ফারুক আহমেদের একগুচ্ছ কবিতা

শত বেদনা খুঁড়ে
বেদনার আকাশ জুড়ে
একটা ছবির মুখ
মানুষ নয় মানুষের মতো মুখ ভেসে আসে
বেলা অবেলায় কোনো আত্মশুদ্ধি?
ভালবাসা পরীর মতো রাজকন্যা
ঘুম নয়— ঘুমের মতো একটা সকালের ডাক
নাম না জানা পাখির গুঞ্জরণ শুনতে পাওয়ার প্রতীক্ষায়৷
পিউকাঁহা পাখির ডাকে
ভোরের ভালোবাসার চাদর জড়িয়ে
সে কি আর কখনো আসবে না
পরীর মতো রাজকন্যা হয়ে।
বেদনার আকাশ খুঁড়ে
সাড়ে তিন হাত জমিনের যোগ্য হতে ছুটে চলেছি।
বিরামহীন কর্মযজ্ঞে দুটো চোখের ইশারায়
আজও খুঁজে ফেরা বুনো প্রেম।
বিবেকহীন মানুষের জন্য প্রকৃতি বুমেরাং।
শবদেহ পৃথিবীর ইতিহাস রচনা করে।
চোখের ইশারা
আম ছবেদা জামরুল লেবু ছিম গাছের ফাঁকে
চোখের ইশারা
ভালোবাসা এসপি কিংডম স্মৃতি আকাশ স্পর্শ
প্রেমিক হতে পারিনি, দুঃখ অনেক
উদার হতে পারিনি, দুঃখ অনেক
আকাশ হতে পারিনি, দুঃখ অনেক।
স্নান ঘরে সুগন্ধী শ্যাম্পুর ঘন সাদা মেঘ।
ভিজবে না মন
আমার না লেখা লুকিয়ে থাকে তোমার বিনুনি করা চুলের প্রতিটি খাঁজে
আমার ভালোবাসার মেঘ জমে ওঠে
তোমার হৃদয় আকাশ…
ক্লাস নাইন
একটা ভাঙা-চোরা সাইকেল
গায়ে ফুটপাত থেকে কেনা সবুজ রঙের গোলগলা গেঞ্জি
স্কুলে পরে যাওয়ার জন্য একটিমাত্র প্যান্ট
সেই প্যান্ট আর গেঞ্জি পরেই
ছুটে এসেছি বোদরা হাইস্কুল।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসবে
গেটের মুখে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখব বলে
ঠায় দাঁড়িয়ে আছি
চোখ পড়ল তোমার চোখে
আর দেখি তোমার হাতে মোমবাতি পিজবোর্ড কলম রাখার জন্য পেন্সিল বাক্স।
বাবলি কাট চুল আর ভুবন জয়ের হাসিতে সে যে কি যাদু
তা শুধু আমিই জানি।
ঘুরে দাঁড়ানোর অগ্নিশপথ।
প্রেম আকাশ তারার ভিড়ে
অ-নামি তরাও নই।
তা না ভেবেই ভালোবাসার জন্য কিছু করতেই হবে…
এই তাগিদ বড় হওয়া…
বই কলম খাতা নিয়ে সেই যে পড়তে বসা
আজও পড়ছি লিখছি।
যে লেখায় তুমি নেই সে লেখা কোনো লেখাই নয়
যে আদরে তুমি নেই সেই আদর কোনো আদরই নয়
যে ভালোবাসায় তুমি নেই সেই ভালোবাসা কোনো ভালবাসাই নয়
যে স্বপ্নে তুমি নেই সেই স্বপ্ন কোনো স্বপ্নই নয়
যে বেদনায় তুমি নেই সেই বেদনা কোনো বেদনাই নয়
যে আশায় তুমি নেই সে আশা কোনো আশাই নয়
যে বাঁচায় তুমি নেই সেই বাঁচাও কোনো বাঁচাই নয়
যে স্বর্গে তুমি নেই সেই স্বর্গও কোনো স্বর্গই নয়
যে আনন্দে তুমি নেই সেই আনন্দ কোনো আনন্দই নয়
এ হৃদয় প্রেমিক আকাশ তোমারজ।
রাতের আকাশ তারা দেখি
তোমার মুখ তারার আকাশ
তারার সঙ্গে কথা হয়
তোমার মধ্যে তারা না তারার মধ্যে তুমি খুঁজে ফিরি
ভালোবাসি মূল্যবান তারাকেই।
দেশপ্রেমিক
নাফার চোখের দিকে তাঁকাও,
অফুরন্ত সৃষ্টি খেলা করেও চোখে।
ওকে মেরো না, ওকে বাঁচতে দাও
ওর কাছ থেকে চেয়ে নাও
মিত্রতা-ভালবাসা-মনুষ্যত্ব-মানুষ—
অবাঞ্ছিত ভেবে ঘৃণা করো না।
জেনো অবাঞ্ছিত শুঁয়াপোকারাও আজও প্রজাতির হয়।
তাঁর চোখ আর কায়া-মনের জন্ম হয়েছিল কোনো এক ২৫ বৈশাখ,
রবীন্দ্র জন্মের ক্ষণে।
পবিত্র মাটির মতন
সে-যেন আমারই স্বদেশ।
তাই
নাফার প্রেমেই হয়েছি দেশপ্রেমিক।
রাস্তায় পড়ে থাকা কলার খোসা, ইট
ছোটোখাটো আপদ-বিপদ
পাথরের টুকরো, সরিয়ে সরিয়ে
নিরাপদ জায়গায় রাখি।
হৃদয় কাঁপানো দেশপ্রেমিক হতে পারিনি।
রাতের মূল্যবান তারার আকাশে
হতে পারিনি অনামি কোনও এক তারাও —
তবুও আকাশ দেখি।
ফেটে পড়ার প্রতীক্ষায় অপ্রকাশিত উপন্যাস।
ভাবনার ক্যানভাস জুড়ে
ফুটে ওঠে এ কোনো ছবি, কার ছবি?
বেলা অবেলায় এ কোনো আত্মশুদ্ধি?
নাফার চোখ আমার চোখের ভিতরে
খেলা করে
অফুরন্ত সৃষ্টির খেলা।
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা তোমার জন্য
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা ভালবাসা
এই হৃদয়ে তাজা লালগোলাপ চিরন্তন সতেজ তোমার জন্য বন্য হই, ধন্য হই।
এ বুকে আগুন জ্বলে জলুক
এ চোখে অশ্রু ঝরে ঝরুক,
এ পাঁজরে প্রেম ভালবাসা,
কন্ঠে বাজে গান—
সব তোমার জন্য
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা।
মূল্যবান দীপ্তময় প্রাণের বাংলাভাষা
তোমার জন্য বিস্তীর্ণ আকাশ রাখা মনে।
প্রাণের বাংলা ভাষাতেই জানাই
ভালবাসি তোমায়
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা।
প্রিয় দুখিনী বাংলা মা আমার
তোমার প্রিয় বাংলা ভাষাপ্রেমী সুসন্তান
সালাম বরকত রফিক জব্বার
আরও কত দীপ্তময় প্রাণ হল বলিদান
বাংলা ভাষার জন্য।
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা ভালোবাসা
তোমাদের চোখে চোখ রাখলে
পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য্য থমকে দাঁড়ায়।
তোমাদের হাতে হাত রাখলে
পৃথিবীর সমস্ত শান্তি থমকে দাঁড়ায়
বাংলা ভাষায় গাই প্রেমের গান।
দূর আকাশে ভাঙা চাঁদ
ফাগুনের আগুনে পোড়া হাত
রেখেছি তোমাদের হাতে
তাই এখন আর হাত পোড়ার ভয় পাই না
আমার প্রেম মূল্যবান দীপ্তিময় তারা
সব সুখে দুখে আছি তোমার পাশে।
সালাম বরকত রফিক জব্বার
আরও কত দীপ্তময় প্রাণ
জ্যোতির্ময় তারা
বাংলার সোনার ছেলেরা
তোমাদের জন্য
আজও একুশে ফেব্রুয়ারি উনিশে মে
বাংলা ভাষায় গেয়ে ওঠি
প্রভাত ফেরিতে ভালবাসার গান।
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা
আমার বাংলা মায়ের অনন্যা
তোমার মায়াবী চোখ
ভুবন জয়ের হাসি-কান্নায়
ভেজা চিবুক।
বাংলা-ভাষা কবির ভাষা,
আমার ভাষা, তোমার ভাষা,
বাংলা আমার মায়ের ভাষা,
বাংলা আমার মুখের ভাষা,
বাংলা আমার মাটির ভাষা,
বাংলা আমার প্রিয়ার ভাষা,
বাংলা দীপ্তময়ের প্রিয় ভাষা,
বাংলা দীপ্তিময় তারারও প্রিয় ভাষা,
একদিন এই মাটিতে হই যেন বিলীন।
আকাশের দিকে তাকাই
কালো ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশ
সূর্য দেখা যায় না
যেদিকে তাকাই শুধুই আধাঁর
মূল্যবান দীপ্তিময় তারা
চোখ ফেরাই মাটির দিকে
রক্তে লাল মায়ের বুক।
আকাশের বুক চিরে
নতুন সূর্য উঠুক আর
বজ্র-গর্ভ মেঘ থেকে
সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে
ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামুক
রক্তের দাগ মুছে যাক
মায়ের স্নেহময় বুক থেকে।
আমার বাংলা-ভাষার দেশ
আমার দোয়েল-পাখির দেশ
আমার সোনার বাংলা-দেশ।
এপারে বাংলা ওপারে বাংলা
একটাই স্বদেশ।
এপার বাংলা ওপার বাংলা
একটাই তো দেশ!
তারের বেড়া ছিঁড়ে দাও আজ হোক একটাই স্বদেশ।
পৃথিবী আমার স্বদেশ
আমার পৃথিবী আমার দেশ।
দীপ্তিময় তারার-আকাশ আমার আকাশ
আমার প্রিয়ার দেশ
সোনার বাংলাদেশ।
এপার বাংলা ওপার বাংলা
একটাই তো দেশ!
তারের বেড়া ছিঁড়ে দাও আজ হোক একটাই স্বদেশ।
পরীর মতো রাজকন্যা
ভোরের নিস্তব্ধতায়, পিউকাঁহা পাখির ডাকে আজও ঘুম ভাঙে।
দখিনা হাওয়ায় বিছানা ছেড়ে,
শীতের চাদর জড়িয়ে আসো,
লাল রঙের সোয়েটার আর কালো শালে শরীর মুড়ে…
পরির মতো রাজকন্যা হয়ে। তখনও আধো ঘুমে, ভাঙা স্বপ্নে লীন হতে হতে হাতড়াতে থাকে মাটি।
আলতোভাবে হাত রাখো কপালে।
লিচু ফুলে মৌমাছি তখনও খুঁজে ফিরছে মধু।
অস্থির চোখ ঘড়ির চঞ্চল কাঁটা ঘুরে ঘুরে কখন হয়েছে সময়ের নদী।
রাজকন্যা তুমি যেন নদীর গুঞ্জরণে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে গাইছো প্রেমের গান, কল্যাণপুর ষ্টেশনে।
একবার একগুচ্ছ লাল গোলাপ ছাড়াই জানিয়ে ছিলাম ‘একুশের বাংলা ভাষায়’, ভালবাসি তোমায়।
পরীর মতো রাজকন্যা তখন তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে, নির্বাক!
আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজছো শিমুল পলাশের মাঝে ভালবাসার রঙ।
নতুন হাতে ড্রাইভিং, কাঁপা কাঁপা হাতে স্টিয়ারিং…..
ভালোবাসার আসমান জুড়ে এ কোন ছবি? কার ছবি? বেলা অবেলায় এ কোন আত্মশুদ্ধি?
তোমার জন্য বিস্তীর্ণ আকাশ।
দিগন্তব্যাপী খোলা মাঠ।
হাতে হাত রেখে প্রাণের বাংলা ভাষাতে জানাই… ভালোবাসি তোমায়।