মুহাম্মদ রফিক ইসলাম’র কবিতা

বুভুক্ষুর বিলাপ
পেটে পাথর বেঁধে
সময়ের দোলাচালে নাচতে হয়, নাচি।
পুতুলের বংশ রক্ষায়—
নাচতে নাচতেই ভুলে থাকতে হয়
ছাইচাপা আগুনের ব্যথা।
অভুক্ত সন্তানের মুখ
মা-বাবার অষুধের সার্টিফিকেট
পকেটে পুরে—
আমি বাধ্য, অনুগত;
তাবেদারি মিছিলে!
হাতের মুঠোয় ভয়ের শপথ
স্লোগানে ‘মনিবের জয়!’
বড্ড এগিয়ে—
পঙ্গু স্ত্রীয়ের চিরকুট!
বাঁচার সংস্কৃতি যখন
পদলেহনে অপসংস্কৃতি
শ্রমদাসের অসভ্যতাই সভ্যতা আজ
তোমার আঙিনায় !
সর্বকালের স্মরণবেদীতে দাঁড়িয়ে
চাল-নুনের কাছে নতজানু জনতা’র
স্বাধীনতা ফুঁপিয়ে কাঁদে।
আর্তের ঘরে খুদিতের প্রসবে
আমি বরণ চাই না; বাঁচতে চাই—
নতুন করে…
সুখঘটিত অসুখ
পাশবালিশের মুখে
ওর সাবেক প্রেমিকের অর্থনৈতিক ক্যাচাল
মন্দ লাগে না
স্ত্রীয়ের মুখে পর-পুরুষের
মানিব্যাগের সুস্বাস্থ্য সমাচারে
ঘোরে ঘুরে যাই
আবেগ-বাস্তবতায় দেখি
আমার পকেটবিহীন জামা ধোপানীর ঘরে
সাপলুডু বোনে
বয়সের বিকালে
আমাদের দাম্পত্য জীবনের টেলিফিল্ম
পারাবারিক চ্যানেলের প্রেমনাড়ু
স্ফিংস
সেকালে বাবা আমারে খুঁজতেন
একালে আমি খুঁজি
পড়শীর কেউ একজন আমারে নিয়া
কাগজের নৌকায় চড়তেন
ভাসতাম
একালে আমি কাঠের নৌকায় চড়ি
হাবুডুবু খাই, নাকে-মুখে জল গড়ায়
সর্দি হয়, জ্বর আসে
বুক চেপে কাশি
সেকালের বাবা
একালের আমি
বাবার প্রজন্মকে খুঁজি
উদোম সংস্কৃতি
রাত? কায়াহীন ছায়া
জালানার কাছাকাছি;
দরজা খুলে যায়— উঠোন, আল, সড়ক
নগরের পথে দুই জোড়া পা—
বিড়াট শহর!
শহরের বুক চিরে বেওয়ারিশ গলি,
দূরের রাজপথ— ধীর, স্থির
একজোড়া পা
পতিত উঠান—
একটা কুকুরের বোল,
ফুটে ওঠে পাখির ঠোঁটে!
বসন্ত যখন অবুঝ কিশোরী
অতঃপর…
বসন্তের স্নান;
অর্ধ-নগ্ন জলফোঁটায় মাটির ডিম্বাণু ফুটে,
ঘাস!
বসন্তের জলে ভিজি, সুরসুরি খেলি
সবুজ জমিনে অবুঝ বিকাল—
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম: ১৯৮২ সালের ৩০ অক্টোবর নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষকতা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ইচ্ছেঘুড়ির আকাশ (২০১৯)
শুভকামনা বইচারিতা। গভীর শ্রদ্ধা সম্পাদক সমীপে।