ডং ডং – দ্বিতীয় পর্ব

ভারতের ‘ডি ডি ১’ চ্যানেলে চন্দ্রকান্তা সিরিয়ালে একজন কিম্ভূতকিমাকার ভ্রুওয়ালা চরিত্র ছিল। সেই ভ্রু কুঁচকানো চরিত্রের নাম ছিল‘ক্রুর শিং’ এবং উনি প্রায়শই বলতেন ‘ইয়াক্কু মেরা পিতাজি’। সেই ‘ক্রুর শিং’ এর সঙ্গে মিল রেখে নতুন চরিত্রের নাম হতে পারে ‘ক্রুশি’। এই ক্রুশি মশাই একটি চিপসের খোলসের ছবি আপলোড দিয়ে দিলেন চক্করে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল সেই ছবির উপর এবং তাদের আলোচনা কিছুটা নিন্মরুপ:
ক্রুশি: বাণিজ্যিক চিপসের খালি খোলসের ছবি আপলোডেড।
ফেস্কুয়া: এইডা কি দিলো রে, ক্রুশি? এইখান তো চিপসের ছবি। এইডা তি এইঠে কেনহে দিলো? মি তো বুঝা পানুনি।
গামলা: তুমহার তো খায় দায় কাম নাই, এলা চিপসের খোলসের ছবি তুলহে বেড়াছেন। তুমহাক দে হেনে, কিচ্ছু হবে নি। তুমহ্রা তামানলায় জাই গেইছেন।
হামলা: এতো কিছুর ছবি রহিতে, উমহ্রা এলা চিপসের ছবি দে বেড়াছে। তি যদি, তোর ছুয়াডার ছবিডাও দিলোহে, তাহো না হয় বুঝিনুহে এইডা তোর ছুয়া। এলা মুই কি বুঝিম?
চাটু: মোর ছুয়াডা তো কাইলহে এই চিপস খাইল। হামার বাড়ির সামনের দোকানতে মি আনহে দিনু।
হাকাউ: তুমহ্রা গ্রুপত রহচেন, কিন্তু তুমহার মন এইঠে নাই। কেহ দেখিলেন নি, এই চিপসের নাম কি?
পেলুদা: এ, মুই দেখিচু রে, এই চিপসের নাম ‘ডং ডং’। এইডা ফের কুন‘ডং ডং’ রে, ক্রুশি?
ক্রুশি: এইডায় যদি তুমহ্রা বুঝা না পায়েন, তেহিলে কেংকে হবে?
তর্করত্ন: মি খালি তুমহারলার আলাপলায় দেখেচিনু, তুমহার কাহারো মাথাত কিচ্ছু নাই। মোর একটা প্রস্তাব আছে, মুই কহিবা চাহাচু।
পেলুদা: তুই কি কহিবা চাহাচি, কহ। এইঠে কেহ কাহারো ভুল ধরিবেনি রে, মি এলহে পিয়াইজ দে হেনে পান্তা ভাত খায় অসিনু।
গামলা: এই তর্ক, তি ফের কুন ফন্দি আঁটিলো রে? তি কিছু কহিবা চাহিলে মুই আতংকত পঢ়ে যাছু। ফের দে কি প্রস্তাব দিবো, শ্যালা সবাই মিলে ‘ডোং ডোং’ হয় যামহ।
হামলা: মি কহচু কি, তর্ক, তি সাতদিন পর তোর প্রস্তাব দিস। আগুত নিজে নিজে ভাবেক, বিবেচনা কঢ়েক, তারপর হামাক এইঠে অসে কহিস। এইডায় ভালো হবে। নেহিলে ফের সবাখে অপেক্ষা কঢ়িবা লাগিবে আষাঢ় মাস পইরযন্ত।
হামলা: মি কহচু কি, তর্ক, তি সাতদিন পর তোর প্রস্তাব দিস। আগুত নিজে নিজে ভাবেক, বিবেচনা কঢ়েক, তারপর হামাক এইঠে অসে কহিস। এইডায় ভালো হবে। নেহিলে ফের সবাখে অপেক্ষা কঢ়িবা লাগিবে আষাঢ় মাস পইরযন্ত।
হাকাউ: ওয়া আষাঢ়ে গল্প কহিবে তো, কোহক না। ওয়াক কহিবা নি দিলে, ফের বাহারত যায় হেনে কি তে কি কহিবা শুরু কঢ়ে, সেইডার কি ঠিক আছে রে?
গামলা: আমি সেই টক্করে যাওয়ার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারিনি। সেই নস্টের গোড়া ছিলো আমাদের সবচেয়ে আবেগীওজ্ঞানী বন্ধু, তর্করত্ন। আমি আর দ্বিতীয় ভুল করতে চাই না।
পেলুদা: হামরা পুরাতন ব্যাপার লে হেনে পড়ে রহিলে হবে? নতুন কিছু ভাবিবা হবে। তাছাড়া ‘টক্কর’ যাত্রা ছিল একটা শিক্ষণীয় ব্যাপার এবং চক্করের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ওইঠেতে শুরু হইচিল। জীবনে অভিজ্ঞতা খুবে জরুরী। এই তর্ক, তি কি কহিবো, কহেক রে।
তর্ক: মি কহচিনু কি, হামার কিছু একটা কঢ়িবা হবে। এইলা আউল ফাউল সেরায় কুনহ লাভ নাই।
হামলা: তুই আবার শুরু করলি এসব। এই ছেলে কবে ঠিক হবে?
গামলা: বন্ধু তর্ক, তোমার কথা কিংবা প্রস্তাব শুনতে আমাদের কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু অযৌক্তিক এবং পরিকল্পনাবিহীন কোনো কিছু না বলাই ভালো হবে।
চাটু: মুই বুঝা পাইছু, তর্ক কি কহিবা চাহাচে।
হাকাউ: তি কি বুঝা পালো রে?
চাটু: মুই কহিম নি। অহে কহোক, ওয়ার মাথাত কিদে ঘুরেচে।
পেলুদা: এই তর্ক, তি কহিবা পারিস না। সবাখে কেনহে অপেক্ষাত রাখেচি? হামরা তো জানি, তি কুনহ নতুন প্রস্তাব নি কঢ়া পর্যন্ত শান্তি পাবোনি। কহে ফিলা।
তর্ক: হামার এলাকাত অনেক ময়লা আবর্জনা, পরিষ্কার কঢ়িবার কেহ নাই। হামাক এইলার দায়িত্ব লিবা হবে। একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান শুরু কঢ়িলে কেরং হয়?
গামলা: যা ভেবেছিলাম, তাই হলো। আবার নতুন প্রস্তাব, নতুন ঝামেলা, নতুন সমস্যা। তোর কি খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই, শুধু এসব সামাজিক জঞ্জাল মাথায় ঘুরে?
হামলা: আমি আগেই বলেছি, এখনো বলছি, তর্কের কোনো পরিকল্পনানেই। ওর আইডিয়ার পেছনে ছুটলে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো চলে যেতে পারি ‘অ্যান্টিডোট প্রয়োগ কেন্দ্রে’।
ক্রুশি: মোর মনে হচে, আইডিয়াডা ভালোয় হবে। আর এইলা শ্যালা কে সামলিবে রে?
পেলুদা: হামরা ওয়ারঠে ওয়ার প্লানডা আগুত শুনি। তোর ফের প্লান আছে না নাই রে, তর্ক?
তর্ক: প্লান আমার আছে। তোরা শুধু সূরে সূর মিলা। কোনো চাপ নেয়ার দরকার নাই।
ক্রুশি: তোর পরিকল্পনাডা কহে ফিলা না রে। তোর কাম মানে হামার কাজ!
হাকাউ: মোর মাথাত একটা বুদ্ধি অইচ্চে, চল হামরা চিপসের খালি খোলস ছাপে লিক্লায় হেনে, ওইলায় পরিষ্কার কঢ়ি।
তর্ক: তি তো মোর ভিতরা কাথালা তামান বুঝা পাছি রে। এইডাকে না কহে, পাঁঠার দুধের চা খাওয়া পার্টনার।
ক্রুশি: মি কহচু কি। চিপসের খালি খোললা যদি ছাপিবায় লাগে, তেহিলে হামরা ‘ডং ডং’ চিপসের খোললা পরিষ্কার কঢ়িবা পারি।
আলোচনায় কোনো ধরণের সিদ্ধান্তে আসা গেল না, চক্কর পরে রইল নীরব। প্রতিদিন বৃষ্টি হয় চক্করে এবং বানের পানিতে চক্কর পরিণত হল‘সেনিহারী পুকুরের’ সমতুল্য একটি চৌকায়। হাবু ডুবু খাচ্ছেন অনেকেই এবং গামলা সাহেব চণ্ডীদাসের মতো বড়শি নিয়ে বসে আছেন ‘চ্যাং’ মাছ ধরার অপেক্ষায়। কোনো চ্যাং মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া যাবেই বা কিভাবে? চাটুর আফ্রিকান মাগুর মাছ তো সব ছোটো মাছ খেয়ে ফেলেছে, কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি গামলার জন্য।
ইতিমধ্যে, টাকার বস্তা ওয়ালা ঢাকা প্রবাসীদের মনের ভেতরে খুঁজে পাওয়া গেলো এক বহমান ক্রোধের ঝড় এবং সেই ঝড়ের ব্যাপার টের পেয়ে গেলেন সর্বদা হাঁসি খুশিতে ভরা ব্যক্তি, পেলুদা। টাকার বস্তা ওয়ালারা (সংক্ষেপে ‘টাবলা’) এক মিটিং এ মিলিত হলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। উনারা ঠিক করলেন যে, ‘ডোং ডোং ১’ এর প্রকাশিত সবগুলো কপি একসঙ্গে কিনে পুড়ে ফেলা হবে ‘আনলিডেড-৯১’পেট্রোল দ্বারা। সবাই এই ব্যাপারে একমত এবং আন্তরিকতা একশ ভাগ। সর্বমোট বাজেট ঠিক করা হলো এক লক্ষ টাকা। সবাই মিলে এই ব্যাপারে পেলুদার মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন এবং যথারীতি সবকিছু জানানো হলো পেলুদাকে। পেলুদা তার মতামত লিখে দিলেন সবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে এবং পেলুদার চিঠিটি নিম্নরূপ:
প্রিয় বন্ধুরা,
তোদের সকলের সঙ্গে কথা বলে আমার মনের ভেতরটা আজ বড়ই উচ্ছলিত। তোদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমি একশ ভাগ অবগত রয়েছি। কিন্তু বই কিনে পুড়ে ফেলাটা হতে পারে একটি বড় রকমের বোকামি। তাছাড়া, সব বই বাজারে পাওয়া যাবে না। কিছু বই লেখক এবং প্রকাশনী সৌজন্য কপি হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করে রাখে, যার মধ্যে ‘বাংলা একাডেমি’ অন্যতম। তাই আমরা চাইলেও, সব বই ধ্বংস করতে পারবো না। তাছাড়া, বেশি বইবিক্রি হয়ে গেলে, প্রকাশনী আরো বই পাবলিশ করতে পারে বাণিজ্যিক ভাবনার বশবর্তী হয়ে এবং সেটা হতে পারে আরও বেশি ভয়ানক। এর চেয়ে বরং অন্য কিছু করা যায় কি না, সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ‘চক্কর’ই হতে পারে এই আলোচনার সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত স্থান। তোরা ভেবে দেখিস।
ইতি
তোদের সকলের প্রাণের পেলু
পেলুদা মোড়, ফকদমপুর।
পেলুদার ফেসবুক চিঠি পেয়ে, বন্ধুদের অনেকেই মাপা শুরু করে দিলেন পেলুদার বুদ্ধিরমত্তার গভীরতা এবং তারা সকলেই পেলুদার এই জ্ঞানগর্ভ অভিমতে বিমোহিত। ইতিমধ্যে পেলুদার দেয়া মতামত তর্করত্নের গোচরে এলো এবং তর্করত্ন সকলের উদ্দেশ্যে একটি ফেসবুক চিঠি লিখে পাঠালেন। পত্রের ভাষা নিম্নরুপ:
প্রিয় বন্ধুরা,
পেলুর চিঠি থেকে শুরু করে সবকিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং তোরা কেউ আমার মতামত না নেয়াতে, আমি আজ বড়ই মর্মাহত। তোরা আমাকে যতই কষ্ট দিস না কেন, আমি জানি আমি কে এবং কি আমার যোগ্যতা। যাই হোক, মোদ্দা কথা হলো, তোরা শুধু শুধু এতগুলো টাকা নষ্ট করিস না। এর চেয়ে বরং, এই এক লক্ষ টাকা আমরা এলাকার আবর্জনা পরিস্কারের কাজে ব্যয় করতে পারি এবং সেটা হতে পারে সমাজের জন্য এক মহৎ কাজ। তোরা ভেবে দেখ। আমি জানি তোদের মন কি চায়। আমার ভাবনায়, তোদের মনের পরিতৃপ্তির বিষয়াদি ব্যাপক জায়গা দখল করে রয়েছে। সবাই ভালো থাকিস। আর কল দিলে, ফোন ধরিস। মনে রাখতে হবে, চক্কর চলছে ‘কল দিস’ পলিসিতে।
ইতি
তোদের তর্করত্ন
গুচ্ছ গ্রাম, হরিহরপুর।
পড়ুন : প্রথম পর্ব
বি.দ্র ডং ডং প্রকাশিত হবে প্রত্যেক শুক্রবার। চোখ রাখুন boicharita.com এ।