শ্রদ্ধাঞ্জলি: শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শহীদজননী, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের সূচনাকারী এই মহীয়সী নারী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর ডাক নাম ছিল জুড়ু। তবে শহীদ জননী হিসেবে তিনি পরিচিত। ১৯৭১ সালে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন৷

শহীদজননী জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মাতা সৈয়দা হামিদা বেগম। তিনি ১৯৪২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ( বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএ পাস করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬০ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন । যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন ।

ময়মনসিংহে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১৯৫২-১৯৬০), বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (১৯৬২-১৯৬৬)এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬-১৯৬৮)হিসাবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন।
লেখক ও সমাজকর্মী জাহানারা ইমামের উদ্যোগেই ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও জনতার সমন্বয়ে গঠন করেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি।’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণামূলক লেখা একাত্তরের দিনগুলি । এই তাঁর বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থটি প্রায় মানুষই পড়েছেন। শিশুসাহিত্য, অনুবাদ, প্রবন্ধ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনেক বই লিখেছেন। উল্লেখেযাগ্য হলো— শিশু সাহিত্য : গজকচ্ছপ (১৯৬৭),সাতটি তারার ঝিকিমিকি (১৯৭৩),বিদায় দে মা ঘুরে আসি (১৯৮৯)। অনুবাদ করেন জাগ্রত ধরিত্রী (১৯৬৮), তেপান্তরের ছোট্ট শহর (১৯৭১), নদীর তীরে ফুলের মেলা (১৯৬৬)। একাত্তরের দিনগুলি (১৯৮৬) ছাড়াও তিনি লিখেছেন বীরশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫)। অন্যান্য বইগুলো মধ্যে রয়েছে অন্য জীবন (১৯৮৫), জীবন মৃত্যু (১৯৮৮), শেক্সপীয়রের ট্রাজেডি (১৯৮৯), নিঃসঙ্গ পাইন (১৯৯০), বুকের ভিতরে আগুন (১৯৯০),নাটকের অবসান (১৯৯০), দুই মেরু (১৯৯০), প্রবাসের দিনগুলি (১৯৯২), ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস (১৯৯১), বাংলা উচ্চারণ অভিধান (যৌথভাবে সম্পাদিত) (১৩৭৫), An Introduction to Bengali Language and Literature (Part-I)(1983)

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। উল্লেখযোগ্য হলো— বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১),আজকের কাগজ হতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার (বাংলা ১৪০১ সনে), নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা (১৯৯৪), স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭), রোকেয়া পদক (১৯৯৮), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (২০০১), ইউনিভার্সাল শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার (২০০১), শাপলা ইয়ূথ ফোর্স, কারমাইকেল কলেজ গুণীজন সম্মাননা, মাস্টারদা সূর্যসেন পদক, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব-ত্রিপুরা সাংগঠনিক কমিটি, বাংলাদেশ নারী পরিষদ, রোটারাক্ট ক্লাব অব স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার (২০০১), বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংঘ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
শহীদজননীর মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা..
সূত্র : উইকিপিডিয়া, প্রথম আলো