রবীন্দ্র ভাবনায় বিজ্ঞান

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, গল্পকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী এবং সর্বোপরি দার্শনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক এক বর্ণাঢ্য জীবনশিল্পী। মূলত কবি হিসেবে সমাদৃত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ৮ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি কাহিনী’। ১৯১০ সালে রচনা করেন ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ। গীতাঞ্জলি ইংরেজি ভাষায় ১৯১২ সালে অনুবাদ করে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এশিয়া মহাদেশের প্রথম নোবেলজয়ী কবি হিসেবে তিনি চিহ্নিত হন। বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষ এই দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের রচনা করেন তিনি।
১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। এখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালে একটি আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটি ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯০১ সালে আশ্রমের আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন ‘ব্রহ্মবিদ্যালয়’ বা ‘ব্রহ্মচর্যাশ্র’ নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান। এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা,১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।
১৯২১ সালে গ্রামোউন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘শ্রীনিকেতন’। ১৯২৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে তিনি পৈতৃক সম্পত্তি দেখাশুনা ও জমিদারি তদারকি শুরু করেন। ১৮৭৮ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে ৫টি মহাদেশের ৩০ টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি।
১৯ শতকের কলকাতায় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিজ্ঞান চর্চা ও প্রসারে জোঁড়াসাকো ঠাকুরবাড়ির ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সমাজ সংস্কারক প্রিন্স দ্বারাকানাথ ঠাকুর চিকিৎসার উন্নতিকল্পে চিকিৎসা শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা, এমন কী চিকিৎসাশাস্ত্রে শবব্যবচ্ছেদ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দ্বারাকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্যোর্তিবিদ্যা, ভূতত্ব, নৃতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব এসব বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী ও পারদর্শী ছিলেন।

দেবেন্দ্রনাথের পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিতশাস্ত্রের এক বিস্ময়কর প্রতিভা ছিলেন। ইউক্লীডের জ্যামিতি ছিলো তাঁর প্রিয় বিষয়। দেবেন্দ্রনাথের আর এক পুত্র হেমেন্দ্রনাথ ও এক কন্যা স্বর্ণকুমারী দেবী লেখেন বিজ্ঞানবিষয়ক বই ও প্রবন্ধ। ঠাকুর পরিবারের বধু নরেন্দ্রবালাও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন, তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান লেখিকা, মূলত, ছোটদের জন্য তার এই সকল রচনা, ঠাকুর বাড়ির বিজ্ঞান সচেতন আবহাওয়া, পিতা দেবন্দ্রনাথের নিকট মহাকাশ ও নক্ষত্রমণ্ডলীর পাঠ এবং শিক্ষক সতীনাথ দত্ত মহাশয়ের তত্ত্বাবধায়নে রবীন্দ্রনাথের কৈশোর প্রস্ফুটিত হয় বিজ্ঞানের আলোকে। প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে বিজ্ঞানের নিগূঢ় সম্পর্ক এবং অচ্ছেদ্য মেল বন্ধন ধরা দেয় রবীন্দ্রনাথের অনুভবে। বিজ্ঞান চেতনার উল্লেখযোগ্য দিকটি জীবন ও পরিবেশের সচেতনা হয়ে উঠল তাঁর সহজাত। আজ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার তাগিদে নানাবিধ আইন প্রনয়ণ, জীবকুলের বৈচিত্র্য রক্ষায় আকুল প্রচেষ্টা, বৃক্ষনিধনের ফলে বন্যা,খরা,বিশ্বউষ্ণায়ন,মুক্তি বায়ু শুদ্ধ জল,মাটির সঙ্কট। ১৯৪৭ সালে চৈতালি কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ বিকৃত করলেন বিশ্বায়নের সঙ্কট, তাঁর সভ্যতার প্রতি কবিতায় ধ্বনিত হলো আধুনিককালের হিউম্যান ইকোলজি–
‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান,
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান,
নীবারধান্যের মুষ্টি, বল্কলবসন,
মগ্ন হয়ে আত্মমাঝে নিত্য আলোচন
মহাতত্ত্বগুলি। পাষাণপিঞ্জরে তব
নাহি চাহি নিরাপদে রাজভোগ নব–
চাই স্বাধীনতা, চাই পক্ষের বিস্তার,
বক্ষে ফিরে পেতে চাই শক্তি আপনার,
পরানে স্পর্শিতে চাই ছিঁড়িয়া বন্ধন
অনন্ত এ জগতের হৃদয়স্পন্দন।’
কবিগুরুর কবিতায় বারংবার ধ্বনিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক চেতনার উজ্জ্বল্য প্রভাত সঙ্গীত, ‘সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়’,‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ অথবা মানসী কাব্যগ্রন্থের ‘স্নিগ্ধতরঙ্গ’ কবিতা-ধ্বনিত হয়েছে বিজ্ঞানের রূপকথা।
বয়স মাত্র সাড়ে বারো বছর-রবীন্দ্রনাথ একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ ‘গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি’ লিখলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়। লেখাটি আস্বাক্ষরিত ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কিশোর বয়সে এই রচনাটি উল্লেখ করেন। গ্রহ-নক্ষত্র ও সৌরজগত সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ এবং আকর্ষণ এই প্রবন্ধে ফুটে উঠে।
১৮২৫ সালে ‘সামুদ্রিক জীব’ নামে লেখেন আর একটি প্রবন্ধ। ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীবের দৈহিক গঠনের বর্ণনা এবং উদ্ভিদ ও শৈবালের পার্থক্য বর্ণনা করে তিনি লিখেছেন – ‘কোনোখানে উদ্ভিদ শ্রেণি শেষ হইল ও জীবশ্রেণির আরম্ভ হইল, তাহা ঠিক নিরুপণ করা অতিশয় কঠিন’। প্রাণীতত্ত্বের সুগৃঢ় রহস্য তিনি ব্যক্ত করেছেন সহজ এক বর্ণনায়।
জীবনের শেষপ্রান্তে ৭৬ বছর বয়সে লিখলেন ‘বিশ্ব পরিচয়’। বিজ্ঞানভিত্তিক এই বইটি তিনি উৎসর্গ করলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে, এতে বিজ্ঞানীর প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। ব্যক্তিগত পরিচয়ে প্রফুল্ল রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রশান্ত মহলানবিশ প্রমুখ ছিলেন তাঁর বন্ধু। তাঁর সাহিত্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন বিজ্ঞান তাপসের চরিত্র। তাঁর ল্যাবরেটরি গল্পে তিনি বিজ্ঞানির চরিত্রকে আখ্যা দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হিসেবে।

বিশ্ব পরিচয়ের উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছেন ‘আমি বিজ্ঞানের সাধক নই,সে কথা বলা বাহুল্য, কিন্তু বাল্যকাল থেকে বিজ্ঞানের রস আস্বাদনের আমার লোভের আন্ত ছিল না।’ জ্যোর্তিবিজ্ঞান এবং প্রাণীতত্ত্ব, এই দুই বিষয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহের পাশাপাশি কৃষিবিজ্ঞান,পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান,ও বিবর্তনবাদে তাঁর ভাবনা তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ব পরিচয় বইটি পরমাণুলোক, নক্ষত্রলোক, সৌরজগত, গ্রহলোক এবং সংক্ষিপ্ত উপসংহার দ্বারা বিভক্ত। প্রথম সংস্করণে পঞ্চম অধ্যায়টির নাম ছিলো ‘পৃথিবী’, দ্বিতীয় সংস্করণে অধ্যায়টির নাম পরিবর্তন করে রাখলেন ‘ভুলোক’। বিজ্ঞানের সর্বশেষ তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই লেখাকালীন রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন বই পড়েছেন, সংগ্রহ করেছেন, বিলেত থেকে বই এনেছেন এবং বই আনার জন্য তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। বৈজ্ঞানিক তথ্য যথাযথ প্রয়োগ এবং বিবৃত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গবেষকদের সহায়তা গ্রহণ করেছেন। বিশ্বপরিচয় বইটি প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পরে পঞ্চম সংস্করণ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে সংশোধন করেছেন। যাঁরা বই বিষয়ে সহায়তা করেছেন তাদের জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা।
সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার ছাঁচ গড়ে দেবার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথের দক্ষতা পরমাণুলোকের অভ্যন্তরের চিত্র, নক্ষত্রের বিশালতা, মাদাম কুরির তেজস্ক্রিয় পদার্থের আবিষ্কারের বর্ণনা, দূরবীনের আবিষ্কার, ফটোগ্রাফিক প্রভৃতি বিজ্ঞানের গভীর বিষয়গুলো কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার প্রয়োজন ও প্রসারে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা সমাজ গঠনে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে। সর্বাঙ্গীন শিক্ষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের প্রয়োজন অনুভব করেছেন। তাঁর মতে বুদ্ধিকে মোহ মুক্ত ও সর্তক করবার জন্য প্রধান প্রয়োজন বিজ্ঞান চর্চার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাঠামোর বাইরেও বিজ্ঞানচর্চার প্রয়োজন অনুভব করতেন তিনি। মনের স্বাভাবিক কৌতুহল এবং বিভিন্ন বিষয় জানার আগ্রহকে আনন্দের স্তরে উন্নতি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার আগ্রহ ছিলো তাঁর। বিশ্বপরিচয় গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি কৈশোরের বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগের কথা বর্ণনা করেছেন। সীতানাথ দত্ত মহাশয়ের কাছে পরীক্ষালব্ধ ফল দ্বারা বিজ্ঞানের তত্ত্বের এবং পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নিকট গ্রহ নক্ষত্রের পরিচয়, কক্ষপথে তাদের অবস্থান প্রভৃতি তাঁকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই অভিজ্ঞতাতেই তিনি তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক প্রথম প্রবন্ধটি রচনা করেন। তরুণ বয়সেই রবীন্দ্রনাথ পড়লেন স্যার রবার্ট বল, নিউকোম্বস, ফ্লামরিয় প্রভৃতি লেখকের জ্যোর্তিবিজ্ঞান বিষয়ক বই এবং ‘প্রাণতত্ত্ব’ বিষয়ে হকিস্লর প্রবন্ধমালা। তাঁর এই বিজ্ঞান যাত্রার পথকে তিনি বর্ণনা করেছেন – ‘ক্রমাগত পড়তে পড়তে মনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক একটা মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। অন্ধবিশ্বাসের মৃঢতার প্রান্ত অশ্রদ্ধয় আমাকে বুদ্ধি উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে আশা করি অনেক পরিমাণে রক্ষা করেছে। অথচ প্রবন্ধের এলাকায় কল্পনা মহলে বিশেষ যে লোকসান ঘটিয়েছে তা অনুভব করি না।
বিজ্ঞান বোধের উজ্জ্বল পরিক্রমা লক্ষিত হয়েছে রবীন্দ্র রচনায়। ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্ব ভরা প্রাণ’- বিশ্ব প্রকৃতির উদ্ভব ও উপস্থিতি তাঁর মনন এবং কল্পনাকে সঙ্গী করে সৃষ্টি করেছে বিস্ময়। ‘বিস্ময়ে তাই জাগে, জাগে আমার গান’- এ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির মাধুর্য। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,‘যখন আমাদের মহাবিশ্ব মানুষের সাথে ঐক্যতানে বিরাজ করে তখন শ্বাশত, যাকে আমরা সত্য বলে জানি, হয়ে দাঁড়ায় সৌন্দর্য, আমাদের অনুভূতিতে৷ এছাড়া অন্য কোন ধারণা থাকতে পারে না। এই জগৎ বস্তুত মানবীয় জগৎ। এই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিও হলো বিজ্ঞানী মানুষের দৃষ্টি। সুতরাং আমাদের ছাড়া বিশ্বজগতের অস্তিত্ব নেই। এটি হলো আপেক্ষিক জগত, যার বাস্তবতা আমাদের চেতনার উপর নির্ভরশীল। এই ব্যঞ্জনা দার্শনিকতার সাথে বিজ্ঞানের মেলবন্ধনের।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দেশের উন্নতিকল্পে ও শান্তির লক্ষ্যে ব্যবহার করার জন্য রবীন্দ্রনাথ বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। প্রয়োগের তারতম্যে বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক দিকটিকে তিনি বিশেষভাবে সতর্ক করেছিলেন। তাঁর মতে, ‘যন্ত্রকে থামিয়ে দিয়ে কোন লাভ হবে না, থামাতে হবে লোক, আর শুধু ধর্ম উপদেশ দিলে হবে না, তার সঙ্গে চাই বিজ্ঞানের যোগ। যে সাধনায় লোভকে ভেতরের দিক থেকে দমন করে সে সাধনা ধর্মের, কিন্তু যে সাধনায় লোভের কারণকে বাইরের দিক থেকে দূর করে সে সাধনা বিজ্ঞানের। দুইয়ের সম্মেলনে সাধনা সিদ্ধ হয়৷ বিজ্ঞান বুদ্ধির সাথে ধর্মবুদ্ধি আজ মিলনের অপেক্ষায় আছে।’
পারিবারিক পরিসরে বিজ্ঞানকে প্রসারিত করার লক্ষ্য তাঁর বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথকে কৃষিচর্চায় উৎসাহিত করেন রবীন্দ্রনাথ। উন্নত কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করেন ছেলেকে। শান্তিনিকেতনে পল্লীমঙ্গলের স্থাপনা, দেশজ প্রযুক্তির গুরুত্ব প্রদান এবং বিশ্বের আধুনিকতম আবিষ্কার সকলই ছিল তাঁর পরম আগ্রহের। কৃষি প্রধান এবং কৃষি নির্ভর বাংলাতে কৃষির বিকাশ ঘটানোর জন্য তাঁর আয়োজন ছিল বিবিধ। আধুনিক ধ্যান-ধারণা, প্রযুক্তি, জনবল এবং সার্বজনীন কর্মশক্তিকে অপরিহার্য করে। শুধু চিন্তায় নয়, সৃজন এবং ব্যবহারিক জীবনেও বিজ্ঞান নির্ভর কর্মযোগকে আমন্ত্রণ জানানো দার্শনিক চিন্তায় উদ্ধুদ্ধ, বিজ্ঞান চেতনায় সম্পৃক্ত এক মহাশক্তি। সাহিত্য, কাজ এবং বিজ্ঞান যথার্থ অর্থেই যে একে অপরের পরিপূরক, রবীন্দ্রনাথ তা প্রমাণ করলেন। রবীন্দ্রনাথের অনন্য কীর্তিতে, বিজ্ঞানের চেতনায়, সঙ্গীতের মূর্ছনায়, দার্শনিকতার ব্যাপ্তিতে ধ্বনিত হল মানবতার জয়গান।
মিতালী সরকার, অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত