কবি ও বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলা ভাষার অন্যতম কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হুমায়ুন আজাদ। আজ ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল নানা বাড়ি বিক্রমপুরের কামারগাঁয় ( বর্তমানে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে অন্তর্গত) জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মা তাঁর নাম রাখেন হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের করে তিনি রাখেন হুমায়ূন আজাদ। বাবা আবদুর রাশেদ ছিলেন শিক্ষক, পোস্টমাস্টার ও ব্যবসায়ী। মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে হুমায়ূন আজাদ ছিলেন দ্বিতীয় পুত্রসন্তান। তিনি রাড়িখাল গ্রামে বেড়ে ওঠেন।
হুমায়ুন আজাদ রাড়িখালের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্সটিটিউশন থেকে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। মেধাবী ছাত্র আজাদ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন; উভয় ক্ষেত্রেই তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ।
তাঁর স্ত্রী লতিফা কোহিনুর। তাঁর দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং একমাত্র পুত্র অনন্য আজাদ।

মৌলবাদ বিস্তারলাভ করতে থাকে, বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। ২০০৪ সালে ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ বইটি প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা ক্ষেপে ওঠে, নানা প্রচারণায় হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বইটিতে উঁনি মৌলবাদীদের, ফ্যাসিবাদীদের চিত্রের শৈল্পিক রূপ দেন, মুখোশ খুলে ফেলেন ফ্যাসিবাদী জামাতের।
হুমায়ূন আজাদ বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। কিন্তু তাঁর কবিসত্বার পরিচিয়টা কিছুটা কম। কবি হিসেবেও তিনি ছিলেন শক্তিশালী কবি। তিনি আমৃত্যু কবিতাচর্চা করতেন। ষাটের দশকের কবিদের সমপর্যায়ী একজন আধুনিক কবি। সমসাময়িক কালের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা, বিবমিষা, প্রেম ইত্যাদি তার কবি সত্বার প্রধান নিয়ামক। প্রথম কাব্যগন্থে অলৌকিক ইস্টিমার (জানুয়ারি ১৯৭৩)। কাব্যগ্রন্থটি তিনি উৎসর্গ করেন ১৯৬৮- ৭২ এর রাতদিনগুলোর উদ্দেশে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ জ্বলো চিতাবাঘ (মার্চ ১৯৮০)। সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ (এপ্রিল, ১৯৮৫)। কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলনকে । ‘যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীল’ (মার্চ ১৯৮৭), আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে (ফেব্রুয়ারি ১৯৯০), কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু, পেরোনোর কিছু নেই (ফেব্রুয়ারি, ২০০৪), এটিই হুমায়ুন আজাদের জীবদ্দশায় প্রকাশিত শেষ কাব্যগ্রন্থ। মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে সাতটি কাব্যগ্রন্থসহ কিছু অগ্রন্থিত ও অনূদিত কবিতা নিয়ে কাব্যসমগ্র প্রকাশিত হয়।

তিনি ৭০ টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। ধর্ম, প্রথা, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, নারীবাদিতা, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য তিনি ১৯৮০’র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন তিনি। বিদেশে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। এর কিছুদিন পরেই জার্মান সরকার তাঁকে গবেষণা বৃত্তি প্রদান করে। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিশ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়। রাড়িখালে সমাহিত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য হুমায়ূন আজাদ পেয়েছে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশু–সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৪ সালে মাকেরন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার ও ২০১২ সালে একুশে পদক ( মরণোত্তর)
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইট
গ্রন্থনা : আবু সাঈদ