আমার গ্রাম সবার গ্রামের চেয়ে একটু ভিন্ন..

সবাই নিজের গ্রাম বলতে যেমন বুঝে। আমার গ্রাম তার থেকে একটু ভিন্ন। যেমন আমার গ্রাম ঢাকারই অংশ বলা চলে। নিশ্চয়ই ভাবছেন এটা কই আবার। এটি রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী একটি শহর। নারায়ণগঞ্জ জেলার সদরদপ্তর। এই শহরে প্রায় ২৮৬,৩৩০ জন লোক বাস করে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ৪৩টি বৃহত্তম শহরের মধ্যে এটি ১৩তম।
সবাই গ্রাম বলতে যেমন সুজলা সুফলা সবুজ একটি পরিবেশ বুঝে। আমার কাছে সেটা কর্মমুখি, হাস্যোজ্জল.জীবনমুখি, কারণ শহরটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জ বন্দর দেশের বৃহত্তম নদীবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও এটি পাট বাণিজ্য ও প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং দেশের টেক্সটাইল সেক্টরের ব্যবসা ও শিল্পের একটি কেন্দ্র। অনেক পাটকলের উপস্থিতির কারণে এটিকে প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে ডাকা হয় (ড্যান্ডি ছিল বিশ্বের প্রথম শিল্পোন্নত জুটপোলিস) এই শহরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস,বাংলার সোনালি যুগের উথান পতন।এর নামকরণ নিয়েও আছে ইতিহাস। ১৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা বিকন লাল পান্ডে, যিনি বেণুর ঠাকুর বা লক্ষী নারায়ণ ঠাকুর নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা কিনে নিয়েছিলেন। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি উইলের মাধ্যমে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পতি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ।

এছাড়া সোনারগাঁও এ যাই নি এমন মানুষ খুব কমই আছে. ঢাকার আশেপাশে একটু বিনোদনের জন্য এরচেয়ে ভালো আর কোনো জায়গা নেই.এর সঙ্গেও আছে বিশাল রাজকীয় ইতিহাস। কররানী রাজবংশ এর প্রথম নবাব তাজ খান কররানীর সময়কালে এটি ছিল সাম্রাজ্যের রাজধানী। ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়। এখানে সোনাবিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সমাধি, ইব্রাহীম দানিশমান্দ-এর দরগা ইত্যাদি নানারকম স্থাপনা রয়েছে। সোনারগাঁও-এ শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর অবস্থিত। আমাদের গ্রামের বাড়ি শীতলক্ষা একদম পাশে। বাড়িতে থাকলে দুপুরের সবাই মিলে নদীতে গোসল করতে যেতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত সাঁতার কেটে। বিকেল হলে নৌকা দিয়ে গোধূলি মাখা বিকেলের পূর্ণ উপভোগ করা। তবে আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে সব সরলতার মধ্যেই যান্ত্রিকতা চলে আসে, তারপর প্রকৃতি তার নিজের খেয়াল নিজেই রাখে। নিজের রূপে মাতিয়ে রাখে নারায়ণগঞ্জ বাসিদের। আপন করে নেয়।
সাদিয়া সাবরিন সিথির : সহসম্পাদক, স্বাস্থ্যবিষয়ক, মুক্ত আসর


