বিশ্ব বই দিবস কেমন করে পালন করা যায়?

চট্টগ্রামের ৩ রাজাপুর লেনের নানার বাড়ির দোতলাতে আমার বেড়ে ওঠা। ১৯৭১ সালে রাজাকাররা আমাদের কাপাশগোলার বাসা পুড়িয়ে দেওয়ার দুইদিন আগে দাদা কী মনে করে কিছু জিনিসপত্র নানার বাড়ির দোতলাতে ট্রান্সফার করেছিলেন। স্বাধীনতার পর সেটাই আমাদের বাসা হয়, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। ঐ বাসার সবচেয়ে বড় স্মৃতিই হলো চারদিকে বই। সব রুমেই একটা করে বই-এর আলমিরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বই। দুইটা দৈনিক। কিশোর বাংলা, আনন্দমেলা, বিচিত্রা, যায় যায় দিন, উল্টোরথ, নন্টে-ফন্টে, মাসুদ রানা, কুয়াশা—সব সব বই। দাদার এক আলমিরা ইসলামী বই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তিন খণ্ডের কোরানের অনুবাদ।
বাসায় একাধিক পত্রিকার কারণ স্কুলে আমার একটা কাজ ছিল জানানো আজ কোন বিশেষ দিবস কিনা। বাসার পিছনেই মাঠ। সেখানেই উত্তরণ ক্লাবের সহযোদ্ধাদের খেলা। ক্লাবঘর অবশ্য নজির আহমদ চৌধুরী রোডের মাথায়, হাতি কোম্পানির ক্যাম্পাসে। সেখানেও একটা লাইব্রেরি। এবং বই পড়ার পর সেটার উপস্থাপন করতে হতো সভায়। এটার গালভরা নাম এখন পাঠচক্র।

এভাবে বই-এর সঙ্গে গড়াগড়ি দিয়ে আমাদের বেড়ে ওঠা। মনে আছে এসএসসি পরীক্ষার কয়েকদিন আগে বাবা অফিস চলে গেছে ভেবে পড়ার রুমে আনন্দমেলা নিয়ে বসেছি। কিন্তু বাবা কী মনে করে উপরে এস দেখেন এই কারবার। যা হোক। দাদা ছিলেন রক্ষা কবচ। বলতেন—পড়লেই হলো। কী পড়ছে জরুরি নয়। পড়ার অভ্যাস দাঁড়িয়ে গেলে স্কুলের পড়া দুধভাত হয়ে যাবে।
দাদা এই জোর কই পেতেন এখন সেটা জানি—পড়ো পড়ো পড়ো। বই পড়ার জগতে আমার আত্মানুসন্ধানের কাহিনী পড়ো পড়ো পড়োতে লিখেছি। অনেকেই পড়েছেন। এই বই-এর শেষে একটা পড়া, শোনা ও দেখার লিস্টও দিয়ে দিয়েছি।
দাদা এই জোর কই পেতেন এখন সেটা জানি—পড়ো পড়ো পড়ো। বই পড়ার জগতে আমার আত্মানুসন্ধানের কাহিনী পড়ো পড়ো পড়োতে লিখেছি। অনেকেই পড়েছেন। এই বই-এর শেষে একটা পড়া, শোনা ও দেখার লিস্টও দিয়ে দিয়েছি।
আজ ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। কেমন করে পালন করা যায়?
আগে হলে একদিনেই একটা বই পড়ে ফেলতাম। এখন তো কাজের ঠেলায় পারি না। এখন প্যারালালি তিনটে বই পড়ছি। নীরাজ চোপড়ার বেড়ে ওঠা, স্পেসএক্সের শুরুর দিনগুলি আর সেলসম্যানের ডায়েরি। প্রস্তুতি নিচ্ছি আকবর আলী খানের আত্মজীবনী পড়ার। ঈদের ছুটিতে শেষ করার ইচ্ছে।
লিফটঅফ পড়ার সময় বোঝার চেষ্টা করছি এলন মাস্কের চিন্তার প্যাটার্ন। এই বিশ্বধনী মাত্র নয় বছর বয়সে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়ে ফেলেছিল। পড়তে দেখি বিল গেটসকে। পড়েন, রিভিউ করেন এবং সামার ও ক্রিসমাসে পড়ার সাজেশন দেন।
লিফটঅফ পড়ার সময় বোঝার চেষ্টা করছি এলন মাস্কের চিন্তার প্যাটার্ন। এই বিশ্বধনী মাত্র নয় বছর বয়সে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়ে ফেলেছিল। পড়তে দেখি বিল গেটসকে। পড়েন, রিভিউ করেন এবং সামার ও ক্রিসমাসে পড়ার সাজেশন দেন।
ব্যাপক পড়তেন আমাদের প্রিয় অভিভাবক জামিলুর রেজা স্যার। স্যারের দিন শুরু হতো প্রথম আলো’র সুডোকু মিলিয়ে। যখন আমরা বিজয়ীদের নম্বর ছাপাতাম তখন তিনি প্রায়শ জিততেন। সুডোকু কেমন করে মিলাতে হয় সেটা স্যারের কাছ থেকে শিখেছি। স্যারের দেওয়া ম্যাটেরিয়াল দিয়ে সুডোকু নিয়ে দুইটা বই লিখেছি। এখন অবশ্য পাওয়া যায় না দেখে দুইটা মিলে একটা ই-বুক প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্যার এর পর স্টারের ক্রসওয়ার্ড মেলাতেন। দুটো কাজই স্যার নিয়ম মেনে করতেন। ‘এতে করে সকালেই দুটো এচিভমেন্ট হতো যা দিনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করত।’
জাফর স্যারের বাসায় গেলে দেখা যায় স্যার কতো পড়েন। মতি ভাইয়ের বাসায় গেলে আমি একটা দুইটা বই মার্ক টোয়েনিং করার ধান্ধায় থাকি। যদিও চাইলেই মতি ভাই দিয়ে দেন।
তো, বই দিবসে ভাবছি কয়েকজনকে আমার বই পাঠাবো শুভেচ্ছা হিসেবে। কিন্তু সেই কয়েকজনকে কেমনে সিলেক্ট করব বুঝতে পারছি না। যা হোক দুপুর নাগাদ একটা বুদ্ধি নিশ্চয়ই হবে।
গণিত উৎসবে আমি ছেলেমেযেদর কাছে জানতে চাই মানুষের সঙ্গে কুত্তা বিলাই-এর পার্থক্য কী?
বাচ্চাদের উত্তর তো আমি জানি। দেখি আপনি কোন জায়গাটা জোর দেন।
গণিত উৎসবে আমি ছেলেমেযেদর কাছে জানতে চাই মানুষের সঙ্গে কুত্তা বিলাই-এর পার্থক্য কী?
বাচ্চাদের উত্তর তো আমি জানি। দেখি আপনি কোন জায়গাটা জোর দেন।
সবার জন্য বই দিবসের অফুরান শুভেচ্ছা।
বই কিনে তারপর পড়ুন।
মুনির হাসান : লেখক ও সংগঠক