‘আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো?’ : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৮

ছবি : সাইফুল আমিন কাজল
সাহাদাত পারভেজ : সংবাদপত্রে রঙিন ছবি কবে দেখলেন মনে আছে?
গোলাম মুস্তফা: আমি প্রথম রঙিন দেখি চিত্রালীতে। চিত্রালীর ফটোগ্রাফার ছিলেন উজ্জ্বল ভাই। উজ্জ্বল ভাই হচ্ছেন প্রথম ফটোগ্রাফার যিনি মডেলের ছবি, সিনেমার নায়িকাদের ছবি তুলতেন। তিনি প্রথম অ্যাক্টা ক্রোম ইউজ করতেন, প্রসেসিং করতেন। তখন এখানে সেপারেশন হতো না। বাইরে হতো। ব্যাঙ্গালোরে হত। কালার সেপারেশন করে ওইটার প্লেট তৈরি করে ছাপা হতো ঢাকাতে। এই শুরু হলো চিত্রালীর রঙিন ভার্সন করা। উজ্জ্বল ভাইয়ের পুরো নামটা মনে আসছে না। আমার ভুলে যাওয়াটা অপরাধ কারণ উনি আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন এবং ফটোগ্রাফারদের গুরু বলতে গেলে। খুবই স্মার্ট ফটোগ্রাফার। তখন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে একটা ছোট স্টুডিও ছিল, সেটা উজ্জ্বল ভাই চালাতেন। অন্যভাবে বলি, বিখ্যাত সংগীততজ্ঞ সমর দাসের আপন ভাগ্নে উজ্জ্বল ভাই। ওনার ছবি দিয়েই চিত্রালী রঙিন ছবি ছাপা শুরু করল।
সাহাদাত পারভেজ: আপনার সময়ে প্রেস ফটোগ্রাফার কারা ছিলেন?
গোলাম মুস্তফা: কয়েকজনই আছেন। একজন হচ্ছেন মুজাম্মিল হোসেন কালো ভাই। আরেকজন মোশাররফ হোসেন লাল ভাই। এরা দুইজন আপন ভাই। কালো ভাই অসাধারণ ফটোগ্রাফার ছিলেন ওই আমলে। অসাধারণ কাজ করতেন। এরপর আছেন রশীদ তালুকদার, আফতাব আহমেদ, কামরুল হুদা, গোলাম মাওলা, নবী ভাই। নবী ভাই বিমানের ফটোগ্রাফার ছিলেন। তাঁর নিজের একটা স্টুডিও ছিল এলিফ্যান্ট রোডে, নামটা ভুলে যাচ্ছি আমি। এখন সব জুতার দোকান হয়ে গেছে।
সাহাদাত পারভেজ: আপনি বলছিলেন যে, তখন পত্রিকায় শুধু খবরের ছবিই থাকত। এখন তো পত্রিকার প্রথম বা শেষ পৃষ্ঠায় ফিচারাইজড ছবি ছাপা হয়। তখন কি এরকম ছাপা হতো না?
গোলাম মুস্তফা :না, তা ছাপা হত না। আমি পত্রিকায় আর্ট ফটোগ্রাফি প্রথম দেখি পাকিস্তান অবজারভারে। আবদুস সালাম ছিলেন এর সম্পাদক। উদ্যোগটা তিনিই নিয়েছিলেন। রবিবারে পাকিস্তান অবজারভারের একটা বিশেষ পাতাজুড়ে থাকত কালো ভাইয়ের ছবি। তাঁর ছবি মানুষকে চিন্তায় ফেলে দিত। মনকে একটা নাড়া দিত। মনে আছে উনি একটা সিরিজ করেছিলেন কাকের ছবি দিয়ে। কয়েক মাস ধরে চলল। আমানুল হকের ছবিও ছাপা হত। তখন ভাবতাম, ‘এ ছবি তো খবরের ছবি না। অন্যরকম ছবি।’ কাজেই সবাই ওটা বিশেষ মনোযোগ দিয়ে দেখত।

সাহাদাত পারভেজ: আপনার মুখে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই। সংক্ষেপে যদি বলেন।
গোলাম মুস্তফা: সংক্ষেপে বলার জন্য শুরু করি। কিন্তু আল্টিমেটলি হয় কি, কথায় কথায় কথা অনেক বেড়ে যায়।
সাহাদাত পারভেজ : আমাদের শুনতে কোন অসুবিধা নাই।
গোলাম মুস্তফা: কিন্তু তোমরা যাঁদের শোনাবে, তাঁদের তো শুনতে হবে। তবে তাঁরা এনজয় করুক না করুক, তথ্যগুলা কিন্তু সঠিক। আমি তথ্যগুলা ঠিকই দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান বিপিএসকে নিয়ে আমি খুব হতাশ। হতাশ এজন্য যে, বিপিএসের জন্ম দেখেছি। বাল্যকাল দেখেছি, কৈশোর দেখেছি, যৌবন দেখেছি; বার্ধক্য দেখছি। মৃত্যুটা নিজ চোখে দেখতে চাই না। এখন যে অবস্থা, কোন রকমে টিকিয়ে থাকা। এটাকে যে আগের জায়গায় আনা, দশ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনাটাও ডিফিকাল্ট হয়ে গেছে।
তোমার পেছনে একটা ছবি আছে দেখো। এটা পারলে একসময় একটা শট নিয়ে নিও। এটার নাম হচ্ছে… নামটা পড়া যাচ্ছে কি?

সাহাদাত পারভেজ: নাম নাই তো…।
গোলাম মুস্তফা: নাম নাই এখানে? নাম আছে কিন্তু। নামটা হচ্ছে যে…একটা সুন্দর নাম আছে। নামটা আমিই দিয়েছিলাম। এটা হচ্ছে একটা প্রাচীন বটগাছের ছবি। বটগাছটা কোথায়, বলি? কলকাতায়, সেখনকার বোটানিক্যাল গার্ডেন। আমার ছেলেবেলায় একটা গাছ ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনে। বাবার সাথে গিয়েছিলাম। আমার বয়স যখন চার কি পাঁচ, এরকম। সে গাছটা এখনও আছে। আরও বিস্তার লাভ করেছে। ওই গাছের বয়স নাকি একশ বছরের বেশি। ওখানে অবশ্য গাছটার বয়স লেখা আছে। ওই গাছটি এত প্রাচীন, দেখলে মনে হয় ঝুরিগুলোর ওপর গাছটি দাঁড়িয়ে আছে। গাছটার কিন্তু মূল কা- কোথায়, খুঁজে পাবে না।
সাহাদাত পারভেজ: অনেক রহস্যময়।
গোলাম মুস্তফা: অনেক রহস্যময়। গাছটার ছবি তোলার পরে ঢাকায় এসে বাসায় বসে ছবিটা যখন বড় স্ক্রিনে দেখলাম, আমার কাছে মনে হল এ ছবির মধ্যে আমি অন্য কী একটা দেখছি। যেটা আমার মধ্যে সবসময় কাজ করে। আমি এ কথাটা কথা ছাত্রদেরকে কথা বলি, ‘আমি যা দেখি, তুমি কি তাই দেখো?’
কথাটা কেন বললাম? ছোটবেলায় কিন্তু এ খেলাটা আমরা খেলতাম। ভাইবোনরা মিলে এক জায়গায় বসতাম। একটা জিনিস দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে বলতাম, ‘আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো?’ ওরা তো বুঝতে পারতো না আমি কি দেখেছি।

সাহাদাত পারভেজ: আমরাও এরকম খেলেছি।
গোলাম মুস্তফা: খেলেছি না? এই খেলাটা একসময় আমরা সবাই খেলেছি। কিন্তু আমি সেই খেলাটা এখনও খেলি। আমি যা দেখেছি এই ছবিটার মধ্যে সেটা আর কেউ দেখেনি। সবাই দেখেছে কিন্তু কারো মনে ওই প্রশ্নটা জাগে নাই। আমরা যে এত বিপিএস বিপিএস করি, এই হচ্ছে বিপিএসের ইতিহাস! কী করে ইতিহাস? এই গাছটা একসময় জন্মেছিল, বিশাল বড় হয়েছে, অনেক বছর বড় হয়ে এত বড় হয়েছে যে তাঁর অরিজিনাল কাণ্ডগুলো সব মরে গেছে। দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তার নিজের শেকড়ের ওপরেই।
সাহাদাত পারভেজ : মানে মূল কাণ্ডটাকে এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন।
গোলাম মুস্তফা : হ্যাঁ, কঠিন। একইভাবে এ দেশে ফটোগ্রাফি আন্দোলন তৈরি হয়েছে বিপিএসকে কেন্দ্র করে। আজকে যেসব বড় বড় শাখা, যেমন- চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, দিনাজপুর, সিলেট, কুমিল্লা বা নারায়ণগঞ্জ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, সব কিন্তু বিপিএসকে কেন্দ্র করে হয়েছে। এখন সবাই বিপিএসকে ভুলে গেছে। কেউ বিপিএসের খবরই নেয় না।
সাহাদাত পারভেজ: কিন্তু এখন তো আরও নানা সংগঠন ও ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান হয়েছে।
গোলাম মুস্তফা : আচ্ছা আমি একটা কথা বলি? কঠিন কথা হয়ে যাবে কিন্তু। দৃক কী করে হলো? পাঠশালা কী করে হলো? ওটা তো এক ধরণের ধারাবাহিকতাই।
সাহাদাত পারভেজ : কি রকম ধারাবাহিকতা?
গোলাম মুস্তফা : আমি যদি ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করি, এরপর বেগার্টে আসি, তারপর ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব ও বিপিএস। ট্রপিক্যালে যদি আমরা থাকতাম তাহলে কি আর বিপিএস তৈরি হত?
বেগ সাহেব তো ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাবেরও দুই বছর আগে বেগার্ট ইনস্টিটিউট করলেন। ৬২ তে ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব হলো আর ৬০ এ হলো বেগার্র্ট। শুরুতে তো বেগ সাহেব বেগার্ট ইনস্টিটিউটের ভেতরেই বিপিএসকে আশ্রয় দিলেন। তখন বিপিএসের আলাদা জায়গা ভাড়া করার মতো উপায় ছিল না। বেগার্টের ভেতরেই কিন্তু বেগ সাহেব ক্লাস করতেন, বিপিএসও চালাতেন। বলতে গেলে তিনি বিপিএসকে বুকে করে আগলে রেখেছেন।
পরবর্তী সময়ে বিপিএস যেন গ্রো করে, বাইরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও করলেন। ঘর দেখলেন, ঘর ভাড়া করলেন;ভাড়ার টাকা কোত্থেকে আসবে সেই ব্যবস্থা তিনি করলেন। বেগ সাহেব বলতেন, যদি এটাকে বেগার্টের ভেতরে রেখে দিই তাহলে লোকে ভাববে আমি বিপিএসকে কুক্ষিগত করে রেখেছি। বেগ সাহেবই উদ্যোগ নিয়ে বিপিএসকে বাইরে নিয়ে গেলেন।
‘মুস্তফা, বাইরে কিন্তু একটা কথা রটে গেছে বিপিএসের মালিক হচ্ছে তিনজন এম এ বেগ, বিজন সরকার আর গোলাম মুস্তফা, এটা খুবই খারাপ। আসেন নেক্সট ইলেকশনে আমরা তিনজনই পদত্যাগ করি। পদত্যাগ করবো এবং ইলিকশনে কম্পিট করব না।’
এখন বিপিএসের অ্যাক্টিভিটি শ্লথ হয়ে গেছে নানা কারণে। যতদিন বেগ সাহেব ছিলেন, ততদিন এমন ছিল যে কোন ইলেকশন করতে হয় নি। বেগ সাহেব হেড, মানে বেগ সাহেবই চালাবেন। পরে বেগ সাহেব একদিন আমাকেই বললেন যে, ‘মুস্তফা, বাইরে কিন্তু একটা কথা রটে গেছে বিপিএসের মালিক হচ্ছে তিনজন এম এ বেগ, বিজন সরকার আর গোলাম মুস্তফা, এটা খুবই খারাপ। আসেন নেক্সট ইলেকশনে আমরা তিনজনই পদত্যাগ করি। পদত্যাগ করবো এবং ইলিকশনে কম্পিট করব না।’
সাহাদাত পারভেজ : মানে বিশাল উদার ও সাংগঠনিক চিন্তার মানুষ ছিলেন বেগ স্যার।
গোলাম মুস্তফা : হ্যাঁ। আমরা বেগ সাহেবের প্রস্তাব অ্যাগ্রি করলাম। পরবর্তী ইলেকশন যখন হলো, আমারা তিনজন দাঁড়ালাম না। জেনারেল মেম্বার থাকলাম। ইলেকশন হল। অন্যরা নির্বাচিত হয়ে আসলো। আর বেগ সাহেব হয়ে গেলেন অ্যাডভাইজার।
সাহাদাত পারভেজ : আপনি যেটা বলছিলেন, দৃক ও পাঠশালা কেমন করে হলো?
গোলাম মুস্তফা : তখন মাত্র শহিদুল আলম সাহেব লন্ডন থেকে এসেছেন। কি করে যেন বেগ সাহেবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হলো। বেগ সাহেব একদিন আমাকে ডেকে বললেন, ‘আমার সঙ্গে একজনের দেখা হয়েছে। খুব স্মার্ট লোক। ভালো ইংরেজি বলে। আর খুব ভালো ছবি তোলে। বিপিএসের জন্য এরকম একজন লোক দরকার। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। সে দায়িত্ব নিতে নিমরাজি হয়েছে। তো তাঁকে দায়িত্ব দেব।’
তখন কিন্তু কাজী মিজানুর রহমান অলরেডি জেনারেল সেক্রেটারি। বেগ সাহেব মিজানুর রহমানকে কনভিন্স করে বসিয়ে দিয়ে শহিদুল আলমকে জেনারেল সেক্রেটারি বানালেন। বড় রুম ভাড়া করা হলো। এলিফ্যান্ট রোডেই। শু মার্কেটের ওপরে। ওখানে বোধ হয় বছর দশেক ছিল বিপিএস।
নিয়ম হচ্ছে যে দুই বছর পিরিয়ড থাকে একজন সেক্রেটারির। সেখানে শহিদুল আলমকে চার বছর রাখা হলো। মানে দুই বার থাকলেন। কিন্তু শহিদুল আলম ততদিনে বুঝে গেছেন বিপিএসের সেক্রেটারি থাকলে তাঁর চলবে না। বড় কাজ করতে গেলে তাঁকে এই সিস্টেম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ওদিকে উনি অলরেডি দৃকের কাজ শুরু করেছেন। তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর আল্টিমেটলি আমার ঘাড়ে দায়িত্ব চাপলো। আমি অনেকটা নিমরাজি হয়ে দায়িত্ব নিলাম।
শহিদুল আলমের মত একজন লোক যদি একটা প্রতিষ্ঠান করেন, তো সেভাবেই করবেন। তাঁর নিজের জায়গা আছে, অর্থসম্পদ আছে, পরিচিতি আছে, যোগ্যতা আছে; সবই তাঁর আছে। তো তাঁকে আমরা হারালাম। তারপরে যেটা হলো, তাঁর বড় প্রতিষ্ঠান, কাজ করার ক্ষেত্রও অনেক বড়। ফলে বিপিএসের যারা ভালো ফটোগ্রাফার, ভালো সংগঠক তাঁদের কয়েকজনও দৃকের প্রতি আকৃষ্ট হলো। তাঁরা আস্তে আস্তে চলে গেল। বিপিএস তাঁদেরকে হারালো।
তো আস্তে আস্তে দৃক তৈরি করলো। শহিদুল আলমের মত একজন লোক যদি একটা প্রতিষ্ঠান করেন, তো সেভাবেই করবেন। তাঁর নিজের জায়গা আছে, অর্থসম্পদ আছে, পরিচিতি আছে, যোগ্যতা আছে; সবই তাঁর আছে। তো তাঁকে আমরা হারালাম। তারপরে যেটা হলো, তাঁর বড় প্রতিষ্ঠান, কাজ করার ক্ষেত্রও অনেক বড়। ফলে বিপিএসের যারা ভালো ফটোগ্রাফার, ভালো সংগঠক তাঁদের কয়েকজনও দৃকের প্রতি আকৃষ্ট হলো। তাঁরা আস্তে আস্তে চলে গেল। বিপিএস তাঁদেরকে হারালো।
সাহাদাত পারভেজ: সেটা তো ধরেন নানান কিছুতেই হয়। আমরা কিছু পুরনো প্রতিষ্ঠান দেখি একসময় জৌলুস হারায়। নতুন করে আবার প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়, নাম ধাম করে; এটাই নিয়ম পৃথিবীর।
গোলাম মুস্তফা: হ্যাঁ, এটাই নিয়ম। দৃকের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। বরং দৃক আসাতে যা হলো, ফটোগ্রাফি কিন্তু অন্য স্তরে চলে গেল। আজকে পৃথিবীতে বিপিএসকে না চিনলেও দৃককে কিন্তু অনেকেই চেনে। দৃক নিজের যোগ্যতায় ওই স্তরে উন্নিত হয়েছে। আমরা শহিদুল আলমকে হারিয়েছি। তাঁর সময় বেশি পাইনি। কিন্তু শহিদুল আলম যতদিন ছিলেন, ততদিন বিপিএসকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। আমরা একই সঙ্গে বৃটিশ কাউন্সিল, ইন্ডিয়ান হাই কমিশন, অলিয়্যস ফ্রসেস, গ্যাটে ইনস্টিটিউট, জার্মান কালচারাল ইনস্টিটিউট এরকম বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলাম। ওরা আমাদের অনেক কাজ স্পন্সর করলো। শহিদুল আলমের কানেকশনে এগুলো পেলাম। সুতরাং, তিনি যেটা করেছে, ফটোগ্রাফিকে অ্যাজ আ হোল, আরও এগিয়ে দিয়ে গেছেন।
সাহাদাত পারভেজ: বেগ স্যার যেমন চাইতেন ফটোগ্রাফির একটা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হোক, রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা সার্টিফিকেট পাক; সরকারি চাকরিতে যে মর্যাদাটা হয়, পাঠশালাও তো এখন ইউনিভার্সিটির অ্যাফিলিয়েশন পেয়েছে। গোলাম কাসেম ড্যাডি কিংবা বেগ স্যারের পথ ধরেই তো শহিদুল আলম হাঁটলেন।
গোলাম মুস্তফা : হ্যাঁ। তিনি সেই কাজটাই করেছেন। বিপিএস যদি চেষ্টা করতো অ্যাক্রেডিশন নেওয়ায়, পারতো না কিন্তু। আমি বলবো, অ্যাজ আ হোল, ফটোগ্রাফির বেনিফিটটা পেয়েছে বিকজ অফ শহিদুল আলম। ফটোগ্রাফিকে এখন ফট করে কেউ হ্যালাফ্যালা করতে পারবে না।
সাহাদাত পারভেজ: শহিদুল আলম হয়তো অনেক দূর পর্যন্ত চিন্তা করতে পেরেছেন।
গোলাম মুস্তফা : শহিদুল আলমের কারণটা হচ্ছে এ রকম আমরা যেহেতু বেগ সাহেব অরিয়েন্টেড, সুতরাং আমরা ফটোগ্রাফির ওই ফর্মটার মধ্যে ছিলাম, আর্ট ফটোগ্রাফি আর স্যালনের মধ্যে ছিলাম। ফটোগ্রাফির যে অন্য একটা বিষয় আছে, ডক্যুমেন্টরি, ওটা কিন্তু আমাদের জানা ছিল না। কাজেই শহিদুল আলম বুঝতে পেরেছেন তাঁর যে স্বপ্ন ডক্যুমেন্টরি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, ওটা বিপিএসে থাকলে হবে না। এটা সম্ভবত প্রধান কারণ তাঁর বেরিয়ে যাওয়ার।
সুশান্ত পালের ধারণ করা ভিডিওচিত্র থেকে অনুলিখন করেছেন জাহরা জাহান পার্লিয়া
আগামীকাল পড়ুন ৯ম পর্ব
আরও পড়ুন :
ক্যামেরার কারণে আমার কাজের মান ভালো হয়ে গেল : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-১
কলেজের ম্যাগাজিনের কাভারে ছবি ছাপানো হওয়ার গর্বে আমার তো ঘুম নাই : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-২
’ ৭১-এর টেলিভিশনের চাকরি ফেলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, বৃদ্ধ বাবা মাকে টর্চার করবে ভেবে কোথাও যাইনি : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-৩
১০ জানুয়ারির ঘটনাটা বলতে গেলে কেন জানি আবেগী হয়ে যাই : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-৪
চারুকলায় ক্যামেরা, এনলার্জার কেনা হলো কিন্তু ফটোগ্রাফি বিভাগটা আর খোলা হলো না : গোলাম মুস্তফা, পর্ব-৫
ফটোগ্রাফি নেভার লাইজ : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৬
এখন তো বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি অন্যস্তরে চলে গেছে : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৭
1 thought on “‘আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো?’ : গোলাম মুস্তফা, পর্ব : ৮”