মনসুর মনু’র কবিতা

সময়
কী এমন ভালোবাসা
পৃথিবীতে তাই আসা!
বহমান সময় মানুষের পাওয়া
যেথা হতে শুরু— আদম আর হাওয়া।
নিরন্তর কোনো ঠায়
সময় বহিয়া যায়
প্রকৃতি ও প্রাণে লাগে দোলা
আকাশে বাতাসে মুক্ত ভেলা
সময়ের ব্যবধানে ভাঙাগড়া এ সভ্যতা
আছে কত অজানা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বারতা।
হেলাফেলায় চলে যায় সময়, যত্রতত্র
ভবেতে হয় না জানা ঐ চন্দ্র-সূর্য-নক্ষত্র।
ছিন্ন হলে সময়ের বাঁধন
আর কি হবে অরূপ সাধন!
কখন যে কার শেষ হবে সময়
জানে না কেউ, জানে শুধু দয়াময় ।।
মায়ের স্মৃতি
সেই কবে—গ্রাম ছেড়ে বাসা বেঁধেছি শহরে,
ছোট বেলায় মাকে হারিয়ে অপরাহ্ণের এক প্রহরে।
বেদনা বিধূর স্মৃতি নিয়ে আজও আছি বেঁচে,
সারা শহর ঘুরে তাঁকেই খুঁজি যেন নেচে।
কোথায় পাব তারে! সেই মর্ম মোর অন্তরে
যার চরণ তলে সতত বেহেশত খেলা করে।
তন্ময়-ধ্যানে মগ্ন যখন সকল বন্ধন করি ছিন্ন,
তবুও আমার মাকে পড়ে মনে, খুবই সামান্য।
সাদা কাপড়ে জড়ানো মায়ের দেহ রেখে কবরে
বাবা বলেন, তোমার মা গিয়েছেন বেড়াতে চাঁদে।
আমি জানি—মা আছে লুকোচুরি করে খেলাঘরে!
এই আমি আজ কাঁদি গুমরে গুমরে নিনাদে ।।
প্রতীতি
মানুষের তরে সৃজন বায়ু, মাটি ও জল
সৃষ্টির মহিমা অপার, রহস্য যে অতল।
কত নদী-সাগর, পাহাড়-প্রান্তর, চন্দ্রিমা
অজস্র প্রাণ, ফুলে ও ফলে শস্য শ্যামলিমা।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যেন পরম্পরা,
বর্ণে গোত্রে বিভাজিত চলিষ্ণু এ বসুন্ধরা।
জীবনচক্রে জন্ম-মৃত্যু, অবধারিত জানা,
যুগে যুগে তবু মহামারি কেন দেয় হানা!
ধনী-গরীব, নেই কারো কৃপা কুণ্ঠাবিহীন,
স্রষ্টার কাছে আছে লেখা কত অজানা ঋণ!
হে প্রভু দাও দীক্ষা, ক্ষমা ভিক্ষা, ভেঙে অমিল
করো পরিত্রাণ, কেটে যাক মৃত্যুর মিছিল ।।
অন্তরীক্ষ শূন্য
যত দূরে যাই, যেদিকে তাকাই
হিংসা-ক্ষোভ-লোভ, গুম আর খুন
ঈর্ষার আগুন
একাকার, জ্বলে পুড়ে ছাই।
অসহায় কত ফরিয়াদি কাঁদে করুণ
বিচার চেয়ে আহা নিদারুণ!
অন্ধ যত মোহ ক্ষমতা, আর যার
দেশ-দেশান্তরে সম্পদের পাহাড়
বোঝে কি সে পাপপুণ্য!
সাধের এই জীবন, চিরন্তন
যথা নিষ্প্রাণ, দেহ ক্ষয়
বোধে বা নিগ্রহে যা অর্জন
ধরণীর বুকে সঞ্চয় –
সবই তা নিষ্ফলা অন্তরীক্ষ শূন্য ।।