‘টুকা কাহিনী’র লেখক বুলবুল চৌধুরী পরাজিত হলেন ক্যানসারে

‘টুকা কাহিনী’ লিখে যিনি সাহিত্য অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেন, তিনি হলেন একুশে পুরস্কার প্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী। টুকা কাহিনী তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত হলেন। তিনি পুরান ঢাকার বাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর ছেলে আর রাফি চৌধুরী জানান, ‘গত ছয় মাস ধরে বাবার জ্বর ছিল এবং শরীরের ওজন কমে যাচ্ছিল। ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। ক্যানসার তাঁর শ্বাসযন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তিনি কিছু খেতে পারছিলেন না। কেমো নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থাও তার ছিল না। ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চলছিল বাসায়। আজ সন্ধ্যা ৬টায় তিনি মারা যান।’
বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতায়।কলেজে জীবন থেকে তিনি লেখালেখি করতেন। ‘জোনাকি ও সন্নিকট কেন্দ্র’ গল্পটি লিখে তিনি জগন্নাথ কলেজে গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার পান। তারপর আর তিনি থেমে থাকেননি। প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। গল্পগ্রন্থ ‘টুকা কাহিনী’। প্রকাশের পর বইটি পাঠক ভালোভাবে নেয়। রীতিমতো সাড়া ফেলে।
নানা বিচিত্র ধরণের লেখা তিনি লিখেছেন। তবে তাঁর পছন্দের বিষয় ছিল গ্রামীণ জীবন। তিনি নানা ভাবে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে শহুরের জীবনের জটিলতাও তাঁর লেখনীতে ঠাঁই পেয়েছে।
‘টুকা কাহিনী’ গল্পগ্রন্থ ছাড়াও বুলবুল চৌধুরীর লিখেছেন পরমানুষ, মাছের রাত, চৈতার বউ গো প্রভৃতি। উপন্যাসের মধ্যে তিয়াসের লেখন,অচিনে আঁচড়ি,মরম বাখানি,এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে,ইতু বৌদির ঘর ও দখিনা বাও। তাঁর আত্মজৈবনিক দুটি গ্রন্থ হলো জীবনের আঁকিবুঁকি‘ও অতলের কথকতা। এছাড়া বুলবুল চৌধুরী কিশোরগ্রন্থ ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা,’নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত’ ও ‘প্রাচীন গীতিকার গল্প’-এর রচয়িতা।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার।
এই র্কীতিমান কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর মরদেহ আগামীকাল ২৯ আগস্ট, রোববার সকাল ১১টায় শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে রাখা হবে।