কাজী নজরুল ইসলামের ‘কোরবানি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

ভূমিকা : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম এমন এক বিস্ময়কর যা কোনো দেশ-কাল-পাত্রের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করা যায় না। তিনি সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন। তাঁর কবিতা ও গান প্রথমত স্পর্শ করেছে মানবতাকে। দেশাত্মবোধ, স্বজাত্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতাবোধসহ সামাজিক ও মানবিক জীবনের বিভিন্ন দিক।তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে নিয়েই ভেবেছেন এবং তাঁর সে ভাবনা তাঁর রচনায় ফুটে উঠেছে।এদিক দিয়ে তিনি ছিলেন সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নজরুল ধর্মের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যকে মানবতার সৌন্দর্যরূপে পেশ করেছেন। ধর্মের ভেতরের মানবিক মূল্যবোধকে বের করে এনেছেন। ধর্মের তথাকথিত ধ্বজা নয় এবং আচারস্বর্বস্ব বক-ধার্মিকতা নয় বরং ধর্মের সঙ্গে যে নৈতিকতার প্রসঙ্গটি জড়িত সেই নৈতিকতাকে সকল অন্যায়-অবিচার, জুলুমের বিপক্ষে সংগ্রামে অসি ও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন নজরুল। বাজিয়েছেন পরাধীনতা থেকে জাতির মুক্তির রণবাদ্য। নজরুল নানাভাবে বাংলার হিন্দু-মুসলমানকে যুগপৎভাবে জাগিয়ে দিতে চেয়েছেন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বেড়িয়ে আসার জন্য। মুসলমানদেরকে জাগানোর জন্য তিনি লিখেছেন, ‘মোহররম’, ‘কোরবানী’, ‘বকরিদ’, ‘শহীদী ঈদ’সহ অনেক কবিতা।
ইসলামের অনন্য উৎসব ঈদ-উল-আজহা। বিশ্বের মুসলমানরা যে মুসলিম পরিচয় বহন করে, সেই পরিচয়ের প্রতিষ্ঠাতা হলেন হযরত ইবরাহীম (আ.)। তাই মুসলিম জাতিকে বলা হয় ‘মিল্লাতে ইবরাহীম’ বা ইবরাহীমের জাতি। ইবরাহীম (আ.) হচ্ছেন মুসলিম জাতির পিতা। ত্যাগের পরীক্ষায় বহুবার তিনি হয়েছিলেন পরীক্ষিত। প্রাণের চেয়ে প্রিয় পুত্রকে আল্লাহর রাহে কোরবানি করতে একটুও ছিল না দ্বিধা-সংকোচ। মানবতাকে বধ করা ছিল নার উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য ছিল ইবরাহীমের হৃদয় পরখ। উত্তীর্ণ হলেন ইবরাহীম (আ.) সেই পরীক্ষায়। আল্লাহ পাঠিয়ে দিলেন দুম্বা। ইসমাইল (আ)-এর পরিবর্তে সেই দুম্বা জবাই হয়ে গেল। সেই থেকে অদ্যাবধি চলছে ঈদুল আযহায় পশু কোরবানি। কিন্তু এ ঘটনায় অন্তর্নিহিত শিক্ষা যে ত্যাগ, তা ভুলে গিয়ে আমরাও কি আচারস্বর্বস্ব হয়ে যাই নি? আমাদের আচরণের ভেতর যে দর্শন বিচরণের কথা ছিল তা কোথায়? নজরুল তো সেই কথাই বলেছেন তাঁর ‘কোরবানী’কবিতায়।
আজ ঈদুল আজহার দিনে বইচারিতার চিরায়ত লেখা বিভাগে পড়ুন জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের লেখা কোরবানি ঈদ নিয়ে তিনটি কবিতা। অগ্নিবীণা, শেষ সওগাত ও ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কোরবানি
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
দুর্বল! ভীরু! চুপ রহো, ওহো খাম্খা ক্ষুব্ধ মন!
ধ্বনি ওঠে রণি দূর বাণীর,–
আজিকার এ খুন কোর্বানির!
দুম্বা-শির রুম্-বাসীর
শহীদের শির-সেরা আজি। –রহমান কি রুদ্র নন?
বাস্! চুপ খামোশ রোদন!
আজ শোর ওঠে জোর ‘খুন দে, জান দে, শির দে বৎস’ শোন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
খঞ্জর মারো গর্দানেই,
পঞ্জরে আজি দরদ নেই,
মর্দানি’ই পর্দা নেই
ডর্তা নেই আজ খুন্-খারাবিতে রক্ত-লুব্ধ মন!
খুনে খেল্ব খুন্-মাতন!
দুনো উন্মাদনাতে সত্য মুক্তি আন্তে যুঝ্র রণ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
চড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার
মুস্লিমে সারা দুনিয়াটার।
‘জুল্ফেকার’ খুল্বে তার
দু’ধারী ধার্ শেরে-খোদার রক্তে-পূত-বদন!
খনে আজকে রুধ্ব মন!
ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
আস্তানা সিধা রাস্তা নয়,
‘আজাদি’ মেলে না পস্তানোয়!
দস্তা নয় সে সস্তা নয়!
হত্যা নয় কি মৃত্যুও? তবে রক্ত-লুব্ধ কোন্
কাঁদে-শক্তি-দুঃস্থ শোন্–
‘এয়্ ইব্রাহিম্ আজ কোর্বানি কর শ্রেষ্ঠ পুত্রধন!’
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
এ তো নহে লোহু তরবারের
ঘাতক জালিম জোর্বারের!
কোরবানের জোর-জানের
খুন এ যে, এতে গোর্দা ঢের রে, এ ত্যাগে ‘বুদ্ধ’ মন!
এতে মা রাখে পুত্র পণ্!
তাই জননী হাজেরা বেটারে পরাল বলির পূত বসন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
এই দিনই ‘মীনা’-ময়দানে
পুত্র-স্নেহের গর্দানে
ছুরি হেনে খুন ক্ষরিয়ে নে
রেখেছে আব্বা ইব্রাহিম্ সে আপনা রুদ্র পণ!
ছি ছি! কেঁপো না ক্ষুদ্র মন!
আজ জল্লাদ নয়, প্রহলাদ সম মোল্লা খুন-বদন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
দ্যাখ্ কেঁপেছে ‘আরশ’ আস্মানে,
মন-খুনি কি রে রাশ মানে?
ত্রাস প্রাণে?-তবে রাস্তা নে!
প্রলয়- বিষাণ কিয়ামতে তবে বাজাবে কোন্ বোধন?
সেকি সৃষ্টি-সংশোধন?
ওরে তাথিয়া তাথিয়া নাচে ভৈরব বাজে ডম্বরু শোন্!–
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
মুস্লিম-রণ-ডঙ্কা সে,
খুন্ দেখে করে শঙ্কা কে?
টঙ্কারে অসি ঝঙ্কারে
ওরে হুঙ্কারে, ভাঙি গড়া ভীম কারা লড়ব রণ-মরণ!
ঢালে বাজ্বে ঝন্-ঝনন!
ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন!
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
জোর চাই আর যাচ্না নয়
কোরবানি-দিন আজ না ওই?
বাজ্না কই? সাজ্না কই?
কাজ না আজিকে জান্ মাল দিয়ে মুক্তির উদ্ধরণ?
বল্– ‘যুঝ্ব জান্ ভি পণ!’
ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ!
আজ আল্লার নামে জান কোরবানে ঈদের পূত বোধন।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।
** ‘কোরবানি’ কবিতাটি কবির বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণার একটি কবিতা।
বকরীদ
শহীদানদের ঈদ এল বকরীদ!
অন্তরে চির নৌ-জোয়ান যে, তারি তরে এই ঈদ।
আল্লাহর রাহে দিতে পারে যারা আপনারে কোরবান,
নির্লোভ নিরহঙ্কার যারা, যাহারা নিরভিমান,
দানব-দৈত্যে কতল করিতে আসে তলোয়ার লয়ে,
ফিরদৌস হতে এসেছে যাহারা ধরায় মানুষ হয়ে,
অসুন্দর ও অত্যাচারীরে বিনাশ করিতে যারা
জন্ম লয়েছে চির-নির্ভিক যৌবন-মাতোয়ারা,
তাহাদেরি শুধু আছে অধিকার ঈদগাহে ময়দানে,
তাহারাই শুধু বকরীদ করে জান মাল কোরবানে।
বিভূতি মাজেজা যাহা পায় সব প্রভু আল্লাহর রাহে
কোরবানী দিয়ে নির্য্যাতিতেরে মুক্ত করিতে চাহে।
এরাই মানব জাতির খাদেম, ইহারাই খাকসার,
এরাই লোভীর সাম্রাজ্যরে করে দেয় মিসমার!
ইহারাই ফিরদৌস-আলার প্রেম-ঘন অধিবাসী
তসবী ও তলোয়ার লয়ে আসি অসুরে যায় বিনাশি।
এরাই শহীদ, প্রাণ লয়ে এরা খেলে ছিনিমিনি খেলা,
ভীরুর বাজারে এরা আনে নিতি নব নওরোজ-মেলা।
প্রাণ-রঙ্গীলা করে ইহারাই ভীতি ম্লান আত্মায়,
আপনার প্রাণ-প্রদীপ নিভায়ে সবার প্রাণ জাগায়।
কল্পবৃক্ষ পবিত্র জৈতুন গাছ যথা থাকে,
এরা সেই আসমান থেকে এসে সদা তারি ধ্যান রাখে!
এরা আল্লাহর সৈনিক, এরা জবীহুল্লাহর সাথী,
এদেরি আত্মত্যাগ যুগে যুগে জ্বালায় আশার বাতি।
ইহারা সর্ব্বত্যাগী বৈরাগী প্রভু আল্লাহর রাহে,
ভয় করে না ক কোন দুনিয়ার কোন সে শাহেনশাহে।
এরাই কাবার হজের যাত্রী,এদেরই দস্ত চুমি
কওসর আনে নিঙাড়িয়া রণক্ষেত্রের মরুভূমি!
জবীহুল্লাহর দোস্ত ইহারা, এদেরি চরণাঘাতে
আব-জমজম প্রবাহিত হয় হৃদয়ের মক্কাতে।
ইবরাহিমের কাহিনী শুনেছ? ইসমাইলের ত্যাগ?
আল্লারে পাবে মনে কর কোরবানী দিয়ে গরু ছাগ?
আল্লাহর নামে, ধর্ম্মের নামে মানব জাতির লাগি
পুত্রেরে কোরবানী দিতে পারে, আছে কেউ হেন ত্যাগী?
সেই মুসলিম থাকে যদি কেউ, তসলিম করি তারে,
ঈদগাহে গিয়া তারি সার্থক হয় ডাকা আল্লারে।
অন্তরে ভোগী, বাইরে যে রোগী, মুসলমান সে নয়,
চোগা-চাপকানে ঢাকা পড়িবে না সত্য যে পরিচয়!
লাখো বখরার বদল সে পার হবে না পুলসেরাত,
সোনার বলদ ধন-সম্পদ দিতে পার খুলে হাত?
কোরান মজিদে আল্লাহর এই ফরমান দেখো পড়ে
আল্লাহর রাহে কোরবানী দাও সোনার বলদ ধরে।
ইবরাহিমের মত পুত্রেরে আল্লাহর রাহে দাও,
নৈলে কখনো মুসলিম নও, মিছে শাফায়ৎ চাও!
নির্য্যাতিতের লাগি পুত্রেরে দাও না শহীদ হতে,
চাকরীতে দিয়া মিছে কথা কও- যাও আ্ল্লাহর পথে!
বকরিদী চাদ করে ফরয়্যাদ, দাও দাও কোরবানী,
আল্লারে পাওয়া যায় না, করিয়া তাহার না-ফরমানী!
পিছন হইতে বুকে ছুরি মেরে, গলায় গলায় মেলো,
করো না আত্ম-প্রতারণা আর খেলকা খুলিয়া ফেল!
উমরে, খালেদে, মুসা ও তারেকে বকরীদে মনে কর,
শুধু সালওয়ার পরিও না, ধর হাতে তলোয়ার ধরো!
কোথায় আমার প্রিয় শহীদান, মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাণ?
(এসো) ঈদের নামাজ পড়িব, আলাদা আমাদের ময়দান!
** শেষ সওগাত কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা
শহিদি–ঈদ
১
শহীদের ঈদ এসেছে আজ
শিরোপরি খুন-লোহিত তাজ,
আল্লাহর রাহে চাহে সে ভিখ্:
জিয়ারার চেয়ে পিয়ারা যে
আল্লার রাহে তাহারে দে,
চাহি না ফাঁকির মণিমানিক।
২
চাহি না ক’ গাভী দুম্বা উট,
কতটুকু দান? ও দান ঝুট।
চাই কোরবানী, চাই না দান।
রাখিতে ইজ্জত্ ইসলামের
শির চাই তোর, তোর ছেলের,
দেবে কি? কে আছ মুসলমান?
৩
ওরে ফাঁকিবাজ, ফেরেব-বাজ,
আপনারে আর দিস্নে লাজ,-
গরু ঘুষ দিয়ে চাস্ সওয়াব?
যদিই রে তুই গরুর সাথ
পার হয়ে যাস পুল্সেরাত,
কি দিবি মোহাম্মদে জওয়াব।
৪
শুধাবেন যবে-ওরে কাফের,
কি করেছ তুমি ইসলামের?
ইসলামে দিয়ে জাহান্নম
আপনি এসেছ বেহেশ্ত্ ’পর-
পুণ্য-পিশাচ! স্বার্থপর!
দেখাস্নে মুখ, লাগে শরম!
৫
গরুরে করিলে সেরাত পার,
সন্তানে দিলে নরক-নার!
মায়া-দোষে ছেলে গেল দোজখ।
কোরবানী দিলি গরু-ছাগল,
তাদেরই জীবন হ’ল সফল
পেয়েছে তাহারা বেহেশ্ত্-লোক!
৬
শুধু আপনারে বাঁচায় যে,
মুসলিম নহে, ভন্ড সে!
ইসলাম বলে-বাঁচ সবাই!
দাও কোরবানী জান্ ও মাল,
বেহেশ্ত্ তোমার কর হালাল।
স্বার্থপরের বেহেশ্ত্ নাই।
৭
ইসলামে তুমি দিয়ে কবর
মুসলিম ব’লে কর ফখর!
মোনাফেক তুমি সেরা বে-দীন!
ইসলামে যারা করে জবেহ্,
তুমি তাহাদেরি হও তাবে।
তুমি জুতো-বওয়া তারি অধীন।
৮
নামাজ-রোজার শুধু ভড়ং,
ইয়া উয়া প’রে সেজেছ সং,
ত্যাগ নাই তোর এক ছিদাম!
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কর জড়,
ত্যাগের বেলাতে জড়সড়!
তোর নামাজের কি আছে দাম?
৯
খেয়ে খেয়ে গোশ্ত্ রুটি তো খুব
হয়েছ খোদার খাসী বেকুব,
নিজেদের দাও কোরবানী।
বেঁচে যাবে তুমি, বাঁচিবে দ্বীন,
দাস ইসলাম হবে স্বাধীন,
গাহিছে কামাল এই গানই!
১০
বাঁচায়ে আপনা ছেলে-মেয়ে
জান্নাত্ পানে আছ্ চেয়ে
ভাবিছ সেরাত হবেই পার।
কেননা, দিয়েছ সাত জনের
তরে এক গরু! আর কি, ঢের!
সাতটি টাকায় গোনাহ্ কাবার!
১১
জান না কি তুমি, রে বেঈমান!
আল্লা সর্বশক্তিমান
দেখিছেন তোর সব কিছু?
জাব্বা-জোব্বা দিয়ে ধোঁকা
দিবি আল্লারে, ওরে বোকা!
কেয়ামতে হবে মাথা নীচু!
১২
ডুবে ইসলাম, আসে আঁধার!
ব্রাহিমের মত আবার
কোরবানী দাও প্রেয় বিভব!
“জবীহুল্লাহ্” ছেলেরা হোক,
যাক সব কিছু-সত্য রোক!
মা হাজেরা হোক মায়েরা সব।
১৩
খা’বে দেখেছিলেন ইব্রাহিম-
“দাও কোরবানী মহামহিম!”
তোরা যে দেখিস্ দিবালোকে
কি যে দুর্গতি ইসলামের!
পরীক্ষা নেন খোদা তোদের
হাববের সাথে বাজি রেখে!
১৪
যত দিন তোরা নিজেরা মেষ,
ভীরু দুর্বল, অধীন দেশ,-
আল্লার রাহে ততটা দিন
দিও না ক’ পশু কোরবানী,
বিফল হবে রে সবখানী!
(তুই) পশু চেয়ে যে রে অধম হীন!
১৫
মনের পশুরে কর জবাই,
পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই।
কশাই-এর আবার র্কোবানী!-
আমাদের নয়, তাদের ঈদ,
বীর-সুত যারা হ’ল শহীদ,
অমর যাদের বীরবাণী।
১৬
পশু কোরবানী দিস্ তখন
আজাদ-মুক্ত হবি যখন
জুলম-মুক্ত হবে রে দীন।-
কোরবানীর আজ এই যে খুন
শিখা হয়ে যেন জালে আগুন,
জালিমের যেন রাখে না চিন্!!
আমিন্ রাব্বিল্ আলামিন!
আমিন রাব্বিল্ আলামিন!!
** ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা