মাহফুজ রিপনের একগুচ্ছ কবিতা

জীবনানন্দের পঁচানব্বই
আকাশ পোড়া ছাই সাদা মেঘেতে লুকাই―
তুলতুলে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে সবুজ।
মেঘ জমেছে বারান্দায়, একবার মিলিয়ে নাও
উপেক্ষিত বঞ্চনা ও ব্যথা উপশমের দোহার।
জলডুঙ্গির জল ফের জলসিঁড়িতে মেলায়
যন্ত্রণায় হারিয়েছে ওজন চোখের জলের।
পঁচানব্বই ভাগ মিশে আছেন কবি
বাংলার নদী মাঠ ভালোবেসে―
হাতের পাঁচ পড়ে আছে―
অন্ধকারে লাশ কাটা ঘরে।
ব্ল্যাক মিউজিক
আয়নার ওপারে উল্টো জনপদ সামনে নদিয়া
মৃত্যু খেলায় মাটির শরীর― পচে গলে জৈব।
রোজ ইমেজটা চুরি হতে থাকে বৈকুণ্ঠ বাতাসে
মলম পার্টির খপ্পরে— বেড়েছে চোখের জ্যোতি।
সামস্ত দিন প্রোপাগান্ডায় ব্যস্ত তোমার করোটি
কী আশায় ফলবে বলো সবুজ তরি-তরকারি?
যদি সোনার ফসল চাও সংশকপ্ত বাগানের
একলব্য ধ্যানে ভেসে যাও নদিয়ার বুকে।
ট্রাভেল সংগীত
আমি যখন বৃক্ষের গর্ভে জন্ম নিলাম, চাঁদ আমাকে চুমু খেয়ে কপালের ঠিক ডান দিকে স্থান করে নিল। যাতে কারো নজর না লাগে। জন্ম মাত্র আমি যেন
বাঁশের মত বেড়ে উঠছি। আমার কাজ শুধু দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো। নদী―
সমুদ্র পাড়ি দিতে লঞ্চ ইস্টিমার কিংবা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কোন সেতুর প্রয়োজন হয় না। ইদানিং সফর সঙ্গী গালিভারও আমার উ””তাকে ভয়
পায়। আমি ওকে বললাম ভয় নেই মারবো না।
ও সঙ্গে সঙ্গে দুটি গাছ তুলে নিয়ে কৃষ্ণকাঠি বানিয়ে বাউলের মতো
বাজাতে বাজাতে গাইতে শুরু করলো। ট্রাভেল সংগীতে ঘন হয়ে উঠল আকাশ।
আমি সুর সাগরে ডুব দিয়ে স্নান সারলাম। সুরের জলে ভেজা শরীর,
সবুজ নকশীকাঁথা দিয়ে মুছে নিলাম। হঠাৎ আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি
একটি তারা মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে।
তারাটিকে হাত দিয়ে পেড়ে এনে চলন্ত আন্তনগর ট্রেনের নিচে ফেললাম।
রেলগাড়ি চলে গেলো গন্তব্যে। কু-ঝিক ঝিক শব্দ আর তারার আর্তচিৎকার একাকার হয়ে,
ধীরে অতি ধীরে মিলিয়ে গেল। কৌতুহল ভরা চোখে তাকালাম সর্পিল রেলপথের দিকে।
দেখি, রুপোলি ইলিশের মতো চিকচিক করছে একটি ছোট্ট সুন্দর মেডেল।
শিশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে অবাক চোখে মেডেলটিকে হাতে তুলে নিলাম।
মনে মনে নাম দিলাম তারা মেডেল।
সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি উল্কা-তারা মননের আকাশ থেকে নেমে এলো মাটিতে।
কেউ দৌড়াচ্ছে, কেউ হাঁটছে, কেউ হাঁপাচ্ছে, হাজার হাজার- লক্ষ লক্ষ- কোটি কোটি।
আমি বললাম, কি চাও তোমরা? কেউ কোনো উত্তর দিল না, নৈঃশব্দে ভেঙে পড়লো চারদিক।
তারাদের মাঝ থেকে, খোঁচা খোঁচা দাড়িঅলা, চোখে সুরমা দেয়া, মাথায় পাগড়ি নিয়ে একজন
বলে উঠলো, মাননীয় আমরা সবাই দুর্নীতির দায়ে অভিশপ্ত।
প্রায় একশত বছর আমাদের আকাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।
আমরা এখন মুক্ত। আমরা সমুদ্রে যেতে চাই।
আপনি ব্যবস্থা করুন।
আমি তখন আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড মিকাইল সাহেবকে ফোন করলাম।
সে তার আকাশ ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। তারাগুলো সব নাচতে নাচতে
নাইতে নাইতে আদল পাল্টে মৎস হলো এবং সমুদ্রের দিকে রওনা দিলো।
তারামাছের সাঁতার দেখে কানামেঘা লজ্জায় লাল। আর আমি!
আমি চন্ডীদাসের বড়শি নিয়ে সাগর পাড়ে বসে রইলাম।
প্রেমের প্রতিভূ
কড়া ভোদকার ঝাঁঝ সুন্দরকে কাঁপিয়ে দেয় বার বার।
তেলচিটে আকাশটা কেঁদে ওঠে―
গুমোট ঝাপসা অন্ধকার শুষে নেয় প্রেমিকার রক্তাক্ত রুমাল
সাহসে আন্তরিকতায় প্রেম মেনে নেয় মিথ্যা নির্বাসন।
আমি খুন করি নাই!
আমি হত্যা করি নাই!
আমি নিজেকেই হত্যা করেছি বারবার।
শেষ রাতের শিশিরগুলো রক্তের মতো লেগে থাকে পৃথিবীর পথে।
মানুষগুলো দাঁড়িয়ে থাকে পাথর হয়ে।
নিশীথে বিলক্ষণ সে প্রেমিক শিকল পায়ে হেঁটে বেড়ায় অন্ধকারে
তার তৈলাক্ত চোখের করুণ দৃষ্টি আজ চরম দুর্দশায়।
কায়েমি স্বার্থ আজ যন্ত্রমানব
পূঁজিবাদ মরণ কামড় দিয়েছে!
সুন্দরকে ওরা দখল করেছে রক্তের নেশায়।
সময় এসেছে ট্রয়লাসের ধারালো তলোয়ার হাতে আজ সকল প্রেমিকের লড়াই
দোহাই তোমাদের কেউ কবরে যাবে না। জীবনের মৃত্যু আছে প্রেমের মৃত্যু নেই।
লড়াই কর, পৃথিবী দেখবে প্রেমের প্রতিভূ― কত সুন্দর, কত পবিত্র।
চোলাই
নিজেকে দেখব বলে চশমা পরেছি
প্লাস মাইনাসের ব্যবধান টের পাই না।
গুরু চোলাই খেয়ে খেয়ে দুর্বল হয়েছি
এখন গা-ু বলে ডাকে পাড়ার লোক।
সত্যকে দেখব বলে দেহকে বিসর্জন―
স্বপ্ন দেখি সহজ মানুষের সরূপ সাধন
আমি প্রেম হারা মান হারা অনাথ
রমনায় তমালের খোঁজ পাইনা―
গোপন আলিঙ্গনে ক্ষয় হয় শরীর।
ঢপটা না মারলে চোলাই মদে আনন্দ নেই
রাধিকার সামনে দাঁড়াব তাই কত প্রস্তুতি।
মাহফুজ রিপন : কবি ও সম্পাদক