কত?

আঁকা: আরাফাত করিম
কোরবানি ঈদ এলেই গরু ছাগলের জন্য ছোটাছুটির বা গরু ছাগল নিয়ে ছোটাছুটির পাশাপাশি শহরময় যে প্রশ্নটিকেও ছুটতে দেখি সেটি হল ‘কত’। “ভাই, গরুটার দাম কত হল”? “কত নিল”? “নিল কত”? “কততে হল”? “গরুর দাম কত”? একটি পশুর দাম কত তা যে আমরা কতশতভাবে জানতে চাই তা বলে শেষ করা যাবে না।
তবে একটা সময় ছিল যখন কোরবানির পশু কেনার পর আমাকে খুব বেশি ‘কত’ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত না। কারণ সব সময়েই আমাদের কোরবানীর পশুটি ছিল একটি ছাগল। চারপাশের শিং বাঁকানো, লেজ নাড়ানো, কুঁজ উচানো এবং আরও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ গরুর জন্য ছুটতে থাকা ‘কত’ প্রশ্নের ভীড়ে স্রেফ কাঁঠালপাতা চিবানো একটি ছাগলের ভাগে ‘কত’ প্রশ্নটির কতটুকুই বা বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এখন দিন বদলাচ্ছে। ছাগল কিনে আনার সময় চারদিকের মানুষ চোখ গোল গোল করে নানা পরিস্থিতিতে ‘কত’ প্রশ্নটি করার সামর্থ্য দেখায়।
যেমন স্বামী তাকিয়ে ছিল আরেক মহিলার দিকে আর পাশেই থাকা তার স্ত্রী তাতে গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল ছাগল কত। বাচ্চা কোল থেকে নেমে গরুর গোবরের ভেতরে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। গোবরমাখা শিশুকে কোলে তুলে নিতে নিতেও শিশুর বাবা প্রশ্ন রেখেছিল ছাগল কত নিল। এক চাচার লুঙ্গি খুলে যাচ্ছিল, লুঙ্গি এক হাতে ধরে রেখে আরেক হাতে ছাগলটিকে ইঙ্গিত করে বলেছিল ‘কত’? খাবার হোটেলের সামনে দিয়ে ছাগল নিয়ে আসার সময় ভেতরে বসে খেতে থাকা এক ভদ্রলোক মুখভর্তি খাবার নিয়ে কোনো মতে উচ্চারণ করেছিলেন ‘ক’। খাবার হোটেল অতিক্রম করতে করতেই খেয়াল হল তিনি মুখের খাবার দ্রুত গিলে ‘ত’ উচ্চারণের মাধ্যমে ‘কত’ প্রশ্নটি সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘কত’ প্রশ্নটিকে আমি বিজ্ঞানভিত্তিকভাবেও দেখার চেষ্টা করেছি।
আমার পর্যবেক্ষন অনুযায়ী ‘কত’ প্রশ্নটি আপনি কতবার শুনবেন তা আপনার বাসা হতে পশুর হাটের দূরত্বের সমানুপাতিক এবং একই সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক। সমানুপাতিক বলতে বোঝাচ্ছি পশুর হাট থেকে বাসায় আসার সময় যত বাড়বে ‘কত’ প্রশ্নটি শোনার পরিমাণও তত বাড়বে। ব্যস্তানুপাতিক বলতে বোঝাতে চাচ্ছি আপনি এই ‘কত’ প্রশ্নের উত্তর দিতে এতই ব্যস্ত থাকবেন যে আপনার হাতে থাকা রশিতে বাঁধা পশুটি আছে নাকি রশি ছিড়ে বা রশি নিয়ে চলে গিয়েছে তা খেয়াল নাও থাকতে পারে। একবার যেটা হল আমাদের এলাকায় ছাগলের খাদ্য কাঁঠালপাতার ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিল।
সেদিন আমাদের ছাগল কেনা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ছাগলের কাঁঠালপাতা নেই। রাস্তায় এক লোককে দেখলাম তার ছাগলকে কাঁঠালপাতা খাওয়াচ্ছে। গিয়ে কথা বলতে শুরু করি।
“কোথা থেকে কিনলেন”? জিজ্ঞেস করলাম।
“হাট থেইকাই”। উত্তর এল।
“দাম কত”? কাঠালপাতা দেখিয়ে প্রশ্ন করলাম।
“দশ হাজার”। “কাঁঠালপাতার দাম দশ হাজার”!!!
“কাঁঠালপাতার দাম জিগাইছিলেন নাকি? আমি তো ছাগলের দাম কইছি। কাঁঠালপাতা ২০ টাকা”।
অবশেষে অনেকদূর খুঁজে কাঁঠাল পাতা পেলাম। কাঁঠালপাতা নিয়ে এলাকায় প্রবেশের বাসার দিকে যাবার পথে এক প্যাকেট পাউরুটিও কিনেছিলাম। পথে আমাকে দেখে এলাকার এক পরিচিত লোক জিজ্ঞেস করলো, “আরে ভাই, আপনার হাতে এইসব কি”?
সারাদিন ‘কত’ ‘কত’ প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমার আর ‘কি’ প্রশ্নের উত্তর দেবার অবস্থা ছিল না।
লোকটিকে পাউরুটি দেখিয়ে বললাম “এইটা ছাগলকে খাওয়াবো, ছাগল ক্ষুধার্ত”, তারপর কাঁঠালপাতা দেখিয়ে বললাম “এইটা আমি খাব, আমিও ক্ষুধার্ত”।