ইমেজ ইজ সো পাওয়ারফুল, সো কনভিন্সিং, সিইং ইজ বিলিভিং : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৯

ছবি: সাইফুল আমিন কাজল

সাহাদাত পারভেজ : মুস্তফা ভাই, একটু পেছনে ফিরে আসি। আপনার জন্ম কত সালে, কোথায়?
গোলাম মুস্তফা : ১৯৪১ সালে, কলকাতায়।
সাহাদাত পারভেজ :আপনার বাবা এবং মায়ের নাম শুনতে চাই।
গোলাম মুস্তফা: বাবার নাম ফয়েজ আহমেদ। মা ফয়েজুন্নিসা। ফয়েজ আহমেদ আর ফয়েজুন্নিসা এটা কিন্তু কাকতালীয়।
সাহাদাত পারভেজ : আপনার মা বাবা কি করতেন?
গোলাম মুস্তফা : মা গৃহিনী ছিলেন। বাবা কি করতেন তা এক কথায় বলা যাবে না। বাবা এক সময় বিখ্যাত লোক ছিলেন, খুব বিখ্যাত। সারা দেশে, দেশ মানে তখন পাকিস্তান; পাকিস্তানের একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন তিনি। বাবা ল’ইয়ার ছিলেন। উনি কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ পাস করেন। পরে আবার একই ইউনিভার্সিটি থেকেই ল পাস করলেন। তখন এলএলবি ছিল না। বাবা ছিলেন বিএ বিএল। বিএ টা ডিগ্রি। আর বিএল টা হচ্ছে ল ডিগ্রি। আমরা কলকাতায় যেখানে ছিলাম সে জায়গার নাম ছিল উকিলপাড়া। উনি আলীপুর কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। প্রথম পাঁচ ছয়বছর প্র্যাক্টিস করেছেন।
ভি ভি গিরি (বরাহগিরি ভেঙ্কট গিরি) সবাই এ নামটা জানে। তিনি একবার ভারতের প্রেসিডেন্ট (চতুর্থ রাষ্ট্রপতি) হয়েছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান সি মেনস’ ইউনিয়ন, জাহাজের শ্রমিক, ওই সংগঠনের প্রধান ছিলেন। সোজা কথা, শ্রমিক নেতা ছিলেন। বাবা ছিলেন ওই সংগঠনে। এখন শ্রমিক নেতা বললে কিন্তু লোকে নাক শিটকাবে। কিন্তু বাবাকে দেখে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। আজকে এ কথা বললে অনেকে বিশ্বাস করবে না। কিন্তু তাও আমার বলতে ইচ্ছে করছে। পুরোনো লোকজন যদি হয়, আমার বয়সী, কেউ নাই হয়তো…।
শ্রমিকরা যে সপ্তাহে একদিন ছুটি পায়, বেতনের পরে বোনাস পায়, যে কয়জন লোক এই দাবিগুলো আদায় করেছিল, বাবা তাঁদের একজন। দাবিগুলো কোথায় আদায় করেছিল? আইএলও, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন। সেখানে গিয়ে ফাইট করে আদায় করেছিল। আইএলও হচ্ছে জাতিসংঘের একটা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে বাবা ছিলেন। প্রত্যেক দেশ থেকে তিনজন প্রতিনিধি থাকে। শ্রমিক পক্ষের একজন, মালিক পক্ষের একজন আর সরকারের পক্ষ থেকে একজন। সদস্য দেশ বাংলাদেশ থেকে তিনজন ছিল। স্যরি, তখনও বাংলাদেশ হয়নি। পাকিস্তান থেকে তিনজন প্রতিনিধি ছিল। বাবা ছিলেন আইএলও’র শ্রমিক প্রতিনিধি। দীর্ঘ অনেক বছর।
যখন দেশ ভাগ হয়ে যায়; তখন তিনি এপারে চলে আসেন। তিনজন লোক এপারে চলে আসেন, বাবা, ফয়েজ আহমেদ আর সিলেটের আফতাব আলী। এই তিনজনের কারণে শ্রমিক আন্দোলন তখন তুঙ্গে ছিল। বাবা পরের দিকে শ্রমিক আন্দোলনের প্রধান হয়ে গেলেন। অর্থাৎ উনি এক পর্যায়ে গিয়ে এপিসিওএল মানে অল পাকিস্তান কনফেডারেশন অব লেবার এর প্রেসিডেন্ট হলেন। সেই সূত্রে উনি আইএলওতে স্থান পেলেন। আইএলওতে স্থান পাবার পরে ওখানে এগারো জনের একটা গভর্নিং বডি হলো, সেখানে নির্বাচিত হলেন। ওটার হেড অফিস ছিল জেনেভায়। বছরে তিনবার চারবার উনাকে জেনেভায় যেতে হতো।

সাহাদাত পারভেজ: আপনারা ভাইবোন কয়জন?
গোলাম মুস্তফা: আমরা তিন ভাই, তিন বোন। প্রথম তিনজনের জন্ম কলকাতায়। বাকিরা নারায়ণগঞ্জে। আমি সবার বড়। বোন ফরিদা হোসেন, বিখ্যাত লেখিকা। সে একুশে পদক পেয়েছে। তারপর হাসিনা বেগম আর রানু আহমেদ। আর ভাইদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া আর গোলাম মাহমুদ। গোলাম মাহমুদ বাসদের বিখ্যাত নেতা ছিল। তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই মারা গেছে। বোনরা সবাই আছে।
সাহাদাত পারভেজ : আপনার স্ত্রীর নাম জানতে চাই। উনি বোধ হয় ফটোগ্রাফি করতেন? আপনি তাঁকে শিখিয়েছিলেন?
গোলাম মুস্তফা: ওর অরিজিন্যাল নাম তো অনেক বড় নাম। এখন শাহীন মুস্তফা। ও ফটোগ্রাফি কোর্স শুরু করল আমি দেশের বাইরে যাওয়ার পর। ওর তখন সময় কাটত না। তাই আমার ছোট ভাই মাহমুদ আর ও মিলে ঠিক করল ফটোগ্রাফি শিখবে। আমার ছবি দেখে ছবি সম্পর্কে ওর মোটামুটি একটা ধারণা হয়েছিল। কোনটা ভালো ছবি, কোনটা সাধারণ ছবি বুঝতে পারত। কিন্তু ছবি তুলতে পারত না। পরে ওরা দুইজন বেগার্টে গেল। বেগ সাহেবও উৎসাহ দিল। একসময় কোর্সটা শেষ করল। পরীক্ষা দিয়ে ও ফার্স্ট হয়ে গেল। তখন অনেকে বলল যে, ‘আরে গোলাম মুস্তফা সাহেবের ওয়াইফ, সে তো ফার্স্ট হবেই।’ আসলে তা নয় কিন্তু। মুস্তফা সাহেব তো সিনেই ছিল না। আর আমি এক বর্ণ ওকে পড়াইওনি। যা পড়িয়েছেন বেগ সাহেব পড়িয়েছেন। সে মনোযোগ দিয়ে শুনেছে, ফলো করেছে। এই আর কী।
সাহাদাত পারভেজ : আপনার পরিবার ও ছেলেমেয়ের কথা এবার বলুন?
গোলাম মুস্তফা : বড় মেয়ের ডাক নাম মৌ। ছেলে শিহাব। আমার একটাই ছেলে, একটাই মেয়ে। মেয়ের ভালো নাম ওই দেখো (দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিটা দেখিয়ে), মাহজাবিন আহমেদ। জামাইয়ের নাম নাহিদ কামাল। সেইসূত্রে সে মাহজাবিন কামাল হয়ে গেছে। আর ছেলে হলো মুস্তফা শিহাব আহমেদ। বিবাহিত। আমার নাম কিন্তু বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয় নাই। কিন্তু আমি আমার ছেলেমেয়ের নামের সঙ্গে ‘আহমেদ’ রেখেছি।
সাহাদাত পারভেজ : এখন আপনার সময় কাটে কেমন করে?
গোলাম মুস্তফা : সময় খুব ভালো কাটে না। কেন বললাম ভালো কাটে না এই যে বিশাল একটা সময় গেল, প্রায় পাঁচ মাস না ছ মাস;করোনাকাল যাকে বলা হয়। করোনাকালে কিন্তু আমি অসুস্থতা নিয়েও অনেক কাজ করতে পারতাম। আমি নিজেকে অপরাধী মনে করি এই জন্য যে, এরকম একটা ছ’মাস তো আর পাব না। হাজারও ছ’মাস আমি বেঁচে থাকতে পারি, কিন্তু এরকম একটা ফ্রি ছ’মাস খালি ভাবনা চিন্তা করেই কাটালাম। অনেক কিছু করতে পারতাম। এই সময়টায় যদি আমাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমি অনেক কিছুই করব। কিন্তু সেই সুযোগ তো আসবে না। যা গেছে তা যাক। কাজেই আমার মনে হয় এই সময়টার মধ্যে তুমি যেরকম করলে, এই কাজটার মতো আরও দশটা কাজ করতে পারতাম। বা নিজেই আমার ক্যামেরা অন করে দিয়ে দিনের আলোতে অনেকগুলো কথা বলতে পারতাম। এখন তোমরা বলছ যে, কথাগুলো ভালো হচ্ছে। আমার মনে হয় আমি যদি একা একা করতাম, আরও বেশি ভালো হত।
সাহাদাত পারভেজ : নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়াটা হয়ে যেত।
গোলাম মুস্তফা : হয়ে যেত। ওটা করতে পারিনি। আর আমার অনেক অগোছালো ছবি আছে, ওগুলা কোনটা কোথায় যে আছে! আমার ছেলে বলে, তুমি এগুলো গোছাও গোছাও। এখন চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার হয়েছে কী, নানান কারণে শরীরটা বেশ দুর্বল হয়ে গেছে। আর বেশ কয়েকবার বাইরে, রাস্তায় পড়ে যাওয়ার জন্য ব্রেইনে বোধ হয় কোনো গ-গোল হতেও পারে। ওটা ভাবছিলাম সাইকোলজিক্যাল কোনো গণ্ডগোল কিনা। সাইকোলজিক্যাল না। ডাক্তার বলেন যে, এরজন্য ভালো বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত। সেটাও করে উঠতে পারছি না। তো এই কাজগুলো করা উচিৎ ছিল। আর আমি খুব গানপাগল মানুষ। কথাগুলো বলেছিলাম আমি কলেজে গান শুনতে গিয়ে একটা বন্ধুকে চড় মেরেছিলাম।
সাহাদাত পারভেজ: সন্ধ্যার কথা বলতে গিয়ে…?
গোলাম মুস্তফা : হ্যাঁ। এখনো রাত জেগে গান শুনি। শুধু গান না, অর্কেস্ট্রা। ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন দুই অর্কেস্ট্রা। খুব ভালো লাগে আমার। আমি এখন শুনছি একজনকে, খুব ভালো লাগছে আমার। ওই নামটা অনেকেই জানে, ইয়ানি বলে একজন আছে ওয়েস্টার্ন অর্কেস্ট্রা কন্ডাকটর। ওর ওপর ডক্যুমেন্টারি করা হয়েছে। ইয়ানি যখন পিয়ানোটা বাজায়, ওর যে এক্সপ্রেশন ও যে জানে কোন সময় কোনটা ধরবে। আমি ওর খুব ভক্ত।
আমি অনেক কিছুরই ভক্ত। আমি বিটোফেন শুনি, মোজার্টও শুনি, সবই শুনি। এখন বাংলা, হিন্দি গান শুনি। বাংলা নতুন গান কিন্তু নতুন একটা অধ্যায় তৈরি করেছে। আমি পরশু বলছিলাম, আমার টিভিটা তো গণ্ডগোল হয়ে গেছে। আগে দশটা বিশটা চ্যানেল পেতাম। এখন তিন চারটা চ্যানেল পাই।
আমি রেগুলার বিবিসি ওয়ার্ল্ডের নিউজ শুনি। দুনিয়ায় কি হচ্ছে, করোনার কি হচ্ছে, কোথায় ভ্যাক্সিন তৈরি হলো, কত দাম হবে, এসব শুনি। আরেকটা জিনিস দেখি প্রচণ্ডভাবে— ভিজ্যুয়াল আর্টসে কোথায় কেমন পরিবর্তন হচ্ছে। আমার তো মনে হয়, সাতটা বিষয় নিয়ে ভিজ্যুয়াল আর্টস দুনিয়াতে চলছে— পেইন্টিং, লিটারেচার, ড্রামা, ডান্স, মিউজিক, স্কলপচার আর হলো ফটোগ্রাফি। সাতটা হলো? এরমধ্যে রো’র সবচেয়ে নিচে হচ্ছে ফটোগ্রাফি। আর ওপরের দিকে হচ্ছে লিটারেচার বা পেইন্টিং। লিটারেচার মানে ভাষা দিয়ে শুরু হয়েছে। সে ভাষা শব্দের ভাষা নয়, ইশারার ভাষা। শুরুতে মানুষ তো কথা বলতে পারেনি। এইভাবে দেখাত (জড়িয়ে ধরার ভঙ্গি করে) যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে হেইট করি (ঠেলে দেওয়ার ভঙ্গি করে), তোমাকে মারব (হাত মুঠো করে) বা আমার ক্ষিদা পেয়েছে।
এই থেকেই তো নাটক শুরু হয়েছে। যাই হোক, এই যে সাতটা আছে, সেভেন আর্টস ইউনাইটেড যে বলা হয়। আমার জ্ঞানে যতটুকু দেখেছি আমি, এই সাতটায় কিন্তু সবার নিচে হচ্ছে ফটোগ্রাফি। নিচে কেন? ফটোগ্রাফির জন্ম, বয়স কিন্তু দু’শ বছরও হয়নি।
সাহাদাত পারভেজ : একশ আশি বছর।
গোলাম মুস্তফা : হ্যাঁ, একশ আশি বছর। ঠিক বলেছ। একশ আশি বছর। অথচ নৃত্যের ভাষা তো হাজার বছরের ইতিহাস। সাহিত্যের বা সংগীতের ভাষা তো হাজার বছর। সবচেয়ে পরে হচ্ছে ফটোগ্রাফি।
সাহাদাত পারভেজ : ফটোগ্রাফির সঙ্গে তো যন্ত্রের একটা ব্যাপার আছে, তাই না?
গোলাম মুস্তফা : যন্ত্রটাই আবিষ্কার হয়েছে পরে। আঁকাআঁকি যেমন পাহাড়ের গুহায়। হাজার বছরের ইতিহাস। শিলালিপি। শিলার চিত্র। মানুষ যখন কথাও বলতে শেখেনি তখন তাঁরা ছবি আঁকত। ফটোগ্রাফি কিন্তু সবার লাস্ট। কিন্তু একথাটা বলি, বলতে ভালো লাগে আমার। বর্তমান এই পৃথিবীতে, বাংলাদেশের কনটেক্সটে- কথাটা খেয়াল কর, সবচেয়ে এগিয়ে আছে কিন্তু ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফি এখন বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে। এই যে একটু আগে বললাম, বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা বিশ্বের বেস্ট ফটোগ্রাফার হয়। বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা টাইমলাইনের ভেতর এক নম্বরে চলে গেছে। শহিদুল আলম টাইম পারসন অব দ্য ইয়ার! বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা ওয়ার্ল্ডে জাজ হয়।
সাহাদাত পারভেজ : ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর জাজ হয়।
গোলাম মুস্তফা : আমার কথা হচ্ছে যে, অনেকে খারাপ ভাববে। কিন্তু আমি বলতে চাই, আমাদের পেইন্টিংও ভালো, মিউজিকও ভালো, চলচ্চিত্র ভালো, আমাদের ডান্সও ভালো, সব ভালো, ভালো কিন্তু! কিন্তু কোনো ভালোই কি এখন পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ডে যেতে পেরেছে?
সাহাদাত পারভেজ : আমাদের শুধুমাত্র পুলিৎজারটা বাকি ছিল, সেটাও আমরা পেয়ে গেছি।
গোলাম মুস্তফা : হ্যাঁ। তুমি ঠিক বলেছ। আমার কথা হচ্ছে যে, এতো ভালোর ভেতর বাংলাদেশের নাটক ধরো, ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড বাদ দাও, ভারতের কাছে যেতে পারে নাই। কলকাতার কাছেই নাই, আমি কম করে বললাম। বাংলাদেশের সংগীত কলকাতার কাছেই নাই। ভারত তো পরে, দুনিয়া তো আরও পরে। ফটোগ্রাফি চলে গেছে ওই জায়গায়। এরপরও এসটাবলিস্টমেন্ট নিয়ে মাতামাতি নাই। আমাদের সরকার ফটোগ্রাফিতে কোনো ইনভেস্টমেন্টই করে না, কোনো নজরই দেয় না।
এতো ভালোর ভেতর বাংলাদেশের নাটক ধরো, ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড বাদ দাও, ভারতের কাছে যেতে পারে নাই। কলকাতার কাছেই নাই, আমি কম করে বললাম। বাংলাদেশের সংগীত কলকাতার কাছেই নাই। ভারত তো পরে, দুনিয়া তো আরও পরে। ফটোগ্রাফি চলে গেছে ওই জায়গায়। এরপরও এসটাবলিস্টমেন্ট নিয়ে মাতামাতি নাই। আমাদের সরকার ফটোগ্রাফিতে কোনো ইনভেস্টমেন্টই করে না, কোনো নজরই দেয় না।
সাহাদাত পারভেজ : আপনি যথার্থ বলছেন। আপনি যদি পেইন্টিং থেকে শুরু করে মাধ্যম হিসেবে ফটোগ্রাফিতে যান, সত্য প্রমাণে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী মাধ্যম কিন্তু ফটোগ্রাফি। আপনার কি মনে হয়?
গোলাম মুস্তফা : আমারও তাই মনে হয়। আজকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারটা কত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, সারা পৃথিবী জড়িয়ে গেছে। যদি সংবাদচিত্রীরা প্রকাশ না করত, এটা কারো নজরেই আসত না। ওই যে ছবি দেখেছো যে, ছবিতে বুড়ো বাবা মাকে দোলনার মধ্যে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, শিশুকে কোলে নিয়ে কাদার মধ্যে দিয়ে হাঁটছে। তারপর একজনকে মেরে ফেলে রেখে দিয়েছে। ওই যে কি নাম, বর্ডারে যে মেরে ফেলল?
সাহাদাত পারভেজ : ফেলানি।
গোলাম মুস্তফা : ফেলানিকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে, এইসব দৃশ্য যদি নিজের চোখে না দেখত, বিশ্বাস করত? পাবলিক মনে করত এসব মিডিয়ার প্রচার। মিডিয়ার প্রচার তো নয় এগুলো, এগুলো বাস্তব।
সাহাদাত পারভেজ : এখন তো ফটোগ্রাফির পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম শুরু হয়ে গেছে। ভিডিও শুরু হয়ে গেছে। ফলে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার সুযোগ কম।
গোলাম মুস্তফা : তোমাকে আরেকটা ছবির কথা বলি। বিখ্যাত ছবি, তুমি দেখেছ, অনেকেই দেখেছে যারা ফটোজার্নালিজম নিয়ে নাড়াচাড়া করে। ওই যে সেই ছবিটা, একটা শকুন তাক করে আছে একটা বাচ্চাকে খাবে বলে।
সাহাদাত পারভেজ : ওই দুর্ভিক্ষের ছবিটা? কেভিন কার্টারের?
গোলাম মুস্তফা : ছবিটা তুলেছে বলেই ওই সময় দৃশ্যটা এত সাংঘাতিক, সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। চিন্তা করতে পারো, একটা ছবি বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে। একটা বড় এসে (রচনা) পড়লে বা বক্তৃতা শুনলে কি ওই মোমেন্টটা হতো? হতো না। আমি এজন্যেই বলছি, ‘ইমেজ ইজ সো পাওয়ারফুল, সো কনভিন্সিং, সিইং ইজ বিলিভিং।’
সুশান্ত পালের ধারণ করা ভিডিওচিত্র থেকে অনুলিখন করেছেন জাহরা জাহান পার্লিয়া
আগামীকাল পড়ুন ১০ পর্ব
আরও পড়ুন :
ক্যামেরার কারণে আমার কাজের মান ভালো হয়ে গেল : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-১
কলেজের ম্যাগাজিনের কাভারে ছবি ছাপানো হওয়ার গর্বে আমার তো ঘুম নাই : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-২
’ ৭১-এর টেলিভিশনের চাকরি ফেলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, বৃদ্ধ বাবা মাকে টর্চার করবে ভেবে কোথাও যাইনি : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-৩
১০ জানুয়ারির ঘটনাটা বলতে গেলে কেন জানি আবেগী হয়ে যাই : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-৪
চারুকলায় ক্যামেরা, এনলার্জার কেনা হলো কিন্তু ফটোগ্রাফি বিভাগটা আর খোলা হলো না : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-৫
ফটোগ্রাফি নেভার লাইজ : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৬
এখন তো বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি অন্যস্তরে চলে গেছে : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৭
‘আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো?’ : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৮
1 thought on “ইমেজ ইজ সো পাওয়ারফুল, সো কনভিন্সিং, সিইং ইজ বিলিভিং : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৯”