আমার ‘যুদ্ধের ভাই’ বুলবুল আর নেই..

আমার ‘যুদ্ধের (মুক্তিযুদ্ধ) ভাই’ বুলবুল আর নেই। গতকাল অকস্মাৎ ফ্লোরিডায় তাঁর প্রয়াণ হয়েছে। প্রিয়তমা স্ত্রী রিতা ও একমাত্র পুত্র উপল সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও সহযোদ্ধাদের রেখে আমার অনুজসম অত্যন্ত স্নেহের ভাইটি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো! সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশের গর্বিত এ সন্তানের আত্মার শান্তি বিধান করুন।
বীর মুক্তিযাদ্ধা আব্দুর রহিম বুলবুলের এ ছবিটি এখনকার নয়। আমি মানুষের চলে যাবার কালের কথা নয় তাঁর জীবনের উজ্জ্বলতম সময়ের কথা স্মরণ করতে ও করাতে চাই। পূর্ণ যৌবনে ভাইটি এমনি ছিল। এ ছবি দেখে রূপবান বুলবুলের কিশোর চেহারাটা আপনারা কল্পনা করে নিতে পারবেন। ১৯৭১ এ সে ছিলো এক কিশোর মুক্তিযাদ্ধা।
আমার সঙ্গে তখনই ওঁর দেখা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমরা থাকতাম সোবহান বাগ সরকারী কলেনীতে। বুলবুল তখন গেরিলা যুদ্ধের রসদ রেখেছে আমাদের বাড়িতে, কখনো ক্ষুধার্ত বুলবুল গভীর রাতে জরুরি সংবাদ দিতে এসে দ্রুত খেয়ে গেছে চারটে ভাত। যুদ্ধ জয়ের পরেও আমাদের সম্পর্ক ছিল। তারপর তাঁকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আবার ৪৩ বছর পর ফিরে পাই- ততদিনে সে যুবক পুত্রের পিতা । মায়াময়ী রিতার স্বামী। থাকে ফ্লোরিডায়।
নিজের প্রত্যাশার পথে দেশকে না দেখতে পেরে, আত্মপ্রেমী মানুষদের দেশপ্রেম ত্যাগ এবং স্বার্থান্বেষী চিন্তাধারায় হতাশ হয়ে সে দেশান্তরী হয়েছিলো। ২০১৮ তে যুদ্ধের দু’ভাই-বোনের মিলনে যে অসাধারন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো ঠিক সেরকমই আজ কান্নায় আমি ভেসে যাচ্ছি। বহু লেখায় আমি তাঁর গল্প লিখেছি। আমার পুরানো পাঠকগণ তাঁকে চেনেন। যাঁরা চেনেন না আজ জানলেন। আমার ভাই বুলবুলের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
ভাই আমার, দেশ মাতৃকার বীর সন্তান তুমি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, তুমি থাকবে সবার অন্তরে।
বিদায় বাংলাদেশের সূর্য সন্তান আব্দুর রহিম বুলবুল।
শামীম আজাদ : কবি, লেখক ও সংগঠক
রাত তিনটা, ১০ জুন ২০২১,লন্ডন