রয়েল পাল’র কবিতাগুচ্ছ

শরৎ বন্দনা
আবার শরত এলে
গোপন বাক্স থেকে বের করবো
সেগুন পাতায় স্বচ্ছ নীল আকাশ.
একলা নিঝুম ঝিল
জলে শাপলার মাঠ
কাশের বনে বাউল বাতাস
শিশিরভেজা পথ
মেঘের খামে রোদ
শিউলীতলায় ফুল কুড়াবো.
আবার শরত এলে
পাতায় আঁকা মেঘগুলো
ওড়াবো বাতাসে
তারাভরা শেষ রাত
দূরে প্রদীপ জ্বলে
ঝিঁঝিঁডাকা ঘন বাঁশের ঝাড়
অন্ধকার ঘুমায় দিগন্তরেখায়
ফুলে ফুলে আলোর মত নড়ে ওঠে ভোর
সৌরভে ভাসে উঠোন
পুরনো প্রেমিকা
প্রেমের কবিতা লেখার চেয়ে পুরনো প্রেমিকাকে
কেমন আছো বলা বেশ কঠিন।
যদি সে উত্তর হারায় ! যদি ওপাশ ফিরে মুখ !
যদি পুরনো ভুলের ঠোঁটে হঠাৎ ঝড় !
সে যদি বলে, “সিগারেট কি এখনো টানো,
ছাইপাঁঁশ সেই বন্ধুরা কি এখনো গলায় গলায়?”
মাঝরাতে কার মুখের উপর বাজপাখি হও!
ঠিক এই তীরগুলোই কবির ক্ষত-
পালক বিহীন শরীর।
বন্ধ জানালা !
সমিধও।
প্রেমের কবিতা লেখার চেয়ে পুরনো প্রেমিকার
চোখে চোখ রাখা বেশ কঠিন।
যদি সে সরিয়ে নেয় চোখ ! যদি ঢেউ ওঠে কাজল দিঘীতে।
মেঘলা হয়ে যায় জলছবি!
ধূসর পান্ডুলিপি
তোমাকে যে ভালোবাসি তা বলার জন্য
তিনটি পথই কবিতায় নদী হয়ে গেছে
স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ড ।ঠিক ঈশানকোণে গাণিতিক সংকেত।
R+R।হেডস্যারের চোখের জালে ধরা পরা ইংরেজি অক্ষর।
একটা মাধ্যমিক অপরাধ কানধরে দাঁড়িয়ে থাকে খেলার মাঠে।
আরেকটি পথ জ্বলে যায় তোমার বাবার চোখের রাগে
একটা কবুতর।তার ঠোঁটে লাল গোলাপ।নীল খামে
কবুতর টুকরো টুকরো হয়ে নীল আলোয় ছাই হয়ে ওড়ে
তৃতীয় পদক্ষেপটি ;
আট বছর ধরে লেখা অসমাপ্ত চিঠি
সেই আহত ডানার বেদনার গল্প-
ধূসর পান্ডুলিপি
যার উৎসর্গ পত্রে—
R+R
হাসপাতাল
ঘরে থাকো। পুরো শহর জ্বর-সর্দি।
পৃথিবী একটা হাসপাতাল।
মুখে মুখে মাস্ক। অক্সিজেন। শ্বাসকষ্টরা।
বাইরে যেওনা। বাইরে বিপদসংকেত।
জোড়া জোড়া চোখ।রাস্তাঘাট।
অস্পষ্ট হয়ে যাবে মুহূর্তে।
প্রকৃতি মানুষের বিপরীতে।।বিধাতা
বিপক্ষের দলের হয়ে খেলছেন।
যেন ছুয়ে দিলেই খেলা শেষ।
কাছে থাকো। ভয় করে। বাইরে দাঁড়িয়ে মৃত্যু।
দীর্ঘ অনিশ্চয়তা।
দুই হাত দূরত্বে যমদূত!
তোমার নামের পাশে সবুজবাতি
তোমার নামের পাশে সবুজবাতি,
সবুজবাতিতে খুঁজি জীবনের রঙ।
বয়স কমে রোজ। আঙুল কথা বলে।
ভেতরে বসন্ত।হাওয়ায় ওড়ে শরীর।
রাত ছোট হয়।কান পাতলেই ঘুম।
মাস হলো আলাপ।কত কি শুভবার্তা!
সূর্যমুখীর রূপ।বুকে ফোটাল মৌমাছি।
সমস্ত বর্ষা ঢেলে দিল কফির কাপে।
হাতের রেখায় নাম।স্বপ্ন এঁকে দিল বীজের।
একদিন হঠাৎ;
বসন্তের একটা পাতাও নড়ল না।
টু শব্দ নেই মনবাজি ধরা কোকিলের।
রহস্য ভরা নদী।পর্বত কিংবা অরণ্যের।
আড়ালে মন দাঁড় করিয়ে রাখল সন্ধ্যায়।
দিনগুলো বড় হচ্ছে।কপালের ভাঁজে বয়স।
চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে মাথা আঁচড়ালেই।
কি হল তার? কি ছিল দোষ?
কেন খামখেয়ালি? খবর নেই কেন শুভবার্তার!
তোমার নামের পাশে সবুজবাতি,
সবুজবাতি কখনো কখনো জীবনের রঙ ।
তোমার নামের পাশে সবুজবাতি,
সবুজবাতি কখনো কখনো সন্দেহের।