তবে তার দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৫ মাইল লম্বা। সেপ্টেম্বর মাসে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইয়ের সকল দোকান খোলা থাকে।

সেইন্ট-পিয়ের-ডে-ক্লাজেস, সুইজারল্যান্ডসুইস পর্বতমালার কেন্দ্রে সুইজারল্যান্ডের ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষী অংশটিতে ছবির মতো সাজানো শহরটির নাম সেইন্ট-পিয়ের-ডে-ক্লাজেস। জেনেভা থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। ১৯৯০ সালে এই শহরটি ‘বইয়ের শহর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বইয়ের শহরের প্রাণ হচ্ছে বই উৎসব। প্রথমবারের মত ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে এখানে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।এরপর থেকে প্রচলিত এই ধারা আজও চলে আসছে। আসেন নানা সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক। বিভিন্ন দোকানের মানুষেরাও আসেন। দর্শক সমাগম হয় পনেরো হাজারের মত। শহরে প্রতি সপ্তাহে শনিবার সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। চাইলে আপনিও যোগ দিতে পারেন। এখানে যোগদানের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শহরটির প্রধান চত্বরেই আছে ১০টি বইয়ের দোকান। নতুন পুরাতন মিলিয়ে অসংখ্য বইয়ের সন্ধান মিলবে এখানে।
জিনবাচো, জাপানজাপানের টোকিওতে অবস্থিত জিনবাচো চিওডা অঞ্চলের একটি প্রতিবেশী এলাকা। বর্তমানে এখানে ১৭০টিরও বেশি নতুন পুরাতন বইয়ের দোকান আছে। আরও আছে প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান, সাহিত্যিক সমাজ। এগুলর বেশিরভাগই ইয়াশুকুনি ও হাকুশান সরণীর পাশে অবস্থিত। ইয়াশকুনিতে যদি কখনও যান আপনি দেখতে পাবেন সেখানে বেশিরভাগ দোকানের বইগুলো দক্ষিণমুখী করে রাখা।কারণ দোকানিরা বিশ্বাস করেন, এতে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বইকে রক্ষা করা যায়। আপনি জাপানি ভাষা নাজানলেও সমস্যা নেই, এখানে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পঅর ঘণ্টা আপনি বই দেখতে পারবেন, খুঁজতে পারবেন।
বাহ! তথ্যসমৃদ্ধ রচনাটি আমায় ঋদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দিল। নুসরাত মিশু, আপনাকে ধন্যবাদ। অভিনন্দনও।