হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি বরণ করেছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম

ক্ষুদিরাম বসু। একজন বিপ্লবী। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী। যিনি হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি বরণ করেন।১৯০৮ সালের আজকের দিন, ১১ আগস্ট মুজফফরপুর ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসি হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। ক্ষুদিরাম নামটা কিভাবে হলো, ক্ষুদিরাম জন্মগ্রহণের আগে দুই ভাই অকালে মারা যান। তারপর তিন বোনের পর ক্ষুদিরামের জন্ম। মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী, আগের দুই ছেলে অকাল মৃত্যুর ভয়ে, তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাকে তাঁর বড় দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে পরবর্তী সময়ে ক্ষুদিরাম নাম রাখা ।
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালে ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তাঁর মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী।
ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান। এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
এই ক্ষুদিরাম বসু, টকবগে তরুণ বয়সে ফাঁসি মঞ্চে যেতে এতটুকু ভয় করেনি। হাসতে হাসতে নিজের জীবন উজার করে দিয়েছেন ভারতবাসীর জন্য। কেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দিয়েছিলেন? এর উত্তরে হয়তো আমাদের অনেকে জানা। হাসি মুখে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। শরীরে মৃত্যু হলেও তিনি আমাদের কাছে অমর হয়ে আছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরেক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকি। দুইজনেই ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। একটি গাড়িতে ওই ব্রিটিশ বিচারক সওয়ার রয়েছেন ভেবে গাড়িটি লক্ষ্য করে বোমাও ছুঁড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু হিসেবের গড়মিলে এই প্রয়াস ব্যর্থ হয় দুই বিপ্লবীর। কারণ যে গাড়িটি লক্ষ্য করে তাঁরা বোমা ছোঁড়েন তাতে ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড ছিলেন না, ছিলেন দুই ব্রিটিশ মহিলা মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা। গাড়িতে বোমা এসে পড়লে দুই মহিলারই মৃত্যু হয়। এরপরেই প্রফুল্ল চাকি গ্রেফতার হওয়ার অনুমান করে আগেই আত্মহত্যা করেন। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন ক্ষুদিরাম বসু। বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয় এবং তিনি হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করেন।

ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয় মুজফফপুর সংশোধনাগারে। বর্তমানে সেই কারাগারের নাম বদলে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর নামেই নামকরণ করা হয়েছে।
বিচারক ছিলেন ব্রিটিশ মি. কর্নডফ এবং দুজন ভারতীয়, লাথুনিপ্রসাদ ও জানকীপ্রসাদ। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। তাঁর বয়স খুব কম ছিল। বিচারক কর্নডফ তাঁকে প্রশ্ন করেন, তাঁকে যে ফাঁসিতে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে কিনা? ক্ষুদিরাম আবার মুচকে হাসলে বিচারক আবার প্রশ্নটি করেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ভোর ছয়টায়। ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের কাছে শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বোমা বানাতে জানি। ব্রিটিশদের অনুমতি পেলে এই বিদ্যা ভারতের অন্যান্য যুবকদের শিখিয়ে যেতাম।’
1 thought on “হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি বরণ করেছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম”