জন্মদিনে স্মরণ করি মরমী কন্ঠ শিল্পী ভূপেন হাজারিকাকে

শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য দোসর সঙ্গীত।সহজভাবে বললে গান। পৃথিবীর একটি দেশের মানুষকেই চিরকালীন আকৃষ্ট করেছে, ভালোবেসেছে, নতুনভাবে উদ্যমতা, প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা উৎসাহ নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছে সঙ্গীত। সঙ্গীত যেন এক অনন্য মননশীল অনুভূতির পরিপূর্ণতা। মানুষ শত দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা, ব্যথা বেদনা, প্রতিবন্ধকতাকে পার করে নিত্য জীবনে চলার পথে আঁকড়ে ধরেছে সংগীত কে। মানুষের মনন, অনুভূতি, সম্পর্কিত নিবিড়তাকে চিরায়ত শাশ্বত জাগ্রত সজীব করে তোলে সংগীতের সুরের মূর্ছনা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবসর যাপনের অন্যতম নিত্য সহচর সংগীতের ভালোবাসা, ভালোলাগা। সেই সংগীতের সৃষ্টিশীল ধারাকে সুচারু সুষম সুরের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে যান সু কন্ঠের অধিকারী কণ্ঠশিল্পীরা। তাদের মরমী কণ্ঠের জাদুতে আমরা আপামর সঙ্গীত অনুরাগী শ্রোতারা মুগ্ধ চিত্তে শুনতে থাকি সেইসব সুন্দর গানগুলো। অর্থাৎ কন্ঠ শিল্পী রায় সংগীতের প্রবাহমানতা কে যুগ যুগ ধরে সুন্দর গায়কীতে সঙ্গীত প্রেমীদের মনন গুলোকে স্নিগ্ধ জারিত করে চলেছেন। সেরকমই অসাধারণ গায়কী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা।
যার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে আসমুদ্রহিমাচল একদা উদ্বেলিত, মুখরিত হয়েছিল। অনবদ্য প্রাণঢালা সু কন্ঠের অধিকারী ভূপেন হাজারিকা অসমীয়া সুর কে সাঙ্গ করে সৃষ্টি করেছিলেন এক স্বতন্ত্র গায়কী সত্তা। যেখানে অনায়াসেই মিশে গিয়েছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতীয় সংগীতের ঘরানা। তিনি নিজেকে পৌঁছে নিয়ে গিয়েছিলেন এক সর্বভারতীয় বহুমাত্রিক সংগীতশিল্পী হিসেবে। সেই প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মদিন আজ। ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের আসামে জন্ম গ্রহণ করেন কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পী। অত্যন্ত দরাজ গলার অধিকারী এই কণ্ঠশিল্পীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অসমিয়া চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে সর্বভারতীয় খ্যাতি সম্মাননা জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাংলা গানের সুবাদে প্রতিবেশী বাংলাদেশের এই শিল্পীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছিল ।তার পিতার নাম নীলকান্ত হাজারিকা, মায়ের নাম শান্তিপ্রিয়া হাজারিকা। পিতা-মাতার দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
তিনি মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই গান লিখে সুর দিতে থাকেন। বলা যায় সংগীতের প্রতি অল্প বয়স থেকেই ছিল প্রচন্ড আগ্রহ ভালোবাসা। আসামের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূচনা হয় এক শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৩৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমীয়া ভাষায় নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা পরিচালিত ইন্দুমালতী সিনেমাতে ‘বিশ্ববিজয় নওজোয়ান’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন। তারপর থেকেই সু কন্ঠের অধিকারী অপূর্ব গায়কি সত্তার মিশেলে চিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত উত্তরণের অভিমুখে নিয়ে যান। পাশাপাশি বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা, প্রচুর গানের সুযোগ, তার পাশাপাশি প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় ভূপেন হাজারিকার পরিপূর্ণ সাংগীতিক জীবন। তিনি তার গাওয়া গানের মধ্যে এক আলাদা সুরের দ্যোতনা মূর্ছনা সৃষ্টি করেছিলেন। যা সঙ্গীত পিপাসু অনুরাগীদের মনকে নাড়া দিয়েছিল।
তিনি মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই গান লিখে সুর দিতে থাকেন। বলা যায় সংগীতের প্রতি অল্প বয়স থেকেই ছিল প্রচন্ড আগ্রহ ভালোবাসা। আসামের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূচনা হয় এক শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৩৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমীয়া ভাষায় নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা পরিচালিত ইন্দুমালতী সিনেমাতে ‘বিশ্ববিজয় নওজোয়ান’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন। তারপর থেকেই সু কন্ঠের অধিকারী অপূর্ব গায়কি সত্তার মিশেলে চিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত উত্তরণের অভিমুখে নিয়ে যান।
মনপ্রাণ ঢেলে সঙ্গীত কে ভালবেসে গিয়েছিলেন বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন সুরে বিবিধ গান।তার গানগুলোর মধ্যে ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘আমায় ভুল বুঝিস না’, ‘একটি রঙ্গীন চাদর’, ‘ও মালিক সারা জীবন’, ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘প্রতিধ্বনি শুনি’, ‘বিস্তীর্ণ দুপারে’, ‘মানুষ মানুষের জন্যে’, ‘সাগর সঙ্গমে’, ‘হে দোলা হে দোলা’, ‘চোখ ছলছল করে’ ইত্যাদি খুব জনপ্রিয়।
তার গানগুলোতে মানবপ্রেম, প্রকৃতি, ভারতীয় সমাজবাদের, জীবন-ধর্মীয় বক্তব্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী সুরও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার। একথা জোর দিয়ে বলা যায় অসমীয়া সুরের ধারাকে তিনি সুচারুভাবে সর্বভারতীয় সঙ্গীতের জগতে আপন গায়কীর মধ্যে দিয়ে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গীতপ্রেমীরা পেয়েছিল এক অন্য স্বাদের অন্য সুরের ভালোবাসার জীবনের গান। ভূপেন হাজারিকার গান সাধারণ মানুষের মনকে একসময় নাড়া দিয়েছিল। তারা যেন খুঁজে পেয়েছিল প্রাত্যহিক আটপৌরে জীবনের বেঁচে থাকার সহজ সরল মর্মার্থ। এখানেই সঙ্গীত কথা গানের প্রাসঙ্গিকতা।২০১১ সালের ৫ নভেম্বর বার্ধক্য জনিত সমস্যায় এই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে এই গুণী শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ভূপেন হাজারিকা ভারতীয় সংগীতের জগতে ছিলেন এক মহীরুহ। নানা ভাষা, নানা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বৈচিত্রের অধিকারী ভারতীয় সঙ্গীতের ভূবনে তিনি ছিলেন আপন গায়কী সত্তার অধিকারী মরমী কন্ঠ শিল্পী। তিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই তবু থেকে গেছে তার কালজয়ী, দরাজ কণ্ঠের মুগ্ধকর জনপ্রিয় গানের ডালি। সঙ্গীত প্রেমী, অনুরাগী, সঙ্গীত পিপাসু সর্বোপরি আপামর শ্রোতাদের মননে ভূপেন হাজারিকা সু কন্ঠের মাদকতায় মূর্ছনায় বেঁচে থাকবেন চিরকাল। জন্মদিনে প্রিয় শিল্পীর প্রতি রইল সাংগীতিক ভালোবাসা শ্রদ্ধা ভক্তি।