তৈমুর খানের চারটি কবিতা

১
যুগের প্রচ্ছদ
অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছি
পিতার আকাশে অনেক নক্ষত্র ঝরে গেলে
অন্ধকারের ছায়ায় ব্যক্তিত্ব উঁকি মারে
কেমন করে ডাকব নিজেকে ?
সামনাসামনি নীরব ও আমি
চেয়ে আছি সুদূর চৈতন্য পারে
আজ কোনো গল্প নেই
গল্পরা চরতে গেছে মাঠের অন্ধকারে
এক একটি বাইরের তরঙ্গ
নোনতা ফাগুনের সংবাদে
আমাকে ভেজাতে আসে —
দীর্ঘ ফণায় তাদের সম্মোহন কাঁপে
দরজা খুলি। সমস্ত ক্ষয়ের চিহ্নগুলি
যুগের প্রচ্ছদ।
অস্তিত্ব নেই। শব্দের দেয়ালে
সময়ের নিরর্থ নির্দেশ ।
২
আমাকে বৃষ্টির ভেতর রাখো
আমাকে বৃষ্টির ভেতর রাখো
সময়ের কোলাহলে হুলস্থুল পাড়া
আগুন জ্বালায় কারা ?
তির-ধনুক ছুটে আসে
মঞ্চে মঞ্চে যুদ্ধের মহড়া
দিন যায়। মাইকে ঘোষণা হয়
নাম পরিচয়
সামনে আলোর বৃক্ষ
মনীষীদের নাম লেখা পাতায় পাতায়
এক একটি নামের কাছে এসে
খুঁজতে থাকি কোথায় করুণা
হৃদয় কোথায় থাকে
হাত বাড়ালেই হাত কাছে আসে কিনা
আমাকে বৃষ্টির ভেতর রাখো
বিশ্বাসও অসহ্য এখন
মরে গেছে সব সান্ত্বনা !
৩
ধ্বংস বেশ বাজনা বাজাচ্ছে
মৃত মানুষের ভিড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে
সদ্য রক্তপাত আর যন্ত্রণার চিৎকার
কোন্ দিকে যাব ?
ধ্বংস বেশ বাজনা বাজাচ্ছে
সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অন্ধকার
কোথাও যাওয়ার নেই
চকচকে কাদের উলুধ্বনি ?
অস্ত্রের বিবাহ অস্ত্রের সাথে
ধর্ষক দাঁড়িয়ে আছে ঈশ্বরের মতো
ধর্ষকের পায়ে কারা ফুল রাখে ?
কোথাও রাস্তা নেই
সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে….
৪
বিষাদের দেশে
বিষাদের দেশে সন্ধ্যা এল
ভাঙা তোরঙ্গগুলি থেকে
আমাদের নিঃশেষ মূলধন
অবলুপ্ত হবে।
সাংসারিক ক্রিয়ার আলো
গৃহে গৃহে জ্বলে
গৃহিণীরা হৃদয় আগলে রাখে ।
বস্তু পৃথিবীর চাঁদ উদিত হলে
কী নামে তাকে ডাকা হবে ?
ভাঙা তোরঙ্গগুলি নিঃস্ব ইতিহাস…
তৈমুর খান : জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট সংলগ্ন পানিসাইল গ্রামে ।পিতা ও মাতার নাম :জিকির খান ও নওরাতুন ।শিক্ষা: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পিএইচডি। পেশা: উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক । প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা, নির্বাচিত কবিতা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি, নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি, কাহার অদৃশ্য হাতে, ইচ্ছারা সব সহমরণে যায়, আকাঙ্ক্ষার ঘরের জানালা ইত্যাদি । পুরস্কার :কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য সম্মান এবং অক্সিজেন সাহিত্য সম্মান । ঠিকানা : রামরামপুর, শান্তিপাড়া, রামপুরহাট, বীরভূম,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
সবগুলো কবিতাই আমার কাছে ভালো লেগেছে।